ভিটে মাটির টান
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে। বিরোধীরা বলে, ঝুটা স্বাধীনতা। সেইদিনই পশ্চিমবঙ্গ , ভারত বিভাজনের সময়, ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের পশ্চিমাংশ হিসেবে গঠিত হয়েছিল। এই সময়ে, অবিভক্ত বাংলা প্রদেশকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছিল – একটি পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্যটি পূর্ববঙ্গ (যা পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমানে বাংলাদেশ নামে পরিচিত).
পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, এবং এর নামকরণ করা হয় “পশ্চিমবঙ্গ” কারণ এটি পূর্ববঙ্গের পশ্চিমে অবস্থিত. এই বিভাজনটি ছিল ভারত বিভাজনের একটি অংশ, যেখানে ধর্মীয় বিভেদকে কেন্দ্র করে দেশ ভাগ করা হয়েছিল।
সেখানে কিছুদিন কাটিয়ে ফটিক বুঝতে পারল, হিন্দু হয়ে এখানে আর বেশিদিন থাকা উচিৎ হবে না। সে’কথা বুঝেই সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ফটিক তার বউ আর তিন বছরের ছেলে সুকান্তকে নিয়ে বরিশালের বানাড়িপাড়া ত্যাগ করে। অনেক কষ্টে এপারে পশ্চিমবঙ্গে এসে পৌঁছায়। দেশ ত্যাগ করে চলে আসার সময়, তার বউ লাবণ্য তাদের বসত বাড়ির একমুঠো বাস্তুমাটি বরিশালের বানাড়িপাড়া থেকে নিয়ে এসেছিল। লাবণ্য দেখতে রোগা পাতলা গড়নের। মাথা ভর্তি একরাশ কোঁকড়া চুল। চোখ দু’টি মায়াময় সারল্য মাখানো। দুঃখ যেন তাকে ছুঁতে পারে না। সব সময় হাসিখুশি থাকে। ফটিক ঠিক তার বিপরীত প্রকৃতির। চেহারাটা রুক্ষ। যাত্রাদলের বিবেকের মতো ঘাড় পর্যন্ত লতানো চুল। চার ফুট দশ লম্বা। তবে পেটানো স্বাস্থ্য। পরিশ্রমী খুব। তবে চোখ দু’টিতে সতর্কতা লেগে থাকে সব সময়। যেন সে কাউকেই সহজে বিশ্বাস করে না।
সিঁদুর কৌটোর সিঁদুরগুলি গর্ত করে মাটিতে পুঁতে দিয়ে, কৌটোটা ভাল করে ধুয়ে মুছে তাতে করে বসত জমির মাটি ভরে নিয়ে আসে সে। সিঁদুরগুলি ফেলেছিলেন কারণ সে’দেশের মুসলমান পুলিশ প্রশাসন সিঁদুর দেখতে পেলে, হিন্দু সনাক্ত করে তাদের উপর নির্মম অত্যাচার করবে। মেরে ফেলতেও দ্বিধা করবে না হয়তো। সেই কথা স্মরণে রেখেই। সিঁদুর কৌটা খালি করা। কিন্তু খালি সিঁদুর কৌটো নিয়ে বেরনো হিন্দুদের পক্ষে অমঙ্গলের। এ’কথা ভেবেই সিঁদুর ফেলে দেওয়ার পর, সেই কৌটোয় বাস্তুভিটের মাটি কিছুটা ভরে নিয়েছিল লাবণ্য। মনে গোপনে আশা ছিল এপারে পশ্চিমবঙ্গে কোনদিন নিজেদের বসত-বাড়ি গড়ে তুলতে পারলে, সেই মাটির সঙ্গে এদেশের বসত বাড়ির মাটি মিশিয়ে দেবে।
পশ্চিমবঙ্গে এসে তারা প্রথমে ধুবুলিয়া ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় পায়। সেখানে কিছুদিন থাকার পর তারা সেখান থেকে চলে আসে কলকাতায়। কলকাতায় এসে তারা কালীঘাটের পোড়াবস্তির একটা চালাঘর ভাড়া করে থাকতে শুরু করে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর প্রতাপাদিত্য রোড়ের কাছে শ্রীমোহন লেনে কম ভাড়ার একটা বস্তিতে চলে আসে। সেখানে থাকার সময় ফটিক একটা গেঞ্জির কলে কাজ পায়। সেখানে ছেলে সুকান্তকে নিয়ে তাদের কোনও রকমে চলে যেতে থাকে।
সেখানে থাকতে থাকতে ফটিক গেঞ্জির কলের এক কর্মচারীর কাছে খবর পায়, যাদবপুরে উদ্বাস্তুদের একটি সংগঠন ‘ছিন্নমূল উদ্বাম্তু সমিতি’ উদ্বাস্তুদের পাঁচ কাঠা করে জমি দিয়ে তাদের বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করছেন। সে খবটা শুনে ফটিক তার বউ ছেলেকে নিয়ে সেখানে চলে আসে। সেখানে এসে ‘ছিন্নমূল উদ্বাম্তু সমিতি’-য়ের অফিসে দেখা করেন। সেখানে কয়েকদিন ঘোরাঘুরি পর ‘ছিন্নমূল উদ্বাম্তু সমিতি’-র সেক্রেটারীর উদ্যোগে বিদ্যাসাগর কলোনীতে পাঁচ কাঠা জমি পায়, নিজেরা ঘর-বাড়ি তুলে বসবাস করার জন্য। জায়গটা ছিল একটা পুকুরপাড়ে। সেখানে টালির-চাল আর মূলিবাঁশের বেড়া দিয়ে একটা ঘর তুলে তারা থাকতে শুরু করে।
এগুলি সবই ছিল অবশ্য স্থানীয় মুসলমানদের চাষের জমি। কোনওটায় ধান চাষ হতো। কোনওটা ছিল বেগুনক্ষেত। কোনটা পটলক্ষেত। পাটক্ষেত, লঙ্কাক্ষেত, আম বন প্র়ভৃতি। সেগুলিই জবর দখল করে, ‘ছিন্নমূল উদ্বাম্তু সমিতি’ উদ্বাস্তুদের বসিয়ে দেয়, দু’শো আড়াই’শো করে টাকা প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা চাঁদা আদায় করে। সেই টাকা ‘ছিন্নমূল উদ্বাম্তু সমিতি’ পরিচালনার খরচ হিসাবে ব্যয় করা হয়। আর যারা সেই চাঁদা দিতেন, তাদের নাম ‘ছিন্নমূল উদ্বাম্তু সমিতি’র সদস্য হিসাবে নথিভুক্ত করা থাকত তাদের রেজিষ্টার খাতায়।
ফটিক যখন এসেছিল, তখন চারপাশে অনেক ফাঁকা জায়গা ছিল। দেখতে দেখতে সব জায়গা ভরে গেল উদ্বাস্তু পরিবারে।
প্রথম প্রথম রাতের দিকে মুসলমানরা ‘আল্লা হো আকবর’ ধ্বনি তুলে, হাতে ধারালো অস্ত্র দা-কাস্তে নিয়ে তারা উদ্বাস্তুদের তাড়া করে আসত। উদ্বাস্তরা তখন, ঘর থেকে স-দলবলে বেরিয়ে এসে, ‘বন্দে মাতরম্’ ধ্বনি তুলে হাতের কাছে পাওয়া দরজার খিল, আঁশ-বঁটি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলত। মুসলমানরা উদ্বাস্তুদের সংখ্যা দেখে আর এগোতে ভরসা পেত না। ফিরে যেত। ফিরে না গিয়ে এগোলে নিশ্চিতভাবেই একটা রক্তগঙ্গা দাঙ্গা বেঁধে যেত। মাঝে মাঝে এই গন্ডগোলের জন্য থানা থেকে পুলিশও আসত। পরিবেশ শান্ত রাখার নামে, ঘরে ঢুকে পুরুষদের পেলে ধরে নিয়ে যেত। তাই পুরুষরা পুলিশ আসছে খবর পেলেই, মেয়েদের ঘরে রেখে, নিজেরা বাড়ি ছেড়ে দূরে পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে থাকত। পুলিশ চলে গেলে আবার ফিরে আসত।
এইভাবে অনেক বাধা বিপত্তি সয়ে ফটিকরা শেষপর্যন্ত এখানেই থেকে গেল, অন্যান্য সব উদ্বাস্তুদের মতো। তাদের রেশন কার্ড হোলো। ভোটার কার্ড হলো। নাগরিকত্বের অধিকার পেল উদ্বাস্তুরা। এইভাবে চলল উনিশ’শো সত্তর সাল পর্যন্ত। উনিশ’শো এক্কাত্তর সালের পঁচিশে মার্চ পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর ২৫/০৩/১৯৭১ তারিখের আগে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) থেকে আগত উদ্বাস্তুদের নিঃশর্ত দলিল প্রদান করা শুরু করে। এই দলিলে তাদের পুনর্বাসনের জন্য জমির বিবরণ দেওয়া হয়।
এরপর ফটিকের জমি তার নিজের হয়ে যায়।
ফটিক যে গেঙ্গির কারখানায় কাজ করত, হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়ে সে কারখানা মালিক ব্রজপোপাল সাহা মারা যান। তারপরই কারখানাটা বন্ধ হয়ে যায়। ফটিক কি করবে এবার বুঝতে পারল না। লাবণ্য তাকে পরামর্শ দিল বাজারে সব্জি বেচতে। তার কথা শুনে, প্রস্তাবটা ফটিকের কাছে মন্দ লাগল না। সে শুরু করল গাঙ্গুলীবাগন বাজারে সব্জি বেচতে।
গাঙ্গুলীবাগন বাজারটা তখন সবে শুরু হয়েছে। ব্যবসা জমতে একটু সময় লাগল বটে, তবে যা আয় হচ্ছিল তা’তে কষ্টে-সৃষ্টে ফটিকদের চলে যাচ্ছিল।
সুকান্তকে ভর্তি করে দিয়েছিল নাকতলা স্কুলে। সেখান থেকে ভাল ভাবে উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ করে গেল সে। ফটিকের ইচ্ছে ছিল তাকে ব্যাবসার কাজে লাগাবে। কিন্ত লাবণ্যর আপত্তিতে তা করা সম্ভব হল না। কারণ লাবণ্যর সে রকম কোন ইচ্ছে ছিল না। বরং তার ইচ্ছে ছিল, সুকান্ত কলেজে পড়াশুনা করে সেখান থেকে ভালভাবে পাশ করুক। তাদের ফ্যামিলিতে কেউ বি.এ পাশ করেনি। লাবণ্যর বাসনা পূর্ণ করেছিল ফটিক। সে সুকান্তকে গোল-পার্কের কাছে সাউথ সিটি কলেজে ভর্তি করে দিয়েছিল। সংসারে নিজেরা কষ্ট করে বাঁচলেও যাতে তার ছেলে সুকান্তকে ভবিষ্যতে কষ্ট করে বাঁচতে না হয় সেই চেষ্টাই তারা করেছিল।
১৯৬৬ সালে সাউথ সিটি কলেজ থেকে সুকান্ত বি.কম পাশ করে বের হল। তারপর চাকরির চেষ্টা করতে লাগল। পাবলিক সার্বিস কমিশন, ব্যাঙ্ক রিক্রুটমেন্ট বোর্ড, রেল সার্ভিস কমিশনে ফর্ম ফিলাপ করে একের পর এক পরীক্ষা দিতে লাগল। ১৯৬৯ সালে, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় সে ক্লাকের চাকরি পায়। লাবণ্য দেবী সেই খবর শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন। ফটিক ভাবে এবার বোধহয় তাদের কষ্টের জীবনের অবসান হবে।
চাকরিতে জয়েন করে সুকান্ত বাবাকে গাঙ্গুলিবাগান বাজারে সবজি বেচার কাজটা ছেড়ে দিতে বলল। ফটিক তাতে রাজি হল না। সে সুকান্তকে বলল, কাজ ছেড়ে একেবারে ঘরে বসে গেলে, আমি অকেজো ও অকর্মণ্য হয়ে পড়বে। তার চেয়ে এই কাজে থাকলে আমি অনেক সতেজ ও সুস্থ থাকতে পারব। সুকান্ত এর পর আর তাকে কিছু বলতে পারল না। মনে মনে ভাবল, বাবা হয়তো ঠিক কথাই বলেছে। বাজারে বাবার অনেক বন্ধু-বান্বব আছে। সেখানে তাদের ছেড়ে থাকলে বাবা হয়তো সুস্থ ও সতেজ থাকবেন। তাই, যতদিন পারেন করুন সবজির ব্যবসা।
ফটিকরা এতদিন বেড়ার ঘরেই কাটিয়েছে। একদিন সুকান্ত ফটিককে বলল, বাবা আমাদের দু’কামড়ার একখানা পাকা ঘর করলে কেমন হয়?
- হয় তো ভালই, কিন্তু এতগুলি টাকা আসবে কোথা থেকে?
- আমি ব্যাঙ্ক লোন নেব।
- দ্যাখ, তোর মার সাথে কথা বলে। সে কি বলে?
- আচ্ছা আমি মার সাথে কথা বলব।
লাবণ্য ভাবল, সুকান্তর চাকরি করছে পাঁচ বছর হয়ে গেল। এবার একটি শিক্ষিত সুন্দর ঘরোয়া মেয়ে দেখে, তার সঙ্গে সুকান্তর বিয়ে দেওয়া দরকার। তার আগে জানতে হবে, তার নিজের পছন্দ করা কোনও মেয়ে আছে কিনা?
সুকান্ত মার কাছে এসে বলল, মা তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে।
- কি? বল।
- বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, আমাদের দু’কামড়ার একখানা পাকা ঘর তুলতে চাই, অফিস থেকে লোন নিয়ে। এ ব্যাপারে তোমার কি মত?
- তোদের মতই আমার মত। পাকা বাড়ি হয়ে গেলে আমরা তোর বিয়ে দিতে চাই। তোর নিজের পছন্দের কোনও মেয়ে আছে? থাকলে বল, আমরা তাদের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলব।
- কি যে বলো, তুমি মা?
- লজ্জার কিছু নেই। থাকলে খুলে বল। না থাকলে আমরা তোর জন্য মেয়ে খুঁজতে শুরু করব।
- তোমরা যে মেয়েকে পছন্দ করবে, আমি তাকেই বিয়ে করব।
কথাটা বলেই সে লজ্জা পেয়ে মার কাছ থেকে সরে গেল।
সুকান্ত হয়েছে ঠিক তার মার মতো। রোগা পাতলা গড়ন। মাথায় লাব্যণ্যর মতো একরাশ কোকড়া চুল। মুখে সব সময় লাব্যণ্যর মতো হাসি লেগে থাকে। চোখ দু’টি ভাসা ভাসা লাবণ্যময়। তার ব্যবহারও মার্জিত ও আন্তরিক। ব্যাঙ্কের অফিস কলিগরা সেই ব্যবহারের জন্যই তাকে খুব পছন্দ করে।
সুকান্তর জন্য মেয়ে দেখা শুরু হলো। ঘরখানা পাকা হয়ে গেলেই, তার বিয়ে দিয়ে, তাকে সংসারী করে তোলা হবে।
সুকান্তর ব্যাঙ্ক লোন স্যাংশন হয়ে গেছে। এবার বাড়ির কাজ শুরু হবে। ফটিক তার জানা এক রাজমিস্ত্রিকে খবর দিয়ে নিয়ে এলো। কোথায় ঘর হবে, ক’খানা কামড়া হবে। এইসব তাকে বুঝিয়ে বলল। কয় বস্তা সিমেন্ট বালি আর কত ইঁট আনতে হবে সবকিছু তাকে কাগজে লিখে দিতে বলল।
রাজমিস্ত্রি সেই মতো হিসেব লিখে দিলো। কাগজখানা ফটিক যত্ন করে তুলে রাখল। সুকান্তকে দেখাতে হবে। লাবণ্য ইতিমধ্যেই রাজমিস্ত্রির জন্য চা বিস্কুট নিয়ে এসে তাকে দিলেন। চা বিস্কুট খেয়ে রাজমিস্ত্রি ফটিককে নমস্কার জানিয়ে চলে গেল।
কবে থেকে বাড়ির কাজ শুরু করা যায়? নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক হল। পয়লা বৈশাখ নববর্ষ। বাঙিলীর শুভদিন। ওই দিন থেকেই পাকা বাড়ির কাজ শুরু হবে।
এর মধ্যেই ইঁট বালি সিমেন্ট বাড়িতে এসে মজুত হয়েছে। রাজমিস্ত্রিকে খবর দেওয়া হয়েছে। কাল বাদে পর্শু, পয়লা বৈশাখ থেকে কাজ শুরু হবে।
দু’দিন লাগল বাড়ির ভিত খুঁড়তে। ভিত খোলা শেষ হলে, লাবণ্য সিঁদুর কৌটোয় করে আনা বরিশালের মাটি, সিঁদুর কৌটাটা এনে, কৌটোর মুখ খুলে পাকা বড়ির ভিতের উপর ছড়িয়ে দিলেন। তা দেখে ফটিক আর সুকান্তর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কারণ, তারা জনত এ মাটি কিসের। লাবণ্যর এতদিনের বুকের ভিতর জমিয়ে রাখা ইচ্ছে পূরণ হয়ে, মনটা তার আনন্দে কানায় কানায় ভরে উঠল।