ভোরের ফুল
‘আহা হা হা,না হয় বাচ্চা মেয়ে গাছের দুটো ফুল কুড়িয়েছে তাবলে মা তুমি ওভাবে চ্যালাকাঠ ছুঁড়ে মারবে?!’
ঝি পুতুল কান্নায় কঁকিয়ে ওঠা ফুলকিকে নিয়ে দৌড়ালো পুকুরপাড় দিয়ে দেখে রমা,এ বাড়ির বউ রেগে অস্থির।’ইস এভাবে পারা যায় এমন মানুষকে নিয়ে সংসার! নিজের ছোট নাতনি যে ফুল তুলে মালা গাঁথবে তাতেও সারাদিন গজ গজ!কিরকম মানুষ বুঝিন বাপু!’
পুতুল এই জন্য আনতে চায় না এবাড়িতে মেয়েকে!কোথায় না কোথায় হাত দিয়ে ফেলবে আর দাদা বৌদিদের অশান্তি ভোগ করতে হবে।
এত ভালো ছেলে বৌমা থাকতে কিনা আশি বছর বয়সে কাঠের জ্বালে নিজের রান্না করে ঠাকুমা।ওসব নাকি ছোঁয়াছুঁয়ি,পাপ হবে।আজ বাড়িতে কেউ না থাকায় পুতুল মেয়েকে সঙ্গে এনেছিল বাধ্য হয়ে কাজের বাড়ি! বাচ্চা মেয়েটা পড়ে থাকা ফুল তুলছে দেখে জ্বলন্ত কাঠ ছুঁড়েছে দেখে ছেলে বুম্বা তো অবাক!প্রশ্ন জাগছে মা কি সাইকো হয়ে উঠছে দিন দিন।
‘এই তুমি যাও হসপিটাল নিয়ে ফুলকিকে,আহারে এক রত্তি মেয়েটা!’গাড়ি বের করে স্টার্ট দিলো বুম্বা।শুধু হাত পুড়েছে তাই নয়,কানের নিচে জোর আঘাতে পুতুলের মেয়ে এখনো অজ্ঞান!
তিন রাত্রি যমে মানুষে টানাটানি শেষে মৃত ফুলকির দেহ গ্রামে এলো ভোর রাত্রে।কান্নার রোল আর গোটা গ্রাম ফুঁসছে রাগ ঘেন্নায় বুড়ি ঠাম্মার প্রতি।কেউ বলছে ,”জ্বালিয়ে দাও বুড়িকে,ও ডাইনি।”সবাইকে অবাক করে ধীর পায়ে ঠাকুমা হেঁটে এলো-এক আঁচলা ভোরের ফুল ঢেলে দিলো মৃত বাচ্চাটার শরীরে,ঢলে পড়লো নিজেও। ক্ষনিকের স্তব্ধতা-এ কি লুকানো ছুরিতে নিজের বুকে সজোরে বিঁধেছে বুড়ি!সাদা ফুল গুলো রক্তে লাল হয়ে গেছে।এক রাশ বিষণ্নতা ঘিরে দুই মৃতদেহ।