ভালোবাসা
‘ভালোবাসা’ শব্দটি কত রূপে লেখা যায়।বর্ণগুচ্ছের কত শক্তি জানাল সমীরণ।
– মেঘা,সোনা মা আমার।
– বাপি,আমি তোমায় এত্ত ভালোবাসি।
– নীলুকে(ডগি)মায়া বলছিল, আমার সোনা মেয়ে।
তোকে সবথেকে বেশী ভালোবাসি।
– নীলু,হাত মুখ চেটে দিয়ে বুঝিয়ে দিলএ পৃথিবীতে তুমিই আমার ভরসা মা-বাবাকে শ্রেয়ান খুব ভালোবাসে শ্রদ্ধা করে।
– তুই আমাদের হৃদপিণ্ড বাবা, আমরা তোকে অনেক ভালোবাসিজানালো শ্রেয়ানের মা নিবেদিতা।
– শিশু উদ্যান এর পাশ দিয়ে সে সময় যাচ্ছিল স্বপ্নীল। ফোনে কথোপকথন।”এরকম ভালোবাসার দরকার নেই। তুমি কী ভাবো? এই শোনো ভালবাসা টালোবাসা আমি জানি না, ভালো লাগত কথা বলেছিলাম – আজ থেকে আমার রাস্তা পৃথক।
– এখানে রাগ-অভিমান কিংবা স্বপ্নগুলো ভেঙে যাওয়ার এক সংকট মুহূর্ত ‘ভালোবাসা ‘কথায় ফুটে উঠেছে। উল্টো দিক থেকে পৃথা জানালো’আমি সত্যি তোমায় খুব ভালোবাসি স্বপ্নিল, তুমি ছাড়া এ পৃথিবীতে থাকবো না।’এভাবে সমাজে ঘটে যাচ্ছে অহরহ আত্মহত্যাধর্ষণ কিংবা মেয়েদের এসে পড়তে হচ্ছে পতিতাপল্লীতে। আবার একশ্রেণীর মানুষ হয়তো এই ভালবাসার অনেক মূল্য দিয়ে চলেছেন।
– রুচিতা পঞ্চান্ন বছরের যৌবনা নারী। ভালোবাসে মিস্টার চ্যাটার্জি কে। স্বামী গত হওয়ার পর থেকে মাঝে মাঝে ফোন করতো পঁয়ষট্টি বছরের মিহির চ্যাটার্জীকে। ছেলে বিদেশে থাকে, মায়ের দেখাশোনা করে না। কেমন আছে খবর টুকু নেয় না। একেবারে একাকীত্ব জীবনে মি. চ্যাটার্জি কে ভরসা করতে পেরেছেন। তারপর গড়িয়েছে অনেক দূর। আজ ঠিক করেছে চার হাত এক করবে তারা নিজেই। একটা ভালোবাসার বন্ধনে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একে অপরের পাশে থাকবেন জীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত। প্রেম তো বয়স মানে নি, নীরব প্রেমের সাক্ষী তারা সদ্য যুবক যুবতীর মতো বিয়ের আসরে।
– যুগ বদলেছে, কাজের ধরন বদলেছে। একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে একেবারে নিউক্লিয়ার পরিবারে পরিণত হয়েছে। রাগ অভিমান সমালোচনা কোনোটাকেই কেউ প্রশ্রয় দিতে চান না। বড্ড বেশি আত্মনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সমাজ। বর্তমান সমাজের সঙ্গে সেতারের বাঁধনের মত নিজের জীবনটাকে নিজেই গড়ে নিতে হবে। তাইতো আজকাল ছেলে মেয়েরা বাবা-মায়ের একাকিত্ব দূর করার জন্য নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিতে চাইছেন। খুব খুশি মনে তারা বাবা অথবা মায়ের মনের শান্তি ফিরিয়ে দিতে চাইছেন। জীবনের অন্তিমকালে বিবাহ বন্ধন কষ্ট থেকে তাদের মুক্তি দিতে পারে।
– ভালো লাগে সেজেগুজে তাদের বিয়ের আসরে দেখতে। লাজুক মুখমন্ডলে ভেসে আসে কর্তব্য থেকে ভালোবাসার রেখা। আজকাল অবিবাহিত সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বয়স কালে একে অপরের হাত দুটি ধরে নিচ্ছেন। এভাবেই জীবনও ঘোড়ার খুরের ধুলো উড়িয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
– পুরনো অনেকে বলবেন সমাজ তলিয়ে গেল। আমরা বলব না! একজন রমনী স্বামী হারা হলে ওই বৈধব্য যন্ত্রনায় দীর্ঘ জীবন অতিবাহিত করতেন। সাদা কাপড় ,একাদশী ,নিরামিষ খাওয়া- একেবারে তাকে চরম যন্ত্রণার মধ্যে বেঁধে ফেলত। আজকের এই প্রগতিশীল সমাজ অন্তত বয়স্কদের মধ্যে আনন্দের সুর তুলতে সক্ষম হয়েছে। একে একে সবকিছুই তো আমরা মেনে নিই। আধুনিকতার সঙ্গে মন মানসিকতাকে পরিবর্তন করতে হবে। কখনই ভাবা উচিত না যে আমাদের সব কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। বরং ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা নিজেরা যেমন আনন্দ করতে ব্যস্ত, বয়স্কদের এগিয়ে দিচ্ছেন আনন্দের স্বাদটুকু গ্রহণ করার জন্য।
আজকাল কেউ কেউ বলেন- ছ্যা: ছ্যা!
– ছেলেমেয়েগুলোর লজ্জা নাই। কেমন ব্যাটাছেলের মত সিগারেট খায়। ঐ তো অনিতা দির নাতনি কালকে বাড়ী আসেনি। যেখানে সেখানে বসে পুরুষদের নিয়ে গল্প করে।
– আপনাকে ভাবতে হবে তো, সবকিছু চিরকালীন থাকেনা। বদল এর প্রয়োজন। আরো অনেকেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন, নাই বা ফিরল। তার বাড়ির লোকজন নিশ্চয়ই জানেন সে কোথায় আছে। সবাই আপনার কথা না শুনলে যে রসাতলে গেছে তা নয়। তাই প্রতিটা মুহূর্ত আমাদের নিজের মনকেও তৈরি করে নিতে হবে। সমালোচনার বাইরে ও আমরা পৃথিবীটাকে নতুনভাবে চিনতে শিখতে পারি।