বিষ্ণু পুর-পোড়া মাটির কাব্য
টেরাকোটা বা কালাতীত মৃৎশিল্পের(নীহাররঞ্জন রায়ের কথায়)স্বপ্নপুরী….বিষ্ণু পুর ॥ সাধারণত সুত্রধর সম্প্রদায়ের ভ্রাম্যমান শিল্পী রাই ঘুরে ঘুরে এই মন্দির তৈরীর কাজ করতেন ॥ এঁরা প্রথমেই অলংকরণ ও স্হাপত্যের উপযুক্ত মাটি তৈরী করতেন ॥ অলংকরনে র ক্ষেত্রে নকশিটালি গেঁথে দেওয়া হতো চুন সুরকি দিয়ে। অনেক সময়ে মন্দিরে ব্যবহৃত ইটের এক পাশে ই নকশা করেই ব্যবহার করা হতো।
মাটি নির্বাচন ও প্রস্তুতি তে গাঙ্গেয় এঁটেল মাটিকে আরও টেকসই করার জন্য মাটির উপাদান বুঝে তাতে আরও বিভিন্ন উপাদান মেশানো হতো…..।
যেমন ….১…খরুটি….মাটিও খড়ে র গুড়া র মিশ্রন
2উলু টি….মাটিও উলুঘাসের মিশ্রন , , ,
৩ ….পাটুটি….মাটিও পাটের মিশ্রন
৪…তুসুটি….মাটিও কাঠের গুড়া র মিশ্রন
৫….তুলুটি. মাটিও তুলোর মিশ্রন ॥
এই মিশ্র উপাদান দরকার মতো অনু পাতে মিশিয়ে ,বার বার পায়ে দলে, ত্রিফলার জল মিশিয়ে ভিজিয়ে রাখা হতো .তিন মাস। তারপর তাতে অলংকরণ করে কাঁচা মাটির বর্জন যোগ্য অংশ ধাতু বা বাঁশ বাকাঠের যন্ত্রদিয়ে চেছে তুলে প্রথমে রোদে ও পরে ভাটিতে পোড়ানো হতো॥
অনেক সময় মিহিবালি ও শামুকের খোলপোড়া অর্থাত পঙ্খ বা কলিচুনে র প্রলেপ ও ব্যবহারকরা হতো মিহিন কাজের জন্য ॥ মাকড়া পাথরের মন্দির ও টেরাকোটার মন্দিরে এই পংখের প্রলেপ দেখা যায় । টেরাকোটার মতই এই পংখের অলংকরণ রীতিও কালাতীত ও প্রাচীন ॥
কথিত আছে শ্রীনিবাস আচার্য ১৫৯৮সালে বীর হাম্বিরের কাছে এসেছিলেন ও তাঁকে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত করেন ॥ কিংবদন্তি যে তিনি ডাকাতদের অনু সরণ করে লুন্ঠিত বৈষ্ণব শাস্ত্র গুলি উদ্ধা র করে মল্ল রাজসভায় নিয়ে আসেন ॥
মাটির মত অতি সাধারণ উপাদান ও মাকড়া পাথরের মত সহজলভ্য উপাদানে তৈরী এই মন্দির গুলি বাঙালীর স্হাপত্যের পরীক্ষার অসামান্য নিদর্শন॥
বাংলার নিজস্ব এই কালাতীত মৃৎশিল্পে র মন্দির আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে চলে সেই সোনালী অতীতে …..সেই অনামী শিলপী দের গড়া এই টেরাকোটার রূপকথার….মন ভরে ওঠে…..মাথা নত হয়ে ওঠে ওই শিল্পীদের শিল্প কর্মের পাদপীঠে…….নমি নমি চরনে ॥