Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মামন : পর্ব – ১৪ (Mamon)

মহেশের অফিস বাড়িটাতে রবিবার সকাল থেকে সাজ সাজ রব, পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ, প্রচুর ভিআইপি আসবে । গুলাটি সকালে মামনকে ফোন করে বলেছে আজ সে নিজের হাতে তার ভেনাসকে সাজাবে আর ভেনাস যেন তার দেওয়া ড্রেসটা পড়ে। মামনের বুক দুরু দুরু করছে, অজানা একটা ভয় চেপে বসেছে, ভাবছে সে কি ঠিক কাজ করতে চলেছে। যা কোনদিন করে না আজ তাই করল। বর্ষাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘরের দরজা বন্ধ করে হাউহাউ করে কাঁদল। ধীরে ধীরে শান্ত হল মামন। ইতিমধ্যে সুভদ্রা এসে বহুবার ডেকেছে ওদের, মামন দরজা খোলেনি। বছর দুয়েকের বর্ষা অবাক চোখে মা’কে দেখছে আর তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে নানান কথা বলে চলেছে। মামন উঠে দাঁড়াল। নিজের মনেই বলে উঠল, যত কষ্টই হোক, রক্ত দিয়ে তোকে পেটে ধরেছি মা, আর আজ দেহ দিয়ে তোকে মানুষের মত মানুষ করব মা। বর্ষাকে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে দরজা খুলতেই দেখে সুভদ্রা আর মহেশ উৎকন্ঠিত হয়ে দাঁড়িয়ে, মহেশ কাউকে ফোন করছে, মামনকে দেখে মহেশ বলল সে কোথায় ছিল, বর্ষা কোথায়, ফোন সুইচ অফ কেন! মামন ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে, ঠান্ডা গলায় বলল , সে বাথরুমে ছিল, খাটে বসা বর্ষাকে দেখিয়ে দিল আর বলল ফোন চার্জে বসানো আছে, এইবার হয়েছে। মহেশ চলে যেতে যেতে বলল যাক, আমাদের ফাঁসাওনি এই রক্ষে। কথাটা শুনে মামনের মাথা দপ করে গরম হয়ে গেল। মুখে কিছু বলল না ঠিকই তবে চোয়াল ইস্পাতের মত শক্ত হয়ে উঠল।

গাড় নীল রঙের গাউনটা পড়া মাত্র পার্লারের প্রতিটা মেয়ে আর গুলাটি মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে রইল। সকলেই স্পেলবাউন্ড। গুলাটি নিজের গলা থেকে হীরের নেকলেশটা খুলে মামনের গলায় পড়িয়ে দিতে দিতে বলল এইটা আজ তোমাকেই মানাবে। মামন আগে কোনদিন গাউন পড়েনি, তাই একটু অস্বস্তি হচ্ছিল তবে মায়া ওর হাত ধরে বেশ কয়েকবার হাঁটাতেই একটু হলেও ফ্রি হয়ে গেল।

বার্থডে পার্টি শুরু হবে হবে গুলাটি ফোন করে মামনকে আসতে বলতে মায়ার সাহায্য নিয়ে মামন লিফটের দিকে পা বাড়াল।
রেস্টুরেন্টের ভেতর আজ জমকালো করে সাজান হয়েছে, ডি জে চলছে কিন্তু মামন যেই পা রাখল সঙ্গে সঙ্গে হলে পিন পড়লে আওয়াজ শোনা যাবে এমন অবস্থা হল, ওয়াও- চাপা গলায় একটা সমবেত আওয়াজ উঠল। গুলাটি ছুটে এসে মামনের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেল। মামন দেখল মহেশের চোখে মুখে মুগ্ধতা আর পিঙ্কির চোখে যেন সাপের মত, পিঙ্কি বিড়বিড় করে দাঁত চেপে কি যেন বলল। মামন পাত্তা দিল না।

জন্মদিন পালনের প্রাথমিক কাজ শেষে শুরু হল ককটেল পার্টি। মামন দেখল সে বাদে মহিলা পুরুষ ,সবাই বিভিন্ন ধরনের মদ নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে, এদিক ওদিক ঘুরছে, পরপুরুষ কি স্বামী, কাউকেই তো মামন চেনে না , হাসতে হাসতে গায়ে ঢলে পড়ছে। এই ধরনের পার্টিতে মামন আগে কখন যায়নি, কলেজে বন্ধুদের জন্মদিন হলে ওরা একটা কেক এনে কলেজ ক্যান্টিনে কেটে হালকা কিছু চপ সিঙাড়া আর চা খেয়ে সেলিব্রেট করত।যদি কারুর বাড়িতে নেমতন্ন থাকত মামন যেতই না, আর নিজের হলে, বাবা একটু গোবিন্দভোগ চাল আর দুধ এনে দিত, মা পায়েস করত, ব্যাস, এর বাইরে অন্য কিছু নয়। এখানে এতকিছু দেখে মামন ভাবছে কলেজ জীবনে সে ভাবত নিজে আধুনিক হয়ে ওঠেনি, এখন তার মনে হচ্ছে তার তখনকার আধুনিক বন্ধুরা আদৌ আধুনিক ছিল না। সাত পাঁচ ভাবছে যখন মহেশ এগিয়ে এসে নীচু সুরে বলল তোমাকে তো আজ চেনাই যাচ্ছে না, মামন একটু হাসল, ভাতখন্ডে কাছে এসে জানতে চাইল মামন ড্রিংস নেয়নি কেন, মামন উত্তর দিল তার কিছু প্রবলেম আছে তাই ডাক্তার মানা করেছে, ও -বলে উনি মুগ্ধ সুরে বললেন ইউ লুকস টেরিফিক। একেই সুন্দর বলে, বলেই একটা হিন্দীতে ছোট কবিতা বললেন। মামন লজ্জিত হয়ে থ্যাঙ্কস জানাল, এবার আসরে হাজির গুলাটি। সঙ্গে একজন লম্বা চেহারার সুপুরুষ। পাতলা গোঁফ ওনাকে আরও আকর্ষণীয় করেছে। কোন ভনিতা ছাড়াই গুলাটি বলল – ভাইয়া মিট মাই ফ্রেন্ড ভেনাস ফ্রম ক্যালকাটা, উনি একটু বো করে হ্যালো বলাতে মামনও হাই বলে উত্তর দিল। গুলাটি মামনের লেখাপড়ার ভূয়সী প্রশংসা করে বলল তারা আড্ডা দিক ও অন্য অতিথিদের দেখেই আসছে। উনি হাতটা মামনের দিকে বাড়িয়ে বললেন, আই অ্যাম মেজর জেনারেল এস কে চৌহান, আপনার নাম তো শুনলাম, হোয়াট অ্যা ওয়ান্ডারফুল নেম উইথ বিউটি ফ্রম হেভেন। সত্যি আপনার নামকরণ সার্থক। মামন যথারীতি ধন্যবাদ দিল। এই সেই লোক যার কথা গুলাটি ওকে বারবার বলেছে।

মামনের বুক কাঁপতে লাগল , তাহলে কি আজ রাতেই সে ধর্ষিতা হবে , নাহ্, সে ধর্ষিতা কেন হবে , স্বেচ্ছায় এই পথের পথিক হয়েছে মামন। প্রচুর আড্ডা হল, না চৌহান মামনের সঙ্গে যথেষ্ট ভদ্রতা এবং তাকে সম্মান দিয়ে কথা বলল সারাক্ষণ। আড্ডা দিতে দিতে মামনের চোখ ঘুরছিল চারদিকে, দেখল অভ্যাগতরা মদ খুবই কম খাচ্ছে, যত না খাচ্ছে তার থেকে বেশি কথা বলছে, অন্যদিকে পিঙ্কি হাঘরের মত খাচ্ছে, একবার তো মহেশকে পিঙ্কির হাত থেকে গ্লাস ছিনিয়ে নিতেও গিয়েছিল, বাড়ি হলে লঙ্কাকান্ড হত, পার্টি বলে মহেশ বাড়াবাড়ি করল না। পার্টির একদম শেষ দিকে গুলাটি এল, এসেই হড়বড় করে বলল সে দুঃখিত দেরি করার জন্য, আসলে সবাইকে সামলাতে হচ্ছে তো, তারপরই চৌহানের দিকে ঘুরে বলল ভাইয়া আমার বন্ধুকে কেমন বুঝলে, উনি হাতের গ্লাসে আলতো চুমুক দিয়ে বললেন, দেয়ার ইস নো ওয়ার্ড বাই হুইচ আই, আই ,আই, স্যরি আর কিছু বলতে পারছি না, বলে একটা প্রশয়ের হাসি ছুঁড়ে দিল মামনের দিকে, লজ্জা পেয়ে মামন মাথা নিচু করল, শুনতে পেল গুলাটি বলছে ,এরপরেও ওর কোন বয়ফ্রেন্ড নেই, হোয়াট, চৌহান চমকে উঠল, ওর হাসব্যান্ড। হো হো হো হো, গুলাটি হেসে বলল সে এখন জন্মায়নি। ভেনাস বিয়ে করেনি।রিয়েলি? ফের অবাক হল চৌহান। গুলাটি ফের মুখ খুলল- ভাইয়া আমার বন্ধু খুব মনোঃকষ্টে আছে দাওনা ওর জন্য একটা বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করে। চৌহান ততোধিক জলদি উত্তর দিল, গুলাটি কি পাগল, স্বর্গের এই পরিজাতের বয়ফ্রেন্ড সে জোগাড় করবে, এই অপ্সরার জন্য কত দেবতা জান কবুল করে আছে গুলাটি আগে সেই খবর নিয়ে আসুক, গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে বলল, আর যদি একান্তই করতে হয় তাহলে সে নিজে লাইনের প্রথমে দাঁড়াবে, বলেই মামনের দিকে একটু ঝুঁকে বলল, সে কি তার বায়োডাটা সহ অ্যাপ্লিকেশন জমা করতে পারে। মামন গুলাটির সঙ্গে থেকে থেকে বেশ কিছু ন্যাকামি শিখেছে, আজ তার যথার্থ প্রয়োগ করল যখন চৌহানের গালে একটা আঙুল দিয়ে টৌকা মেরে মোহময়ী গলায় বলে উঠল- ও ইউ নটি, সো সুইট ইউ আর। চৌহানও কম যায় না,গালটা চেপে ধরে বলল, হে স্বর্গের দেবী একটা আঙুল কেন দিলে ,দাও না পাঁচটা আঙুলের চিহ্ন, রাতটা স্বপ্নে কাটুক। মামন এবার হো হো করে হেসে উঠল।

রাতে মামন একা ঘরে ভাবছে, চৌহান যদি তাকে রক্ষিতা বানাতে চায় তাহলে এমন ব্যবহার কেন করল ! ওখানে তো অনেক মহিলাই অন্য পুরুষদের সঙ্গে একই ধরনের কাজ করছিল কিন্তু কেউই শালীনতা লঙ্ঘন করে নি ! এটা কি ধরনের সামাজিকতা! চৌহান তাকে প্রচন্ড সম্মান দিয়েছে, এমনকি যাবার সময় তাকে ফোন নম্বর দিয়ে বলেছে মামন যখন ইচ্ছে, কারণে বা অকারণে ফোন করতেই পারে, সে কিন্ত মামনের নম্বর চায়নি, তাহলে কি চৌহান যা বলল তাকে নিয়ে সবটাই মন রাখতে ? একূলটাও কি গেল মামনের ?

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress