Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

আমাদের অনুমান ভুল হয়নি। মাংসের শিঙাড়া-তোতাপুলিতে টঙের ঘরের আবহাওয়াই বদলে দিয়ে গেল।

কাঠপোড়া ছাইয়ের ভরসাতেই নিশ্চয়, অকুতোভয়ে কণ্ঠা পর্যন্ত বোঝাই করে ঘনাদা নীচে থেকে বয়ে আনা আরামকেদারায় গা এলিয়ে দিলেন বটে, কিন্তু তা শুধু দুমিনিটের জন্য শিশিরের ধরিয়ে দেওয়া সিগারেটে কটি সুখটান দিয়ে যেন ভেতরের স্টিম তোলবার জন্য।

সুখটান শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে বসে ধোঁয়ার কুণ্ডলিতেই যেন পাকিয়ে ঘনাদা, আট কোটি কিলোমিটার থেকে উপাখ্যানের রকেট একেবারে উপক্রমণিকায় টেনে এনে যেখানে নামালেন সেটা রাজস্থানের মরু বলেই মনে হল।

হ্যাঁ, ঘনাদা স্মরণশক্তিটা যেন ঠিক মতো ফোকাস করে বললেন, দিল্লি থেকে আমেদাবাদ যাচ্ছিলাম। আচমকা ওই অমন একটা বেয়াড়া জায়গায় বাধ্য হয়ে প্লেনটা নামাতে না হলে সুরঞ্জন আর বটুককে তাদের দলের কাছে ভালয় ভালয় আমেদাবাদে পৌঁছে দিয়ে আমি একটা বাংলার নাটুকে দলের মান বাঁচাই। আমার জানা টহলদার এক নাটুকেদল দিল্লি-আগ্রা হয়ে আমেদাবাদে গিয়েছিল নাটক দেখাবার বায়না নিয়ে। নাটক আবার কবিগুরুর রক্তকরবী আর চিরকুমার সভা। রক্তকরবীর রঞ্জন যে করবে সে নাকি পা ভেঙে হাসপাতালে। আর অক্ষয়ের পার্ট যার করবার কথা সে রিহার্সেলেই বেসুরো গেয়ে নিজে থেকেই হাওয়া। দিল্লিতে আমার কাছে তাই টেলিগ্রাম—যেমন করে হোক রঞ্জন আর অক্ষয়ের পার্ট নেবার মতো হিরো পাঠান। নইলে বাংলার মান যায়।

বিপদ বুঝলাম। কিন্তু কাকে পাঠাব? দেবব্রত, দ্বিজেন মুখুজ্যে, না সবিতাব্রত? উত্তমকুমার, না সৌমিত্র? বড় গাইয়ে বা হিরো কি মুড়ি-মুড়কির মতো সস্তা! বড় তো দূরের কথা, ছোটখাটোদেরও এখন পায়া কি কম ভারী! দেশ ছেড়ে আমেদাবাদে কারও প্রক্সি দিতে যেতে তারা রাজি হবে কেন?

এমন সময় সুরঞ্জনের কথা মনে পড়ল। হ্যাঁ, সুরঞ্জন রাজি হলে একাধারে সব সমস্যা মিটে যায়। পেশাদার নয়, শৌখিন। সে একাই রক্তকরবীর রঞ্জন আর চিরকুমারসভার অক্ষয় দুই-ই অনায়াসে চুটিয়ে চালিয়ে দিতে পারবে। যেমন চেহারা, তেমনই অভিনয়, তেমনই গানের গলা।

সুরঞ্জন—সুরঞ্জন সরকারের নাম কেউ নিশ্চয় এ কালে শোনেনি। শুনবে কোথা থেকে? এ দেশ তার প্রতিভার পরিচয় পাবার সুযোগই পেল কতটুকু? সে এ দেশে থাকলে এত দিনে নাটক সিনেমা সাহিত্য সব কিছুর সাপ্তাহিক-মাসিক বার্ষিকগুলোর মলাট তারই একরকম একচেটে হয়ে থাকত।

সুরঞ্জনের কথা মনে হতেই তার হোটেলে ফোন করলাম। সুরঞ্জন ভাগ্যক্রমে তখন দিল্লিতে একটা ছোটখাটো জলসায় গাইতে এসেছে। আমার প্রস্তাব শুনে একটু দোনামোনা করে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল। তাকে অবশ্য অনেক করে বোঝাতে হয়েছিল। তাতেও কিছু হয়তো হত না। পয়সাওয়ালা বড় ঘরের ছেলে। গান বাজনা অভিনয় তার শখ। তাই বলে কোনও টহলদার নাটুকে দলের হয়ে গাইতে বা অভিনেতার প্রক্সি দেবার তার কী দায় পড়েছে।

শেষ পর্যন্ত এক যুক্তিতেই তাকে কাবু করতে পারলাম। বাংলা দেশ নয়, আলাদা প্রদেশ গুজরাট। সেখানে রবীন্দ্রনাথের নাটক গুবলেট হয়ে তাঁর নামের অমর্যাদা হওয়াটা কি ভাল হবে? তাঁর আর বঙ্গভূমির খাতিরেই যেমন করে হোক আমাদের এ দায় উদ্ধার করে দেবার চেষ্টা করতেই হবে। শুধু তাকেই তা নয়, আমাকেও কী বলে এককথায় দিল্লি ছেড়ে যেতে হচ্ছে তো!

আপনি তখন বুঝি দিল্লিতে থাকতেন? শিবু প্রশ্নটুকু বুঝি আর না করে পারলে না।

শিবুর ওপর ঘনাদা আজ একটু খুশি, নইলে বেফাঁস বাগড়া দেবার বেয়াদবির ফল কী হত কে জানে!

ঘনাদা এককথায় মুখে হয়তো কুলুপই এঁটে দিতেন।

আজ কিন্তু তিনি ঈষৎ একটু হেসে শুধু বললেন, হ্যাঁ, তখন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে হত।

ঘনাদার মুখের দিকে চেয়ে তটস্থ হয়ে ছিলাম এতক্ষণ! তাঁর এ কথায় হাঁফ ছেড়ে শিবুকে ধমক দেওয়ার ছলে তাঁকে আমড়াগাছির আর কি কিছু বাকি রাখি!

গৌর শিবুকেই যেন একহাত নিলে, ঘনাদা দিল্লিতে থাকবেন তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে!

ক্যাবিনেট ক্রাইসিস-এর জন্যই থাকতে হত নিশ্চয়।

আমি আর শিশির যেন নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে নিলাম।

শুধু ক্যাবিনেট ক্রাইসিস কেন? গৌর আমাদের সংশোধন করলে, ডিফেন্সের কোনও প্রবলেম হলে—ওঁকে ছাড়া ডাকবে কাকে?

ওসব কথা থাক না—ঘনাদার যেন নিজের গৌরবের কথা বিনয়ে বাধল। তাই। চাপা দিয়ে বললেন, সুরঞ্জন ওই যুক্তিতেই কাত হয়ে শেষ পর্যন্ত রাজি হল যেতে। কিন্তু একটি শর্ত। বটুক মানে বটুকেশ্বরকে সঙ্গে নিতে হবে। বটুকেশ্বর হল সুরঞ্জনের খাস বাটলার বলতে যা বোঝায় তাই। সুরঞ্জনের খাওয়াদাওয়া পোশাকআশাক থেকে সবকিছু দেখাশোনার ভার বটুকের ওপর। শুধু তাই নয়, বটুক সুরঞ্জনের গানের তবলচি, অভিনয়ের মেকআপম্যান। বটুক বাদে সুরঞ্জনের সবকিছু অচল।

এ হেন বটুককে সঙ্গে নেব সে আর বেশি কথা কী! তখন যা গরজ, সুরঞ্জন আবদার ধরলে অমন দশটা বটুককে নিতেও আপত্তি করতাম না।

দিল্লি থেকে আমেদাবাদে যাবার তখনও রেগুলার প্লেন-সার্ভিস হয়নি।

ভাড়াই করলাম তাই একটা ছোট প্লেন দিল্লি ফ্লাইং ক্লাব থেকে।

দেরি করবার সময় নেই। পাইলটের খুতখুঁতনি সত্ত্বেও সাত-তাড়াতাড়ি সেইদিন দুপুরেই রওনা হলাম। কতক্ষণের বা মামলা। সোজা গেলে বড়জোর শ-বারো কিলোমিটার। খুব বেশি লাগে তো ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যেই পৌঁছে যাব।

পাইলট খুঁতখুঁত করেছিল ঝড়ের ভয়ে। বছরের ওই সময়টায় বিকেলের দিকে প্রায়ই নাকি ও অঞ্চলে বেশ দুরন্ত ঝড় ওঠে। আবহাওয়া অফিস থেকে সেদিন নাকি ওই রকম ঝড়ের পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে।

ওই পূর্বাভাস শুনেই যেটুকু দ্বিধা ছিল সব কেটে গেল।

হাওয়া অফিস বলেছে ঝড় হতে পারে! পাইলটকে হেসে বললাম, তা হলে তো আর ভাবনাই নেই! বেপরোয়া হয়ে প্লেন ছাড়তে পারো ঝড় সম্বন্ধে আজকের দিন অন্তত নিশ্চিন্ত।

হাওয়া অফিসের কথা সেইদিনই বেদবাক্য হয়ে উঠবে তা কি ভাবতে পেরেছি।

জয়পুর ছাড়াবার পরই সত্যি সত্যিই চোখে অন্ধকার দেখলাম। মরুভূমির ঝড়! আকাশ বাতাস মাটি সব একাকার করে শুধু বালির ঝাপটা।

সে তো আর যন্ত্রে চালাবার অটোমেটিক কন্ট্রোলের হাল-আমলের প্লেন নয়। সেকালের পাখা ঘোরানো হালকা প্লেন। চোখে দেখে চালাতে হয়।

প্রচণ্ড বালির ঝড়ে কানা করে কোথায় যে আমাদের নিয়ে চলল তা বোঝাই গেল না।

ইষ্টদেবতার নাম জপ করতে করতে পাইলটের শুধু তখন চেষ্টা প্লেনটা নীচে আছড়ে না পড়ে।

সে চেষ্টা সফল হল। কিন্তু কোথায় যে প্লেনটা নামল তার হদিসই পাওয়া গেল। ভারতবর্ষের মধ্যেই আছি, না ঝড়ের দাপটে পশ্চিম পাকিস্তানেই গিয়ে পড়েছি, তা-ও জানবার উপায় নেই।

এমন কিছু দূর নয়। একটু দিক ভুল হয়ে থাকলে সে মুলুকে গিয়ে পড়ার খুবই সম্ভাবনা।

প্লেন কোনওরকমে নামাতে পারলেও ঝড়ের হাত থেকে তখনও রেহাই নেই। প্লেনসুদ্ধ আমাদের হাওয়ার বেগেই বুঝি উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *