Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভ্রমর কইও গিয়া || Taslima Nasrin » Page 6

ভ্রমর কইও গিয়া || Taslima Nasrin

ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। আলতাফ অফিসে চলে যাবার পর সিদ্ধান্ত নিই আলতাফ যখন যাবে না, নিজেই যাব। রুবিনার বাড়িতে ফোন করে ডাক্তারের ঠিকানা পাওয়া যায়। নয়াপল্টনে বসেন, সকালে দেখানো যায়। নয়াপল্টনে সেই ডাক্তারের চেম্বার খুঁজে বের করি। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না। ডাক্তারের দেখা মেলে। ভয় ভয় লাগে। ডাক্তার জিজ্ঞেস করেন রোগী কে। রোগী যে ঠিক কে আমি বোঝাতে পারি না। বুড়ো মত ডাক্তার ভদ্রলোক ছাড়াও রুমে আরও লোক ছিল। বেশ লজ্জা করছিল বলতে কার অসুখ কী অসুখ। সাহস করে একা একা ডাক্তার পর্যন্ত চলে এসেছি বটে কিন্তু কী কথায় বা কী ভাষায় যে এসব বলা যায় আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। ওঁরাই আমাকে প্রশ্ন করলেন আমি ম্যারেড কি না। ম্যারেড জানবার পর প্রশ্ন স্বামী কোথায় স্বামী আসেনি কেন আসেনি এধরনের আরও প্রশ্নের জবাব দেবার পর আমার সমস্যা কি জানতে চাইলেন ডাক্তারের এসিসটেন্ট। কয়েকজোড়া কান সজাগ আমার সমস্যা শুনবার জন্য। অপ্রস্তুত বোধ করলাম। এত ব্যক্তিগত সমস্যা কি একঘর মানুষের সামনে হড়হড় করে বলে ফেলা যায়। ঢোক গিলে গিলে টেবিলের কোণা নখে খুঁটে খুঁটে চোখ নিচের দিকে নামিয়ে যা বললাম তা হল রাতে স্বামীর সঙ্গে যা হয় তা আমার ভাল লাগে না। কেন ভাল লাগে না? ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন। বলতে সংকোচ হয় আবার রুবিনা ভাবীর কথাও মনে হয়, তিনি বলে দিয়েছেন ডাক্তারের কাছে কিন্তু লজ্জা শরম ভেঙে সব বলবেন; তাই খানিক থেমে, খানিক কেশে আমি বলি–আমি কোনও সুখ টুখ পাই না?

–স্বামীর কি ইরেকশান হয়?

ডাক্তারের কথায় কোনও উত্তর দিতে পারি না। উত্তর দেব কী, ইরেকশান মানেই আমি বুঝতে পারি না। নিরুত্তর আমাকে ডাক্তার বুঝিয়ে বললেন ইরেকশান মানে কী। আমি বললাম আমি জানি না ওর এসব হয় কি না।

ডাক্তার প্রেসকিপশান লিখবার জন্য কলম খুলেছিলেন, বন্ধ করে বললেন স্বামীকে আসতে হবে।

–ও যে আসতে চায় না!

–রোগী না এলে ট্রিটমেন্ট হবে কী করে! আমাদের তো দু’জনকে পরীক্ষা করে বুঝতে হবে।

আমি মাথা নেড়ে চলে এলাম। বাড়ি ফিরতেই শাশুড়ি বললেন–একা একা কোথায় গিয়েছিলে?

–ডাক্তারের কাছে।

–কেন?

–একটু অসুবিধে ছিল।

–অসুখ বিসুখ হলে আলতাফ তোমাকে নেবে। তুমি বাড়ির বউ একা যাবে কেন? আর আমাকেই বা বলে গেলে না কেন?

–আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন।

–ঘুমিয়ে থাকলে একা চলে যাবে এ কেমন কথা? আমার কি চিন্তা হয় না? কোথায় গেলে, কী হল না হল।

–আমি তো বলেই গিয়েছি রমজানের কাছে, যে, জরুরী কাজে বাইরে গেলাম।

–তুমি বলে গেলেই তো হবে না। আমাদের বুঝতে হবে আদৌ তোমার বাইরে যাওয়া দরকার কি না। ডাক্তারের কাছেই বা কেন যাবে।

আমি কোনও কথা না বলে শোবার ঘরে চলে যাই। কোলের কাছে বালিশ আঁকড়ে নিয়ে শুয়ে থাকি। আলতাফ বিকেলে ফিরলেই খবরটি তাকে পরিবেশন করা হয়, আমি একা বাইরে গিয়েছিলাম। শাশুড়ি এও বললেন-বউমার নাকি শরীর খারাপ। শরীর খারাপ হলে ডাক্তারের কাছে তুই কি নিয়ে যেতে পারিস না? বাড়ির বউ সে, তার কি একা যেতে হবে ডাক্তারের কাছে? লোকে বলবে কী। আলতাফ একটি কথা না বলে ঘরে আসে। এসেই তার জিজ্ঞাসা, কোথায় গিয়েছিলে?

–নয়াপল্টন।

–কেন?

–ডাক্তারের কাছে।

আলতাফের মুখচোখ লাল হয়ে ওঠে। বলে–ডাক্তারের কাছে মানে? অসুখ হয়েছে নাকি তোমার?

আমি কোনও উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে থাকি আলতাফের চেপে রাখা চোয়ালের দিকে। আলতাফ একসময় চোখ নামিয়ে নেয় তার। সে রাতে সেও পাশ ফিরে ঘুমোয়। আমিই তাকে আলতো পর্শে জাগাই। বলি–তুমি কি রাগ করেছ?

কথা বলে না আলতাফ। রাগ তো করেছেই সে। ভাবি, তাকে আদর করে বোঝাই। এ যদি কোনও রোগ হয়, রোগের তো চিকিৎসা প্রয়োজন। কণ্ঠে মমতা এনে বলি–আমি তো আমাদের ভালর জন্যই ডাক্তারের কাছে গিয়েছি।

আলতাফ হঠাৎ চিৎকার করে বলে–তুমি তোমার রোগ সারাতে গিয়েছিলে। আমার রোগের কথা বল কেন? আমাদের শব্দটা দয়া করে উচ্চারণ করো না।

কথাগুলো সে এমন চিবিয়ে চিবিয়ে বলে যে তার গা থেকে আমার হাত সরে যায়। আমার উৎসাহ উবে যায়।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *