Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মামন : পর্ব – ২১ (Mamon)

দীর্ঘ পথ, চারশ কিলোমিটারের বেশি , ওরা যখন হাভেলিতে এল পুরো গ্রাম তখন ঘুমানোর তোড়জোড় করছে, কিষেণ আগেই নেবে গেছে। মামন ক্লান্ত এতটাই যে হাভেলিতে যে নতুন রঙের পোঁচ পড়েছে তা নজরে আসে নি। কোনরকমে মহেশের মাকে প্রণাম করে ঘরে এসে জামা কাপড় বদলে সোজা খাবার ঘরে,এখানেই নজর করল রাকা অনুপস্থিত, কৌতুহল মেটাতে মহেশকে জিজ্ঞেস করতে উত্তর পেল ,সে আর আসবে না, বাড়িতেই থাকবে, বাড়ি – মানে, বাড়ি মানে ওদের বাড়ি। মামন কিছুই বুঝল না , সে তখন ঘুমাতে পারলে বাঁচে। সুভদ্রার ডাকে মামনের ঘুম ভাঙল, চায়ের কাপ হাতে সে দাঁড়িয়ে। এগারোটা বেজে গেছে শুনে লজ্জিত হল মামন। বর্ষা কোথায় প্রশ্নে জানল সে মহেশের মায়ের ঘরে, স্যার কাজে বেরিয়ে গেছে।সুভদ্রার চটপট উত্তর। মামন চা খেয়ে বাথরুমে গেল ফ্রেশ হতে। ঘরে এসে দেখল আলু পরোটা , আচার, মাখন নিয়ে তৈরি ব্রেকফাস্টের প্লেট নিয়ে সুভদ্রা অপেক্ষা করছে। মামন বলল আগে সে শ্যামকে নমস্কার করবে তারপর খাবে। কথাটা শুনে সুভদ্রা খুশি হল, বলল দিদি তুমি মন্দিরে চল, আমি আসছি। মামন মন্দির থেকে ঘরে এসে খেয়ে গেল মহেশের মায়ের কাছে। মন্দির থেকে হাভেলিতে আসার সময় মামন লক্ষ্য করল নতুন রং করা হয়েছে হাভেলি, ফুল পাতা দিয়ে পিলারগুলো সাজান, বাইরের দিকের বারান্দাতেও ফুলের সজ্জা, ভারি অবাক হয়ে গেল মামন, মহেশ এলে জেনে নেবে ভেবে চলল বিমলা দেবীর ঘরের দিকে। গিয়েই চমক, বাবলি বসে আছে, বর্ষা খেলছে সারা ঘর জুড়ে , রাকার চোখে মুখে একটা আলাদা গ্ল্যামার ফুটে উঠেছে, সাজগোজ অন্য ধরনের, দেখে বোঝাই যাচ্ছে না গতকাল সে সেবিকা ছিল। মামনকে দেখে বিমলা দেবী আও বেটি আও বলে পালঙ্কে বসার ইঙ্গিত করল, রাকা এগিয়ে এসে মামনকে প্রণাম করল। কি ব্যাপার গো বাবলি, এত সাজগোজ কেন গো, মামন প্রশ্ন করতে রাকা বলল ,দিদি আর্শীবাদ দাও নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি। নতুন জীবন ! বিয়ে ? রাকার ! কাকে ? এসব কি শুনছে মামন ! তার ওপর বিমলা দেবীকে দেখে তো মনে হচ্ছেই না যে উনি যে কোন সময়ে অন্তিম শ্বাস নেবে , তাহলে কি মহেশ তাকে মিথ্যে কথা বলে এখানে এনেছে। কি হল দিদি, আর্শীবাদ করবে না, রাকার কথায় চটকা ভাঙে মামনের। শুকনো হেসে বলল, রাকা আমি খুব সাধারণ, আর্শীবাদ দেবার ক্ষমতা আমার নেই, তবে তোমার সঙ্গে আমার শুভ কামনা সবসময়ই থাকবে, দেখবে আজকালকার ছেলেদের মত তোমার পতিদেব হবে না, সে তোমাকে নিজের প্রাণ দিয়ে ভালোবাসবে। তবে আমার থেকে অনেক মূল্যবান ওনার আর্শীবাদ পাওয়া , তুমি বরং ওনার আশীষ বারবার নাও, বলে বিমলা দেবীকে দেখাল মামন। রাকা একগাল হেসে আঁচলের খুঁট খুলে একটা আশরফী দেখিয়ে বলল ,দিদি এই যে দেখ, আমাকেও তোমার মত আর্শীবাদ করেছেন আম্মা। মামনের বুকটা এবার হু হু করে উঠল । রাকা স্বাভাবিক ভাবেই মামনকে জড়িয়ে ধরে বলল, দিদি আমি এখন বাড়ি যাই, ফের ওবেলা আসব, সঙ্গীত হবে , তোমার আর্শীবাদ নেব বলেই বসে ছিলাম এতক্ষণ। আসছি দিদি। চলে গেল রাকা , মামন ওর চলে যাওয়া দেখলেও মন খুব অশান্ত, মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে, একটা স্বপ্ন মনের একটা ছোট্ট জায়গা দখল করে ছিল, মনে হচ্ছে তীব্র ভূমিকম্পে জায়গাটা অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। বুক ফাটছে কিন্তু এই অলীক আশার জন্য মামনের মুখ ফুটছে না। সেদিন যে গালাগাল দিয়েছিল মামন আজ কি তার শোধ নিচ্ছে মহেশ ? হাজার প্রশ্ন, উত্তর অধরা। বিমলা দেবীর সঙ্গে টুকটাক কথা বলে চলে এল মামন। ঘরে একা বসে নীরবে কাঁদছে, মদ খেতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু এবাড়িতে মদ অচল। জানলা দরজা বন্ধ করে মামন বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ল। দীর্ঘ সময় একা থেকে মনের ব্যথা একটু হলেও কমল তবে ঘর থেকে বের হল না। সুভদ্রা বহুবার ডেকেছিল,ওকে পরে আসতে বলেছিল মামন। তখন কটা বাজে, খেয়াল নেই , মহেশের ফোন, সোজা সাপটা দোষারোপ, মামনের কিন্ত হয়েছে যে খায়নি, দরজা খোলনি, এমনকি সুভদ্রাকেও ঢুকতে দেয়নি, ঠিক আছে আমি আসছি দরজা খোল। মহেশ ঘরে এসেই বলল উত্তর দাও। মামন ইতিমধ্যে সামলে নিয়েছে নিজেকে, বলল, কাল যে জার্নি করেছি তার জন্য খুব ক্লান্ত, তুমি হয়ত অভ্যস্ত, আমি তো নই। এটাই উত্তর। দেখ, মহেশ যুক্তি দিল, তুমি তো একা ছিলে না, আমরাও তো ছিলাম, তুমি বর্ষার কথাও ভাব,কত ছোট, সে তো দস্তুর মত ফিট, উঁহু তোমার অন্য কিছু হয়েছে , বলে ফেল কি হয়েছে। মামন খুব শান্ত গলায় বলল,হাতের পাঁচটা আঙুল কি সমান হয় ? দুজনের এই ইস্যুতে টানাপোড়েন চলল আধঘন্টা,মামন অনড়। মহেশ ঠোঁট উল্টে ,যা ভাল বোঝ কর,বলে চলে গেল। সন্ধ্যেতে হাভেলির নাচরুমে (এক সময় এখানে বাঈজি নাচ হত, তাই এই নাম) বসল রাকার বিয়ের সঙ্গীতের আসর। কুইনাইন গেলার পর মুখ যেরকম হয়, মামন সেই রকম মুখ নিয়ে বসে রইল। বিয়ের দিন এগিয়ে এল, রাকার হলদি হল একটা ভাড়া হলে,মামনের ইচ্ছে ছিল না তবুও মহেশ জোর করে পাঠাল। দুপুরে হাভেলিতে ফেরার সময় রাকা বলল, দিদি তোমার তো পার্লারের কাজের অভিজ্ঞতা আছে একটু জলদি এসে মেকাপ যে করবে তাকে একটু গাইড করে দাও প্লিজ। মামনের অবস্থা তখন সাপের ছুঁচো গেলার মত। ওকে, বলে তখনকার মত মুক্তি নিল মামন। রাতে বর এল ঘোড়ায় চেপে,মাথায় একটা জোব্বার মত টুপি বা টোপর যার সামনে প্রচুর পুঁতির মালা ঝুলছে, যার ফলে বরের মুখ দেখা যাচ্ছে না। মরুকগে যাক,বাবলিকে নিয়ে এত কথা বলার পরেও মহেশ যে এই কাজ করবে তা দেখার পরে তাকে কি বিশ্বাস করা যায়?মামন তার ভবিষ্যত কর্মপন্থা নিয়ে ভাববে বরং। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল রাকা যে ঘরে বসেছে সেই ঘরের দিকে। মামন আজ সারাক্ষণ থেকে রাকার মেকাপ গাইড করেছে,ওকে রাজেন্দ্রাণীর মত দেখতে লাগছে।মামন ইচ্ছে করেই ওর চিবুকে একটা ছোট্ট কাজলের টিপ লাগিয়ে বলেছিল, কিসিকা নজর না লাগ জায়ে। রাকা হেসেছিল।

রাকার বিয়ের মন্ডপ হয়েছিল হাভেলির পেছন দিকে, মামন এক দুবার গিয়েছিল। বিমলা দেবী স্ট্রেচারে শুয়ে ওখানে ছিলেন,রাকার স্থান নিয়েছে অন্য একজন যাকে মামন চেনে না। মামনের মনটা এতটাই খারাপ যে সকলের নজর এড়িয়ে মন্দিরে এসে বসে আছে। যতই মামন সযতনে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়েছে মনে করেছিল বাস্তবে তা ঘটেনি। নিঃশব্দে মামনকে ফলো করেছিল সুভদ্রা। মামন যখন আকাশ পাতাল ভাবছে,সুভদ্রার আগমন। মামন চমকে গিয়ে জানতে চাইল সে যে এখানে আছে সুভদ্রা কি করে জানল। উত্তর এল ,ও সব পরে হবে, দিদি এখন চলুক, মালাবদল আর তারপরেই সিঁদুরদান হবে। মামন নানান বাহানা করে যেতে চাইল না, সুভদ্রাও নাছোড়বান্দা। মামন বাধ্য হল যেতে। মালাবদল হচ্ছে , ঘোর অনিচ্ছা নিয়ে আর সুভদ্রার চোদ্দ পুরুষের পিন্ডি চটকাতে চটকাতে মামন চোখ মেলে দেখেই ৪৪০ ভোল্টের কারেন্ট খেল। এ কে যে রাকাকে মালা পরাচ্ছে ! মহেশ কোথায়, এ তো কিষেণ চাঁদ। বনময়ূরীর মত মামনের মনটা নেচে উঠল, আর যাই হোক মহেশ ওকে মিথ্যে কথা বলেনি। কিন্তু মহেশ বা বিমলা দেবী কোথায়। সুভদ্রা বলল বড়া আম্মার আচানক শরীর খারাপ হতে স্যার ওনার কাছে আছেন,ঘরে।দিগবিদিগ জ্ঞানশূন্য মামন দৌড়ে গেল হাভেলির দিকে।
পের্টিকোতে অ্যাম্বুল্যান্স দেখে মামন হোঁচট খেল। শাড়ি সামলে বিমলা দেবীর ঘরে গিয়ে দেখে ওনার মুখে অক্সিজেন মাস্ক, বিভিন্ন মেশিন, যার থেকে নানান তার এসে বিমলা দেবীর গায়ে, বুকে, হাতে নাগপাশের মত জড়িয়ে , দুজন নার্স আর তিনজন ডাক্তার হাজির। মহেশ মাকে জড়িয়ে ধরে একটাই কথা বলছে, তুম আভী মত যাও। ম্যায় বচন দেতা হুঁ আজসে তুমহারা হর বাত মানুঙ্গা। জো তুমে পসন্দ, ম্যায় ওহি করুঙ্গা, মা, তু মত যা, তুমহারা ওয়াক্ত আয়া নেহি, ফির কিঁউ মা ইতনা সাতাতি হো। মামন ধীর পায়ে গিয়ে মহেশের পিঠে হাত রাখতে মহেশ মুখ তুলে চাইল। মামনকে দেখে ফের ভেঙে পড়ল , জড়িয়ে ধরল মামনকে , বারবার বলতে লাগল, মামন তুমি বাঁচাও মা’কে, আমি আর বাউন্ডুলে হব না , সব ছেড়ে মায়ের কাছেই থাকব, মামন তুমি এই এহেসান টুকু কর, আমি তোমার কেনা গোলাম হয়ে থাকব। মামন বিমলা দেবীর মাথাতে হাত বুলিয়ে বলল, উঠুন আমি এসে গেছি। মাস্কের আড়ালে বিমলা দেবীর হাসি সকলের নজরে এল।

বিয়ে হয়ে গেল রাকার, বিদায় নিল নবদম্পতি। অক্সিজেন মাস্ক তখন নেই বিমলা দেবীর মুখে। মহেশ মামনের এই আসাতে খুব খুশি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress