Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

আম্মা সোফায় বসে আছেন, জাহিদ চাচা খাবার টেবিলের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললেন”ডক্টর রওশান, আপনার দরকারি জিনিসগুলো একটা ব্যাগে ভরে নেন।”

মনে হল আম্মা কথাটা ঠিক বুঝতে পারলেন না। জিজ্ঞেস করলেন, “ব্যাগে ভরে নেব?”

“হ্যাঁ। আপনাকে আর বুবুনকে নিয়ে যাই। আজ রাতেই।”

“ওরা যেটা চাইছে?”

জাহিদ চাচা একটা নিঃশ্বাস ফেললেন, বললেন, হ্যাঁ। মানুষের সাথে মানুষ যুদ্ধ করতে পারে। জানোয়ারের সাথে কেউ যুদ্ধ করে না।”

“জানোয়ার?”

“হ্যাঁ। একাত্তরে ওরা আমার স্যারদের ধরে ধরে মেরেছে। ওরা মানুষ নয় ডক্টর রওশান। আপনাকে আমরা ঢাকায় রেখে আসব, মাসুদ সাহেবকে ছাড়িয়ে আনব, তারপর আমি দেখব ওই জানোয়ারের দলের কত বড় সাহস। কিন্তু এখন কোনোরকম ঝুঁকি নেব না। একটুও না। আপনি রেডি হয়ে নেন।”

‘কিন্তু ওরা তো আজ রাত পর্যন্ত সময় দিয়েছে।”

“তা দিয়েছে।” জাহিদ চাচা এক মুহূর্তে কী যেন চিন্তা করলেন, তারপর বললেন, “ঠিক আছে। আপনারা আজ রাতে রেডি থাকেন, কাল খুব ভোরে নিয়ে যাব।”

“আমি রেডি আছি।” আম্মা ফিসফিস করে বললেন, “আমার নতুন করে রেডি হতে হবে না।”

বুবুন ইতস্তত করে বলল, ‘জাহিদ চাচা!”

“কী, বুবুন?”

“আমার মনে হয় আব্বাকে কোথায় ধরে নিয়েছে আমরা জানি।”

জাহিদ চাচা এবং আম্মা ভয়ানকভাবে চমকে উঠলেন।”কী বললে?” জাহিদ চাচা দুই পা এগিয়ে এসে বললেন, “কী বললে তুমি?”

“আমাকে যারা ধরতে চেষ্টা করেছিল–আমার বন্ধুরা তাদের আস্তানা দেখে এসেছে।”

“তাদের আস্তানা?” জাহিদ চাচা আশাভঙ্গের একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “তাদের আস্তানা তো অনেক। কোনটা দেখেছে?”

“আমি জানি না, জিজ্ঞেস করে আসব?”

“না না। জানাজানি করা যাবে না। আমরা একেবারে কোনো রিস্ক নেব না। কাল ভোরে তোমরা ঢাকা যাবে, তোমার আব্বাকে ছাড়িয়ে আনা হবে তারপর।”

“কিন্তু পুলিশ নিয়ে যদি সেই জায়গায় যান?”

“এখন পুলিশকে বলা ঠিক হবে না। একেবারে হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর হলেই শুধু বলা যায়–কিন্তু শুধু সন্দেহ হলে হবে না।” জাহিদ চাচা মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, “হবে না। তুমি জান না এরা কী ভয়ানক মানুষ। যদি গিয়ে দেখা যায় তোমরা ভুল করেছ, তোমার আব্বা সেখানে নেই? সর্বনাশ হয়ে যাবে!”

আব্বার ঘরে গিয়ে বুবুনের চোখে একেবারে পানি এসে গেল, তার একেবারে ছেলেমানুষের আব্বাটি এখন না জানি কী ভয় পাচ্ছেন–তাকে না জানি কীভাবে অত্যাচার করছে। তাকে কীভাবে রেখেছে, কী খেতে দিয়েছে কে জানে! বুবুন ঘরের মাঝখানে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে আর হঠাৎ করে ধর্মের নামে যারা এত বড় অন্যায় কাজ করতে পারে তাদের উপর রাগে, ঘৃণায় তার প্রায় বমি এসে যেতে চায়। কী ভয়ানক খারাপ মানুষ এরা অথচ তারা যেটা চাইছে সেটাই হবে? আম্মা চলে যাবার পর আনন্দে তারা নিশ্চয়ই নাচানাচি করবে, মেয়েদের স্কুলগুলি জ্বালিয়ে দেবে আর আবার যদি কেউ এসে কিছু করতে চায় তার বাচ্চাকে কিডন্যাপ করে নেবে। এটা কেমন করে হয়?

বুবুন ঘরের মাঝখানে থেকে হেঁটে জানালার কাছে এসে দাঁড়াল, যদি কোনোভাবে খবিরউদ্দিনের আস্তানায় গিয়ে দেখা যেত আব্বাকে সেখানেই আটকে রেখেছে তা হলেই তো পুলিশ নিয়ে আসা যাবে। জাহিদ চাচা বলেছেন, হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর হতে হবে–সেটাই কি করা যায় না? খবিরউদ্দিনের আস্তানায় গিয়ে হাজির হওয়া যায় না?

বুবুন হঠাৎ চমকে উঠল, পিয়ালের সেই ট্রান্সমিটার দিয়ে ভেতর থেকে বাইরে খবর পাঠানো যায় না? একটামাত্র খবর দরকার, আব্বা সেখানে আছেন কি নেই। সেটা বের করা কি এতই কঠিন? সে একা পারবে না, তার সাথে আরও একজনকে নিতে হবে, পিয়াল কিংবা গাব্ব। একজন যাবে ভিতরে একজন বাইরে। যে ভিতরে যাবে তার কাছে থাকবে পিয়ালের ট্রান্সমিটার, যে বাইরে থাকবে তার কাছে থাকবে পকেট-রেডিওটা। ভিতরে গিয়ে যদি দেখা যায় আব্বাকে সেখানে আটকে রেখেছে তাহলে ট্রান্সমিটারটা অন করে দেয়া হবে সাথে সাথে বাইরে খবর চলে যাবে। তখন গিয়ে পুলিশকে জানানো যাবে।

বুবুন পুরো পরিকল্পনাটা আরও একবার ভেবে দেখল, কাজ না করার কোনো কারণ নেই। যদি ভিতরে গিয়ে ধরাও পড়ে যায় তবু একজন বাইরে থাকবে, সে গিয়ে অন্যদের খবর দিতে পারবে। সত্যি সত্যি যদি আব্বাকে ভিতরে পাওয়া যায় আর পুলিশ নিয়ে এসে খবিরউদ্দিনের দলবলের কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়া যায়, বদমাইশগুলো কি তা হলে জন্মের সোজা হয়ে যাবে না?

বুবুন জানালা দিয়ে বাইরে অন্ধকারে নিমগাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে ঠিক করে ফেলল যেভাবেই হোক সে যাবে তার আব্বার কাছে।

বাসা থেকে চুপিচুপি বের হয়ে এল বুবুন। সে একা যেতে পারবে না। জায়গাটা সে চেনেও না, একা যেতে চাইলেও যেতে পারবে না। গাব্বু নাহয় পিয়ালকে নিয়ে যেতে হবে। পিয়ালকে নেওয়া খুব সোজা হবে না, তার আব্বা অত্যন্ত কঠিন মানুষ, বুবুন তাই গাব্বর বাসায় হাজির হল। এরকম অসময়ে বুবুনকে দেখে গাব্বু খুব অবাক হল বলে মনে হল না, জিজ্ঞেস করল, “কী ব্যাপার?”

বুবুন চাপা গলায় বলল, “এখানে বলা যাবে না।”

গাব্বু সাথে সাথে উঠে দাঁড়াল, বলল, “চল বাইরে যাই।”

বাইরে এসে বুবনের মুখে পুরো ঘটনা শুনে গাব্বর মুখ শক্ত হয়ে উঠল, মাটিতে থুতু ফেলে বলল,”শুওরের বাচ্চাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেব। দাড়ি টেনে ছিঁড়ে নেব–লাথি মেরে হাঁটুর জয়েন্ট খুলে দেব–”

“এতকিছু করতে হবে না। তুমি আমাকে সেই বাসাটা চিনিয়ে দাও, তা হলেই হবে।”

“কী করবে তুমি?”

“দেখব ভিতরে আব্বা আছেন কি না। পিয়ালের ট্রান্সমিটারটা নিয়ে যাব, যদি থাকেন সিগনাল দেব, আর তুমি বাসায় এসে খবর দেবে।”

গাব্বু বলল, “পিয়ালকেও নিতে হবে।”

“ওর আব্বা–”

“এরকম সময়ে আব্বাদের ভয় করলে হবে না। পিয়ালকে খবর দিলেই চলে আসবেই।”

গাব্বুর কথা সত্যি, পিয়ালকে বলামাত্র সে বাসার পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে এল। পিঠে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে নিয়ে এসেছে–তার ভিতরে টর্চলাইট, নাইলনের দড়ি, চাকু এরকম আরও নানাকরম জিনিস রয়েছে। বুবুনকে দেখে বলল, বুবুন, তুমি কোনো চিন্তা করো না, আমরা চাচাকে ঠিক উদ্ধার করে ফেলব।”

সত্যি সত্যি কিছু করতে পারবে কি না কেউ জানে না কিন্তু পিয়ালের কথা শুনে হঠাৎ বুবুনের চোখে পানি এসে গেল।

গাব্বু বলল, “আমাদের খুব তাড়াতাড়ি রওনা দিতে হবে। বাসায় যখন খোজাখুঁজি শুরু হবে তখন ধারেকাছে থাকলে বিপদ হয়ে যাবে।”

পিয়াল বলল, “আয় শেষবার দেখে নিই সবকিছু নেয়া হয়েছে কি না।”

গাব্বু বলল, “এইখানে দাঁড়িয়ে থাকিস না, হঠাৎ করে কেউ দেখে ফেলবে। আয় আরও সামনে যাই।”

ওরা তিনজন বুবুনদের বাসা পার হয়ে সুমিদের বাসায় কাছে চলে গেল। বাসায় সামনে পেয়ারা গাছটার নিচে বসে অন্ধকারে জিনিসপত্র হাতড়ে হাতড়ে দেখে আবার সবকিছু ব্যাগে ভরে রওনা দিয়ে দেয়–অনেকটা দূর যেতে হবে, পকেটে পয়সা থাকলে রিকশা করে যাওয়া যেত।

তারা তিনজন মাত্র কয়েক পা গিয়েছে হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, প্রচণ্ড আতঙ্কে ওরা প্রায় চিৎকার দিয়ে দিচ্ছিল, হঠাৎ করে দেখতে পেল মানুষটা সুমি!

গাব্বু বলল, “ও, তুই? ওহ্! কী ভয়টা পেয়েছিলাম!”

সুমি হেসে বলল, “কোথায় যাচ্ছিস তোরা চোরের মতো? জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি গাছের নিচে বসে গুজগুজ করছিস, তখন বুঝতে পারলাম কিছু-একটা ব্যাপার আছে।”

পিয়াল গম্ভীর গলায় বলল, “আসলেই ব্যাপার আছে।”

পিয়ালের গলায় স্বর শুনে সুমি ভয়-পাওয়া গলায় বলল, “কী ব্যাপার?”

“চাচাকে খবিরউদ্দিনের লোকেরা ধরে নিয়ে গেছে।”

সুমি চাপা গলায় চিৎকার করে বলল, “কী বললি?”

“হ্যাঁ। আমরা তাই যাচ্ছি।”

“কী করবি তোরা?”

গাব্বু গম্ভীর গলায় বলল, “চাচাকে উদ্ধার করব।”

সুমি এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, “দাঁড়া, আমিও যাব।” গাব্বু চোখ কপালে তুলে বলল, “তুই? তুই কেমন করে যাবি?”

“কেন, কী হয়েছে?”

“এই রাত্রে! একটা মেয়েমানুষ–”

”আমাকে মেয়েমানুষ বলবি তো ঘুসি মেরে নাক ভিতরে ঢুকিয়ে দেব।”

“মেয়েমানুষকে মেয়ে বলতে পারব না?”

পিয়াল বিরক্ত হয়ে বলল, “আহ! ছেলে মেয়ে এইসব এখন রাখ দেখি।”

সুমি বলল, “তোরা দুই মিনিট দাঁড়া, আমি আসছি।”

“উঁহু। রাত্রিবেলা তোকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।”

“ঠিক আছে। আমাকে ছাড়া যাওয়ার চেষ্টা করে দেখ আমি কী করি।”

“কী করবি?”

”এক্ষুনি চিৎকার করে আমি সবাইকে বলে দেব।”

বুবুন বলল, “তুমি সত্যিই যেতে চাও?”

সুমি মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ। আমি যদি না যাই হলে তোমাদের কপালে অনেক দুঃখ আছে।”

“কেন?”

“তোমাদের দলের মাঝে একজন থাকা দরকার যার মাথায় খানিকটা ঘিলু আছে, গায়ে জোর আছে আর বুকে সাহস আছে। তা ছাড়া

“তা ছাড়া কী?”

এরকম ব্যাপারে মানুষ যত বেশি থাকে তত ভালো। তোরা দাঁড়া আমি আসছি।”

বুবুন, গাব্বু আর পিয়াল দাঁড়িয়ে রইল, সত্যি কথা বলতে কি সুমি আসছে বলে হঠাৎ করে তাদের ভিতরে জোর খানিকটা বেড়ে গিয়েছে। সুমিকে খোদা নিশ্চয়ই ছেলে তৈরি করতে গিয়ে ভুল করে মেয়ে তৈরি করে ফেলেছে।

সুমি আসতে অবিশ্যি একটু দেরি করল, জিনসের প্যান্টের সাথে ঢলঢলে একটা টি-শার্ট পরে এসেছে, মাথায় বেসবল ক্যাপ, তার ভিতরে চুল ঢুকিয়ে রেখেছে, হঠাৎ দেখলে ছেলে মনে হয়। পিঠে একটা ব্যাগ-সেখানে নানা জিনিসপত্র।

শহরের শেষ মাথায় নির্জন এলাকাটায় পোঁছে বুবুন, গাবু, পিয়াল আর সুমি রিকশা থেকে নেমে পড়ল। বাকি জায়গাটা সাবধানে হেঁটে হেঁটে তারা অন্ধকার বাসাটার সামনে এসে হাজির হল। বাইরে থেকে মনে হয় ভিতরে কেউ নেই। চারিদিকে ঘুটঘুঁটে অন্ধকার। খুব ভালো করে তাকালে অবিশ্যি দেখা যায় একটি দুটি ঘরে জানালার ফাঁক দিয়ে খুব অল্প আলো বের হয়ে আসছে। ওরা সাবধানে গেটটা কাটিয়ে দেয়ালের পাশে একটা গাছের নিচে এসে হাজির হল।

বুবুন ফিসফিস করে বলল, “পিয়াল, তোমার ট্রান্সমিটারটা আমাকে দাও। তোমরা বাইরে থেকে রেডিওটাতে কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টা করো। আমি যদি আব্বাকে পেয়ে যাই তা হলেই সিগনাল পাঠাব, সাথে সাথে বাসায় গিয়ে খবর দেবে।”

সুমি ফিসফিস করেই যেটুকু জোরে বলা যায় সেভাবে বলল, “তুই কেন ভিতরে যাচ্ছিস?”

“তা হলে কে যাবে? আমার আব্বা–”

“তোর আব্বা হয়েছে তো কী হয়েছে! দুইজন যাবে ভিতরে। দুইজন থাকবে বাইরে।”

গাব্বু মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ, আমি আর বুবুন ভিতরে।”

‘উঁহু।” পিয়াল মাথা নাড়ল, “আমি আর বুবুন। আমি এই ট্রান্সমিটার তৈরি করেছি, আমি নিয়ে যাব ভিতরে।”

সুমি অধৈর্য হয়ে বলল, “এখন ঝগড়া করার সময় নাই, কে যাবে সেটা ঠিক হবে লটারি করে।”

“লটারি?”

“হ্যাঁ।”

“এই অন্ধকারে লটারি করবি কেমন করে?”

“সোজা। একজন বাম হাতে না হয় ডান হাতে একটা জিনিস রাখবে, অন্যজন বলবে কোন হাতে, যদি ঠিক ঠিক বলতে পারে তা হলে লটারিতে জিতে গেল।”

“যদি সবাই জিতে যায়!”

‘তা হলে আবার হবে লটারি। যতক্ষণ পর্যন্ত দুইজন না জিতছে ততক্ষণ লটারি হবে।”

“ঠিক আছে।”

“আগে থেকে বলে রাখছি কেউ পরে আপত্তি করতে পারবি না কিন্তু!”

“ঠিক আছে।”

লটারি কয়েকবার করতে হল এবং শেষ পর্যন্ত জিতে গেল বুবুন আর সুমি। যদিও আপত্তি করবে না বলে আগে কথা দিয়েছিল তবু পিয়াল আর গাব্বু একটু আপত্তি করার টেষ্টা করল, তাতে অবিশ্যি কোনো লাভ হল না।

ট্রান্সমিটারটা রাখল বুবুনের পকেটে। অন্য জিনিসপত্রগুলি দুটি ব্যাগে ভাগাভাগি করে নেওয়া হল। ব্যাগগুলো বেশ ভারী হয়েছে কারণ সুমি বাসা থেকে তার ব্যাগে অনেক জিনিস এনেছে। বাইরে থেকে আটকে দেওয়ার জন্যে বেশ কয়েকটা তালা, বোতলের মাঝে কেরাসিন তেল, সাবান, পানি, ম্যাচ, দড়ি, ছোটবড় ঢেলা। কোন জিনিসটা কোন কাজে লাগবে সেটা এখনও সবার কাছে পুরোপুরি পরিষ্কার নয় কিন্তু সুমি ভালোভাবে প্রস্তুত না হয়ে ভিতরে ঢুকতে রাজি নয়।

ব্যাগটা পিঠে ঝুলিয়ে নিয়েছে দুইজন, জুতোর ফিতা ভালো করে বেঁধেছে। বুবুন তার চশমাটা সুতো দিয়ে পিছনে বেঁধে নিয়েছে, খুলে গেলেও যেন পড়ে না যায়। বুবুনের শার্টটা হালকা রঙের ছিল, অন্ধকারে যেন দেখা না যায় সেজন্যে গাব্বু নীল রঙের শার্টের সাথে বদলে নিয়েছে। সবকিছু ঠিক আছে কি না দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করে নিয়ে বুবুন বলল, “আমরা গেলাম তা হলে।”

পিয়াল বলল, “যা। কোনো চিন্তা করিস না। আমরা আছি বাইরে।”

গাব্বু বলল, “বিপদ দেখলেই আমরা বাসায় খবর দেব।”

বুবুন আর সুমি দেয়াল টপকানোর জন্যে ভালো একটা জায়গা খুঁজে নিয়ে দাঁড়াল। অন্ধকারে ভালো করে কিছু দেখা যায় না তা-ই সুমির মুখের দিকে তাকাতে পারছিল না, বুবুন যদিও জানে এখন নিশ্চয়ই তার মুখটাও পাথরের মতো শক্ত। দেয়ালে ইটের ফাঁকে পা দেওয়ার আগে মনে-মনে বলল, “খোদা, তুমি আমাদের রক্ষা করো।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *