পরপর তিনটি অদ্ভূত চিঠি
রিমির কাছ থেকে পরপর তিনটি অদ্ভূত চিঠি পেলাম।
প্রথম চিঠিটির উপর লেখা—প্ৰথম কবিতা। তার নিচে আট লাইনের এক ইংরেজি কবি। অনেক চেষ্টা করেও সেই কবিতার কোনো অর্থ উদ্ধার করতে। পারলাম না। কবিতার নিচে রিমির নাম লেখা। সে নিজেই কবিতার রচয়িতা কি-না, কে জানে।
দ্বিতীয় চিঠির উপরে লেখা দ্বিতীয় কবিতা। আট লাইনের একটা বাংলা কবিতা। এই কবিতার নিচেও রিমি লেখা। বাংলা বলেই বোধহয় এই কবিতাটির অর্থ বোঝা যায়
জীবন যখন ছিল ফুলের মতো
পাপড়ি হার ছিল শত শত,
বসন্তে সে হত যখন দাতা
ঝরিয়ে দিতো দুচারটে তার পাতা,
আজ বুঝি তার ফল ধরেছে, তাই
হাতে তাহার অধিক কিছু নাই।
হেমন্তে তার সময় হল এবে
পূর্ণ করে আপনাকে সে দেবে।
তৃতীয় চিঠির শিরোনাম হচ্ছে—প্রেসক্রিপশন। সেখানে সত্যি সত্যি কী-সব ওষুধপত্রের নাম লেখা। ক্লোরামফেনিকল, ডোজ-প্ৰতি এক শ সিসি ওজনের জন্যে চার থেকে পাঁচ সিসি। বার ঘন্টা পরপর। এসবের মানে কি? আমি রিমিদের বাসায় টেলিফোন করলাম ফোন ধরলেন খালা। খালা টেলিফোন ধরবেন, এই ভয়ে আমি রিমিকে কখনো টেলিফোন করি না।
তোদের খবর কী-রে?
খবর ভালো।
কী-সব যেন শুনছি—তোর ছোট চাচী না-কি ফিরে এসেছে?
এখনো আসেন নি, তবে এসে যাবেন বলে মনে হচ্ছে।
তোদর কাণ্ডকারখানা তো কিছুই বুঝতে পারছি না। ঐ নার্স মেয়ে এখন কোথায় থাকে?
বাসাতেই থাকে।
বাসাতেই থাকে, আর কেউ কিছু বলে না?
বলার তো কিছু নেই, নিজের অধিকারে সে আছে।
অধিকার! অধিকার আবার কী?
আমি চুপ করে রইলাম। অধিকার ব্যাখ্যা করার যন্ত্রণায় যেতে ইচ্ছে করছে না। দীর্ঘ বক্তৃতায় লাভও কিছু নেই। খালার কানে হাই পাওয়ার আয়না জাতীয় কিছু। আছে। কথা যা বলা হয় ঐ আয়নার ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে।
হ্যালো টুকু।
জ্বি।
কথা বলছি না কেন?
কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেন না, তাই বলছি না।
তার মানে?
মানে কিছু নেই। আপনি কি কাইন্ডলি একটু রিমিকে দেবেন?
খালা সঙ্গে সঙ্গে গলার স্বর ভারী করে বললেন, রিমিকে কেন?
একটু দরকার ছিল।
কী দরকার?
আপনাকে বলা গেলে তো শুরুতেই বলতাম। আপনাকে বলা যাবে না।
খালা খানিকক্ষণ কোনো কথা বললেন না। রিমির সঙ্গে আমার কী দরকার। থাকতে পারে, তাই নিয়ে সম্ভবত ভাবতে বসলেন। আমার মনে হল তিনি রিমিকে ডেকে যে দেবেন না সেই অজুহাত তৈরি করতে তাঁর সময় লাগছে। আমি আবার বললাম, রিমিকে একটু ডেকে দেবেন খালা?
ওকে তো ডাকা যাবে না।
ডাকা যাবে না?
না। ও ঘুমিয়ে পড়েছে।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ঘুমিয়ে পড়ল?
ইয়ে, ওর খুব মাথা ধরেছে। বাতি-টাতি নিভিয়ে শুয়ে আছে। বলে দিয়েছে যেন তাকে ডিস্টার্ব না করা হয়। এখন ডাকতে গেলে খুব রাগ করবে।
তাহলে থাক, ডাকার দরকার নেই। একটা জরুরি কথা ছিল। থাক, অন্য সময় বলব।
এই বলেই মনে মনে হাসলাম, কারণ খালার কৌতূহল এখন তুঙ্গে উঠেছে। রিমিকে না ডেকে পারবে না। তাকে ডাকবেন এবং টেলিফোনের কথাবার্তা শোনার প্রাণপণ চেষ্টা করবেন।
খালা বললেন, জরুরি কথাটা আমাকে বল। ও ঘুম থেকে উঠলে বলে দেব।
আপনাকে বলা ঠিক হবে না। ভয়-টয় পাবেন।
ভয় পাব কেন? ব্যাপারটা কী?
আপনাকে বলা যাবে না খালা। আচ্ছা রাখি…
একটু লাইনে থাক, আমি দেখি রিমিকে আনা যায় কি-না।
আমি টেলিফোন কানে নিয়ে বসে রইলাম। খালা রিমিকে ডাকতে গেলেন।
রিমি টেলিফোনের রিসিভার হাতে নিয়েই শীতল গলায় বলল, কাল সকাল দশটায় নিউমার্কেটে বইয়ের দোকানগুলোর আশপাশে থাকবি।
আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে খট করে টেলিফোন নামিয়ে রাখল। আমি বৃথাই খানিকক্ষণ হ্যালো, হ্যালো করলাম।
মনস্থির করে ফেললাম, আগামীকাল সকাল দশটায় নিউমার্কেটের ধারেকাছেও আমি থাকর না। আমাকে না দেখে সে অবাক হবে, দুঃখিত হবে, বিস্মিত হবে। এই তিন ধরনের অনুভূতি একত্রে খানিকক্ষণ খেলা করবে, তারপর রাগে তার শরীর জ্বলে যাবে। জ্বলুক। ডাক দিলেই ছুটে যেতে হবে? রূপবতীদের একসময়-না-একসময় বুঝিয়ে দিতে হয় তাদের ডাক নিশিডাকের মত না। তাদের ডাকও অগ্রাহ্য করা যায়।
তাছাড়া ওর ডাকে ছুটে যাওয়া মানে সেধে অপমানিত হওয়া। একবার ঠিক দুপুর দুটায় বোটানিক্যাল গার্ডেনে যেতে বলল। কাঁটায় কাঁটায় দুটার সময় আমি যেন দুপ্যাকেট চিপস এবং এক প্যাকেট কাজুবাদাম নিয়ে উপস্থিত থাকি। বোটানিক্যাল গার্ডেন কি এখানে? মিরপুর ছাড়িয়েও আরো অনেকখানি। দুপুরে না খেয়ে তিনবার বাস বদল করে ঘামতে ঘামতে পৌঁছলাম। সাড়ে তিনটা পর্যন্ত গেটে লাইটপোস্টের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। রিমির দেখা নেই। খিদেয় অস্থির হয়ে চিপস এবং কাজুবাদাম নিজেই খেয়ে ফেললাম এবং খুব ঠাণ্ডা মাথায় পর পর তিনবার বললাম, রিমি নামে কাউকে আমি চিনি না, রিমি নামে কাউকে আমি চিনি না, রিমি নামে কাউকে আমি চিনি না।
তবে নিউমার্কেট হাতের কাছে। ইচ্ছা করলে একবার উঁকি দিয়ে দেখা যায়। এই মুহূর্তে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু আমি জানি ইচ্ছা করবে। দশটা বাজার কয়েক মিনিট আগে মনে হবে বিশ্ব-সংসার রসাতলে যাক, আমি নিউমার্কেটে যাব।
আগামীকাল বাসায় থাকা আমার খুবই জরুরি। কারণ মির্যাকল ঘটে গেছে। ছোট চাচী সত্যি সত্যি চলে আসছেন। দুই পক্ষের কথাবার্তায় ঠিক হয়েছে অতীত ভুলে নতুন করে সব শুরু করা হবে। পুরনো কথা ভোলা হবে না। যা হবার হয়ে গেছে। নার্স মেয়েটিকে টাকা-পয়সা দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে ব্যবস্থা করা হবে। সবার ধারণা, এই মেয়ে বেঁকে বসবে। এরকম কিছু হলে শক্ত হতে হবে। দরকার হলে ভয় দেখাতে হবে। ছোট চাচা তাঁর ফাইনাল কথা বলে দিয়েছেন। তিনি আমার মাকে ছাদে ডেকে নিয়ে বলেছেন—আপনারা যা ভালো বোঝেন করেন, আমার কিছু বলার নেই। মা এই কথা শুনে বিজয়ীর ভঙ্গিতে নেমে এসেছেন।
আজ রাতে সমিতাকে বড় চাচার ঘরে ডাকা হবে। সেখানে শুধ মরুরীরা থাকবেন। তাঁরা তাকে বোঝবেন, দরকার হলে ভয় দেখাবেন। এই আসরে ছোট চাচীর বাবা জাজ সাহেবও থাকতে চেয়েছিলেন, তাঁকে নিষেধ করা হয়েছে। বড় চাচা বলেছেন, আমাদের সমস্যা আমরাই মেটাব। আপনি মুরুত্বী মানুষ আপনার থাকার দরকার নেই। জাজ সাহেব বলেছেন, লিগ্যাল পয়েন্টগুলো মেয়েটিকে ভালোমলতা বুঝিয়ে দেবেন। তাকে পরিষ্কার বলবেন যে, তার বিয়ে অসিদ্ধ। কোর্ট এ্যাকসেপ্ট করবে না। আমরা কোর্টে প্রমাণ করে দেব যে, ছেলেকে ট্রাপে ফেলে এই বিয়ে করা হয়েছে। বিয়ের মূল লক্ষ ছিল অর্থ আত্মসাৎ। এটা প্রমাণ করা গেলে তারই বিপদ, উল্টো জেল খাটতে হবে। আপনারা বলবেন যে, আমরা কোর্ট-ফোর্টের ঝামেলায় যাব না, শান্তিপূর্ণ সমাধানই আমাদের লক্ষ।
বড় চাচা বললেন, সব পয়েন্ট বলা হবে।
শুধু পয়েন্ট বললে হবে না থ্রেট করতে হবে। এই জাতীয় মেয়েরা তেড়িয়া কিসিমের হয়। এদের ঘাড়ের রগ থাকে একটা মোটা।
কারেক্ট বলেছেন। একটা না, এদের ঘাড়ের সব কটা রগ থাকে মোটা।
দেখা গেল সমি নামের মেয়েটির ঘাড়ের রগ মোটা নয়, সে তেড়িয়া কিসিনেরও নয়। বড় চাচার ঘরের মাঝখানের চেয়ারে শান্ত ভঙ্গিতে বসে রইল। আমি তার মুখের ভাব দেখতে পারছিলাম না। কারণ, আমি ঘরের বাইরে জানালার পর্দার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছি। মেয়েটির পেছনটা দেখতে পাচ্ছি।
বড় চাচা বললেন, আমি কী বলছি বুঝতে পারছ?
পারছি।
তোমার কি কিছু বলার আছে?
না।
বলার থাকলে বলতে পার। আমরা তোমার কথাও শুনব। আমরা ঝগড়া করতে বসি নি।
আপনারা কি আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলছেন?
অবশ্যই।
আপনার ছোট ভাই অর্থাৎ ডাক্তার সাহেব, তিনিও কি তাই চান?
সে না চাইলে আমরা মিটিঙে বসলাম কেন? সে-ই বেশি চাইছে।
বেশ, আমি চলে যাব।
বড় চাচা অত্যন্ত রাসভারী গলায় বললেন, তোমার যদি কিছু বলার থাকে, বলতে পার। আমরা শুনব।
আমার কিছুই বলার নেই।
তুমি যদি মনে কর কোর্টের আশ্রয় নেবে, তাহলে ভুল করবে।
আপনাদের চিন্তার কিছুই নেই। আমি কোর্টে যাব না।
অবশ্যি তমি চাইলে কমপেনসেশনের ব্যাপারটা নিয়েও আমরা চিন্তা করব। এটা আমরা পুরোপুরি রুল আউট করে দিচ্ছি, তা না। যদিও লিগ্যালি ইউ আর নট বাউন্ড।
সমিতা সবাইকে অবাক করে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। শান্ত গলায় বলল, আমি তাহলে যাই।
এখনি যাবে?
হুঁ। মেয়েটা থাকবে। কোথায় গিয়ে উঠবো কোনো ঠিক নেই। আগে একটা থাকার ব্যবস্থা করে তারপর ওকে নিয়ে যাব।
এখনই যে যেতে হবে, তা না। কাল ভোরে মেয়েটাকে নিয়ে একসঙ্গে যাও।
আপনাদের ভয় করার কিছু নেই। মেয়েটাকে আমি আপনাদের ঘাড়ে ফেলে রেখে যাব না। নিয়ে যাব। দু এক দিনের মধ্যেই নেব। আমি যাব আজ রাতেই।
সবার বুক থেকে পাষাণ ভার নেমে গেল। এত বড় একটা ঝামেলা এত সহজে মিটে যাবে, তা কেউ ভাবে নি।
সমিতা আমার ঘরে ঢুকে খুব সহজ গলায় তার মেয়ের সঙ্গে কথা বলল। তাদের পুরো কথোপকথনটি হল আমার সামনে। যেন সমবয়েসী দুজন মানুষ কথা বলছে।
মা-মণি, আমি আজ রাতে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
আমিও কি যাচ্ছি?
না, তুমি আরো দু একদিন থাকবে। পারবে না?
পারব।
আগের বাসাটা তো ছেড়ে দিয়েছি। কোথায় গিয়ে উঠব তা তো জানি না। কাজেই এখন তোমাকে নিচ্ছি না। বুঝতে পারছ?
পারছি। মা, ওরা কি তোমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে?
হ্যাঁ।
আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল, ওরা তাড়িয়ে দেবে।
তাহলে মামণি আমি এখন যাই?
আচ্ছা যাও।
সমিতা ঘর থেকে বের হবার আগে থমকে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি কি কিছু বলবে? লরেটা শান্ত গলায় বলল, এই কদিন কি আমি স্কুলে যাব?
দরকার নেই। একা একা এত দূর যেতে পারবে না।
টুকুকে বললে ও আমাকে নিয়ে যাবে।
সমিতা বিস্মিত হয়ে বলল, নাম ধরে ডাকছ কেন?
ও তো আমার বন্ধু; কাজেই নাম ধরে ডাকছি। ও আমাকে নাম ধরে ডাকতে বলেছে।
সমিতা পূর্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। পূর্ণ দৃষ্টিতে কেউ যখন তাকায় তখন তার চোখের ভেতর দিয়ে তাকে অনেকখানি দেখা যায়। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, সমিতা নামের এই মেয়েটি তো বড় ভালো। আমি বললাম, আপনি চিন্তা করবেন না। আমি ওকে দেখেশুনে রাখব।
সমিতা কিছু বলল না। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল।
রাত নটায় একটি বেবিট্যাক্সি ডেকে আনা হল। সমিতা একটা বড় সুটকেস, একটা হ্যান্ডব্যাগ এবং একটা বেতের ঝুড়ি নিয়ে পেছনের সিটে উঠে বসল। বিদায়ের সময় পুরুষদের কাউকে দেখা গেল না, তবে মেয়েরা সবাই এল। মা বললেন, টুকু, তুই এর সঙ্গে যা। রাত হয়েছে, পৌঁছে দিয়ে আয়।
সমিতা না-সূচক কিছু বলতে যাচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত বলল না। সম্ভবত তার কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না। আমি ড্রাইভারের পাশে জায়গা করে বসে পড়লাম। গাড়ি উত্তর শাহজাহানপুর ছাড়িয়ে প্রায় বস্তির মতো কিছু ঘরবাড়ির সামনে থামল। জায়গাটা ঢাকা শহরের ভেতরে হলেও ইলেকট্রিসিটি নেই। কাছেই কোথাও মিউনিসিপ্যালিটির আবর্জনা ফেলে নিচু জায়গাটা ভরাট করা হচ্ছে। সেই আবর্জনার ভয়াবহ উৎকট গন্ধ। নাডিডি উলটে আসার জোগাড়।
আমরা গাড়ি থেকে নামলাম। অনেকটা রাস্তা হেটে যেতে হবে। আমি বললাম, সুটকেসটা আমাকে দিন। মেয়েটা বিনা বাক্যব্যয়ে সুটকেস দিল। বেবিট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে রেখে আমরা রওনা হলাম। সারা পথ কথাবার্তা হল না। একটা একতলা দালানের সামনে এসে সমিতা বলল, এই বাড়ি।
আমি সুটকেস নামিয়ে নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম, আমি দুঃখিত এবং লজ্জিত।
সমিতা অসম্ভব নরম গলায় বলল, কেন?
আমি সেই কেন-র জবাব দিতে পারলাম না। সুটকেস নামিয়ে রেখে এলাম। বেবিট্যাক্সির কাছে এসে ঘাড় ফিরিয়ে দেখি, সমিতা তখনো ঘরে ঢেকে নি। তার জিনিসপত্র নিয়ে অন্ধকারে একতলা বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ঠিক করে রেখেছিলাম, সকাল সাড়ে দশটায় নিউমার্কেটে যাব না। রিমি রাগ হলে হোক, বিরক্ত হলে হোক।
যে রকম ভেবে রেখেছিলাম, সে রকম করা গেল না। আমি সাড়ে দশটা বাজার পনেরো মিনিট আগেই এসে উপস্থিত হলাম। বারোটা পর্যন্ত হাঁটাহাঁটি করলাম বইয়ের দোকানগুলোর সামনে। রিমির দেখা নেই। সাড়ে বারোটায় এক ডিসপেনসারি থেকে টেলিফোন করলাম। রিমি বাসাতেই আছে। আমি আহত স্বরে বললাম, রিমি, তোর না আসার কথা। রিমি বলল, আমি আসব, এমন কথা তো বলি নি। তোক আসতে বলেছি।
কেন?
এম্নি।
এম্নি কেন?
এম্নি মানে এম্নি। আচ্ছা শোন, তুই প্রেসক্রিপশনটা পেয়েছিল?
হ্যাঁ, কিসের প্রেসক্রিপশন?
ঘোড়া এবং গরুর অসুখ-বিসুখ হলে এই প্রেসক্রিপশন পশুডাক্তাররা দেন। তোকে দিচ্ছি, কারণ, তোর কাজে লাগবে।
ও আচ্ছা।
রাগ করলি নাকি?
না।
তোর কথা শুনে কিন্তু মনে হচ্ছে রাগে কাঁপছিস।
কিছুটা রাগ যে করি নি, তা না। তবে রাগে কাঁপছি না।
আচ্ছা, আমি কি তোর সঙ্গে একটু ঠাট্টাও করতে পারব না?
ঠাট্টা।
হ্যাঁ ঠাট্টা। আজ দিনটা ঠাট্টার জন্যে চমৎকার। তুই ভুলে বসে আছি, আজ তোর জন্মদিন। গত জন্মদিনে তোক বলেছিলাম না আগামী জন্মদিনে তোকে ঘোল খাওয়াব? মনে পড়েছে?
হ্যাঁ, মনে পড়েছে।
এখনো রাগ আছে?
না।
তোর জন্যে একটা উপহার কিনে গতকাল নওরোজ কিতাবিস্তানে দিয়ে এসেছি। ওখানে গিয়ে আমার নাম বললেই দেবে।
এটাও নিশ্চয়ই ঠাট্টা?
না, ঠাট্টা না। পরপর দুবার ঠাট্টা করা যায় না। লেবু একবারই কচলানো যায়। দুবার কচলালে তেতো হয়ে যায়। উপহার তোর পছন্দ হয়েছে কিনা জানাবি। সুন্দর করে গুছিয়ে চিঠি লিখে জানাবি।
আর যদি অপছন্দ হয়?
অপছন্দ হলে চিঠি-ফিটি লিখতে হবে না। তবে অপছন্দ হবে না। যদিও তার রুচি খুব খারাপ।
থ্যাংকস।
থ্যাংকস কেন? উপহারের জন্যে? নাকি জন্মদিন মনে রাখার জন্যে?
জন্মদিন মনে রাখার জন্যে।
তোর নিজের মনে ছিল না। তাই না?
হ্যাঁ, তাই।
তুই যা। নওরোজ কিতাবিস্তানে চলে যা। গিয়ে আমার নাম বলবি।
আচ্ছা যাচ্ছি। থ্যাংকস এগেইন।
বার বার থ্যাংকস দিতে হবে না। এটা বিলেত-আমেরিকা না। ফোন রাখলাম। হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।
আমি সেই দোকানে গেলাম। দোকানের মালিক অবাক হয়ে বললেন, কই, আমাদের কাছে তো কেউ কিছু দিয়ে যায় নি।