Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মামন : পর্ব – ২ (Mamon)

“অসম্পূর্ণতায় পূর্ণ মানব জমিন”, কলেজের একটা ডিবেটের প্রতিযোগিতায় মামন পক্ষে বলে গোল্ড মেডেল জিতেছিল। তখন কি জানত যে এটাই তার জীবনের আগামীর ছবি হবে ? যদি জানত হয়ত সে জীবন স্রোত ঘুরিয়ে দিত। কিন্তু ওই যে আপ্তবাক্য- মানুষ ভাবে এক আর বিধাতা ভাবনা ভিন্ন। রূপ গুণ , সব মিলিয়ে এই মেয়েটার বিয়ে হল চল্লিশ বছর বয়সে। রাণাকে সংসার ঠিক মত গড়ার সমস্ত সুযোগ দিয়ে। এর মধ্যে একটা স্কুলে চাকরিও পেয়েছিল কিন্তু রাণার আপত্তিতে জয়েন করল না। বাবা একটু ক্ষীণ গলায় বলেছিল – হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেললি, দেখিস পরে পস্তাতে যেন না হয়। মামনের বয়স বাড়ছে এদিকে রাণাও নিজেকে গোছাচ্ছে, চিন্তায় চিন্তায় সুনীতবাবুর শরীর দ্রুত ভাঙতে লাগল। ওনার অফিসে ততদিনে কম্পিউটার বসেছে, উনি বৃদ্ধ অতএব চাকরি গেল, উকিলবাবুও কম্পিউটার বসাবে বলে নোটিশ দিয়েছে। মামন চাকরিটা ছেড়ে দিল রাণার জেদের জন্য। এত বড় সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট সে আর তার বৌ স্কুল মাষ্টার, কভভি নেহি, অগত্যা শ্যামকে ধরে কূল ছাড়ল মামন।

হ্যাঁ এইটা ঠিক সংসার সমস্ত রকম ভাবে গুছিয়ে নিয়ে রাণা আর মামনের বিয়ে হল। এক বছরের মধ্যেই বর্ষা এল, আজ তার এক বছর জন্মদিনের পর থেকেই মধুচন্দ্রিমার চাঁদে গ্রহণ লাগল। দিন যায় আর রাণার বেশ্যাগলিতে সময় কাটানোর সময় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হয়। সুনীতবাবু ও ওনার স্ত্রী আন্দাজ করেন কিন্তু যেহেতু মামন কিছু জানায় না তাই ওনারা ভেতর ভেতর গুমরে মরেন। একদিন এল সেই চরম সময়, সুনীতবাবুর বুকে উঠল চরম ব্যথা। কিছু করার আগেই উনি বিদায় নিলেন। মামনের চরম শোকের দিনেও রাণা বলেছিল , বুড়ো মরে গিয়ে বেঁচেছে, তোমাকে আর ন্যাকামি করতে হবে না, আর শোন তোমার মায়ের দায়িত্ব আমি নিতে পারব না, সাফ বলে দিলাম। মামন বিয়ের পরে পরেই টিউশানি ছেড়ে দিয়েছিল। মায়ের অসহায় মুখের ছবি কল্পনা করে সে অনুনয় বিনয় করে ফের টিউশন ধরল, যাতে তার মা, অন্তত বাড়ি ভাড়া আর দুবেলা দুমুঠো অন্ন এবং সামান্যতম চিকিৎসা করাতে পারেন। বেশি দিন গড়াল না, মাধুরী দেবী, মামনের মা, সন্তানের ভবিষ্যত আর স্বামীর শোক টানতে পারলেন না। দাহকাজ শেষে বাড়িওয়ালা জ্যেঠু বলেছিলেন, তার তো আর ভাড়া বাড়ির দরকার নেই, যেখানে রাণা একজন হোমরা চোমড়া, উনি রিটায়ার্ড লোক, বাড়ি ভাড়া আর পেনশন দিয়ে সংসার চালান তাই ঘরগুলো দখল নেবেন যাতে নতুন ভাড়াটে বসাতে পারেন। হায়রে মামন কি তখন জানত যে এই একটা ছাদ তার পরবর্তী একবছরের মধ্যে এতটা প্রয়োজন হবে ? যদি জানত তবে হয়ত প্রতিরোধ অন্তত করত, তা না করে সই সাবুদ করে বাড়িওয়ালার হাতে ঘর তুলে দিল। ছেড়ে দিল টিউশনিগুলোও। তার দুচোখ ঘিরে তখন বর্ষার ভবিষ্যত।

– শালা বুড়ো , বহোত সেয়ানা মরে গিয়ে আমার পেছনে বাঁশ দিয়ে গেল। তুই কুত্তি চলে যা এখান থেকে। রাণার আক্রোশ তখন চরমে। মামনের পাশে কেউ নেই। প্রত্যেকদিন এতটাই অশান্তি হয় যে ফ্ল্যাটবাড়ির অন্য লোকেরাও বিরক্ত কিন্তু কেউই স্বামী স্ত্রীর ঝগড়াতে মাথা গলাতে তেমন ভাবে চায়না, শুধু একজনই ব্যতিক্রম, রূপালী বৌদি। ঠিক ওপরের ফ্ল্যাটেই থাকেন, কলকাতাতে ওনার তিনটে বিউটি পার্লার আছে, স্বামী জাহাজে কাজ করেন, বছরের অর্ধেক সময়ই থাকেন না, একমাত্র ছেলে বিদেশে পড়াশোনা করছে। মহিলা খুব কর্মঠ এবং ওনার পার্লারগুলোতে দারোয়ান বাদে সবাই মহিলা স্টাফ। রাণা অফিস চলে গেলে উনি প্রায়দিনই এসে মামনের খোঁজখবর নিতেন এবং এই অত্যাচারের জবাব দেবার জন্য মামনকে উদ্বুদ্ধ করতেন, আরও বলতেন তার ক্ষমতা ছোট্ট , তবুও এই লাথি কিল চড় আর গালাগাল খেয়ে মামন যদি না থাকতে চায় তাহলে তিনি একটা কিছু মামনের জন্য করার চেষ্টা করবেন, যদিও মামনের শিক্ষাগত যোগ্যতার ধারকাছ দিয়ে সেই কাজ যাবে না, তবে মামন স্বাবলম্বী হতে পারে। মামন প্রতিবারই তা হাসি মুখে প্রত্যাখান করেছে, কিন্তু আজ যা হল তখন মামনের কাছে রূপালী বৌদি বাদে আর কোন দেবীর নাম মনে এল না।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress