আমাদের মন টিকছিল না
পাঁচমারিতে আমাদের থাকার কথা ছিল চার-পাঁচ দিন। কিন্তু আমরা ফিরে এলুম দু দিনের মধ্যেই। এত ভাল জায়গা, তবু আমাদের মন টিকছিল না। সেই গুলি চলবার পর টুরিস্টরা অনেকেই ফিরে গেল। জায়গাটা এমনিতেই ফাঁকা, এখন যেন একেবারে শুনশান। আমরা অবশ্য সেজন্য কিংবা ভয় পেয়ে ফিরিনি। ফিরতে হল ছোড়দির জন্য। ছোড়দির সর্দিটা খুব বেড়ে গিয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
ফিরে এসেই রত্নেশদা খবর নিল। বিজয় শাকসেনা এখানকার কোনও হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। অফিসেও কোনও খবর আসেনি।
আর ডক্টর চিরঞ্জীব শাকসেনা এখনও নিরুদ্দেশ। অবশ্য তাঁর মৃতদেহের সন্ধানও পাওয়া যায়নি।
রত্নেশদা বলল, ভুপাল অনেক দূর। পাঁচমারি থেকে কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছে নিশ্চয়ই। অফিস থেকে তার খোঁজে চারদিকে খবর পাঠানো হয়েছে।
এর পর আরও তিনদিন কেটে গেল, এর মধ্যে আর নতুন কোনও খবর নেই। আমি এখানে এসেই কাকাবাবুকে একটা চিঠি লিখেছিলুম, তার কোনও জবাব পাইনি। কিন্তু মার কাছ থেকে একটা চিঠি এসেছে, মা লিখেছেন তাড়াতাড়ি কলকাতায় ফিরে যেতে। কাকাবাবুর আমেরিকায় যাওয়ার ব্যাপারটা ঠিক হল কি না তা জানা গেল না।
এর মধ্যে একদিন ধীরেনদা এসে বললেন, চলো সন্তুবাবু, এবারে তোমাদের একদিন ভীমবেঠকা দেখিয়ে নিয়ে আসি! সাঁচিও তো দেখেনি! চলো, চলো, কালকেই ভীমবেঠকা ঘুরে আসি। তারপর একদিন সাঁচি দেখে নিও।
দীপ্ত বলল, বাবা, আমরা বেশ খাবার-দাবার নিয়ে যাব। ভীমবেঠকায় পিকনিক করা যাবে।
আমি দীপ্তকে জিজ্ঞেস করলুম, তুমি ভীমবেঠকায় গেছ?
দীপ্ত বলল, হ্যাঁ, দুবার!
কী আছে। সেখানে? দীপ্ত কিছু বলার আগেই ধীরেনদা বললেন, এখন বলিস না রে, দীপ্ত! ওটা সারপ্রাইজ থাক?
রত্নেশদা আর নিপুদার অসুখ, ওরা যেতে পারবে না।
ছোড়াদিরও সর্দি। সুতরাং রিনাদি আর ধীরেনদা, দীপ্ত আর আলো, আমি সুর মিংমা, এই কাজন গেলুম পরদিন। বেরিয়ে পড়লুম। সকাল দশটার মধ্যে।
প্ৰথমে পাঁচমারির দিকেই খানিকটা যাবার পর এক জায়গায় আমরা বেঁকে গেলুম ডান দিকে। তারপর রাস্তাটা ক্রমশ একটু-একটু উঁচুতে উঠতে লাগল। অথচ সামনের দিকে ঠিক যে কোনও পাহাড় আছে, তা বোঝা যায় না। আরও খানিকটা যাবার পর চোখে পড়ল, রাস্তার এক পাশে রয়েছে অনেক বড়-বড় পাথরের চাই। কিছুক্ষণ চলার পর ধীরেনদা একটা গাছের তলায় গাড়ি থামিয়ে বললেন, এই হল ভীমবেঠক!
আমি ধীরেনদা আর রিনাদির মুখের দিকে তাকালুম। সারপ্রাইজ দেবার নাম করে কি আমাকে ঠকাতে নিয়ে এলেন। এখানে? এ আবার কী জায়গা? একটা টিলার ওপরে কতকগুলো দোতলা-তিনতলার সমান পাথর পড়ে আছে। জায়গাটা সুন্দর নয়, তা বলছি না, বেশ নিরিবিলি, পিকনিক করার পক্ষে ভালই। কিন্তু যে-কোনও পাহাড়ি জায়গাতেই তো একরকম দেখা যায়। দূরে কোথাও যাবার সময় রাস্তার ধারে এরকম কত জায়গা চোখে পড়ে। আমি হিমালয়ের কত চুড়া দেখেছি, এভারেস্টের কাছাকাছি থেকে এসেছি, আমাকে ধীরেনদা এই কয়েকটা পাথর দেখিয়ে অবাক করতে চান?
ধীরেনদা বললেন, ভীমবেঠকার আসল নাম কী জানো? ভীমবৈঠক। মহাভারতের ভীম নাকি এখানে বসে আড্ডা দিতেন। বোধহয় হিড়িম্বার সঙ্গে!
পেল্লায় আকারের পাথরের চাইগুলোর চেহারায় খানিকটা ভীম–ভীম ভাব আছে বটে। কিন্তু এরকম গল্পও তো আগে অনেক জায়গায় গিয়ে শুনেছি।
ধীরেনদা আবার বললেন, এখন জায়গাটা অবশ্য ভীমের জন্য বিখ্যাত নয়। শোনো, সন্তু, এরকম জায়গা কিন্তু সারা পৃথিবীতেই খুব কম আছে। তোমার কাকাবাবু এলে এ জায়গাটা খুবই পছন্দ করতেন।
সারা পৃথিবীতে খুব কম আছে? ধীরেনদা এখনও আমার সঙ্গে রসিকতা করছেন? এরকম ছোট পাহাড়ি জায়গা আমি নিজেই অন্তত একশোটা দেখেছি! রিনাদি আর দীপ্তরা মিটমিটি হাসছে আমার দিকে চেয়ে।
ধীরেনদা বললেন, বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না, মনে হয় খুব সাধারণ জায়গা, তাই না? সেটাই এর মজা। একটু ভেতরে ঢুকলেই বুঝতে পারবে আসল ব্যাপার। চলে।
খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দেখলুম, সামনের দিকে একটা বড় পাথরের গায়ে একটি আশ্রম। সেখানে দু তিনজন এমনি লোক, একজন সাধু, একটা গোরু আর একটা কুকুর রয়েছে, আর এই দিনের বেলাতেও ধুনির আগুন জ্বলছে। ভারতবর্ষে বোধহয় এমন কোনও পাহাড় নেই, যার চুড়ায় কোনও মন্দির বা সাধুর আশ্রম নেই।
ধীরেনদা চুপিচুপি বললেন, যখনই এই সাধুর আশ্রমটা দেখি, তখনই আমার মন খারাপ হয়ে যায়। বুঝলে, একটা বেশ বড় গুহার মুখটি জুড়ে ঐ আশ্রম। ঐ গুহার মধ্যে যে কী অমূল্য সম্পদ ঐ সাধুবাবাটি নষ্ট করছেন, তা উনি নিজেই জানেন না! চলো, আমরা ডান দিকে যাব।
বড় বড় পাথরের চাইগুলোকে এক-একটা আলাদা পাহাড় বলেও মনে করা যায়, আর সেগুলোর মাঝখান দিয়ে বেশ গলির মতন যাতায়াতের জায়গাও রয়েছে। একটা সেইরকম পাথরের সামনে এসে ধীরেনদা থামলেন। এই পাথরটার গড়নটা একটু অদ্ভুত। মাঝখান থেকে অনেকটা যেন কেউ কেটে নিয়ে একটা বারান্দার মতন বানিয়েছে। মাথার ওপর ছাউনি-দেয়া বারান্দা, ভেতরে গিয়ে বসাও যায়। কেউ বানায়নি। অবশ্য, এমনিই পাথরটা ঐ রকম।
ধীরেনদা বললেন, ধরো, এখন যদি খুব বৃষ্টি নামে, তাহলে আমরা সবাই মিলে এখানে আশ্রয় নিতে পারি, তাই তো? এক লক্ষ বছর আগেও আমাদেরই মতন কোনও মানুষ ঐ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিল।
এক লক্ষ বছর আগে?
প্ৰমাণ চাও? ঐ দ্যাখো!
ধীরেনদা আঙুল দিয়ে পাথরের দেয়ালে একটা জায়গায় কী যেন দেখাতে চাইলেন। প্রথমে আমার চোখেই পড়ল না। তারপর দেখলুম দেয়ালের গায়ে একটা হাতির ছবি। ছ। সাত বছরের বাচ্চার যে-রকম আঁকে। অনেকটা এই ছবির মতন।
ধীরেনদা বললেন, এই ছবিটা অন্তত পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ বছরের আগেকার আঁকা।
আমি. বললুম, ধীরেনদা, আপনি আমাকে বড় বেশি ছেলেমানুষ ভাবছেন! আমি জানি, ঐ ছবিটা আপনি নিজেই আগে একদিন এসে একে রেখে গেছেন?
