Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

মামন : পর্ব – ১০ (Mamon)

মহেশের প্রস্তাবে মামন হকচকিয়ে গেল, ভেবে পেল না কি উত্তর দেবে। মহেশ যে ভাবে ওর হাত ধরে ছিটকানি লাগিয়ে খাটে এসে বসল বা ওর যা চরিত্র তা সুখকর না হলেও এখনও পর্যন্ত যেভাবে কথা বলেছে তাতে একটু হলেও মামনের ধারণাতে চিড় ধরেছে, তার ওপর ওর বাড়ি, মহেশ বাড়ির সর্বেসর্বা তাই মামনের হ্যাঁ বা না মহেশের কাছে কি এসে যায়। মামন মুখে হাসি এনে বলল তার আপত্তি কেন থাকবে, মহেশ শুয়ে পড়ুক ও একটু ওয়াশরুম থেকে এখনি আসছে। নাইট ল্যাম্প আগে থেকেই জ্বলছিল, মামন টিউবটা নিভিয়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বেসিনের ওপরে লাগান আয়নাতে নিজের চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে নিজের দেহের চড়াই উৎরাই- এর আঁকে বাঁকে ঘুরে নিজেকেই জরিপ করতে লাগল। সে শুনেছে মেয়েরা ছলাকলায় পটু, এই ছলাকলা বস্তুটা কি, খায় না মাথায় মাখে তার সম্বন্ধে তার কোনও ধারণা নেই, আর থাকবেই বা কি করে, দারিদ্রের রূঢ় মাটিতে দাঁড়িয়ে কাটিয়েছে শৈশব, যৌবন। দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে সংসার নদীতে নৌকা ভাসিয়েছিল, ভেবেছিল মাঝি খুব বিশ্বস্ত, হায়রে কপাল সেই মাঝিই তার নৌকা ডুবিয়ে তাকে সন্তান নিয়ে অকূল পাথারে ফেলে দিল। আজ কেন এখন থেকে যদি রোজ মহেশ তার শরীর চায় সে স্বেচ্ছায় দান করবে। তার যে বর্ষা আছে, কেন সে তো শুনেছে বহু বারবধূ তাদের দেহ ক্ষত বিক্ষত করে সন্তান বড় করে তুলেছে, সে কেন পারবে না যেখানে মহেশ তার পাশে আছে। বারবধূদের খদ্দের বদলে যায়, এখানে তো শুধু মহেশ আছে যেমন সে রাণাকে নিয়ে ভেবেছিল ! হঠাৎই তার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। মামন ঠিক করল মহেশ যেখানে তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে, বর্ষাকে এত ভালোবাসছে সে কেন পিঙ্কির ভয়ে দিন কাটাবে যেখানে পিঙ্কি আর সে দুজনেই মহেশের রক্ষিতা। তার জেদ চাপল, মামন পিঙ্কিকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী পর্যায়ে নিয়ে মনে মনে ভেবে নিল আরও চিন্তা করল সে মহেশের একমাত্র রক্ষিতা হবে , পিঙ্কি নয়, এই বাড়ি, এই ব্যবসা , সবকিছুর মালকিন সেইই হবে। তাই সে ছলাকলা দিয়েই মহেশের মত ধূর্ত লোককে বশ করবে।

মামনের একটা ফিনফিনে নাইটি ছিল, সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় মামন ঘরে এসে আলমারি থেকে সেইটা নিয়ে , পড়ে খাটে এসে দেখল মহেশ ঘুমিয়ে কাদা। আপসেট হয়ে গেল মামন। ধুস কার সঙ্গে সে করবে ছলাকলা। এ তো ডেডবডি। কাল দেখা যাবে। মামনের ঘুম একটু হলেও পেয়েছিল। তবে মহেশের সঙ্গে কথা বলার পর আর মনের অবসন্ন ভাবটা একদমই নেই, মেজাজটা বেশ ফুরফুরে। বালিশ না নিয়ে মহেশের প্রসারিত ডান হাতের ওপর মাথা রেখে বুকের কাছে আদুরে বেড়ালের মত গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল।

মামন, মামন, আমাকে উঠতে দাও। মামনের ঘুম ভেঙে গেল, দেখল মহেশের বাঁ হাত তার পিঠে আর মৃদু সুরে ডাকছে । তুমি ঘুমাও আমি মর্নিং ওয়াক করতে যাই, এসে ডেকে দেব, এক ঘন্টা, তারপর দুজনে এক সঙ্গে চা খাব। বলে মামনের মাথার তলায় একটা বালিশ দিয়ে হাতের তালুতে আগের রাতের মত একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে মহেশ ঘরের বাইরে চলে গেল। একরাশ ভালোলাগা নিয়ে মামন সুখের স্বপ্নের সাগরে গা ভাসাল।

দুজনে চা খাচ্ছে, বর্ষা ওয়াকারে ঘুরছে। বারান্দার এই দিকটা খুব সুন্দর। অনেক গাছ আছে ,সেখান থেকে পাখিদের ডাক আসছে , নরম রোদ, সব মিলিয়ে একটা সুন্দর পরিবেশ। হঠাৎ মহেশ বলল আর কিছুদিন দেখতে দেখতে বর্ষা বড় হয়ে যাবে, ওকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে, মামন কিছু ভেবেছে কি ! হতবাক হয়ে গেল মামন! কি প্রাকটিক্যাল চিন্তাধারা, একটা সম্পূর্ণ অনাত্মীয়ের সন্তান, তার ঔরসে জন্ম হয়নি, সে তার স্ত্রী নয় তাহলে বর্ষাকে নিয়ে মহেশ এত চিন্তা কেন করে ? একটু ভেবে বলল সে কি বলবে, মহেশ যা সিদ্ধান্ত নেবে মামন তাই মেনে নেবে, বলেই সাবধানবাণী বলল মামন- কিন্তু পিঙ্কি। ধ্যাততেরিকা, সকাল সকাল তাওয়াইফের নাম নিয়ে দিন খারাপ করবে না তো। তুমি আর ও কি সেম ক্যাটাগরির । মামন আমতা আমতা করে বলল সে ঠিক এইভাবে বলতে চায়নি একই বাড়িতে থেকে যদি এই কাজ মহেশ করে তাহলে অশান্তি তো চরমে উঠবে। মহেশ উঠে দাঁড়াল, তিন মিনিট, ড্রেস বদলে নাও ,বাইরে যাব তোমাকে নিয়ে, গো গো গো। প্রায় ধাক্কা দিয়ে মামনকে ঘরে পাঠাল মহেশ। কোনরকমে পোষাক বদলে বারান্দায় এসে দেখে মহেশ নেই বরং সুভদ্রা বর্ষাকে সুন্দর একটা ফ্রক পড়িয়ে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মামনকে দেখে বলল সাহেব নিচে আছে দিদি বর্ষাকে নিয়ে যাক, হুকুম। মামন বর্ষাকে নিয়ে নিচে এসে দেখে মহেশ ড্রাইভারের সিটে বসে , দরজা খুলে ভেতরে বসল মামন, তারা এখন কোথায় যাচ্ছে প্রশ্ন করাতে মহেশ বলল সার্কাস দেখতে। গাড়ি গেট পেরিয়ে রাস্তাতে নেবে পড়ল। সকাল বলে শহরে তখনও গাড়ি বা মানুষের ভীড় নেই। বেশ কিছুক্ষণ যাবার পর একটা হাউজিং কমপ্লেক্সের সামনে গাড়ি দাঁড়াল। হর্ন শুনে সিকিউরিটিরা ছুটে এসে মহেশকে দেখতে পেয়ে একটা লম্বা স্যালুট দিয়ে হাতজোড় করে ভেতরে ঢোকার পথ করে দিল। মহেশ ওদের স্মিত হাসি উপহার দিয়ে একটা চারতলা বাড়ির সামনে গাড়ি পার্ক করে মামনকে নামতে বলল। ওই বাড়ির সিকিউরিটি ছুটে এসে বলল সাহেব যেমন বলেছেন তেমনই জগ্গু ফ্ল্যাট খুলে ওখানেই আছে। ঘাড় নেড়ে মামনকে নিয়ে লিফটে চাপল মহেশ। তিনতলায় লিফট থেকে নেবে যে ফ্ল্যাটে মামন ঢুকল তা ওর স্বপ্নের অতীত।

চরম লাক্সারির নিদর্শন ফ্ল্যাটের প্রতিটি ইঞ্চিতে। মহেশ মামনের হাত ধরে ফ্ল্যাটের প্রতি কোথা ঘুরিয়ে দেখাল। মামন বাকরুদ্ধ। শেষে নরম সোফাতে দুজনে মুখোমুখি, মহেশ জানাল যে এই কমপ্লেক্স তার তৈরি আর এই ফ্ল্যাট তার নামে, রূপালী, পিঙ্কি এমনকি গুলাটি, কেউই এর হদিশ জানে না। মামনের যদি পিঙ্কির সঙ্গে থাকতে ইচ্ছে না নয় তবে সে এখানেই থাকবে, সুভদ্রার চাকরি যাবে পিঙ্কির চোখে কিন্তু সে মামনের কাছে চলে এসে থাকবে আর থাকবে মামনের ব্যক্তিগত সিকিউরিটি জগ্গু, যে এককালে চম্বলের ডাকাত ছিল। মামন আর কি চায়। দুর্বোধ্য এক হাসি খেলে গেল মামনের মুখে। পিঙ্কি রূপালীর আস্তানা চিনতে এখন আর পারবে না। রূপালী পিঙ্কির আস্তানা চেনে না, গুলাটি পিঙ্কির আস্তানা চিনলেও গুলাটির আস্তানা চেনে না আর এখন সে নিজে। কতবড় রাজনীতি করতে জানা লোক এই মহেশ। কলকাতাতে একজন রক্ষিতা আর এখানে তাকে নিয়ে আপাতত দুজন রক্ষিতা। আর কতগুলো এইরকম রক্ষিতা মহেশের আছে তার হিসেব কে জানে। মামন বলল যে সে যদি এখানে চলে আসে তাহলে পিঙ্কির কাছে মহেশ কি জবাবদিহি করবে। সোজা উত্তর একটা কলকাতা যাওয়ার ট্রেনের টিকেট তোমার নামে কেটে ভোরা বিস্তারা নিয়ে তুমি কলকাতায় না গিয়ে এখানে চলে আসবে। বাহ্ বেশ ভালোই ফন্দি তো । তবুও ……, মামন বলল যে সে না হয় হল কিন্তু মামন কি সারাদিন ঘরেই কাটাবে, এই যে মামন পার্লারের কাজে যেত সে তো ধীরে ধীরে কাজটাকে ভালোবেসে ফেলেছিল, কলকাতাতে থুড়ি এই ফ্ল্যাটে চলে এলে মামন তো আর যেতে পারবে না , তখন ! মামন সারা জীবন খেটে এসেছে ,খাটতে সে ভালোবাসে, একশ ভাগ নিষ্ঠা দিয়ে সে কাজ করতে চায়, মহেশ কি সেই ব্যাপারে কিছু ভেবেছে ?
এইবার মহেশ একটু চিন্তিত হল ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress