মামন : পর্ব – ১৬ (Mamon)
জো হোতা হ্যায় উয় সোচতা নেহি, জো সোচতা হ্যায় উয় হোতা নেহি। মানব জীবনের চরম আপ্তবাক্য। মামন কি ঘুনাক্ষরেও আন্দাজ করতে পেরেছিল, কলকাতা থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে রাণার দেখা পাবে, তাও সে যখন এমন একজনের হাত ধরে আছে যার কাছে সে নিজেকে মনেপ্রাণে সমর্পণ করে দিয়েছে। সেই সমর্পিতা আর চাইবে কি তার অন্ধকার অতীতকে ফিরিয়ে আনতে। একটা সময় ছিল মামন সর্বান্তকরণে চাইত রাণা সুস্থ হয়ে যাক, তার প্রতি ভালোবাসা রাণা ফিরে পাক, সাদামাটা আড়ম্বরহীন পরিবার থেকে উঠে আসা মামনের একমাত্র ধ্যান জ্ঞান ছিল ভালো রেজাল্ট আর একটা চাকরি, পেয়েওছিল কিন্ত মোহ এক বিষম বস্তু , ভালোবাসার যূপকাষ্ঠে সে নিজের হাতে সেই মহার্ঘ চাকরির প্রাণ নিয়েছিল। দিনের পর দিন সে শুধু একা নয় তাদের দুধের শিশুটাও অত্যাচারিত হয়েছিল, এক বস্ত্রে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, আর আজ সে যখন দুবেলা দুমুঠো খেতে পাচ্ছে, তার শিশু একটা নিশ্চিন্ত আশ্রয় পেয়েছে, মামন একটা মনের মানুষ পেয়েছে , গুলাটির মত পোড় খাওয়া বন্ধু কাম গাইড পেয়েছে, সেই গোলাপ বাগানে উড়ে এল ভীমরুল ! যার বিষাক্ত হুলে সে কাটিয়েছে শতশত বিনিদ্র রাত, কানে সিসের মত ঢুকিয়েছে খিস্তি, দেহে বয়ে বেড়িয়েছে ক্ষত চিহ্ন, সেই একদা ভালোবাসার পাত্র যে পরবর্তী কালে যমদূত হয়েছিল সে তার কাছে ভিক্ষে চাইছে। মনে পড়ল যখন টানাটানির সংসারে অতিষ্ঠ হয়ে মা রাগ করত ,বাবা তখন মামনকে বলত ওরে তোর মাকে বোঝা কানাকেষ্ট বলেছেন চিরদিন সবার সমান নাহি যায়। কৃষ্ণচন্দ্র দে’র এই গানটা বাবার বড় প্রিয় ছিল। ছাত্রী অবস্থাতে মামন গানটা মানত যেমন তার বাবাও মেনে চলত। হা হতোষ্মি , মামনের বাবার চিরটাকাল সমানই গিয়েছিল,আর মামন, রাণার অত্যাচার দেখে দেখে সেও স্থির নিশ্চিত ছিল তারও দিন বদলাবে , না, গানটা গানই হয়, বাস্তবের মাটি ছোঁয় না। মামন গানটা ভুলেই গিয়েছিল , আজ রাণার ভিখারীপনা দেখে ফের মনে পড়ল। এই সেই রাণা । রাণা একই কথা ঘ্যানঘ্যান করে চলেছে, ফিরে এস, ক্ষমা কর , চৌহানকে বলে কাজটা পাইয়ে দাও, আমরা সবাই আমেরিকাতে গিয়ে নতুন করে বাঁচব। এতদিনে দুনিয়ার রং ঢং দেখে মামন যথেষ্ট বাস্তববাদী হয়েছে, মামন সবসময়ই গুলাটিকে গুরু মানে। রাণার এই ন্যাকামি দেখে প্রথমেই মনে হয়েছিল মিথ্যুকটাকে টেনে একটা থাপ্পড় মারে, কিন্ত না, গুরুর বচন স্মরণ করে কেটে কেটে জানতে চাইল কাজটা না পেলেও রাণা কি আমেরিকা যেতে পারবে, উত্তর না শুনে মামনের ঠোঁটে খেলে গেল একটা অদ্ভুত হাসি, নীচু গলায় কিন্তু স্পষ্ট সুরে বলল , ওকে রাতে যখন ওর সঙ্গে সেক্স করব তখন বলব, বলেই ইশারাতে বেয়ারাকে ডেকে একটা মার্টিনি চাইল, কিন্তু রাণা আমার হাতে এর বেশি ক্ষমতা নেই ফাইনাল ডিসিশন উনিই নেবেন। রাতে চৌহানের সাথে সেক্স করতে করতে কথাটা ইচ্ছে করেই বলল, কারণ মামন দেখতে চাইছিল রাণার রিপারকেশন। নির্লজ্জ রাণা খপ করে মামনের হাতটা ধরে বলে উঠল , যেভাবেই হোক কাজটা পাইয়ে দাও মামন। ফোঁস করে উঠল মামন, যে পুরুষ তার বৌকে বেশ্যা বানিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করে তার মুখে একদলা থুথু ফেলি আমি। তাও, একদিন তোমার সাথে সম্পর্ক থাকার দৌলতে আমি ওকে বলব বা আলোচনা করব কাজটা নিয়ে।
গাড়িতে উঠে মামন পরিষ্কার করে চৌহানকে বলল সে আজ ওর ফ্ল্যাটেই থাকবে, চৌহানের তাড়া সে শুনবে না। চৌহান মামনের নাকটা নাড়িয়ে বলল কোয়ায়েট এক্সপেক্টেড। মানে, মামন অবাক।
তুমি কবে থেকে ব্যানার্জীকে চেন ? চৌহানের সপাট প্রশ্ন।
স্থান চৌহানের ফ্ল্যাট, সময় রাত বারোটা। রাণার সঙ্গে ওইসব কথা বলার পর মামনের মেজাজ খিঁচড়ে গিয়েছিল, খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করেছিল , এক ফোঁটাও দাঁতে কাটেনি। ওদের কথা মগজে ঢুকছিল না। শুধু দেখেছিল সব কথার শেষে রাণার চিন্তিত মুখ। বাই করার আগে রাণা কান এঁটো করা হাসি এনে মামনকে বাংলাতে বলেছিল , আমার কাজটা করিয়ে দিও মামন। মামনের কোন নাইট ড্রেস নেই এখানে, চৌহানের একটা লং হাউসকোট পরে ঘুরছে। মামন যে খায়নি তা লক্ষ্য করেছে চৌহান, ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করে এনে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল মামনের দিকে। মামন আর পারল না। পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করল চৌহানের কাছে। কান্নায় ভেঙে পড়ল সে। চৌহান পরম মমতায় মামনকে বুকে টেনে সান্তনা দিতে লাগল আর বলতে থাকল, ভেনাস, ফেলে আসা দিন যেমন ভোলা যায় না, প্রথম ভালোবাসা যেমন ফিকে হয়না ঠিক সেইরকম বর্তমানকে অস্বীকার করাও যায় না। চৌহানের আদর খেতে খেতে মামন বোম মারল, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো, হটাৎ এ প্রশ্ন, আর ইউ অলরাইট ভেনাস, চৌহানের পাল্টা প্রশ্ন। ইয়েস আই লাভ ইউ এন্ড ইউ মে ভেরিফাই ইট ফ্রম গুলাটি, আই অলসো রেসপেক্ট ইউ ভেনাস, হোয়াই ইউ আর আস্কিং, চৌহানের জবাব। আগে বল ওই ব্যানার্জীর সঙ্গে তোমার কাহিনী। আমি তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম, মামন এখন অকপট। ততক্ষণে মামন নিজেকে সামলে নিয়েছে অনেকটাই। মানে, চৌহানের প্রশ্নের উত্তরে মামন গড়গড় করে তার ইতিহাস বলে গেল সঙ্গে বর্ষার কথাও এল। সব শুনে চৌহান বলে উঠল , মাই গড, ইটস্ অ্যা নভেল, নাও হোয়াট ইউ ওয়ান্ট টু ডু উইথ দ্যাট পুওর বেগার ! কাজটা দিও না, মামনের উত্তর। বাট ভেনাস, জাস্ট ইমাজিন পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা তুমি হারাবে। ড্যাম ফুট ইয়োর মানি, ইফ ইউ রিয়েলি লাভ মি , তোমার ভেনাসের কথা মেনে চলবে, বান্টি ( চৌহানের ডাকনাম, মামন জেনেছে) আমার অর্থের দরকার নেই , পাশে তোমাকে চাই। একটানে হাউসকোটটা গা থেকে ছুঁড়ে ফেলে মামন জড়িয়ে ধরল চৌহানকে । চৌহানের সর্বাঙ্গে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিল, যেন একটা কামার তার হাপর টেনে উনুনের আঁচ তেজ করছে। বাকি রাত আদিম খেলাতে কেটে গেল। দুই ক্লান্ত খেলোয়াড় ভোর রাতে ঘুমিয়ে পড়ে ভুলে গেল আগের রাতের কথা।
ভেনাস চা খাবে তো, ঘুমন্ত মামনকে একটু ঠেলে জানতে চাইল চৌহান। দু তিনবার ঠেলার পর মামনের চোখ খুলল, চোখের সামনে চৌহানকে দেখে হ্যাঁচকা টানে বুকে টেনে নিল সম্পূর্ণ বিবস্ত্রা মামন। মামনকে ভূতে ধরেছে, দীর্ঘদিনের অতৃপ্ত কামনা বাসনা সে একদিনেই মিটিয়ে নিতে চাইছে যা চৌহানের অপছন্দ। কিছুটা বাধ্য হয়েই চৌহান মামনের চাহিদা মেটাচ্ছে। এক সময় চৌহান বলল, ভেনাস এনাফ ইস এনাফ, স্টপ ইট অ্যান্ড কাম টু কনক্লুশন। আমি কি অর্ডারটা ব্যানার্জীদের কোম্পানির হাতে দেব , পঁয়ত্রিশ লক্ষ তোমার হবে, ভেবে বল। মামন দিল মাস্টার স্ট্রোক। দেখ আমি ফের বলছি ওই টাকার দরকার নেই আমার। কিন্ত যদি একফৌঁটা সহানুভূতি থাকে আমার জন্য, ফের বলছি কাজটা দিও না, শুধু পাশে থাক।