ধীরেনদা, রিনাদি সবাই হেসে উঠলেন একসঙ্গে।
রিনাদি বললেন, আগেরবার সমরেশন্দা এসেও প্রথমে এই কথা বলেছিলেন का?
ধীরেনদা বললেন, এই রকম জায়গাকে বলে রক শেলটার। সত্যিই আদিমকালের মানুষরা এখানে ছিল। এরকম একটা নয়, অন্তত একশো কুড়ি-তিরিশটা রক শেলটার আছে। এই জায়গায়। চলো তোমায় দেখাব, আদিম মানুষের আঁকা এরকম হাজার-হাজার ছবি আছে। একসঙ্গে এত রক শেলটার, বললুম না, সারা পৃথিবীতে এরকম জায়গা খুব কম আছে!
কিন্তু এই ছবিটা যে অত পুরনো, তা বুঝব কী করে?
বড়-বড় ঐতিহাসিকরা এইসব ছবি পরীক্ষা করে প্রমাণ করেছেন। রেডিও কার্বন টেস্টে যে-কোনও জিনিসের বয়েস বার করা যায়। দীপ্ত, তুই যা তো, সন্তুকে এবার বোর্ডটা পড়িয়ে নিয়ে আয়। আগে ইচ্ছে করে তোমায় ওটা দেখাইনি।
দীপ্ত আমাকে আবার নিয়ে এল রাস্তার ধারে। সেখানে একটা বড় নীল রঙের বোর্ড রয়েছে, তাতে সাদা অক্ষরে অনেক কথা লেখা। আমাদের দেশে সব ঐতিহাসিক জায়গাতেই পুরাতত্ত্ববিভাগ এরকম বোর্ড লাগিয়ে রাখে।
এতক্ষণে বুঝতে পারলুম, ধীরেনদা আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন না। সেই বোর্ডে লেখা আছে যে, ১৯৫৮ সালে ভি এস ওয়াকানকার নামে একজন ঐতিহাসিক এই জায়গাটা আবিষ্কার করেছেন। বেশিদিন আগের তো কথা নয়। তার আগে এই জায়গাটার কথা কেউ জানোতই না? বোর্ডে আরও লিখেছে যে, এত বেশি প্রাগৈতিহাসিক ছবি ভারতবর্ষে আর কোথাও নেই। এখানে প্রস্তর যুগের গোড়ার দিক থেকে (অর্থাৎ ১০০,০০০ বছর আগে) প্রস্তর যুগের শেষ পর্যন্ত (১০,০০০ থেকে ২০,০০০ বছর আগে) একটানা মনুষ্য-বসবাসের চিহ্ন আছে তাদের তৈরি পাথরের কুঠার আর অন্যান্য জিনিসপত্তরও (মাইক্রোলিথিক টুলস) পাওয়া গেছে। আরও কী সব মেসোলিথিক, চালকোলিথিক যুগের কথা লেখা, তার মানে আমি বুঝতে পারলুম না, কাকাবাবু থাকলে বুঝিয়ে দিতে পারতেন।
এখানকার এইসব গুহাতে সম্রাট অশোক কিংবা গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময় পর্যন্তও মানুষ ছিল, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারপর এই জায়গাটার কথা সবাই ভুলে যায়। এখন আবার এক সাধুবাবাজি একটা গুহায় থাকছেন। সুতরাং এখনও এখানে সেই আদিম মানুষদের বংশধর রয়ে গেছে, তা বলা যায়!
বোর্ডটা পড়বার পর খানিকক্ষণ আমি হতবাক হয়ে রইলুম। এক লক্ষ বছর! আমি যে-জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছি, ঠিক এইখানে এক লক্ষ বছর আগে মানুষ ঘুরে বেড়িয়েছে? লোহার মতন শক্ত তাদের শরীর, হাতে পাথরের হাতুড়ি, তারা দাঁতালো হাতি আর অতিকায় বাঘ-ভালুক-গণ্ডারের সঙ্গে লড়াই করেছে।
দীপ্ত বলল, এমন-এমন সব গুহা আছে, দেখলে তুমি অবাক হয়ে যাবে। মনে হবে সব তৈরি করা। কিন্তু কোনওটাই তৈরি করা নয়। চলো, আগে তোমায় থিয়েটার হলটা দেখাই।
গিয়ে দেখলুম, ধীরেনদারা সেখানেই বসে আছেন। সত্যিই জায়গাটা ছোট-খাটো একটা থিয়েটার হলের মতন। বেশ চওড়া, চৌকামতন জায়গা, ওপরটা ঢাকা, একদিকে বেদীর মতন। দেখলে অবশ্য বোঝা যায়, কোনও মানুষ এটা তৈরি করেনি, প্রাকৃতির হাতে গড়া।
ধীরেনদা বললেন, তখনকার লোকেরা থিয়েটার করতে জানত কি না তা অবশ্য আমরা জানি না। কিন্তু অনেকে নিশ্চয়ই এখানে ঘুমোত। কী চমৎকার জায়গা বলো তো, বাইরে যতই ঝড়-বৃষ্টি হোক, গায়ে লাগবে না! বাইরের দিকটায় নিশ্চয়ই কয়েকজন সারা রাত জেগে পাহারা দিত, যাতে হিংস্ৰ কোনও জন্তু এসে ঢুকে না পড়ে। আমার ইচ্ছে করে, বাড়িঘর ছেড়ে আমিও এরকম জায়গায় থাকি!
রিনাদি বললেন, থাকলেই পারো। বেশ চাকরি-বাকরি করতে হবে না, কোনও চিন্তা থাকবে না।
আলো বলল, বেশ পড়াশুনোও করতে হবে না! ইস্কুলে যেতে হবে না।
ধীরেনদা বললেন, কিন্তু খাব কী? সেই সময়কার লোকেরা হরিণ, শুয়োর, খরগোশ এই সব মেরে খেত। এখন তো আর সেসব পাওয়া যায় না। এখনকার দিনে গুহায় থাকতে হলে সাধু সাজতে হয়।
দীপ্ত বলল, বাবা, এখনও এখানে হরিণ আছে। আমি আগের বার এসে নীচের দিকের গুহাগুলোর কাছে হরিণের পায়ের ছাপ দেখেছিলাম। টাট্কা।
রিনাদি বললেন, হরিণ না ছাই! নিশ্চয়ই ছাগলের পায়ের ছাপ। নীচের গ্ৰাম থেকে এখানে রাখালরা গোরু-ছাগল চরাতে আসে।
ধীরেনদা বললেন, এখানকার দেয়ালের গায়ে শ্যাওলা জমে আছে। সেইজন্যই দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু এখানেও ছবি আছে। চলো, অন্য গুহায় যাই, পরিষ্কার ছবি দেখতে পাওয়া যাবে।
এর পরের গুহাটা আবার অন্যরকম। সামনের দিকটা ছোট। মাথা নিচু করে ঢুকতে হয়, কিন্তু ভেতরটা ক্রমশ চওড়া হয়ে গেছে। একেবারে মিশমিশে অন্ধকার। ধীরেনদা টর্চ জেলে বললেন, এই দ্যাখো।
এবার দেখলুম, মাথার ওপরের পাথরে এক সারি মানুষ আকা। এই রকম :
ছবিগুলির রং গেরুয়া ধরনের। ঐ রঙের কোনও পাথর ঘষে ঘষে আঁকা।
রিনাদি বললেন, একটা জিনিস লক্ষ করেছ, সব ছবি এক রকম নয়।…এরই মধ্যে দু একজন যেন নাচছে মনে হচ্ছে, তাই না? ওরা নিশ্চয়ই নাচতেও জানত।
দীপ্ত বলল, নাচতে তো সবাই জানে, মা! ধেই-ধেই করে লাফালেই নাচ হয়।
আলো মাকে জিজ্ঞেস করল, মা, ওরা এরকম বাচ্চাদের মতন ছবি আঁকত কেন?
রিনাদি বললেন, এক লক্ষ বছর আগেকার মানুষ। তারা তো মনের দিক থেকে বাচ্চাই ছিল। ছবি আঁকার কথা যে চিন্তা করেছে, এটাই যথেষ্ট নয়?
ধীরেনদা বললেন, আমরা প্ৰথমবার যোবার এসেছিলাম, সে-কথা মনে আছে, রিনা? কী ভয় পেয়েছিলুম! এই গুহাটাতেই তো, না?
রিনাদি বললেন, হ্যাঁ, এটাতেই। সেবার কী হয়েছিল জানো, সন্তু? সেবার দীপ্ত আর আলো আসেনি। আমি আর তোমাদের ধীরেনদা গুড়ি মেরে এই গুহাটাতে ঢুকে টর্চ জ্বেলেছি, দেখি যে এক কোণে একটা মানুষ বসে। আমি তো ভয় পেয়ে এমন চিৎকার করে উঠেছিলুম।
ধীরেনদা হাসতে-হাসতে বললেন, শুধু চিৎকার! তুমি এমন লাফিয়ে উঠলে যে, ছাদে তোমার মাথা ঠুকে গেল।
রিনাদি বললেন, আহা, তুমি ভয় পাওনি?
ধীরেনদা বললেন, হ্যাঁ, আমিও একটু-একটু ভয় পেয়েছিলুম বটে, কিন্তু চাঁচাইনি। তারপর সেই মানুষটা হাঃ হাঃ করে হেসে উঠল। সে কে জানো? ডক্টর চিরঞ্জীব শাকসেনা! উনি এই সব ছবির ফটোগ্রাফ তুলছিলেন, সেই সময় ওঁর ক্যামেরার ফ্লাশটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
রিনাদি বললেন, ডক্টর শাকসেনা তো এখানে বোধহয় প্রত্যেকদিন আসতেন। আমরা যতবার এসেছি, ওঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে।
আমি বললুম, ডক্টর শাকসেনাকে পাওয়া যাচ্ছে না.উনি এরকম কোনও গুহার মধ্যে লুকিয়ে নেই তো?
ধীরেনদা বললেন, ওঁর এখানকার সব ছবি তোলা হয়ে গেছে। চলো, এখান থেকে বাইরে যাই।
এরপর কয়েকটা গুহায় আমরা ঐরকম একই ছবি দেখলুম। তারপরের একটা গুহায় দেখা গেল হরিণের ছবি।
ধীরেনদা বললেন, জানো তো, ঐতিহাসিকেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, একই দেয়ালে এক যুগের মানুষের আঁকা ছবির ওপর অন্য যুগের মানুষরা ছবি এঁকেছে। খুব বড় ম্যাগনিফায়িং গ্লাস আনলে বোঝা যায়। চলো, পাশের গুহাটায় চলো, একটা মজার জিনিস দেখাচ্ছি।
সেই গুহাটা অনেকটা খোলামেলা। খানিকটা উঁচুতেও বটে। মুখটা প্ৰকাণ্ড, ভেতরটা সরু। একটা ডিমের আধখানা খোলার মতন। পাশের একটা পাথরের ওপর উঠে সেটাতে ঢোকা যায়। সেই গুহার ছাদে আঁকা একসার মানুষের মধ্যে একটা মানুষ একেবারে আলাদা। সেই মানুষটা একটা ঘোড়ায় চড়ে বিশাঁর মতন একটা জিনিস দিয়ে একটা হরিণকে মারছে।
ধীরেনদা বললেন, এটাকে দেখছ? এই ঘোড়ার পিঠে চড়া মানুষ কিন্তু অনেক পরের যুগে আঁকা। মানুষ বেশিদিন ঘোড়ায় চাপতে শেখেনি। এমন কী, রামায়ণ-মহাভারতের সময়েও ছিল না।
দীপ্ত আর আমি দুজনেই একসঙ্গে বললুম, রামায়ণ-মহাভারতে ঘোড়া নেই?
ধীরেনদা বললেন, হ্যাঁ, আছে। ঘোড়ায় রথ টেনেছে। অশ্বমেধ যজ্ঞ হয়েছে। কিন্তু ঘোড়ার পিঠে কেউ চেপেছে কি? রাম-লক্ষ্মণ কিংবা অৰ্জ্জুনের মতন বীর কখনও ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করেছে? তা কিন্তু করেনি।
মহাভারতের যুদ্ধে অশ্বারোহী বাহিনী ছিল না?
ছিল কি না তা জানি না। কিন্তু সেরকম যুদ্ধের কোনও বর্ণনা নেই। হাতির পিঠে চেপে যুদ্ধ করার বর্ণনা আছে, শল্য এসেছিলেন হাতিতে চেপে, কিন্তু ঘোড়ায় চেপে কে এসেছিলেন বলো?
রিনাদি হেসে বললেন, তোমাদের ধীরেনদা ক্র্যাগে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার, এখন হয়ে উঠছেন ইতিহাসের পণ্ডিত!
ধীরেনদা রিনাদির ঠাট্টাকে পাত্তা না দিয়ে বললেন, আরও একটা ব্যাপার কী জানো! এই সব ছবির মধ্যে কিছু-কিছু আছে একদম ভেজাল। আমাদের দেশের বেশির ভাগ লোকই তো এর কোনও মূল্য বোঝে না। সাহেবদের দেশে এরকম এতকালের পুরনো কোনও ব্যাপার পাওয়া গেলে কত যত্ন করে ঘিরে-টিরে রাখত, পাহারাদার থাকত। কিন্তু এখানে যে-যখন খুশি আসতে পারে, ইচ্ছে মতন এসব ছবি নষ্টও করতে পারে। ভাগ্যিস বেশি লোক এই জায়গাটার খোঁজ রাখে না। তবু কিছু লোক এখানে কোনও কোনও গুহার ছবির পাশে ইয়ার্কি করে নিজেরা ছবি এঁকে গেছে। সেগুলো অবশ্য দেখলেই চেনা যায়।
রিনাদি বললেন, যাই বলো বাপু, জায়গাটা বড্ড নির্জন। আমার তো বেশিক্ষণ থাকলে গা ছমছম করে। এখানে যদি কেউ কোনও মানুষকে খুন করে রেখে যায়, অনেক দিনের মধ্যে তা কেউ টেরও পাবে না।
দীপ্ত বলল, মনোমোহন ঝাঁর চাকরকে জিভ-কাটা অবস্থায় এখানেই কোথায় পাওয়া গিয়েছিল না?
ধীরেনদা বললেন, হ্যাঁ, এই পাহাড়ের নীচে। দুদিন ওখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল। তারপর এখানকার সাধুজি ওকে দেখতে পেয়ে বড় রাস্তায় গিয়ে একটা গাড়ি থামিয়ে খবর দেন।
আমি জিজ্ঞেস করলুম, সেই লোকটি বেঁচে আছে?
হ্যাঁ, বেঁচে উঠেছে। লোকটি নিশ্চয়ই অনেক কিছু জানে। হয়তো মনোমোহন ঝাঁর খুনিকেও ও দেখেছে। মুখ দিয়ে শব্দ করে ও কিছু বলতে চায়, কিন্তু কথা বলার ক্ষমতা নেই। ও লেখাপড়াও জানে না! তা হলে লিখে বোঝাতে পারত।
আর দু তিনটে গুহা ঘোরার পর রিনাদি বললেন, আমি বাপু আর পারছি না। আমরা ওপরে বসি। এবার দীপ্ত দেখিয়ে আনুক সন্তুকে।
ধীরেনদা বললেন, তাই যাক। অবশ্য একশো তিরিশটা গুহার সব ওরা দেখতে পারবে না একদিনে। যতগুলো ইচ্ছে হয় দেখে আসুক।
গুহাগুলো ক্রমশই নেমে গেছে পাহাড়ের নীচের দিকে। মাঝে-মাঝে আবার ওপরেও উঠতে হচ্ছে। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলুম একটার-পর-একটা গুহা।
ছবি অবশ্য বেশির ভাগ গুহাতেই এক রকম। মানুষের ছবিই বেশি। একটাতে দেখতে পেলুম কয়েকটা রথের মতন জিনিসের ছবি।
মিংমা সব সময় আমাদের পেছন-পেছনে ছায়ার মতন আসছে। এখানকার ব্যাপারটা সে বুঝতে পারেনি, আমি যতদূর সম্ভব বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করেছি।
এক একটা গুহার মধ্যে ঢুকে অন্ধকারে টর্চ জেলে ছোট-ছোট ছবি খুঁজে বার করার ব্যাপারে ও নিজেই বেশ মজা পেয়েছে। যেগুলো আমরা দেখতে পাই না সেগুলা ও দেখায়।
একটা গুহা বিরাট বড়। এটাকে ঠিক গুহা হয়তো বলা যায় না, নীচে বেশ সিমেন্টের মেঝের মতন মসৃণ পাথর আর তার ওপরে একটা প্ৰকাণ্ড পাথর যেন ঝুলছে। অবশ্য সেই পাথরটা পড়ে যাবার কোনও সম্ভাবনা নেই, হয়তো ঐ অবস্থাতেই রয়েছে কয়েক লক্ষ বছর। মাঝখানের জায়গাটিতে অন্তত পঞ্চাশ যাশ জন লোক শুয়ে থাকতে পারে। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, এত বড় একটা গুহাতে কিন্তু আমরা কোনও ছবি খুঁজে পেলুম না। এক-এক জায়গায় মনে হল যেন ছবি আঁকা ছিল, কেউ ঘষে-ঘষে মুছে দিয়েছে।
আমরা মন দিয়ে সেই গুহার মধ্যে ছবি খুঁজছি, এমন সময় হঠাৎ এমন বিকট একটা আওয়াজ হল যে, দীপ্ত আর আমি দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরলুম। আমরা ভয় পাওয়ার চেয়েও চমকে গেছি বেশি। কোনও মানুষ না জন্তু ঐ আওয়াজ করল, তা বুঝতে পারলুম না।
তক্ষুনি আবার সেই আওয়াজটা হল। এবার বুঝলাম, কোনও জন্তু এরকম শব্দ করতে পারে না। মানুষেরই মতন গলা, যেন কেউ কোনও হাঁড়ির মধ্যে মুখ দিয়ে শব্দ করছে হী-ঈ-ঈ-ঈ-ঈ! এমনই ভয়ঙ্কর সেই শব্দ যে শুনলেই বুক কেঁপে ওঠে।
গুহাটার মধ্যে সোজা হয়ে দাঁড়ানো যায় না, আমরা দাঁড়িয়েছিলুম ঘাড় বেঁকিয়ে। সেই অবস্থাতেই মিংমা শাঁ করে ছুটে গেল বাইরে।
প্ৰায় সঙ্গে-সঙ্গেই মিংমার গলার একটা কাতর আওয়াজ পাওয়া গেল, আঃ!
এবার আমি আর দীপ্তও বাইরে চলে এলুম। এসে যা দেখলুম, তা ভাবলে এখনও যেন গায়ের রক্ত জল হয়ে যায়।
মিংমা গুহার বাইরে লুটিয়ে পড়ে আছে, তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একজন মানুষ। হ্যাঁ, মানুষই বটে! সারা মুখ দাঁড়ি-গোঁফে ঢাকা, মাথায় জট-পাকানো চুল, গা-ভর্তি বড় বড় লোম আর দৈত্যের মতন চেহারা। একটা পুরো কলাপাতা তার কোমরে জড়ানো, সেইটাই তার পোশাক, হাতে একটা পাথরের মুগুর। ঠিক ছবিতে দেখা গুহামানব যেন একটি।
লোকটি আগুনের ঢেলার মতন চোখে কট্মট্ করে তাকাল আমাদের দিকে। ঠিক যেন বলতে চায়; আমার গুহায় তোমরা ঢুকেছ কেন?
ঐ পাথরের হাতুড়ি দিয়ে মারলে আমার আর দীপ্তর মাথা তক্ষুনি ছাতু হয়ে যেত। কিন্তু কোনও কারণে আমাদের ওপর দয়া করে মারল না, চট করে সরে গেল পাথরের আড়ালে।
দীপ্ত আর আমি পাথরের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিলুম। একটুক্ষণ কোনও কথা বলতে পারলুম না। সত্যিই এক লক্ষ বছরের কোনও গুহামানবের বংশধর এখনও এখানে রয়ে গেছে?
মিংমা আবার আঃ শব্দ করতেই আমাদের দুজনের বিস্ময়ের ঘোর ভািঙল। দুজনে কোনও আলোচনা না-করেই মিংমাকে চ্যাংদোলা করে তুলে ছুটি লাগালুম। বারবার পিছন দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলুম, সেই মানুষটা তাড়া করে আসছে কি না!
মিংমার বাঁ কানের পাশ দিয়ে রক্ত পড়ছে। মুগুরের আঘাতটা ওর মাথায় লাগেনি, লেগেছে ঘাড়ে। তাতে ও একটুক্ষণের জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যেই জ্ঞান ফেরায় ও বলল, ছোড় দোও, আভি ছোড় দেও!
বেশ খানিকটা উঁচুতে উঠে আমরা মিংমাকে শুইয়ে দিলুম এক জায়গায়। মিংমা উঠে বসে হাত দিয়ে কানের রক্ত মুছল, মাথাটা ঝাঁকাল। দু তিনবার। তারপরই উঠে দাঁড়িয়ে এক সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড করল। একটা বড় পাথর টপ করে তুলে নিয়ে ও তরতর করে ছুটে গেল সেই গুহাটির দিকে। আমাদের বাধা দেবার কোনও সুযোগই দিল না। মিংমা পাহাড়ি জায়গার মানুষ, কেউ আঘাত করলে ওরা প্ৰতিশোধ না নিয়ে ছাড়ে না।
দীপ্তকে বললুম, চলো, আমরাও যাই।
দীপ্ত আর আমিও তুলে নিলুম দুটো পাথর। তারপর অনুসরণ করলুম। মিংমাকে। সেই বড় গুহাটার বাইরে দাঁড়িয়ে টর্চ ফেলে দেখা হল ভাল করে। সেখানে ঐ লোকটা ঢোকেনি। মিংমা। এদিক-ওদিকেও খানিকটা খুঁজে এসে বলল, ভাগ গয়া!
এখানে কেউ যদি লুকিয়ে থাকবার চেষ্টা করে, তাহলে তাকে খুঁজে বার করা এক রকম অসম্ভব বললেই হয়। একটা এইরকম ছোট পাহাড়ে এতগুলো গুহা, বোধহয় আর কোথাও নেই।
দীপ্ত বলল, চলো, ওপরে গিয়ে বাবাকে বলি!
ওপরে উঠতে-উঠতে আমি ভাবতে লাগলুম, ব্যাপারটা কী হল? আজকের দিনে কোনও আদিম গুহামানব কি টিকে থাকতে পারে? তাও ভূপাল শহরের এত কাছে? না, অসম্ভব! এ-কথা শুনলে যে-কেউ হাসবে। তা হলে কেউ আমাদের ভয় দেখাবার চেষ্টা করছে। কেন? কেউ কি চায় যে, আমরা আর ঐ গুহাগুলোর মধ্যে না ঢুকি? একটা পাহাড়ের গুহার মধ্যে আদিম মানুষদের আঁকা ছবি দেখব, এতে কার কী আপত্তি থাকতে পারে? এই পাহাড়টা নিশ্চয়ই গভর্নমেন্টের সম্পত্তি।
হঠাৎ আমার মনে সন্দেহ হল, যাকে একটু আগে দেখলুম, মাথায় চুলের জটা, মুখে দাড়িগোঁফের জঙ্গল-ও-রকম চেহারা তো কোনও সাধুরও হতে পারে। ওপরে একটা গুহায় একজন সাধুবাবা যে মন্দির বানিয়েছেন, তিনিই আমাদের ভয় দেখাতে আসেননি তো? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তাই! সাধুবাবা চান যাতে এখানে বাইরের লোকজন না আসে।
যা ভেবেছিলুম ঠিক তাই। দীপ্ত দারুণ উত্তেজনার সঙ্গে যখন ধীরেনন্দাকে সব ঘটনাটা বলল, তখন ধীরেনদা হা-হা করে হেসে উঠলেন। তারপর বললেন, দীপ্ত যখন-তখন গল্প বানায়, ভাবে যে আমরা বিশ্বাস করব।
রিনাদি বললেন, তুই মোটেই লেখক হতে পারবি না। দীপ্ত, তোর গল্পগুলো বড্ড গাঁজাখুরি হয়। যা, যথেষ্ট হয়েছে, গাড়ি থেকে টিফিন কেরিয়ারগুলো নিয়ে আয়, এবার খেয়ে নেওয়া যাক।
দীপ্ত বলল, তোমরা বিশ্বাস করলে না? সন্তুকে জিজ্ঞেস করো! আর ঐ দ্যাখো মিংমার কানের পাশ দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে!
রিনাদি বললেন, সন্তু আর কী বলবে, ওকে তো আগে থেকেই শিখিয়ে এনেছিস। মিংমা নিশ্চয়ই আছাড়-টাছাড় খেয়ে পড়েছে কোথাও!
ধীরেনদা বললেন, টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরিতে গুহামানব, অ্যাঁ? দু একটা থাকলে মন্দ হত না! কেয়া হুয়া মিংমা? আছাড় খাকে গির গিয়া, তাই না? মিংমা বলল, একঠো আদমি, বহুত তাগড়া জোয়ান পাঠ্যে, হাঁতে পাথরের লাঠি, খুব জোরসে হামায় মারল?
ধীরেনদার ধারণা হল, মিংমা বোধহয় মিথ্যে কথা বলছে না। তিনি একটু চিন্তিতভাবে বললেন, সত্যিই মেরেছে? তাহলে কোনও পাগল-টাগল হবে বোধহয়।
রিনাদি বললেন, দেখি, কতটা লেগেছে?
পরীক্ষা করে দেখা গেল, মিংমার শার্টের নীচে কাঁধেও খানিকটা থেতলে। গেছে। বেশ জোরেই আঘাত করেছে, মিংমার আরও বেশি ক্ষতি হত, যদি মাথায় লাগত।
ধীরেনদা বললেন, চলো তো, সাধুবাবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, এখানে কোনও পাগল টাগল ঘুরে বেড়ায় কিনা। উনি নিশ্চয়ই জানবেন।
আমিও তাই চাই। সাধুবাবাকে একবার দেখা দরকার। আমি–বললুম, চলুন। ধীরেনদা, সাধুবাবার কাছে চলুন।
গুহাগুলোর পাশ দিয়ে যে গলি-গলি মতন রয়েছে, ধীরেনদা সেই পথ খুব ভাল চেনেন। বেশ শর্টকাটে উনি আমাদের চট্ট করে নিয়ে এলেন সাধুবাবার আশ্রমের কাছে।
সেখানে জ্বলন্ত ধুনির পাশে একটা খাটিয়ায় একজন মানুষ আমাদের দিকে পেছন ফিরে বসে আশ্রমের দুজন লোকের সঙ্গে কথা বলছে। দূর থেকে সেই চেহারা দেখেই আমার বুকের মধ্যে ধড়াস করে উঠল। পেছন থেকে কাঁধের ভঙ্গিটাই যে খুব চেনা মনে হচ্ছে। আমরা একটু কাছে যেতেই আমাদের পায়ের আওয়াজ পেয়ে সেই মানুষটি মুখ ফেরাল আমাদের দিকে।
আমি চিৎকার করে বলে উঠলুম, কাকাবাবু!