Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মামন : পর্ব – ৫ (Mamon)

ওদের হাসি দেখে মামন অবাক। শেষে ওরা যা বলল তার সারমর্ম হল যে মামন যে পার্লারের কেন কোন ব্যবসারই বিন্দুবিসর্গ যে বোঝে না তা ওরা ভাল করেই জানে, তবে মামনের যে ওভারঅল লুকস্ ওরা তা ব্যবহার করতে চায়। মামনকে কিছুই করতে হবে না শুধু পটের বিবি হয়ে থাকতে হবে, কাস্টমার এলে হাসি মুখে স্বাগত জানাতে হবে, সে কি কাজ করাতে এসেছে তা জেনে তাকে সঠিক মেয়ের কাছে পাঠাতে হবে। ওরা মামনের মত অতটা না হলেও কিছুটা লেখাপড়া শিখেছে, তাই মামনের ডিগ্রিকে অসম্মান করতে চায় না ওরা, চায়না হাতে কাঁচি, চিরুনি ধরিয়ে দিতে । দিন যত এগোবে মামন যদি একটু চোখ কান খোলা রাখে ও নিজেই সব বুঝতে পারবে। মামন শুনে একটু আশ্বস্ত হলেও প্রশ্ন করল সে তো খুব ভাল হিন্দী জানে না, ওর এই ভাষাগত সমস্যা কাজের অন্তরায় হবে না তো । মহেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঘাড় নেড়ে বলল না হবে না। কেন, মামনের এই প্রশ্নের উত্তরে মহেশ বলল তার এখানে যে সব কাস্টমার আসে তারা প্রত্যেকেই সমাজের উঁচু তলার আর তারা হিন্দীর থেকে ইংরাজি বেশি পছন্দ করে, আশা করছে মামনের ইংরাজি বলতে খুব অসুবিধে হবে না। এইবার মামন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। সে ইংরাজিটা বুঝতে আর ভাল ভাবে বলতে পারে। সুমঙ্গলা বলল মামনের পছন্দের জামা কাপড়ের দোকানে কিন্তু সব ধরনের লোক আসে বরং সেখানে কাস্টমার ডিল করতে গেলে মামনের অসুবিধেই হত। ওরা যে ভাবে বুঝিয়ে বলল তাতে মামনের প্রাথমিক ভয়টা দূর হল। মামন তার সম্মতি জানাতে মহেশ বলে উঠল যেহেতু মামন একদম নতুন তাই ওরা আপাতত ওকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে মাইনে দেবে সঙ্গে এই বাড়িতে নিখরচায় থাকবে, সব রকমের খাওয়া পাবে, চিকিৎসার সম্পূর্ণ সুযোগ পাবে, যাতায়াত ওদের সঙ্গেই করবে, অর্থাৎ মামন যদি চাহিদা না বাড়ায় ও পুরো নগদ টাকাটা বাঁচাতে পারবে ভবিষ্যতের জন্য, এখন তো শুরু হোক। পরে কি হবে তা একমাত্র ভগবান জানেন, যা হবে সেই মত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আর বর্ষা তো ওদেরই। মামন সহমত হল মহেশের কথায়। ওর মনে হল এতবড় বিপদের দিনে ওরা যেভাবে ওকে সাহায্য করছে তা নিকট আত্মীয়রা করত কি’না সন্দেহ। মামন হ্যাঁ বলে দিল ওদের প্রস্তাবে।

মহেশ আবার প্রমোটিং করে , ও সাইটে চলে গেলে টেবিলে তখন মামন আর সুমঙ্গলা। মামন ওকে কৃতজ্ঞতা জানাতে সে বলল তার অতীতেও অনেক কালো রাত আর দিন গেছে , সে মামনের বৃত্তান্ত শুনে মনে করেছে আর যেন কালো রাত কোন মহিলা না দেখে। তবে রোজগার বাড়াতে গেলে মামনকে কাজকে ভালোবাসতে হবে, দায়বোধ এড়ালে চলবে না, নিত্য নতুন ভাবনা আনতে হবে, বিশেষ করে যা করলে পার্লারটা আরও জনপ্রিয় হয় । মামন বলল সে অসৎ নয় একশ ভাগ নিষ্ঠা দিয়ে সে কাজ করবে তবে এখনই যেন তাকে পুরো স্বাধীনতা না দেওয়া হয়, সুমঙ্গলা যেন পাশে থেকে তাকে কাজের ঘাতগোঁৎ অবহিত করে। সুমঙ্গলার বরাভয় মুদ্রা মামনকে আশ্বস্ত করল। তারপরই স্বগোতক্তির সুরে সে বলল মামনের হবে। প্রথম দর্শনে সে বুঝেছিল মামন ন্যাচারাল বিউটি, তার দেহের পুরোটাই ঈশ্বর প্রদত্ত, যা খুব কম মেয়েরই থাকে, মামন যে এক সন্তানের মা তা দেখে বোঝাই যায় না। ওরা মামনকে ওদের পার্লারের অ্যাম্বাসাডার করতে চায়। তার জন্য কাল থেকে মামনের গ্রুমিং শুরু হবে আর মামন যেন কোন রকম কাজের জন্য পিছপা না হয়। জীবনে যত রিস্ক সে নিতে পারবে ততই সে উন্নতি করবে। আপাতত ওরা মামনকে ধার দেবে কুড়ি হাজার টাকা, যে টাকা দিয়ে মামনের ড্রেস মেটেরিয়াল কেনা হবে, আর নিজেকে সাজিয়ে তুলতে খরচা করতে হবে, যেমন জুতো, ব্যাগ ইত্যাদি, ওরা প্রতি মাসের মাইনে থেকে হাজার টাকা করে ওরা কেটে নেবে, যতদিন ধার থাকবে ততদিন মামনকে ওদের জন্য থাকতে হবে। ওরা বাচ্চাটার জন্যও জামা কাপড় কিনে দেবে ওই ধারের টাকায়। তারপরেই সতর্কবাণী , এক- মামন কাজের জায়গাতে যেন বাচ্চাকে না নিয়ে যায়, দুই – সে যে বিবাহিত এই কথা যেন প্রকাশ না পায় আর তিন মামন যদি কোনও রকম অসঙ্গতি দেখে তা যেন সরাসরি ওদের জানায়। ঘোঁট পাকালে চলবে না। এতকথা বলেই প্রশ্ন করল মামন কি স্যাটিসফায়েড ?

আর মামন এই দেবদূত আর দেবকন্যার কথাতে ও যার দৌলতে সে আজ এখানে সেই রূপালী বৌদির কাজে এতটাই আপ্লুত যে তখন বাকরুদ্ধ, দুচোখ বেয়ে নেমে আসছে আনন্দাশ্রু। মামন উঠে গিয়ে সুমঙ্গলার হাত দুটো চেপে ধরে বলল নিজের জন এত করে না যা তুমি করলে। সুমঙ্গলার উত্তর সাহসী হও দিদি, সাহসী, তোমাকে দাঁড়াতে হবে, তোমার যে অনেক কিছুই আছে যা ঠিক মত ব্যবহার করলে তুমি চাঁদে জমি কিনতে পারবে, আমাদের ওপর নয়, নিজের ওপর ভরসা রাখো, দেখলে তো স্বপ্ন আর বাস্তবের ফারাক কতটা ! ফের বলছি কোন কাজ ছোট নয়, আমরাই কাজের তফাৎ গড়ি। সবারই বাঁচার অধিকার আছে, তুমি আর বর্ষা বাদ যাবে কেন, কপাল নয় বাস্তব মেনে চললে তোমার আজ এই দশা হত না । নীরবে মাথা নাড়া ছাড়া মামন আর কিই’বা করতে পারত তখন।

শুরু হল মামনের গ্রুমিং । প্রথমে বিউটি টাচ, তারপর ওর গায়ের রঙের সঙ্গে জামা কাপড়, জুতো ,ব্যাগ , কাঁচের চুড়ি কেনা। সঙ্গে চলল কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলার আদব কায়দা। পুরো দায়িত্ব সুমঙ্গলার। একটু করে শেখায় আর পরীক্ষা নেয় মহেশ। কোন সময় পাশ করে তো কোন সময় ফেল। ফেল করলে ফের শিখতে হয়। এইভাবে কেটে গেল একমাস। তবে ট্রেনিং হয় বাড়িতে আর পরীক্ষা হয় পার্লারে। এই এক মাস মামন ডুবে গেল তার নতুন জগৎ গড়ার কাজে, অতীত ভুলে। ইতিমধ্যে সুভদ্রার সঙ্গে বর্ষার খুব ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বর্ষা আজকাল মায়ের থেকে মাসির কাছেই বেশি থাকতে চায়। একমাস পরে মামন ভাঙা মাসের মাইনে পেল। প্রতিদিন সে পার্লারে গেছে, তার স্বাভাবিক ব্যবহার দিয়ে সকল স্টাফেদের মন জয় করেছে। আর তাকে প্রতি রাতে খিস্তি ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয় না। রূপালী বৌদির কাছ থেকে জেনেছে রাণা আরও লাগামছাড়া, বাজারের মহিলাদের ফ্ল্যাটে আনে, এই নিয়ে চরম অসন্তোষ অন্যদের। তারা ঠিক করেছে এরপর সবাই রাণাকে সাবধান করবে, না শুনলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। প্রথম প্রথম মামন রাণার কথা শুনলে বিহ্বল হত, কিন্তু ওই যে সুমঙ্গলা – বাস্তববাদী হও তবেই বাঁচবে। তার মনের জোর ফিরিয়েছে যা কলেজ ইউনিভার্সিটির অঙ্গ ছিল।

মামন এখন নিজেকে চিনতে পারে না । তার সাজ পোষাক, আর সবথেকে বড় কথা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে নিজেকেই চিনতে পারছে না। সুমঙ্গলা আর মহেশের কথা মেনে তার গলায় আর একই সঙ্গে নম্রতা আর অধিনায়ীকার সুর। বিউটি পার্লারের কাজ করা মেয়েরাও তাকে সমঝে চলে।

মামন আপাতত ছ’ছটি মাস কাটাল। তার জীবন যেন ফাইটার প্লেনের রানওয়ে। এই ছ’মাসেই নিজস্ব মেধা দিয়ে প্রায় আশি শতাংশ কাজ বুঝে গেছে। হটাৎই একদিন মামন বুঝল এইটা শুধুই বিউটি পার্লার নয় , তার থেকেও বেশি কিছু হয় এখানে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress