Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ব্রহ্ম পুরাণ || Prithviraj Sen » Page 11

ব্রহ্ম পুরাণ || Prithviraj Sen

গৌতমী গঙ্গার আরেক নাম গোদাবরী, তারই এক পাশে স্ত্রী পর্বত। তার উত্তরে এক বিশাল শিবলিঙ্গ নাম আদিবেশ।

বেদ মুনি পরম ধার্মিক এবং সুপণ্ডিত। শাস্ত্রমত যথাবিধি মন্ত্রে উপাচারে শ্রদ্ধার সঙ্গে নিত্য দিন শিবের পূজা করেন তিনি।

আর এক ছিল ব্যাধ, নাম তার ভিল্ল। প্রতিদিন শিকার করে পশুপাখি যা পেত, সেই মৃত পশুর কাঁচা মাংস দিয়ে প্রতিদিন সেও শিবের পূজা করত। যদিও মন্ত্রতন্ত্র তার জানা নেই। মুখে শুধু বলত–হে শিব, তুমি আমার দেওয়া মাংস গ্রহণ করো। এইভাবে ভিন্ন শিব পূজা করে তারপর সে নিজের ঘরে ফিরত।

বেদমুনি নিত্য শুদ্ধচারে শিবের পূজার জন্য ভিক্ষা করতেন আর সন্ধ্যায় এসে দেখতেন শিবমূর্তির চারপাশে কাঁচা মাংসের টুকরো ছড়ানো। তিনি যেসব উপাচার দিয়ে পূজা করেছিলেন সেগুলো অনেক দূরে পড়ে আছে। এই দেখে মুনি খুব অবাক হতেন! কে করেছে এমন কাণ্ড? এত মহা পাপাচার। মনে মনে ভাবলেন তিনি যখন থাকেন না! তখন কোন দূরাত্মা এসে তার পূজার নৈব্যোদি ফেলে দিয়ে কাঁচা মাংস ছড়িয়ে দিয়ে মূর্তি সংলগ্ন স্থানটি অপবিত্র করে দিয়ে যায়। এভাবে কে দেবতার অপমান করে একদিন গোপনে দেখতে হবে।

এইভাবে তিনি পরদিন সকালে গোদাবরীতে স্নান করে নানান নৈবেদ্য ও ফুল দিয়ে শিব লিঙ্গের পূজা করলেন। তার পর লুকিয়ে থাকলেন। ক্রমে বেলা বাড়ল দুপুর হল, বিকেল হল, তারপর সন্ধে নেমে এল অরণ্যমধ্যে। এমন সময় এক ব্যাধিকে দেখতে পেলেন। তাড়াতাড়ি এসে শিকার করা মৃত পশুপাখির বোঝা নামিয়ে রেখে দেখল–কে যেন তাঁর ইষ্টদেবতা শিবকে নানা নৈবেদ্য দিয়ে পূজা করে গেছে। খুব রাগ হল তার। ছুঁড়ে ফেলে দিল সেই সব উপাচার।

এমন কাণ্ড দেখে মুনির অঙ্গ জ্বলতে লাগল। বুঝতে পারল রোজ এই ব্যাধই এমন করে পাপাচার করে, দেখা যাক কি হয়?

এমন সময় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল, যা নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করা যায় না। লিঙ্গ থেকে বেরিয়ে এল জটাধারী ভস্ম মাখা ত্রিশূল হাতে স্বয়ং শিব। স্নেহের বশে ভিল্লকে বলল-হারে আজ তোর এত দেরি হল কেন? কতক্ষণ তোর অপেক্ষায় আছি। খিদে পায় না বুঝি আমার?

শিবের কথা শুনে ভিল্ল বলল–রাগ করো না ঠাকুর, আজ অনেক শিকার মিলল, সেগুলো ফেলে আসতে পারি না। আর একটু অপেক্ষা কর, তোমার খাবারের ব্যবস্থা করছি।

এই বলে ভিন্ন একটি পশুর চামড়া ছাড়িয়ে বের করে ফেলল মাংস। তারপর ছুটে গেল গঙ্গায়। হাতমুখ ধুয়ে, মুখে করে গঙ্গাজল ভরে নিয়ে তাড়াতাড়ি এসে সেই জল দিয়ে স্নান করিয়ে দিল লিঙ্গকে তারপর মাংস নিবেদন করে চলে গেল নিজের গৃহের উদ্দেশ্যে।

ভিল্লের এমন ব্যবহার দেখে বেদমুনি বিস্ময়ে হতবাক। আবার শিবের উপর রাগও হল প্রচণ্ড। এতদিন নিষ্ঠার সঙ্গে শাস্ত্রবিধিমত তিনি তার পূজা করেছেন। সামান্যতম বিধিও লঙ্ঘন করেননি তিনি। তবুও শিব তাঁকে দেখা না দিয়ে দেখা দিলেন অনাচারী ব্যাধকে। আবার তার দেওয়া নৈবেদ্য নিবেদন করা সত্ত্বেও ব্যাধকে বললেন–যে, তিনি ক্ষুধার্ত। আজব ব্যাপার! আর ব্যাধের কুলকুচার জলে স্নান করে কাঁচা মাংস খেলেন তিনি।

তারপর সে গুপ্ত স্থান থেকে বেরিয়ে এলেন। রাগে গরগর করছেন বেদমুনি। তুমি দেবতা হয়ে অনাচারকে মেনে নিলে? আজ আমি একটা পাথর দিয়ে তোমার মাথা ভাঙ্গব। এই বলে একটা পাথর কুড়িয়ে এগিয়ে গেল শিবের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে শিব দেখা দিলেন। বললেন–বেদ, তুমি খুব রাগ করেছ। আমার উপর। ঠিক আছে আমাকে যখন ভাঙ্গবে ঠিক করেছ, তখন ভাঙ্গবে, কিন্তু আজ নয় কাল।

শিবের দেখা পেয়ে বেদমুনি অস্তিত্ব ফিরে গেলেন নিজের বাড়ি। সারারাত ঘুমাতে পারলেন না। শিবের কথা ভেবে কাটল সারা রাত, আজ নিজের কথাও চিন্তা করে অনুশোচনা করলেন মনে মনে।

পরের দিন সকাল হতেই গঙ্গায় স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্রে, শুদ্ধাচারে নৈবেদ্য সাজিয়ে শিবের পূজা করতে বসলেন। বেদোক্ত মন্ত্র উচ্চারণ করে শিবলিঙ্গের উপর ফুল দিতে গিয়ে দেখলেন, লিঙ্গের উপর চাপ চাপ রক্তের দাগ। মনে ভয় পেলেন। গোবর আর গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে দিলেন সেই রক্তের দাগ। তারপর ফুল আর বেলপাতা দিয়ে পূজা করলেন শিবের।

পূজা শেষে লুকিয়ে থাকলেন, ব্যাধের ও শিবের ঘটনা দেখতে।

দেখলেন দুপুরের দিকে ব্যাধ এল। তার দেওয়া নৈবেদ্য দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিল। তারপর নদীতে গিয়ে মুখে করে জল এনে শিবলিঙ্গকে স্নান করাতে গিয়ে দেখে একেবারে চমকে উঠে স্নান করাতে পারল না, নিজের গা বেয়েই পড়ে গেল সব জল, একি ঠাকুরের এমন দশা কে করল? কোন পাষণ্ড ঠাকুরের মাথায় আঘাত করে রক্তপাত করল? কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ভিন্ন। এইভাবে কাঁদতে কাঁদতে তৃণ থেকে বাণ নিয়ে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করতে লাগল, নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে লাগল।

ব্যাধের কাণ্ড দেখে শিব দেখা দিলেন–বেদমুনি আড়াল থেকে বেরোলেন। শিব ব্যাধকে স্নেহপূর্ণ বাক্যে শান্ত করে, বেদমুন্নির উদ্দেশ্যে বললেন–মুনি কি দেখলে আর কি বুঝলে? তুমি আমার মাথায় রক্ত দেখে গোবর মাখিয়ে গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে দিলে, আর এই ব্যাধি সইতে না পেরে নিজের জীবনটাই শেষ করতে উদ্যত। শিবের কথায় বেদমুনির দিব্য চক্ষু লাভ হল। বুঝতে পারলেন, তিনি এতদিন শাস্ত্রাচার মেনে বেদোক্ত মন্ত্র উচ্চারণ করে মহাদেবের পূজা করলেন, আর মূর্খ ব্যাধ সে তো মন্ত্র জানে না। শাস্ত্রাচার জানে না। কেবল মাত্র ভক্তিভরে পূজা করে সে, ব্যাধের মত মুনির অন্তরে ভক্তি কোথায়?

মুনির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। ব্যাধের কাছে এগিয়ে গিয়ে দুহাতে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *