মন বাউলের ছন্ন চিন্তা
এখনো ভোর হয়নি! ভোরের মায়াবী আঁধার জড়ানো প্রকৃতি বড্ড নিঝুম। চুপটি করে ছাদের কার্নিশ ধরে দাঁড়িয়ে আছি—- এটা আমার পুরনো অভ্যেস! আকাশের ছেঁড়া ছেঁড়া পেজা তুলো মেঘ আমার ভাবনার পালে হাওয়া দিচ্ছে! অভিমানী ভাবনাগুলো ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে দূর থেকে আরো দূরে—– ওই যে মায়াবী ভোর মুখের ঘোমটা খুলছে ধীরে ধীরে । বড্ড অভিমান যে ওর । তাইতো প্রকৃতি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে—- বলছে–হা হুতোশ – করো কেন? দেখনা আঁধার বুড়ি নীরবে ফিরে গেছে আর রেখে গেছে তার পরান কথার ঝুলি। আকাশ আলো রংবাহারি লুকোচুরি খেলছে। ঝিল পাডের কুকশিমা ঝোপে আলোক লতার হলুদ যেন টুকি দিচ্ছে। এক ঠেঙ্গো বক তপস্বী মাছের তপস্যা ছেড়ে মাছরাঙাদের সাথে আড্ডা জুডলো। ঠিক তখনই
জল তরঙ্গের নুপুর বাজিয়ে একটা উড়ো মেঘ
এক পশলা বৃষ্টি ঢেলে দিল। জল তরঙ্গের টুং টাং শব্দ, চাপার সুবাস মেখে ছড়িয়ে পরল চারদিকে।
দুষ্টু ছেলেদের মত হুটোপুটি লাগিয়ে দিলো উড়ো মেঘের দল। ঠিক তখনই প্রাচী কপোল রাঙ্গা হয়ে উঠল রবি সোহাগে। পূবদিগন্তে রামধনু সাত রংগি ফুলের সুবাস মেখে সারা চরাচর কে আতরগন্ধী করে তুললো। এক ঝাঁক বক পূব থেকে উড়ান টেনে দক্ষিণের মাঠে এসে নামল। সবুজের গালিচায় সাদার মিনাকারি যেন। পাখির সুরেলা কলতানে সারা মাঠ বাগান সরগরম । ফিঙে দম্পতির কি সুরেলা দাম্পত্য আলাপ। মাছরাঙ্গার আবেগী শিসে মিঠেল সুর। শাপলা দলে
জলপিপি র আলতো পদচারণা । শাপলা-শালুক তার মনের কথা। আস্তে আস্তে মাঠের নয়ানজুলিতে পাখিদের জমায়েত বাড়তে থাকে। পানকৌরি ডাহুক ফিঙে অমরকলমীর ডালে বসে
জলের সাথে গল্প জুড়ে দিলো। আমার বাউল মন আগল খুলতে চাইল যে। এক ঝাঁক শামুকখোল এসে নামল ঝিলপাড়ের পান্নাসবুজ মাঠে। তাদের ডানায় ভর করে নতুন দিন এলো যে— আশার আলো নিয়ে! আকাশমনি শ্বেতশিমুলের ডালে পাখিদের জমায়েতে কিসের উল্লাস? পুষি গুটি গুটি পাঁচিলে উঠে উঁকি দিতেই সবাই রে রে করে তেড়ে এলো। দিশেহারাপালানোর পথ পেল না বেচারা। চাঁপা গাছের ফাঁক দিয়ে সোনালী রোদ ঝিকমিকিয়ে পরলো– গিনি সোনা রোদ নতুন দিনের আগমনী গাইছে যে— কি করে যে সময় গড়িয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না! এবার তো সংসার বৃত্তে ঢুকতে হবে—-
” দুঃখের আঁধারে যদি জলে তব মঙ্গল-আলোক
তবে তাই হোক”!!