Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মামন : পর্ব – ১৫ (Mamon)

পরবর্তী সময়টা সরলরেখাতে চলতেই পারত, যেমন আর পাঁচটা আমজনতার চলে কিন্তু মামন তো আমজনতা নয়, তার থেকে কিছু বেশি, তাই যথারীতি সরলরেখার হদিশ সে পেল না। চৌহান লোকটা বেশ অদ্ভুত,মামনের সঙ্গে তার সম্পর্ক আজ কংক্রিটের মত মজবুত। চৌহান রায়পুরে থাকে না, ওর বাংলো জব্বলপুরে, অফিসের কাজে সে রায়পুরে আসে সঙ্গে টাইট সিকিউরিটি, এখানে দু তিন রাত কাটিয়ে ফেরৎ যায়।এই দু তিন দিন মামনের ডাক পরে। আশ্চর্যের ব্যাপার চৌহানের ফ্ল্যাটে মামন আজ পর্যন্ত একটা রাতও কাটায় নি, সে চৌহানের ফ্ল্যাটে গেছে, সারাদিন কাটিয়েছে, রান্না করে খাইয়েছে, শপিং করেছে, এদিক ওদিক ঘুরছে , নামি দামি হোটেলে খেয়েছে, যেই রাত আটটা বাজল, গান শুরু করে দেয় চৌহান, ভেনাস তুমি বাড়ি যাও, ফের কাল এস বা ওই তারিখে ফোন করলে চলে আসবে , এর বাইরে একটা কথাও নেই অথচ লোকটা ফাটাফাটি রকমের রোমান্টিক। আর শারীরিক সম্পর্ক, উঁহু, চৌহান ওই রাস্তা দিয়েই হাঁটেনি। মামন লজ্জার খাতিরেই হোক বা অন্য কারণে, (যেহেতু মামন পেশাদার নয়) বলতেও পারেনি সরাসরি, যদিও আকারে প্রকারে বহুবার মামন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। মামনের গুরুমা গুলাটির কথা অনুযায়ী মরদ যদি তোর দেহ থেকে সঠিক রস পায় তবেই কেল্লাফতে, তোর নসিব খুলে যাবে। চৌহান তো সে রাস্তা দিয়ে হাঁটছেই না, মামনকে দামি গয়না, ড্রেস সব কিনে দিয়েছে কিন্ত নগদ অর্থ হাতে দেয়নি। মামন হতাশ। গুলাটির পরামর্শ চাইতে সে বলল মামন যেন জোর করে শারীরিক চাহিদা মেটায়। খুব সত্যি কথা বলতে কি প্রায় ছ’মাস ছুঁতে যাচ্ছে ওদের সম্পর্ক, এই ব্যবহার দেখে মামন অনেকটাই ঢলে গেছে চৌহানের দিকে। মহেশ, সেও তো এমন ছিল, কিন্ত চৌহানের ম্যানারিজম মামনকে বড্ড আকৃষ্ট করে। মহেশের আছে বন্য ভাব, সেখানে চৌহান ভালোলাগার প্রতিমুর্তি। মামন কনফিউজড। একদিন মামন পরীক্ষা করার জন্য চৌহানের থেকে পাঁচ হাজার টাকা চাইতেই চৌহান মামনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর চাইল, ওর নেই শুনে মামনকে নিয়ে সোজা ব্যাঙ্কে, বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে একলাখ টাকা টার্ন্সফার করে বলল এই দিয়েই যেন মামন আপাতত কাজ চালায়, পরে ফের দেবে। মামন হাঁ। একদিন চৌহান বলল , সে যে পোস্ট হোল্ড করে আছে সেখানে মামনের ঠাঁই নেই। তবুও সে মামনের বন্ধু হয়েছে একটাই কারণে, ” মামনের পূর্ববর্তী ইতিহাস দামি ডিটারজেন্ট দিয়ে কেচে সাফ , তাই সে আর দুবার ভাবেনি মামনের বন্ধু হতে। চৌহান আরও বলল যে তার পদমর্যাদা অনুসারে সে বিপুল ক্ষমতা পায়, মামন যদি ব্যবসা করত তাহলে সে সরাসরি হেল্প করতে পারত। কি রকম? মামনের প্রশ্নের উত্তর এল বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার কথা। তখন মামন মহেশের কথা চৌহানকে বলে। কে সেই বন্ধু ভেনাসের, চৌহানের প্রশ্নের উত্তরে মামন তার আর মহেশের সম্পর্কের কথা জানার জন্য গুলাটির কোর্টে বল ঠেলেছিল। অবশেষে গুলাটির দৌলতে মহেশ আর চৌহানের মিটিং এবং মহেশের লক্ষ্মীলাভ। মহেশ কাজের অর্ডার পাবার পর মামনের হাত ধরে বলেছিল, আমি তোমাকে ঠকাব না, এ যা দেখছ , সব তোমার। মামন কিছুই বোঝেনি।

বিস্ফোরণ ঘটল এর দুমাস বাদে। জ্যোতির্বিজ্ঞান বলে ব্ল্যাকহোল হবার আগে তারাটা সুপারনোভা হয়ে যায়। কি রকম !
একদিন চৌহান চটজলদি হুকুম দিল, মামন যেন ডিনার করে তার সঙ্গে এক ভদ্রলোক আসছে , ওদের কোম্পানি বরাত পেতে চায়, চৌহান যদি হ্যাঁ বলে তবেই ওরা পাবে, তার বিনিময় মূল্য চৌহান যা পাবে সবটাই মামনের। মামন শুনে বলেছ তার টাকার দরকার নেই, চৌহান পাশে থাকলে তার সব পাওয়া হয়ে যাবে। উত্তরে চৌহান আবেগ নিয়ে বলেছিল, মামনকে আর্থিক ভাবে একটা মজবুত জায়গাতে দাঁড় করান তার কর্তব্য, তবেই না ভাল বন্ধু হতে পারবে। চৌহানের কথার মধ্যে এতটাই আন্তরিকতা ছিল যে বিহ্বল মামন ওকে জড়িয়ে ধরল। চৌহান অবাক হল না বরং পরম মমতায় মামনকে বাহুবেষ্টনির মধ্যে নিয়ে এল, মামনের মনে হল এই দুটো হাত ভরসার, এই ছোঁয়াতে আছে মমতা ,ভালোবাসা, সবথেকে বড় কথা অপার নিশ্চিয়তা। আরও জোরে আঁকড়ে ধরল মামন। এইরকম একটা বাহুবেষ্টনি মামন তো চেয়েছিল রাণার কাছে। রাণা তা দেয়নি, আর আজ যে দিচ্ছে সে তো কোনদিন তার একান্ত ভাবে নিজের হবে না, শুধু অর্থই কি সম্পর্কের, ভালোবাসার মাপকাঠি ?

রায়পুরের অন্যতম বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট বারবিকিউ নেশন, সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা, কালো রঙের জর্জেট শাড়ি আর মাননসই স্লিভলেস ব্লাউস পড়ে চৌহানের সঙ্গে মামন ঢুকল ভেতরে, উদ্দেশ্য, চৌহানের নতুন সাপ্লায়ার্সের সঙ্গে ঘুষের টাকা রফা করা, চৌহানের বক্তব্য সব পুরুষরা বলে নয় মনুষ্য প্রজাতি সবসময়ই অপজিট জেন্ডারের প্রতি দুর্বল। তাই মামন থাকলে চৌহানের দরদস্তুর করতে সুবিধে শুধু নয় অ্যাডভানটেজ পাবেই পাবে। আর সে কথা দিয়েছে যা টাকাই ঘুষ হিসেবে আসুক না কেন পুরো টাকাটা মামনের হবে। দুজনে নির্দিষ্ট টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল, ওরা পেছন দিক থেকে এসেছে, ভদ্রলোক পেছন করে বসে ফোন ঘাঁটছে, চৌহান গম্ভীর কন্ঠে বলল- মিঃ বোনার্জী! উনি উঠে দাঁড়িয়ে ঘুরে হাতটা এগিয়ে দিতেই মামনের মুখ পাংশু বর্ণ ধারণ করল, রাণা …
রাণা এখানে, ফ্যাকাসে মুখে নিশ্চুপ রইল কিছুক্ষণ, চৌহান আর রাণা হ্যান্ডসেক করে প্রাথমিক আলাপ শেষ করার পরে চৌহান মামনের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল আমার বান্ধবী, ভেনাস, সি অলসো ফ্রম কোলকাতা। রাণাও মামনকে দেখেছে, সেও ভাবছে মামন এখানে, তাও এত বড় এক আর্মি অফিসারের সঙ্গে, কি সম্পর্ক আছে দুজনের, টেকস্যলুশন,বিশ্বখ্যাত সফটওয়্যার কোম্পানি, তার ইন্ডিয়া কান্ট্রি জোনের মার্কেটিং ভাইস প্রেসিডেন্ট রাণা ব্যানার্জী আজ ছুটে এসেছে রায়পুরে শুধু একটাই কারণে, তাদের কোম্পানি যে কোন মূল্যে এই অর্ডারটা চায়, তিনবছর লকডাউনের করানোর চক্করে কোম্পানির হাল খারাপ, তাদের ঘুরে দাঁড়াতে নতুন কাজ চাই তাই তারা ঘুষ বরাদ্দ করেছে, মুশকিল হল চৌহান চাইছে আরও বেশি, যা দিতে কোম্পানি নারাজ,তাই রাণাকে পাঠিয়েছে ফয়সলা করতে, আর রাণা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যদি চৌহান কোম্পানির দেওয়া টাকাতে রাজি না হয় সে নিজে বাকি টাকা দিয়ে মেড গুড করবে ডিলটা কারণ কোম্পানি লিখিত অফার তাকে দিয়েছে এই অর্ডার এনে দিলে রাণা ব্যানার্জীর পার্মানেন্ট পোস্টিং হবে আমেরিকার সিলিকন ভ্যালিতে, কোম্পানির দায়িত্ব রাণাকে আমেরিকার সিটিজেন করে দেওয়া, এছাড়াও আরও অনেক প্রতিশ্রুতি। লোভী রাণা তাই এক কাপড়ে দৌড়ে এসেছে এখানে আর মামনকে দেখে সে মনে মনে ফন্দি আঁটছে কাজটা বগলদাবা করার, চৌহান পরিচয় করিয়ে দিতে রাণা বলে উঠল বাংলাতে , কেমন আছ, মামনের ছোট উত্তর- ভালো, চৌহান একটা কিছু আন্দাজ করে বলল তারা কি একে অপরকে চেনে! মামন সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল না, সে ওনাকে প্রথমবার দেখছে। কলকাতাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস করে, কলকাতাতে থাকলেই কি সবাই পরিচিত হয় ! চৌহান ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করল। শুরু হল ব্যবসায়িক দরদস্তুর। মামনের কিচ্ছু ভাল লাগছে না, একটা চাপা অস্বস্তি তাকে গ্রাস করেছে। কি যে সব কথা দুজনে বলছে, মামন কোনও উৎসাহ পাচ্ছে না, এই পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে চাইছে, কিন্তু চৌহান তো অনড়, রাণা কাকতি মিনতি করে চলেছে। চৌহানের একটা ফোন এল, এক্সকিউজ মি বলে চৌহান টেবিল ছেড়ে উঠে কথা বলতে বলতে পায়চারি করতে লাগল, এই ফাঁকের জন্য মনে হয় রাণা অপেক্ষা করছিল। প্রথমেই মামনের ফোন নম্বর চাইল, দৃপ্ত সুরে মামন দেবে না জানিয়ে দিল, পরের প্রশ্নবাণ , মামন কি করে রায়পুরে এল, কোথায় থাকছে এখানে, চৌহান তার কে হয়। সব প্রশ্নে মামনের একটাই উত্তর ছিল, সে বলতে বাধ্য নয়, রাণা এরপর শুরু করল তেল দেওয়া, বক্তব্য খুব পরিষ্কার, সে জীবনে যত ভুল করেছে তার মধ্যে একমাত্র কঠিন ভুল মামনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, সে অনুতপ্ত, মামন তার জীবনে ফিরে আসুক, সে আমেরিকা চলে যাচ্ছে পাকাপাকি ভাবে মামন আর বর্ষাকেও নিয়ে যাবে শুধু মামন যেন তাকে ক্ষমা করে দেয়, মামন যে শাস্তি দেবে সে মাথা পেতে নেবে । আর মামন যেন চৌহানকে রাজি করায় কাজটা রাণাদের কোম্পানির নামে ইস্যু করতে। তাহলে রাণা আর মামন নতুন করে জীবন শুরু করবে, রাণা করবে তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress