Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মামন || Abhijit Chatterjee

মামন || Abhijit Chatterjee

মামন : পর্ব – ১ (Mamon)

এক্ষুনি বের হয়ে যা শালি, ভিখারীর বাচ্ছা। একটা অপদার্থ বাপ গছিয়ে দিয়েছে আমার ঘাড়ে। বাচ্চা কার রে হারামজাদী, তোর কোন ভাতারের ? আমি সারাদিন মুখের রক্ত তুলে খাটব আর ইনি দুপুরবেলাতে ঘরে নাগর এনে পয়দা করে আমাকে বাপ বানাবে। আবে শালি আমি কি তোর রবার ছাপ ।
টলতে টলতে একনাগাড়ে কথাগুলো থুড়ি জ্বলন্ত কয়লার টুকরোগুলো মামনের কানে ঢুকিয়ে দিচ্ছে রাণা । মদের নেশাতে প্রায় আচ্ছন্ন হলেও মামনের গায়ে হাত তোলা বা অশ্রাব্য খিস্তি করতে রাণা কখনোই পিছপা হয় না।

– রাণা , এইবার কি আমরা সেটেলড্ হব ! বাড়ির লোক চিন্তা করছে, আমার বয়স তো বাড়ছে, তোমার জন্য তো চাকরিটা রিফিউজ করলাম, আর তো বয়স নেই যে অ্যাপ্লাই করতে পারি, একটু ভাব গো । সাত বছর ধরে তোমারই পুজো করে চলেছি, তুমি তো আমাদের আর্থিক অবস্থা জান। বাবা চিন্তা করে করে হাই প্রেশারের পেশেন্ট হয়ে গেল ।
রাণার হাতদুটো ধরে কাকতির সুরে মামন বলে উঠল।
– সোনা আমি কি তোমাকে ঠকাচ্ছি? আর একটা বছর, জানোই তো আমার বাড়ির লোক তোমাকে মেনে নেবে না , তাই তো ফ্ল্যাট বুক করেছি, তুমিও ছিলে, কমপ্লিট হতে দেবে তো !
— জানি গো সব জানি , আসলে কি যেন তো নিম্নবিত্ত পরিবারের বলে ভয় হয়। তার ওপর তোমার বন্ধুর ফাঁকা ফ্ল্যাটে আমরা যে কাজটা করেছি , বাব্বা ভাগ্যিস ওইটা বন্ধ হয়নি, খুব ভয়ে ছিলাম, যদি অঘটন ঘটত। তুমি না বড্ড দুষ্টু।
আরক্ত গালে মোহময়ী গলায় সুর তুলে মামন বলল।
রাণা মামনের নাকটা টিপে বলল – সে খেয়াল আমি রেখেছিলাম গো। কেস তো আমিও খেতাম।

প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র সংসদের বার্ষিক অনুষ্ঠান, চলছে বিতর্ক সভা। টপ থ্রি’তে আছে যারা তাদের একদলের লিডার মামন ওরফে দময়ন্তী, বিপক্ষের লিডার রানা যার পোষাকী নাম রুদ্র । মামন নমঃশুদ্র আর রাণা ব্রাহ্মণ। সবশেষে রাণা হেরে গিয়েও জিতে গেল যখন মামনকে নিমন্ত্রণ করে রবীন্দ্র সদন চত্বরে বসে আঙুল তুলে বলেছিল — I love you and want to marry, do you ? হতবাক মামন। কি বলবে ভেবে উঠতে পারছে না।
পরবর্তী পট পরিবর্তন খুব দ্রুত। রাণার পরিবার মামনের ঝকঝকে চেহারা আর মেধা দেখে গলে না গিয়ে যে মুহুর্তে জানতে পারল তার জাতের সামাজিক স্ট্যাটাস, কালবিলম্ব না করেই মামন প্রতাখ্যাত হল ।

প্রেমিককে কয়েক ঘন্টায় কাছে পাওয়া আর তাকে স্বামী হিসেবে কাছে পাওয়ার স্বপ্নটা চুরচুর হল মামনের কাছে যখন জানতে পারে বহুজাতিক সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজ সোনাগাছিতে সময় কাটায়, হেন নেশা নেই যে করে। স্তম্ভিত মামন , এ কোন রাণা !
বিয়েটা আদৌ সাদামাটা ভাবে হয়নি। রাণার বাড়ির কেউ না থাকলেও বন্ধুদের ভীড় যথেষ্ঠ ছিল। মামনদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম থাকলেও ছিল। ফুলশয্যার রাতে মামন নিজেকে উজার করে দিয়েছিল তার স্বপ্নের রাজকুমারের কাছে। একবছর বাদেই ঘরে এসেছিল বর্ষা। আর বর্ষার জন্মানোর কিছু মাস বাদেই রাণা গান ধরেছিল খরচা বেড়ে গেছে। তার মধ্যে ফ্ল্যাটের ইএমআই দিতেই না’কি তার অর্ধেক মাইনে চলে যায়। রাণা এই যে মামনকে শুনিয়ে নিজের মনে বকে যেত তাতে মামনের খারাপ লাগত। একজন পতিব্রতা স্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন ভাবে রাণাকে সান্তনা দিত। এই নিজের মনে বকবক করাটাই কিছুদিনের মধ্যে রূপ পরিবর্তন করল। রাণা সরাসরি মামনকে বলতে লাগল যে সে আর মামন ও বাচ্চার খরচ টানতে পারছে না, মামন যেন ওর বাবার থেকে টাকা নিয়ে আসে। মামনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। তার বাবা সুনীতবাবু একটা বেসরকারী অফিসের টাইপিস্ট, মাস ফুরোলে হাতে আসে ছ’হাজার, সংসার চলে না, তাই দশটা পাঁচটা অফিসের পর এক উকিলের চেম্বারে যায় , সেখানে রাত দশটা অবধি খেটে আরও হাজার তিন বা চার রোজগার করে, এইভাবে জোড়াতাপ্পি দিয়ে সংসার টানছেন। দুটো টুইলের শার্ট আর দুটো জনতা ধুতি ওনার আছে, তাই দিয়েই অফিস আর লৌকিকতা। মামন ছোটবেলা থেকেই মেধাবী, সুনীত বাবু মেয়ের লেখাপড়া নিয়ে কিন্তু কোন কম্প্রোমাইজ করেননি। যতদিন মামন স্কুলে ছিল তার মেধার জন্য দিদিমনিদের কাছ থেকে সবরকম সাহায্য পেয়েছিল। দানটা উল্টে গেল কলেজে ঢুকে , সেখানেও টপার থাকলেও অফুরন্ত সাহায্য মামন পেল না। তাই বাধ্য হয়ে টিউশানি করে নিজের পড়ার খরচ তুলেছিল। ছোটবেলা থেকেই মামন দারিদ্রের তীব্র কঠোর রূপ দেখেছে, বেসরকারী ছোট অফিসে রিটায়ারমেন্ট নেই। আজও সুনীত বাবু কুঁজো হয়ে অফিসে যায়। মালিক মরে যাবার পর পর তার ছেলে গদিতে বসে এই পুরাতন ভৃত্যকে সামান্য ভুলের জন্য দুবেলা বাপান্ত করে, হয়ত এটাই আধুনিক সমাজের রীতি। অসুস্থ মায়ের জন্য এই বয়সে বাবার এই অমানুষিক খাটনি মামন মানতে পারে না। দুচোখ ফেটে জল আসে , কিন্তু সে তো কিছুই করতে পারছে না।
কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মামনের পারফরমেন্স সকলের আগে , ঠিক তেমনই লেখাপড়াতে। আর তখনই আলাপ রাণার সঙ্গে যা পরে গভীর সম্পর্কে রজ্জুতে বাঁধা পড়ে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22
Pages ( 1 of 22 ): 1 23 ... 22পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress