বৃহস্পতি গ্রহ (সাহিত্যরসে আকাশ-বিজ্ঞান ও পুরাণ)
সৌরজগতের পঞ্চম গ্রহ হলো বৃহস্পতি, সবচেয়ে বড়ো, পৃথিবীর রাতের আকাশে (চাঁদ, সন্ধ্যা বা শুকতারার পর) তৃতীয় উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক( অবশ্যই নক্ষত্রদের জ্যোতি না ধরে)। এ গ্রহটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় পৃথিবীর বারো বৎসর আর তার পরের গ্রহ অর্থাত ষষ্ঠ সদস্য শনি করে ২৯ বছরে ।
কিন্ত মজার ব্যাপার , সৌরগ্রহদের মধ্যে সর্ব বৃহৎ শরীরে বৃহস্পতি ঘুরপাক খায় নিজের উপর, সবচেয়ে কম সময়ে, মাত্র ১০ ঘন্টায়।
আমাদের রাতের আকাশে খালি চোখেই দেখা যায় বৃহস্পতি ,শনি , লাল গ্রহ মঙ্গল এবং শুক্র গ্রহ কখনও শুকতারা, কখনও সন্ধ্যাতারা। এইসব জ্যোতিষ্করা আপেক্ষিক গতিতে সারা বছর সারা আকাশে ইতিউতি ঘুরে বেড়ায়, তারা কখনও কাছাকাছি কখনও দূরে, সেও এক বৈচিত্র্যের হিসেব অনুযায়ী।
৮০০ বছর পর পর বৃহস্পতি ও শনি পরস্পর সবচেয়ে কাছে আসে, সে বড়ো অলৌকিক দৃশ্য।
২১শে ডিসেম্বর ২০২০, সূর্যাস্তের পর দিগ্বলয় থেকে
১১⁰ ডিগ্রি ঊর্ধ্বে দক্ষিণ পশ্চিম কোনে
দেখা গিয়েছে এ প্রাকৃতিক দৃশ্য।
খালি চোখে ব্যবধান মিশে দেখতে পাওয়া যাবে
যেন একটি স্থির বিশাল নক্ষত্র।
শেষ দেখা গিয়েছিল ৪ঠা মার্চ, ১২২৬ সালে ,
৭৯৪ বছর পূর্বে
—-[১২২৬—২০২১—২৮২০ (কাছাকাছি)]
বৃহস্পতি ও শনি তাদের কক্ষ পথে কাছাকাছি অনেক বারই আসে, তবে বড়ো নজির যখন তাদের ব্যবধান সবচেয়ে কম, এক ডিগ্রির দশভাগের একভাগ যা দেখা যায় ৮০০ বছর পর পর।
বৃহস্পতির চাঁদ অর্থাত উপগ্রহ আছে মোট ৭৯টি, এর মধ্যে মোট ৫৩টি বিজ্ঞানীরা সনাক্ত করেছেন। বৃহস্পতির রাতের আকাশে অন্ধকার কোথায়, আছে ঐ উপগ্রহরা,ঝলমল করে, কেউ পূর্ণ, কেউ কেউ ভিন্ন ভিন্ন কলায় হয়ত, অবশ্যই নক্ষত্র সকল দেখা যাবে না অত আলোতে !!! ঠান্ডা বৃহস্পতির আবহাওয়ায় আছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস আর সেখানে ভাসছে শুধু জলকণার মেঘ নয়, সাথে আছে তরল অ্যামোনিয়া কণার মেঘও, সুন্দর রঙ্গীন গোলাকার দাগের প্রবাহ অনবরত সৃষ্টি করে। এতো গেল একটু ছোওয়া অ্যাস্ট্রোনমি।
জ্যোতিষশাস্ত্র মতে বৃহস্পতির রত্ন হলো পীত অর্থাত হলদে পোখরাজ, যার রাসায়নিক ফর্মুলা (Corundum, Aluminium oxide, Al2O3, with a color tint appearing for the presence of other metals like Titanium, Iron etc.)
বৃহস্পতি গ্রহস্বরূপ পীত পোখরাজ অনামিকায় ধারণে— প্রেমসুখ, ঐশ্বর্য, সুনাম ও প্রতিষ্ঠার প্রতীকি প্রভাব উল্লেখ্য, কিন্ত আবার কুপ্রভাবও কিছু আছে।
এবারে আসি রোমান মাইথোলজি ও হিন্দু পুরাণ কি বলে বৃহস্পতিকে নিয়ে । রোমান মাইথোলজি অনুসারে, জুপিটার হলেন প্রধান দেবতা, ” জোভ” নামেও পরিচিত। বিশাল আকাশের তিনি যেমন প্রতীক , তেমনই শক্তিমান বজ্রবিদ্যুতেরও। পবিত্র তাঁর “ওক” গাছের দণ্ড, পবিত্র পাখী ঈগল , বজ্র এবং তার সাথে তীব্র তীক্ষ্ণ চোখের দ্যুতি এক মহা শক্তির ইঙ্গিতাবহ পুরুষকার রূপ। এক কথায় বজ্রকঠিন শাসনকর্তা।
বৈদিক ঋষিরা বৃহস্পতিকে বর্ণনা করেছেন ঋগ্বেদে , এক মহান পুরুষ যিনি পৃথিবীর প্রথম ঊজ্জ্বল আলো থেকে জন্ম নিয়েছেন। এখানেও এই শক্তিমান পুরুষের সাথে দণ্ড, জপমালা আর পদ্ম লক্ষ্যণীয়। মধ্যযুগের পুরাণে কথিত— এই বৃহস্পতি বিবাহ করেন পরমা সুন্দরী ও গুণবতী “তারা” নাম্নী রমণীকে যার প্রতি পরে আকৃষ্ট হয়ে চন্দ্র তাঁকে অপহরণ করেন এবং তাদের এক পুত্র হয় তিনিই বুধ। পরে অবশ্য ব্রহ্মা অসন্তুষ্ট হলে চন্দ্র “তারা”কে তার স্বামী বৃহস্পতির কাছে ফেরত পাঠান।
পরবর্তী পুরাণ অনুযায়ী, বলা হয়, বৃহস্পতি অঙ্গীরার ঋষি পুত্র, ব্রাহ্মণ, শাস্ত্রজ্ঞ, মহাদেবের তপস্যায় সিদ্ধি লাভের পর তিনি দেবতাদের গুরু বা আচার্য পদে আসীন হন। তিনি পীতবর্ণের পোষাক পরিধান করেন। তাঁর চারহাত, বর ও অভয় মুদ্রাসহ এক হাতে দণ্ড, আর এক হাতে জপমালা । বাহন হস্তী। পুত্রের নাম কচ,অতি সুপুরুষ ও অতি বিদ্বান মেধাসম্পন্ন ও ব্যক্তিত্বময়। অসুরদের আবার কুলগুরু ছিলেন আমাদের শুক্রগ্রহের প্রতীক শুক্রাচার্য, ব্রাহ্মণ পণ্ডিত, জানতেন “মৃতসঞ্জিবনী” বিদ্যা। এ বিদ্যা অবিদিত ছিল বৃহস্পতির। তাই নিয়ে অপূর্ব পুরাণ এক কাহিনী আছে বৃহস্পতির পুত্র, “কচ” ও শুক্রাচার্য এর কন্যা “দেবযানী”কে নিয়ে। মর্মান্তিক সে কাহিনী !!! যাক্ সে চিত্র না হয় পরে একদিন বর্ণিত হবে….. আজ বরং থাক।