মামন : পর্ব – ৬ (Mamon)
নাতাশা বিউটি স্টেশন “, মহেশদের পার্লারের নাম, আসলে ছিল কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়িক ডিলের ভরকেন্দ্র। মহেশ ঠিকই বলেছিল, ওদের খদ্দেররা ছিল সমাজের উঁচু তলার লোক। সরকারী উচ্চপদস্থ অফিসারের বা স্বনামধন্য ব্যবসায়ীর বা উঁচু পদে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের স্ত্রী বা বা বা বান্ধবীরা। সমস্তটাই হত কোন না কোন বিজনেস ডিলের । ঘুষ সংক্রান্ত দরদস্তুর, টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া, ভোটের সিট পাবার, ক্রিমিনালদের ধরা বা ছেড়ে দেওয়া, কিইই হত না। প্রথম প্রথম মামন ভাবত এদের কি ঘর সংসার নেই, সং সাজতে প্রায় রোজদিন এখানে হাজার হাজার টাকা ওড়াতে আসে ? ওদের এমন খাতির ছিল যে ওনারা এসে প্রায়ই অ্যালকোহল আনিয়ে পার্লারে বসে সবার সামনে খেতেন। রেস্টুরেন্ট থেকে দামি দামি খাবার আনাতেন। এমনও বহুদিন গেছে যে ওনারা এসে কিছুই করাতেন না শুধু নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতেন এবং ভাষা অবশ্যই ছিল ইংরাজি। পার্লারের যেসব মেয়েরা কাজ করত তারা কেউই ইংরাজিতে দক্ষ ছিল না কিন্তু পেটে বিদ্যের জাহাজ নিয়ে মামন ঠিক ধরতে পারত ওনাদের আলোচনা। আবার যাবার সময় বিল না করে সব মেয়েদের ডাল অঙ্কের টিপস দিতেন, মামনকেও। কয়েকটা বিষয় মামন আরও লক্ষ্য করেছিল যে মাঝে মাঝেই ওনারা দুজন বা তিন চারজন সিরিয়াস আলোচনা করতেন। হয়ত মহেশ বা সুমঙ্গলার কাছে আগে খবর পাঠিয়ে দিতেন, তখন ওরা পার্লার ক্লোজড বোর্ড বাইরে ঝুলিয়ে দু চারজন ষন্ডা মার্কা সিকিউরিটি বাইরে দাঁড় করিয়ে দিত যদিও ওনাদের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী থাকত কিন্তু তারা বাইরে থাকত। ওনারা মামনকে প্রথম দিন থেকেই দেখে প্রায় সবাই বলেছিল ওয়াও- লিভিং আফ্রোদিতি। ওনাদের মধ্যে একজন ছিলেন মিসেস গুলাটি। ওনার কথার কোন রাখঢাক ছিল। উনি একদিন প্রচুর মদ খেয়ে মামনকে কাছে ডেকে বসিয়ে নিজের জীবনের গল্প করেছিলেন। আর তখনই বলেছিলেন যে উনি সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারীর রক্ষিতা।ওনার বয়স মামনের কাছাকাছি। উনি মামনকে ভেনাস বলে ডাকতেন। ওইদিন বলেছিলেন মামনের এই রূপ আর ইংরাজি ভোকাবুলারি থাকা সত্ত্বেও কেন যে সংসার হল না তা ওনার কাছে দুর্বোধ্য। হয় মামন সত্য গোপন করছে অথবা মামন এই পার্লারের অন্য স্টাফেদের মত কলগার্ল। বলেই বলেছিলেন তোমার থেকে কমা আমি তবুও সবথেকে উঁচু ডাল ধরে আছি, তুমি কেন এখানে সামান্য মাইনের জন্য পরে আছে ? তোমার মত রূপ আ, গুণ থাকলে আমি বিশ্বজয় করে ফেলতাম। এক একটা কথা উনি বলেন আর মামন মিষ্টি হেসে উড়িয়ে দেয়, যেমন সে কলেজ জীবনে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা বা রেস্টুরেন্টের যাবার প্রস্তাব থেকে দূরে চলে যেত, অথচ কেউই রাগ করত না। ওইদিন চলে যাবার সময় দুটো হাজার টাকা মামনের হাতে জোর করে গুঁজে মিসেস গুলাটি বলেছিলেন- ইউ কাম উইথ মি, আই উইল শো ইউ দ্য পাথ অফ এলিগ্যান্ট লিভিং। ভেনাস তুমি শুধু একবার হ্যাঁ বলে দাও দেখবে কতগুলো কুত্তা তোমার পায়ের পাতা চাটছে। তারাই এক একজন আমলা বা মন্ত্রী বা নেতা বা আর্মি টপ অফিসার, ডিয়ার ভেনাস আর পাঁচটা মেয়ের মত মধ্যবিত্ত জীবনের জন্য তুমি পৃথিবীতে আসনি, ট্রাস্ট মি ফ্রেন্ড।বুঝতে পারি তোমার বুকে কত কান্না জমে আছে, কেন আর কিভাবে জমেছে জানতে চাই না যদি না তুমি নিজের থেকে বল, তবে বলব তুমি নিজেকে শেষ করে দিচ্ছ। অ্যা লেডি উইথ দ্য ডিসটিংশন কেন মরতে এখানে আসবে যেখানে আজও আমরা কলকাতা মুম্বাই দিল্লীকে পাখীর চোখ করেছি ! তোমাকে কি করতে হবে , আমি যেমন করেছি রাতে দেহটা দান করেছি ওর কাছে, বিনিময়ে তুলে এনেছি ব্ল্যাঙ্ক চেক। গড়ে তুলেছি নিজের সম্পদ। ড্যাম ফুট ইয়োর সোসাইটি। কাল খেতে না পেলে আগে তোমার দেহ ভোগ করবে তারপর একথালা খাবার দেবে, বুঝলে ভেনাস এটাই রিয়ালিটি। দুনিয়া যতদিন পায়ের নীচে থাকবে তাকে চুষে নাও , আর কতদিন তুমি কচি খুকি হয়ে থাকবে ? ম্যাক্সিমাম অ্যানাদার টেন ইয়ার্স ! যদি আমার কথা মান তবে ততদিনে কোটিপতি হয়ে যাবে। মামন হালকা সুরে বলেছিল – ম্যাম জেন্ডার মিসটেক , পতি ইজ মেল , বাট য়্যাম ফিমেল। উনি হো হো হো করে হেসে উঠে বলেছিলেন – ভেনাস, রিয়েলি ইউ আর ইউনিক।
পার্লারের সি সি ক্যামেরাতে ওদের এই আড্ডার মুহুর্ত ধরা পড়েছিল। রাতে খাবার টেবিলে সুমঙ্গলার সতর্কবাণী এসেছিল – ওনার ফাঁদে পা দিও না, উনি এই পার্লারের অনেককে টুপি দিয়ে নিজের কাজ উদ্ধার করেছেন, আমরা কিছু বলতে পারিনি ওনার খুঁটির জোর মারাত্মক । বলতে পার বাধ্য। মামন পরিষ্কার করে সুমঙ্গলাকে জানিয়েছিল সে নিশ্চিন্তে যেন থাকে , মামন ওই ফাঁদে পড়বে না।
ঈশ্বর ফের মুখ টিপে হাসলেন।