ব্যবসা
শহরের বহুতল বাড়ির এক নামকরা দম্পতি হলেন Mr. &Mrs. রায় l ‘সকল সুখ যে কপালে সয় না’ এই প্রবাদ বাক্যটির আদর্শ উদাহরণ হলেন এঁরা l ওনারা নিঃসন্তান l
অন্যদিকে, ভাঙা ছাদে চাঁদের আলো দেখা যায়, এমন এক পরিবারের মেয়ে বিউলি l মা’ বিউলির ডাল রান্না করার সময় প্রসব যন্ত্রণায় জন্ম দেয় এক ফুটফুটে কন্যা সন্তান, তাই মা’আদর করে নাম রাখে বিউলি l ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ এমন পরিবারে বাবা অতি কষ্টে এক মাতাল রাজমিস্ত্রির সাথে বিউলির বিয়ে দেয় l কিন্তু,কপাল দোষে পণের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তিন মাসের পোয়াতি অবস্থায় ফিরে আসে বাপের ঘরে l দিন পেরিয়ে মাস যায় ‘বিউলির বর এলো নে তাকে নিতে ‘ l পরে শোনে তার মরদ আবার বিয়ে করেছে মোটা টাকার বিনিময়ে l এভাবে পেরোলো নয় মাস, অভাগী বিউলি এক সন্ধ্যায় জন্ম দেয় পুত্র সন্তানের l হায় রে কপাল, বাপ নিজের সংসার পেতেছে, অভাবের সংসারে বিউলির আর তার সন্তান কে পালন করার কেউ নেই l
অনেক সাত-পাঁচ ভেবে বিউলি গ্রামের এক সুযোগ সন্ধানী বাচ্চা পাচার কারীর হাতে,কিছু টাকার বিনিময়ে তুলে দেয় তার রক্ত-মাংসে গড়া সাত রাজার ধন কে l টাকা নিতে রাজি হয় নি কিন্তু, ভাঙা চাল সারাতে হবে, ওদিকে সংসার ও যে চলে নে l
সেই সন্তান দত্তক নেয় Mr.&Mrs.রায় l গ্রামের সবাই ভাবলো বিউলি কোল বিক্রি করার ব্যাবসা খুলেছে l কিন্তু, কেউ ভাবলো না এই নির্মম ঘটনার আড়ালে সুপ্ত এক মায়ের অসহায়তা l
অন্যদিকে, বড়োলোক দম্পতির জীবনে খুশির জোয়ার এলো l অপরিপূর্ণ থেকে পূর্ণতা লাভ করলো ‘রায়’ দম্পতি l সারাজীবনের জন্য বিউলির কাছে ঋণী হয়ে রইলো তারা l
একটাই প্রশ্ন ‘বিউলির মতো মায়েরা ঠিক না ভুল? ‘ বেশ্যারা সাময়িক তৃপ্তি প্রদান করে শরীর বেঁচে, বিউলি কিন্তু তা করেনি l নিজের অংশকে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে, লোক কথায় (কোল বেঁচে )বাঁচা ও বাঁচানোর চেষ্টা করেছে মাত্র l
বারংবার এই কাজ লোভে পরিণত হলে অবশ্যই ভুল l কিন্তু বিউলি একবারই এমন কাজ করতে বাধ্য হয়েছে পরিণতির কাছে l একবার বিউলির মতো মেয়েদের কথা ভাবলে হয়তো পাঠক বৃন্দ সঠিক বিচার করবেন ll