Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ব্রহ্ম পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 3

ব্রহ্ম পুরাণ || Prithviraj Sen

সূর্যবংশের এক রাজা ছিলেন এয্যারুণ। তিনি পরম ধার্মিক এবং সুশাসক। তার রাজত্বকালে রাজ্যে কোন অনাচার কিংবা অশান্তিও ছিল না। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র–সকল বর্ণের সকল প্রজাই নিজের বৃত্তি দ্বারা সন্তুষ্ট ছিল। রাজার শাসনে সবাই খুশি। সবাই শান্তিতে আছে কিন্তু স্বয়ং রাজার মনেই নেই।

রাজা এ্যারুণের একমাত্র পুত্র হল সত্যব্রত। ছোটবেলা থেকেই সে অধার্মিক প্রকৃতির হয়ে উঠল। অপরের ক্ষতিসাধন করা, অন্যের প্রতি হিংসা করা, কাউকে নির্বিঘ্নে থাকতে না দেওয়াই তার স্বভাবের বৈশিষ্ট্য। সব সময় অত্যাচারী মনোভাব। এমন প্রজাহৈতিষী রাজার পুত্র কেন এমন অত্যাচারী হল।

সকল পিতা চায় পুত্র গুণী হোক, যশস্বী হোক, খ্যাতি লাভ করুক। রাজা এয্যারুণও সেই স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁর মতই তার পুত্র হবেন সুশাসক। যাতে প্রজারা সুখে শান্তিতে থাকতে পারে। কিন্তু ধার্মিক রাজার হল এক কুলাঙ্গার পুত্র। রাজার সুখের স্বপ্ন দিন দিন দুঃস্বপ্নে পরিণত হল। মনমরা হয়ে গেলেন রাজা। তারপর ভাবলেন, যদি এক সুন্দরী মেয়ে দেখে এর বিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে বোধহয় স্বভাব পাল্টাতে পারে। রাজার কন্যার নাম সত্যবতী। অপূর্ব সুন্দরী। খুব বুদ্ধিমতীও। রাজা তাকেই পুত্রবধূ করে গৃহে আনলেন। মনে আশা করলেন এই পুত্রবধূই তাঁর স্বামীর সকল দোষ সংশোধন করতে পারবে।

কিন্তু বিয়ের পর থেকে পুত্র আর ঘরেই আসেনা। তার অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেল। রাজ্যবাসী সকলে ভয়ে থাকে। চরের মুখে রাজা তার সব অনাচারের সব কথা জানতে পারেন। নিজেকেই তিনি ধিক্কার দেন। দেশের লোক তার কত প্রশংসা করে, তার ঘরে জন্ম নিল কিনা এমন পুত্র? বহু চেষ্টা করলেন পুত্রের মতি ফেরাবার জন্য। কিছুতেই কিছু হয় না। অবশেষে তিনি সেই পুত্রকে ধরে গুরুদেব বশিষ্ঠের কাছে নিয়ে গেলেন। আর তারই সম্মুখে তাকে যথেষ্টভাবে ভর্ৎসনা করে বললেন–তুই রাজপুত্র হয়ে চণ্ডালের মত ব্যবহার করিস, তুই এখন থেকে ওই চণ্ডালদের সঙ্গেই বাস কর।

তখন থেকে চণ্ডাল পল্লীতেই থেকে গেল সেই রাজপুত্র সত্যব্রত। রাজার আর কিছুই ভাল লাগে না। ধর্মকে আশ্রয় করে সভাবে জীবন-যাপন করে অরণ্যাচারী জীবনকাল কাটিয়ে দেবেন। মনস্থির করলেন, বাকি জীবনটা বনে গিয়ে তপস্যা করেই কাটিয়ে দেবেন। এই চিন্তা করে একদিন রাত্রে কাউকে কিছু না জানিয়েই গৃহত্যাগ করে চলে গেলেন।

রাজ্যহীন রাজ্য, তার মানে অরাজক দেশ। অত্যাচারে অনাচারে দেশ ভরে গেল। দেশে ধর্ম বলতে আর কিছু থাকল না। সেই সময় সূর্যদেবও কুপিত হলেন, প্রখর হয়ে উঠল তার তেজ। যেন অগ্নিবৃষ্টি হচ্ছে দেশে। খাল, বিল, জলাশয় জলশূন্য হল, ক্ষেতের ফসল সব নষ্ট হয়ে গেল। গাছপালা সব শুকিয়ে গেল, দেশে চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দিল।

রাজপুত্র যে চণ্ডাল পল্লীতে বাস করে, সেখান থেকে খুব কাছেই ঋষি বিশ্বামিত্রের আশ্রম। মাঝে মাঝে সত্যব্রত চলে যেত সেই ঋষির আশ্রমে। ঋষিকে দেখে সত্যব্রতের খুব ভালো লেগে গেল। ধীরে ধীরে তার মনে ঋষির প্রতি শ্রদ্ধার উদয় হল।

রাজ্যে যখন এমন দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হল, তার কিছুদিন পূর্বে মহর্ষি বিশ্বামিত্র তপস্যা করবার জন্য চলে যান সাগরতীরে। এদিকে ভয়ংকর দুর্ভিক্ষে আশ্রমেও দেখা দিল প্রবল অনটন। কেমন করে সংসার চলবে? তখন ঋষিপত্নী তার মেজ ছেলেটির গলায় দড়ি বেঁধে একশত গাভীর বিনিময়ে বিক্রি করে দিলেন। গলায় দড়ি বাঁধা অবস্থায় সেই ঋষিপুত্রকে ক্রেতা যখন নিয়ে যেতে উদ্যত, এমন সময় সেখানে সত্যব্রত উপস্থিত।

পুত্র বিক্রির ঘটনা দেখে তার মনে দয়া হল, তখন সে সেই ক্রেতার কাছ থেকে ছেলেটিকে ছাড়িয়ে নিয়ে তার গলার বাঁধন খুলে দিল। আর ক্রেতার দেওয়া গাভীগুলিকেও ফিরিয়ে দিল। গলায় দড়ি বাঁধা ছিল বলে সেই ছেলেটির নাম হল গালব। এই গালব পরে কঠোর তপস্যার বলে একজন ঋষি হয়েছিলেন।

মহর্ষি বিশ্বামিত্রের পত্নী-পুত্রদের কেমন করে চলবে? তারপর থেকে সত্যব্রত সেই ঋষির বাড়িতেই রয়ে গেল। তাদের অভাব দূর করার চেষ্টা করল। আর কোন অবস্থায় সত্যব্রত ঋষির পরিজনদের ছেড়ে যায় নি। নিজে অত্যাচারী হলেও তাদের সবসময় পালন করল।

দেশের সর্বত্রই দুর্ভিক্ষ। কিন্তু কোনো অভাব ছিল না বশিষ্ঠ মুনির আশ্রমে। কারণ তার ছিল একটি কামধেনু। সেই কামধেনুর কাছে যখন যা চাওয়া হত, সঙ্গে সঙ্গে সে তাই দিয়ে দিত। কিন্তু সত্যব্রত এই বশিষ্ঠ মুনিকে একেবারে সহ্য করতে পারত না। সে ভাবত, তার পিতা তাকে যে ত্যজ্য পুত্র করেছে, এর পিছনে ওই বশিষ্ট মুনিরই হাত আছে। তা যদি না হত, তাহলে তার বাবাকে মুনিবর নিষেধ করতে পারতেন। কিন্তু তা তো তিনি করেননি। তাই সত্যব্রত চেষ্টা করল প্রতিশোধ নেবার।

দুদিন হয়ে গেল কোনোভাবে খাদ্য জোটাতে পারল না সত্যব্রত। ক্ষুধার জ্বালায় নিজেও যেমন সে কাতর, তার চেয়েও বেশি! কাতর বিশ্বামিত্রের পরিজনদের দুদিন ধরে কোনও খাদ্য জোটাতে না পারায় মরিয়া হয়ে সত্যব্রত একেবারে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে বশিষ্টের আশ্রমে গোপনে ঢুকে তার কামধেনুকে চুরি করে নিয়ে এল। তারপর তাকে মেরে মাংস রান্না করে সবাই খেল। দুদিন উপবাসী থাকার পর বিশ্বামিত্রের পরিজনেরা সেই মাংস খেয়ে খুশি হল।

সকালে উঠে বশিষ্ঠদেব দেখলেন তার কামধেনুটি নেই। তিনি ধ্যানযোগে জানতে পারলেন সত্যব্রতের এই কাজ। বড় শান্তশিষ্ট বশিষ্ঠ মুনি। কিন্তু তাঁর কামধেনুটি চুরি হওয়ায় তার ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল। রাগে একেবারে অগ্নিশর্মা হয়ে অভিশাপ দিলেন–আজ থেকে তোর নাম আর সত্যব্রত থাকবে না। তুই তিন তিনটি অপরাধ (শঙ্কু) করেছিস। তোর নাম হবে ত্রিশঙ্কু। প্রথম অপরাধ হল, পিতার মনে অসন্তোষের সৃষ্টি করা। দ্বিতীয় অপরাধ, কুলগুরুর গো হত্যা আর তৃতীয় অপরাধ, যা খাদ্য হিসেবে গ্রাহ্য নয় তা ভক্ষণ করা।

সত্যব্রত নিজের কানে সেই অভিশাপ বাণী শুনল। কুলগুরু বশিষ্ঠের অভিশাপ–এতো ভঙ্গ হবার নয়। পাপকর্মের ফল তো ভোগ করতেই হবে। তার উপর সারাদেশে দুর্ভিক্ষ, কেমন করে এর প্রতিকার করা যায়–এই চিন্তা করতে করতে সেখান থেকে সে চলে গেল এক গভীর অরণ্যে। আত্মসংযম করে শুরু করল তপস্যা, ধ্যান, ধারণা আর মৌনব্রতও শুরু করল। বারো বছর ধরে কঠোর তপস্যা করল।

এর মধ্যে বিশ্বামিত্র সাগরতীর থেকে ফিরে এসেছেন। গৃহে ফিরে পত্নীর মুখে সব শুনলেন সত্যব্রতের কথা। খুব খুশী হলেন। বারো বছর পর সত্যব্রত ফিরে এলে বিশ্বামিত্র বললেন–ব তোর কি চাই? তুই আমার পরিবারকে যেরূপে পালন করেছিস, তাতে আমি খুব খুশি হয়ে তোকে বর দিতে চাই। বল কি চাই?

এখন সত্যব্রত ত্রিশঙ্কু, তিনি বললেন–আমার একটিমাত্র নিবেদন, আমি যেন সপরিবারে স্বর্গে যেতে পারি।

বিশ্বামিত্র বললেন–আমি তোকে তাই পাঠাব। তারপর পিতার সিংহাসনে বসলেন ত্রিশঙ্কু। বিশ্বামিত্র হলেন তার পুরোহিত। দেশে পুনরায় ধর্ম স্থাপিত হল, পূর্বে প্রজারা ভয়ে ছিল তা কেটে গেল। আবার পৃথিবীতে সুবৃষ্টি হল। ধরা আবার শস্যশ্যামলা হল। এইভাবে দীর্ঘকাল ধরে রাজ্য সুশাসনে রাখল ত্রিশঙ্কু। তারপর স্বর্গে যাওয়ার ইচ্ছা হলে, বিশ্বামিত্রকে জানালেন সে কথা। মহর্ষি বিশ্বামিত্রের তেজোবলে ত্রিশঙ্কু স্বর্গের দিকে এগোতে লাগল। কিন্তু বাধা দিলেন দেবতারা। মহা অপরাধী এই ত্রিশঙ্কু, এমন লোকের স্থান স্বর্গে হতে পারে না। ত্রিশঙ্কু ধীরে ধীরে নীচে নামতে লাগল। এই দৃশ্য দেখে বিশ্বামিত্রের খুব ক্রোধ হল–আমার মত মুনিকে অবজ্ঞা? ঠিক আছে আমি এক নতুন স্বর্গ গড়ব। সেখানেই ত্রিশঙ্কুকে রাখব। যেমন কথা তেমনি কাজ। নতুন স্বর্গলোক সৃষ্টি করে ফেললেন। বোঝাই যায় না কোন্টা আসল আর কোন্‌টি নকল। তারপর সেই কৃত্রিম স্বর্গে ত্রিশঙ্কুকে প্রতিষ্ঠিত করলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *