Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভবিষ্য পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 8

ভবিষ্য পুরাণ || Prithviraj Sen

কুরুক্ষেত্রের মহাসমর আঠারো দিনব্যাপী চলেছিল। আর মাত্র দু-একদিন বাকী আছে। প্রায় নিশ্চিহ্ন কৌরবকুল। দুর্যোধনকে দ্রোণপুত্র অশ্বত্থামা বললেন–রাত্রিবেলা আমি একাই যুদ্ধ করে পঞ্চপাণ্ডবকে নির্মূল করে দেব। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনুমতি দিলেন দুর্যোধন। তখনকার দিনে রাতে যুদ্ধ নিষেধ ছিল।

পাণ্ডবদের বিপদ বুঝতে পেরে শ্রীকৃষ্ণ শিবের শরণাপন্ন হলেন। তার প্রার্থনায় শিব রাতে পঞ্চপাণ্ডবের শিবির রক্ষা করবেন বলে রাজী হলেন। শিব যখন দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন আর কোনো চিন্তা নেই। নিশ্চিন্ত হলেন শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণ হস্তিনাপুরে চলে গেলেন, আর শিবির থেকে বেরিয়ে পঞ্চপাণ্ডব গেলেন সরস্বতী নদীর তীরে রাত কাটাবার জন্য। রাতে তো আর যুদ্ধ হবে না তাই নিশ্চিন্ত।

অশ্বত্থামা মাঝরাতে পাণ্ডব শিবিরে এলেন। শিবিরে এসে দেখল ত্রিশূল হাতে শিবিরের দ্বারা স্বয়ং মহাদেব দাঁড়িয়ে আছেন। অশ্বত্থামা সঙ্গে সঙ্গে শিবের স্তব-স্তুতি আরম্ভ করে দিলেন। শিব একটুতেই সন্তুষ্ট হন। তিনি অশ্বত্থামাকে বললেন–কেন এত আমার স্তব স্তুতি করছ? তোমার কি চাই?

অশ্বত্থামা বললেন–আমি এই শিবিরে ঢুকতে চাই। শিব দ্বার ছেড়ে দিলেন, শুধু তাই নয় তাঁর হাতে একটা তলোয়ারও দিলেন। কিন্তু এর পরিণাম কি হবে একটু ভেবে দেখলেন না শিব।

এখন পায় কে অশ্বত্থামাকে। সবাই নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। দ্রৌপদীর পাঁচ ছেলে একই বিছানায় পাশাপাশি শুয়েছিল। তাদেরকেই পঞ্চ পাণ্ডব মনে করে শিবের দেওয়া তলোয়ার দিয়ে মাথা কেটে ফেললেন অশ্বত্থামা।

প্রভাত হতেই পঞ্চপাণ্ডবের কাছে গেল দ্রৌপদীর পাঁচ ছেলেই নিহত। শিব শিবির পাহারায় থেকে এমন বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করলেন। ক্রোধে অগ্নিশর্মা হলেন পঞ্চপাণ্ডব। পাঁচ ছেলের মৃত্যুতে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে তাঁরা শিবের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তাঁরা যত অস্ত্র মারেন সবকিছুই আত্মসাৎ করে নেন শিব। ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব তখন অস্ত্র ফেলে শিবের বুকে পেটে চড়, চাপড়, ঘুসি মারতে লাগল। শিবের গায়ে কিন্তু যুধিষ্ঠির হাত তোলেন নি।

সেই প্রহারের ফলে শিব খুব রেগে গিয়ে অভিশাপ দিয়ে বসলেন। তোমরা কৃষ্ণের ভক্ত মানে আমারও ভক্ত। আমার প্রতি তোমরা আজ যে আচরণ করলে, কলিযুগে তোমাদের এর ফল ভোগ করতেই হবে। এই বলে শিব অন্তর্হিত হলেন।

শিবের অভিশাপে পাণ্ডবদের মনে খুব দুঃখ হল। তারা শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করলে তিনি সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। তাদের কাছে সব শুনে কৃষ্ণ আবার শিবকে স্মরণ করলেন।

কৃষ্ণ শিবকে বললেন–যে, তিনি পাণ্ডবদের যত অস্ত্র আত্মসাৎ করেছেন সব যেন ফিরিয়ে দেন। আর ওদের ওপর দেওয়া অভিশাপ থেকে যেন মুক্ত করেন তাদের।

শিব বললেন–সবই তোমার মায়া কৃষ্ণ। উচ্চারিত বাক্য আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। বিফল হবে না, কিছুটা অন্তত ফলবেই। যুধিষ্ঠির কলিতে বৎসরাজের পুত্র হয়ে জন্মাবে। তার নাম হবে বলখানি। রাজা হবে শিরীষপুরের। ভীম আমাকে দারুণ দুর্বাক্য বলেছে। ম্লেচ্ছকুলে বীরণ নামে ওর জন্ম হবে। অর্জুন পরিমলের পুত্র হয়ে ব্রহ্মানন্দ নামে খ্যাত হবে। নকুল লক্ষ্মণ নাম নিয়ে কান্যকুজের রাজা রত্নভানুর পুত্র হয়ে জন্মাবে। সহদেব রাজা ভীমসিংহর পুত্র হয়ে দেব সিংহ নাম নিয়ে জন্মাবে। শুধু তাই নয় ধৃতরাষ্ট্রও জন্মগ্রহণ করবে আজমীরে। কলিতে তার নাম হবে পৃথ্বীরাজ। তখন তার মেয়ে রূপে দ্রৌপদী জন্মগ্রহণ করবে।

শ্রীকৃষ্ণ আর কিছু না বলে শিবের কথা মেনে নিলেন। তারপর বললেন–সব কিছুর প্রয়োজন হবে কলিতে। আমিও আর চুপ করে থাকতে পারব না। তখন পাণ্ডবদের রক্ষা করবে আমার শক্তি। মায়াদেবী আমারই মায়ায় এর রমণীয় পুরী তৈরী করবে, যার নাম হবে মায়াবতী। সেখানে দেবরাজের পুত্র রূপে আমারই অংশে জন্ম হবে উদয়সিংহের।

ঈশ্বরদ্বয়ের মুখে ভবিষ্যৎবাণী কখনও মিথ্যা হবার নয়। শাপগ্রস্ত হয়ে পঞ্চপাণ্ডবের আবার কলিকালে জন্ম হয়েছিল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *