সরু রাস্তা দিয়ে
সরু রাস্তা দিয়ে পাথরের ওপর পা দিয়ে-দিয়ে নীচে নামা সত্যিই বড় কষ্টকর। একটানা নীচে নামা নয়, মাঝে-মাঝে আবার ওপরেও উঠতে হয়। ডক্টর চিরঞ্জীব শাকসেনাই একটু পরে হাঁপিয়ে গেলেন। অথচ কাকাবাবুর মুখে কোনও পরিশ্রমের চিহ্ন নেই। অন্য কেউ নিষেধ করলেও কাকাবাবু শুনছেন না, আবার নিজের কোনও রকম অসুবিধে হলেও কারুকে জানাবেন না।
যে বড় গুহাটার সামনে মিংমাকে একজন মেরেছিল, সেখানে পৌঁছে আমি বললুম, কাকাবাবু, ঠিক এই জায়গায় সেই লোকটা—
কাকাবাবু ডক্টর শাকসেনাকে ঘটনাটা শোনালেন।
উনি তো খুবই অবাক। আদিম গুহা-মানবের ছদ্মবেশ? এ রকম উদ্ভট চিন্তা কার মাথায় আসতে পারে?
কপাল কুঁচকে খানিকক্ষণ চিন্তা করে উনি বললেন, আর বোধহয় যাওয়া উচিত নয় আমাদের। অন্তত পুলিশ দুজনকেও সঙ্গে আনলে হত!
কাকাবাবু বললেন, এতখানি যখন নেমেছি, তখন সেই গুহাটা আমি একবার দেখে আসতে চাই।
শোনো রাজা, এখানে যদি কয়েকজন খুনে-গুণ্ডা লুকিয়ে থাকে, আমাদের পক্ষে তা বোঝার উপায় নেই। যদি হঠাৎ তারা আক্রমণ করে…আমি আর যেতে চাই না।তুমি আমাকে ভিতু ভাবতে পারো, কিন্তু আমার ওপর ওরা তাক করে আছে, পাঁচমারিতে একবার খুন করতে এসেছিল–
তা হলে এক কাজ করা যাক। আপনি ওপরে উঠে যান, সন্তু আর মিংমা আপনাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে। সেই গুহাটা এখান থেকে কোন দিকে হবে আমায় বলে দিন, আর কত নম্বর, আমি একাই সেখানে যাব।
তুমি দেখছি। আচ্ছা পাগল। চলো, এসেছি। যখন সবাই যাই!
আমরা পাহাড়ের অনেকখানি নীচের দিকে নেমে এসেছি। এখান থেকে ওঠবার সময় আমার আর মিংমার তেমন অসুবিধে না হলেও কাকাবাবু আর শাকসেনার তো প্ৰাণ বেরিয়ে যাবে। এর থেকে তো পাহাড়ের উলটো দিকে ঘুরে এসে নীচে থেকে ওপরে ওঠা সোজা ছিল।
ডক্টর শাকসেনা বললেন, এসে গেছি, ঐ যে ডাহিনা দিকে গাছের আড়ালে–
সেদিকে কয়েক পা এগোতেই আমরা একটা গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেলুম। একজন মানুষ যেন প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় উ উ করছে।
মিংমাই প্রথম দৌড়ে গেল সেদিকে। তারপর চেঁচিয়ে ডাকল, সন্তু সাব, ইধার আও।
সেখানে গিয়ে আমি প্রায় আঁতকে উঠলুম। একটা বড় পাথরের নীচে আধখানা চাপা পড়ে আছে। একজন মানুষ। সেই গুহামানব। মাটিতে অনেকখানি রক্ত জমে কালো হয়ে গেছে। লোকটা ওখানে গেল কী করে? নিশ্চয়ই কেউ ওপর থেকে পাথরটা গড়িয়ে ফেলে ওকে চাপা দিয়েছে। কিংবা এমনি-এমনিও পাথরটা পড়তে পারে।
মিংমা আর আমি ঠেলে পাথরটা সরাবার চেষ্টা করলুম। কিন্তু সেটা দারুণ ভারী। এর মধ্যে কাকবাবু আর শাকসেনাও পৌঁছে গিয়ে হাত লাগালেন। অনেক কষ্টে পাথরটাকে একটু মোটে নাড়ানো গেল, সেই অবস্থায় মিংমা লোকটির হাত ধরে টেনে নিয়ে এল বাইরে।
এবার ভাল করে দেখেও মনে হল, লোকটি যেন সত্যিই একজন আদ্যিকালের গুহা মানব।
চিরঞ্জীব শাকসেনা হাঁটু মুড়ে লোকটির পাশে বসে পড়ে প্রথমে নাকে হাত দিয়ে দেখলেন। তারপর বললেন, বেঁচে আছে। এখনও চিকিৎসা করলে বেঁচে যেতে পারে। কিন্তু আমরা যদি এখানে এসে না পড়তুম কেউ দেখতে পেত না ওকে, এই অবস্থায় মরে যেত।
কাকাবাবু বললেন, কিন্তু লোকটা কে? ওর গোঁফ-দাড়ি আর মাথার চুল টেনে দেখুন তো? মনে হচ্ছে নকল।
সত্যিই তাই। মিংমা ওর চুল ধরে টান দিতেই সবসুন্ধু উঠে এল। দাড়ি-গোঁফেরও সেই অবস্থা।
চিরঞ্জীব শাকসেনা দারুণ বিস্ময়ের সঙ্গে বললেন, তগজব না। তাজ্জব! এও কি বিশ্বাস করা যায়? এ যে ভিখু সিং!
কাকাবাবু বললেন, ভিখু সিং? যে সব সময় আপনার সঙ্গে-সঙ্গে থাকত?
হ্যাঁ। ছুট্টি নিয়ে দেশে গিয়েছিল। সে এখানে কী করছে?
বুঝতে পারছেন না, ও এসেছিল গুপ্তধনের সন্ধানে। নিশ্চয়ই আপনাদের আলোচনা লুকিয়ে-চুরিয়ে শুনেছে!
মাটিতে বসে পড়ে চিরঞ্জীব শাকসেনা বললেন, হা ভগওয়ান, গুপ্তধনের এত লোভ? এত বিশ্বাসী নোকর ভিখু সিং! হ্যাঁ, ও আমাদের কথাবার্তা তো শুনতেই পারে। আমার সঙ্গে ও ভীমবেঠকাতেও এসেছে কতবার।
কাকাবাবু বললেন, এখন ওকে বাঁচাবার চেষ্টা করা দরকার। ওর কাছ থেকে কিছু খবর পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ওকে এতখানি ওপরে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে কী করে? বেশি নড়াচড়া করা উচিতও না?
ভিখু সিংয়ের এখনও জ্ঞান ফেরেনি, আধা-অজ্ঞান অবস্থায় মাঝে-মাঝে আঃ আঃ শব্দ করছে। ওর একটা হাত আর পা প্ৰায় থেতলে গেছে মনে হয়। মাথাতেও চোট লেগেছে।
কাকাবাবু বললেন, দাদা, এক কাজ করা যাক। আপনার গাড়িটাকে যদি ঘুরিয়ে এই পাহাড়ের নীচে আনা যায়, তা হলে ওকে এখান থেকে সহজে নামিয়ে দেওয়া যাবে।
ঠিক হল মিংমা ওপরে গিয়ে শাকসেনার লোকদের খবর দেবে। মিংমা ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারবে না বলে শাকসেনা একটা কাগজে লিখে দিলেন কয়েক লাইন, মিংমা সেটা নিয়ে চলে গেল।
আমি জিজ্ঞেস করলুম, কাকাবাবু, ও এরকম সেজেছে কেন?
কাকাবাবু বললেন, ইতিহাসের পণ্ডিতের চাকর তো, শুনে-শুনে ও নিজেও ইতিহাসের অনেক কিছু জেনে গেছে। অনেক বইতে ছবি-টবিও দেখেছে নিশ্চয়ই। ভেবেছে গুহামানব সেজে থাকলে কেউ ওকে দেখলেই ভয়ে পালাবে।
শাকসেনা বললেন, ঠিক বলেছ, ব্যাটা তাই ভেবেছিল নিশ্চয়ই। আমার মনে হয় ও এখানে কিছু খোঁড়াখুড়িও করেছে।
কাকাবাবু বললেন, এর মধ্যেই একটা বেশ বড় গর্ত আমার চোখে পড়েছে। সেটা ওর একার পক্ষে খোঁড়া সম্ভব নয়। হয় ওর সঙ্গে আরও লোক ছিল, কিংবা যে বা যারা ওকে মেরেছে, তারাও গর্ত খুঁড়েছে।
আমি বললুম, কাকাবাবু, বোধহয় ওরা গুপ্তধন পেয়ে গেছে, তাই ওকে ভাগ না দেবার জন্য ওকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।
কাকাবাবু বললেন, কথাটা কিন্তু সন্তু একেবারে মন্দ বলেনি, দাদা? এখানে নিশ্চয়ই কিছু-না-কিছু পাওয়া গেছে। নইলে, শুধু গুপ্তধন পাওয়া যেতে পারে, এই উড়ো কথাতেই তিনজন মানুষ খুন হয়ে গেল? কিছু পাবার পরে লোভ বেড়েছে, এমনও হতে পারে। সন্তু, দ্যাখ! তো এদিকে এরকম গর্ত কাটা আছে?
আমি খানিকটা ঘুরে বেশ বড়-বড় পাঁচটা গর্ত দেখতে পেলুম। সবগুলোই এক-মানুষ, দুমানুষ গভীর। একটা গর্তের মুখে বারুদের দাগ দেখে মনে হল, সেটা ডিনামাইট দিয়ে ওড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে দু-একটা গর্ত বেশ নতুন। একটাকে তো মনে হয় কালকেই খোঁড়া হয়েছে।
ফিরে এসে সে-কথা জানাতে কাকাবাবু বললেন, দেখলেন তো!
শাকসেনা বললেন, কিন্তু ওরা সঙ্কেতের অর্থ জানবে কেমন করে? তা তো জানতে পারে না। যদি মনোমোহন কারুকে না বলে।
মনোমোহন তা হলে জানত?
মনোমোহন আমাকে পীড়াপীড়ি করেছিল ওর একটা অর্থ উদ্ধার করে দিতে, আমি স্টাডি করার তত সময় পাইনি তো, তবু একটা আন্দাজ করেছিলুম। মনোমোহন বলল, তাহলে সেই অনুযায়ী এক্সকাভেশান করা হোক। আমি বললুম, যদি গুপ্তধনের বেওপার হয়, তবে আগে সরকারকে সব জানাতে হবে। গুপ্তধন সাধারণত সরকারের সম্পত্তি হয়, অন্য কেউ নিতে পারে না। সরকারকে জানিয়ে কাজ শুরু করতে অনেক দেরি হয়ে যাবে, তাই বলেছিলাম, আমি বিদেশ থেকে ফিরে আসি, তারপর দেখা যাবে।
নিশ্চয়ই মনোমোহন সেই কথা চেপে রাখতে পারেনি। অর্জন শ্ৰীবাস্তব আর সুন্দরলালকেও বলেছিল কোনও এক সময়। সুন্দরলাল বলেছে তার ছেলেকে। আপনি বিদেশে ছিলেন, এই চারজনের কোনও একজনের কাছ থেকে শুনে ফেলেছে বাইরের কোনও লোক। তারপরই শুরু হয়েছে গণ্ডগোল। আপনাকে বলা হয়নি, এই পাহাড়ে আরও একজন ঘুরছিল কাল রাত্রে, আমরা দেখেছি। সে হল মনোমোহনের চাকরি, যার জিভ কেটে দেওয়া হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম ও এসেছিল প্ৰতিশোধের জন্য, কিন্তু এমনও হতে পারে, ও-ও এসেছে গুপ্তধনের লোভে।
বাপ রে, বাপ। আর বলো না, আমার মাথা ঘুরে যাচ্ছে। মানুষের এত লোভ! ভিখু সিং, আমার এত বিশ্বাসের লোক ছিল-সে বেওকুফটা পর্যন্ত এখানে এসে লুকিয়ে লুকিয়ে-
কাকাবাবু বললেন, চলুন দাদা, ততক্ষণ গুহাটার ভেতরে একটু দেখে আসি।
এই গুহাতেও একটু উঁচুতে, কয়েকটা পাথরের ওপর পা দিয়ে সিঁড়ির মতন উঠতে হয়। কাকাবাবু করুর সাহায্য না নিয়ে উঠে পড়লেন ওপরে।
গুহাটা চৌকো ধরনের, প্ৰায় একটা ঘরের মতন। খাট-বিছানা পেতে এখানে বেশ ভালভাবেই থাকা যায়। কোনও পলাতক রাজার পক্ষে এখানে আশ্রয় নেওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
কাকাবাবু টর্চ জেলে সব দেয়ালগুলো দেখতে লাগলেন। কোনও দেয়ালেই কোনও ছবি নেই। ছবি দেখতে পাওয়া গেল ছাদে। পাশাপাশি নানা ভঙ্গির অনেকগুলো মানুষ। অন্য গুহাগুলোরই মতন, খ্যাংরা কাঠির মাথায় আলুর দমের মতন চেহারার মানুষ। আমি সংখ্যা গুনতে লাগলুম।
চিরঞ্জীব শাকসেনা হঠাৎ বলে উঠলেন, ইস্ ছি ছি ছি ছি ছি! কী অন্যায়! কী অন্যায়! ভ্যাণ্ডালস! এদের ফাঁসি হওয়া উচিত।
কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে?
ঐ দাখো! দেখছ, ভাঙা জায়গা? ছেনি কিংবা বাটালি দিয়ে কেউ ওখানে পাথর ভেঙে নিয়েছে।
ওখানে ছবি ছিল?
আলবাতি। কেউ ছবিগুলো কপি করে নিয়ে তারপর আসল ছবিগুলো নষ্ট করে ফেলতে চেয়েছে। যাতে আর কেউ এখান থেকে কোনও সূত্র না পায়।
ছিছিছি, এরকম মূল্যবান ছবি! দেশের সম্পদ!
আমি ততক্ষণে গুনে ফেলেছি। এখন ছবি আছে মোট সাতাশটা মানুষের। তার পাশে পাথরের চলটা উঠে গেছে অনেকখানি।
কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, আগে কি এখানে মোট চল্লিশ জন মানুষের ছবি ছিল?
চিরঞ্জীব শাকসেনা বললেন, না। সেইটাই তো মজা। সাঙ্কেতিক ভাষায় চল্লিশজন মানুষের উল্লেখ থাকলেও এখানে ছবি ছিল মোট একশো পয়তাল্লিশটা। আমরা খুব শক্তিশালী ম্যাগনিফাইং গ্লাস এনেও দেখেছি, তার পাশে আরও ছবি মুছে যাওয়ার চিহ্ন ছিল।
আচ্ছা দাদা, কতগুলো এরকম মানুষের ছবি দেখে কী করে একটা ভাষা পড়া যায়?
ওটা ছিল মনোমোহনের ব্যাপার। তবে দেখছি তো, প্রত্যেকটা ছবির হাত-পায়ের ভঙ্গি আলাদা? ঐ হাত-পায়ের ওঠা-নমার মধ্যেই একটা ভাষা থাকতে পারে। অনেকটা সিমাফোর-এর মতন। তুমি নিশ্চয়ই সিমাফোর কী তা জানো, আমি এই বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
আমার দিকে ফিরে তিনি বললেন, শুনো সন্তু বেটা, সিমাফোর হচ্ছে একটা কথা-না-বলা ভাষা। অনেকটা তোমার টেলিগ্রাফের টরেটক্কার মতন। তুমি এখানে পোস্ট অফিসে বসে টরেটক্কা করো, বহুত দূরে আর একজন সেই ভাষা বুঝে যাবে। এই টরেটক্কাকে বলে মর্স কোড। আর সিমাফোর তারও আগের। মনে করো, তুমি একটা দ্বীপে এক বিপদে পড়ে আছ, দূর দিয়ে একটা জাহাজ যাচ্ছে। তুমি চিৎকার করলেও তো সমুদ্রের আওয়াজের জন্য তোমার গলা কেউ শুনতে পাবে না। তখন যদি তুমি সিমাফোর কোড জানো, তাহলে একটা পতাকা কিংবা জ্বলন্ত মশাল নিয়ে ঠিক-ঠাক নাড়লে জাহাজের ক্যাপ্টেন বুঝতে পেরে যাবে। সামনের দিকে দুবার নাড়লে বুঝবে খাদ্য, আর মাথার ওপর দুবার ঘোরালে বুঝবে হিংস্ৰ প্ৰাণী, এই রকম, বুঝলে তো?
আমি জিজ্ঞেস করলুম, এই গুহাবাসীরা সিমাফোর জানত?
সিমাফোর ঠিক নয়, ওরা নিজস্ব অন্য একটা ভাষা তৈরি করে নিয়েছিল। মনোমোহন তার পাঠ উদ্ধার করেছে।
কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, মূল ছবিগুলোর সব ছবি তোলা আছে আপনার কাছে?
আমার কাছে নেই, তবে মনোমোহনের কাছে অনেক রকম এই ছবি তোলা ছিল।
সবাই জানে, যে-তিনজন খুন হয়েছে, তাদের কিছু চুরি যায়নি। কিন্তু মনোমোহনের ঘর থেকে এই ছবিগুলো উধাও হয়ে গেছে কি না পুলিশ নিশ্চয়ই সে খোঁজ নেয়নি?
ঠিক বলেছ! পুলিশের একথা মাথাতেই আসবে না।
চলুন। এখানে আর কিছু দেখবার নেই। বাইরে যাই।
বাইরে গিয়ে দেখলুম, ভিখু সিং চোখ মেলেছে, কোনও রকমে উঠে বসবার চেষ্টা করছে। চিরঞ্জীব শাকসেনাকে দেখে সে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল।
কাকাবাবু বললেন, দাদা, ওকে জিজ্ঞেস করুন, ওকে যে মেরেছে তাকে ও দেখতে পেয়েছিল কি না?
কিন্তু ভিখু সিং কোনও উত্তর না দিয়ে শুধু কেঁদেই চলল।
চিরঞ্জীব শাকসেনা বিরক্ত হয়ে ধমক দিয়ে বললেন, চুপ করা। তোর ভয় নেই, তোকে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।
কাকাবাবু বললেন, ব্যাপারটা ঘটেছে নিশ্চয়ই কাল রাত্তিরে। ওপরে বসে পাহারা দিয়ে কোনও লাভ হল না। ওপরের গাড়ির রাস্তা দিয়ে না এসে যে-কেউ পাহাড়ের নীচে দিয়ে এদিকে আসতে পারে।
একটু পরেই তলা থেকে মিংমার গলা পেলাম, আংকল সাব! আংকল সাব।
বুঝলাম, গাড়ি এসে গেছে। এদিকে। মিংমা আর পুলিশ দুজন ওপরে উঠে এল জঙ্গল ঠেলে। তারা তিনজনে ধরাধরি করে ভিখু সিংকে নামিয়ে নিয়ে চলল।
চিরঞ্জীব শাকসেনা কাকাবাবুকে বললেন, রাজা, তুমিও চলে আমার সঙ্গে। এখানে থেকে আর কী করবে।
ভেবেছিলুম কাকাবাবু সে-কথা শুনবেন না। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, কাকাবাবু তক্ষুনি রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, হ্যাঁ, চলুন। এখানে আর থেকে কী হবে। এখানে সত্যিই যদি গুপ্তধন থাকে, তবে তা উদ্ধার বা রক্ষা করবার দায়িত্ব সরকারের, আমাদের তো নয়।