ভয়াবহ ঘটনা
মা ও বাবার একমাত্র কন্যা ফুল্লরা।একটু বেশি মাত্রায় আদুরে। কাজকর্ম তেমন পারে না। লেখাপড়ায় মোটামুটি। ঘটক মারফৎ এক সুদর্শন পাত্রের সঙ্গে বিবাহ স্থির হয়। মেয়ের মা হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন ,মেয়ে গৃহকর্মে নিপুণা নয়। অগোছালো স্বভাবের।
ছেলের মা সুন্দরী বৌমা দেখে কোনরূপ বেচাল কথা বলেন না। শুধু হেসে বলেন–বিয়ের পর চাপ আসলে সব শিখে যাবে। তবে শেখার আগ্রহ থাকা চাই। আপনাকে দেখে বা আপনাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, আপনারা ও চান না মেয়ে কাজ শিখুক।
পয়লা অগ্রহায়ণ আঠারো নভেম্বর ফুল্লরা ও বিশ্বরঞ্জনের বিবাহ হয়। মেয়ে’তো নয় ফোঁস করা আধুনিকা চকলেট বোম। শাশুড়ির রান্না হয়ে যাবার পর ঘুম থেকে ওঠে।ছেলে মায়ের মুখ গম্ভীর হবার আগেই , বাবার সাথে যুক্তি করে রান্নার মাসী রেখে দিয়েছে। শাশুড়ি যা বলে বৌমা দোষ খুঁজে ঝাঁঝালো উত্তর দেয়। শাশুড়ি ও বৌমা দুজনের মধ্যে কে দোষী !যে ঘর করে তারা জানবে। অবশ্য যে দোষ করে নিজের দোষ কি চোখে পড়ে! বিশেষ করে বাপের বাড়ি থেকে মা যদি মন্ত্রণা দেন,তাহলে সংসার তো উচ্ছন্নে যাবেই। বিয়ের তিনমাস বাদেই বৌমা রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যায়।ফুল্লরার বাবা আবার মা ও মেয়ের পক্ষে নন। তিনি জানতেন মেয়ে তিনমাস কাটিয়েছে এই ঢের ভালো।মেয়ের মা মেয়েকে বলে ভালো করেছিস, ঠিক দেখবি জামাই চলে আসবে। জামাই আসলে নানান কৌশল করে আটকে দিবি।প্রস্তাবে জামাই ও রাজী। শ্বশুর বাড়িতে আরামে ঘুমাতে পারছে।প্রায় একমাস ধরে শ্বশুর বাড়িতে জামাই আদরে থাকল।
এরপর একদিন শাশুড়ি জামাইকে বলে বাজার করতে। শ্বশুর মশাইয়ের বয়স হয়েছে। এরকম দিনের পর দিন চলে না।জামাই স্পষ্ট জানিয়ে দেয় সে বাড়িতে কোনো দিন বাজার করে নি।এই নিয়ে বেশ বচসা।ফুল্লরা বলে মা’তো ঠিক বলছেন। তুমি বাজার করলে বাবার সুবিধা হবে। এরপর মা , অসুস্থর ভান করে থাকে।মেয়েকে বলে একটু হাতে কাজ করতে পারিস তো! এই নিয়ে মা ও মেয়ের তুমুল ঝগড়া। মেয়ে বরকে বলে আমি শ্বশুর বাড়িতে থাকব। তোমার মা’তো সব রান্না করেন। হঠাৎ ঘরে থমথমে পরিবেশ , বাইরে প্রচণ্ড দাবদাহের পর কালবৈশাখী ঝড়।ওই ঝড়ের মধ্যে ফুল্লরা শ্বশুর বাড়িতে যাবার চেষ্টা করে।মা ও বাবা বললেন যাও,বাপের বাড়িতে থাকলে পাড়া পড়শী কি বলবে! কালবৈশাখীর রাতে শাশুড়ি ছেলে ও বৌমা দেখে কি খুশি। বৌমা শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে। বাড়িতে খুশির বাতাবরণ। শাশুড়ি রাতের রান্না গরম করতে গিয়ে , গায়ে আচমকা আগুন লাগে। শ্বশুর বাঁচাতে এসে অগ্নিদগ্ধ হয়। ছেলে ও বৌমা বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করে।চারদিনের মধ্যে শ্বশুর শাশুড়ি মারা যান। কালবৈশাখী রাতের স্মৃতি মনকে সর্বদা পীড়া দেয়।
তারপর দীর্ঘ বছর কেটে যায়।আজ চারিদিকে থমথমে পরিবেশ। দাবদাহের পর কালবৈশাখীর সম্ভাবনা! ফুল্লরা আপনমনে বিড়বিড় করে বলে,এরপর আমার ছেলের বিয়ে,বৌটা ভালো হবে তো!