বিশাখাপত্তনম এ মন্দাকিনী – 25
নিয়তি আমায় কোথায় টেনে নিয়ে চলেছে জানিনা! এতো আঁধার যে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।সার ফিরল আমার। দেখলাম আধুনিকা আর মন্দাকিনী আমাকে টেনে নিয়ে চলেছে।পাছে গাইড কে হারিয়ে ফেলি! আধুনিকা বলল—-কি হল কৃষ্ণ দা,আপনি কি ভয় পেলেন? বুঝলাম আর স্বপ্ন দেখা চলবে না।ওকে অভয় দিতেই নিজের ভয়ের কথা বললাম। ——— কি করব বল ,তোমাদের বগলে যে ভাবে আমার হাত সেট করে নিয়েছ তাতে আমার ভয় পাওয়ার ই কথা। আমার কয়ায় মন্দাকিনী তার হাত সরিয়ে নিলেও আধুনিকা আমার হাত ধরেই রইল। কারণ টা বুঝলাম। বললাম—— গাইড কোন দিকে গেল? মন্দাকিনী বলল—ডান দিকে।একটু পা চালালেই ধরে ফেলব গাইড কে। বেগে ছুটলাম সেদিকেই। ধরে ফেললাম গাইড কে। বললাম—— গাইড সাহেব আমাকে একটু করুনা করুন। শাস্ত্রে বলেছে নাকি”,পথে নারী বিবর্জিতা “। আমার হল উল্টো। দু’দুটো নারী কে সামাল দিতে আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলছি। গাইড সাহেব আমার ইংরেজির তর্জমার কত টা সক্ষম হল তা জানি না।তবে রস আস্বাদন যে করেছে তারিখ বুঝলাম ওর হাসিতে আর ওর ধীর চলনে। বুঝলাম এবার আর গোলক ধাঁধায় পড়ার ভয় নেই। তাই এবার সত্যিই বোরা কেভ দেখতে শুরু করলাম। গাইড এর কথা শুনতে লাগলাম। সার কথা হল গোস্তানী নদীর উৎস এই বোরা কেভ। একসময়ে নদী চূনা পাথরের এলাকা দিয়েই বয়ে যেত। জলের মিনারেল এর সাথে মিসে নানা রকম ভাস্কর্যের সৃষ্টি করেছে। কোথাও নরমুন্ড কঙ্কাল, শিব পার্বতী এসব আদৌ নেই।কল্পনায় যেমন আকাশের মেঘে ছুটন্ত ঘোড়া দেখি তেমন ই।এসবই ট্রাইব্যাল দের বোরো দেব। গুহার মধ্যে শ্বেত শুভ্র স্ফটিকের নানান আকার দেখছি।তখন মনে হল আরাকুর কাছে কোথায় যেন দামী দামী পাথর পাওয়া যায় শুনেছিলাম। বোরা কেভ এর ধারে কাছে ই জুয়েল এর খনি আছে। আলোর ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও দুই নারী আমাকে বেষ্টন করে ছিল। বেশ সরু পথ। ভক্তি আনার জন্য গাইড সাহেব হর পার্বতীর খুব সুখ্যাতি করছিল। আমি আঁতিপাতি করে ও এক কণাও ভক্তি খুঁজে পেলাম না। প্রকৃতি যে কতবড় শিল্পী তা বোরা কেভ না দেখলে বোঝা যায় না।বোরা কেভ এর দেয়ালের গা দেখে মনে হয় ভাস্করের ভাস্কর্য দেখছি। এতক্ষণ উৎরাই হল। এবার চড়াই।হঠাৎই মনে হল আমার ডান হাতটা যেন একটু ভারী। দেখলাম মন্দাকিনীর ভাব টা সুবিধার নয়। ওকে চাঙা করতেই আধুনিকার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। ———- তোমার নাম টা তো জানা হয় নি।কি নাম তোমার? ——-আমার নাম শ্রীমতী শ্রীমানী ।বেহালায় থাকি। ইচ্ছা করেই বেশি জোর দিয়েই বললাম।যাতে মন্দাকিনীর ভয় কেটে যায়। নিশ্চয়ই ভয় পেয়েছে। কারণ অনেক ক্ষণ থেকেই অন্ধ কূপে আমরা। শরীরের সাপোর্ট দিয়ে রেখেছি।দেখলাম আমার ওষুধে কাজ হয়েছে।ভার টা একটু হাল্কা লাগল। ইচ্ছা করেই বললাম—–বেহালায় কোথায়? ——— ট্রামডিপো। আপনি কোথায় ? এবার মন্দাকিনী সোজা হয়ে গেল। মন্দাকিনী বলল——– “শ্রীমতীরে হেরি বাঁকে গেল রেখা,কাঁপি গেল তার হাত!”।দেখ বুদ্ধের দাসী ই থেক।অন্য কারও দাসী হয়ো না যেন। খুশি হলাম, তাই দিল খোলা হাসি হেসে উঠলাম। কেঁপে উঠল গুহার এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। এই প্রথম মন্দাকিনীকে আমার একটু কাছের করে টেনে নিলাম। গাইড আমাদের মাঝেমধ্যে সঙ্গ দিয়ে চলেছে।এমন করেই আমরা যেখান দিয়ে ঢুকেছিলাম সেখান দিয়েই বেরিয়ে এলাম। বাগানের শান বাঁধানো রাস্তা দিয়েই গেট এর পৌঁছলাম। বদ্ধ জায়গা থেকে উন্মুক্ত প্রকৃতি পেয়ে মনে হল,”আহা!একই আনন্দ”। রেস্টুরেন্ট এর ভেতরে মাসীমা আর মেশোমশায় বসে আছেন। মন্দাকিনী ওদের কাছে বসল। শ্রীমতীকে ওর বাবা মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমার কাজ। তাই শ্রীমতীর সঙ্গে বাইরে দাঁড়ালাম। শ্রীমতী বলল——-কৃষ্ণ দা,আপনি খুব ভাল। বললাম ——- হঠাৎ কেন এ কথা? সেই মেয়ে বলল—– না,আমার সঙ্গে যার গেম চলছে সে হলে বোরা কেভ এর আমাদের কিস করার সুযোগ টা ছাড়তো না। আমি বললাম—-তুমি ওর সঙ্গে মেশো কেন? ——-ইউ আর ভেরী ওল্ড কৃষ্ণ দা।আই লাইক হিম। অ্যাকচুয়ালি ইট ইজ আ গেম। আই লাইক টু বি কিস্ ড।কখনও মন্দাকিনীকে কিস করেছেন? বুঝলাম মাথাটা একেবারেই বিগড়ে দিয়েছে কয়েকটা ছেলে।এর কিছু হওয়াতে হলে একজন ভাল কাউন্সেলর দরকার। বললাম—–পড়াশুনা কেমন লাগে? সে বলল—–তেমন কিছুই না। বললাম——- ভাল রেজাল্ট হলে আনন্দ পাও? ——- ইস। বেড়াতে এসেও পড়ার কথা।অন্য কথা বলুন। বললাম——- আমার ইচ্ছা,তোমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখি।তোমার এমন সুন্দর চেহারা।তাই তোমাকে ডাক্তার নইলে সায়েন্টিস্ট বানাবো। ——-তারপর? ——- তুমি বিদেশে যাবে শিক্ষার মান বাড়াতে।এরপর তুমি বিশ্বের নাম করা ডাক্তার। কেমন বল? ——– দারুন। তারপর? ——— তুমি খ্যাতির শিখরে। ভারতে আসবে কিছু পেসেন্ট কে দেখতে। আমি তারমধ্যে একজন। ———- তখন কি আমাদের বিয়ে হবে? বললাম——কি করে হবে?তখন তো আমার টাক পড়ে যাবে।সামনের দাঁত ও পড়তে পারে। আমার কথা শুনে হেঁসে উঠল শ্রীমতী। বলল——- কৃষ্ণ দা,আই উইল নেভার ফরগেট ইউ। নেভার। আপনার গল্পের নায়িকার মতো হতে চেষ্টা করব। শ্রীমতীর মা বাবা চলে এলেন। আবার সবাই বাস এ বসা হল একে একে।বাস চলল টায়ডার দিকে।মাঝে মাঝেই বাস হেলে যাচ্ছিল। কিন্তু সুচতুর ড্রাইভার তারিখ সুদক্ষ হাতে ঠিক মত চালিয়ে নিল। বাস দাঁড়াল একেবারেই রাস্তার ওপর। গাইড এর নির্দেশে আমরা নেমে দাঁড়ালাম। এটাই হল “জাঙ্গল বেলস্” নেচার ক্যাম্প। এ পি টুরিজ্ম আর ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট একসাথে মিলে এটা করেছে।ফারনিসড টেন্ট। থ্রি স্টার ফেসিলিটি দেওয়া হচ্ছে। তাল গাছের গুড়ি দিয়েই কটেজ। স্টার ফেসিলিটি পাওয়া যাবে। মন্দাকিনী বলল—— কেউ কি এখানে থাকে? বললাম—- থাকবে না কেন?সবাই কি তোমার মতো ভীতু? মেশোমশায় বললেন—– তুমি বলেছিলে এখানে পরিবেশ শিক্ষার ব্যবস্থা আছে? বললাম—— হ্যাঁ। পাখীর ডাক শুনে বুঝে নেওয়া কোন পাখি ডাকছে। ট্রেকিং, রক ক্লাইম্বিং, ক্যাম্প ফায়ার শেখা। গাইড আমাদের হাত নেড়ে ডাকতে সে দিকেই এগুলাম। দেখলাম কাঁচের ঘেরাটোপের মতোই একটা জায়গা। তাতে সুদৃশ্য চেয়ার টেবল ফিট করা। বুঝলাম এটাই রেস্তোরা।সেখানে বসতেই কফি আর বড়া এসে গেল। খাওয়া হতে উঠে দাঁড়ালাম। এবার যাবার তাড়া। কারণ সূর্য ডুবে সাঁঝবাতি জ্বালার সময় প্রায় আগত। সবাই বাসে উঠলাম। সাঁঝের পাহাড় কি ভয়ংকর লাগছে!মেশোমশায়ের যদি শরীর খারাপ লাগে তাই ভাবলাম কারণ অনেকের ই বমি শুরু হয়েছে। মন্দাকিনী বলল—– বাবা মায়ের শরীর খারাপ লাগছে। তুমি এখানে বসবে? আমি উঠে গিয়ে ভিজে তোয়ালে দিয়ে ঠান্ডা করলাম মাসীমাকে। বললাম——আপনি ঘুমান। দেখবেন, ঠিক হয়ে গেছে। বাসের লাইট অফ করা সবাই ঘুমোচ্ছে।মাসীমা ঘুমিয়েই মাঝে মাঝেই আমার কাঁধে পড়ছেন। তা দেখেই মেশোমশায় জায়গা বদল করলেন, আমার কষ্ট হচ্ছে ভেবেই বললেন। —–কেষ্টা, তুমি মন্দার পাশে বস। মন্দাকিনীর পাশে বসলাম। এখানেও একই অবস্থা। মাঝে মাঝেই মন্দাকিনীর মাথা আমার কাঁধে পড়ছিল এবার তা সেট হয়ে গেল। মন চাইছে বুকে টেনে নিতে।একে অন্ধকার তায় ঘুমের ঘোর।কিন্তু তা হবার নয়।তখনই মনে হল শ্রীমতীর কথা।”অন্য কেউ হলে সুযোগ নিত ।আপনি খুব ভাল “। মন্দাকিনী কি বুঝল কে জানে?হয়ত ভেবেছে ওর বাবা ই বসে আছে।আরও তোড়জোড় করে ঘুমানোর চেষ্টা করল।আমি আরও একটু জায়গা ছেড়ে দিলাম। যাতে জানালায় মাথা ঠুকে না যায়। ওর শরীরের গন্ধ আমার ভূত ভবিষ্যত ভুলিয়ে দিচ্ছে।আমি কি গন্ধে মাতাল হলাম!আমার হাত চাইছে ঐ মাথার ফুলে হাত বোলাতে। আরাম হবে জানা কথা।কিন্তু ঐ আরাম একটা রোগের সামিল। রোগ বানাতে চাই না তাই ওকে জাগিয়ে দিলাম। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম। ——— আর কত ঘুমাবে? মন্দাকিনী চোখ খুলে এতো কাছে আমায় দেখবে ভাবেনি!! আবার ও বললাম——আমার বুক টা তো ভিজিয়ে দিলে। মন্দাকিনী বলল—–কি বলছ? বললাম——- গদি আর বালিশ তো ভালোই পেয়েছ।একটু বেশিই শাস্তি দিয়ে দিলে না তো? মন্দাকিনী অন্য কথা বলল——আমার ওড়না টা কোথায় গেল? ওকে রাগাতেই বললাম। কারণ বেশির ভাগ সময়ই ওটা মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছিল। তাই উঠিয়ে রেখেছি ওড়নাটা। ——ওটার কি কোন দরকার আছে? ——-দরকার আছে বৈকি।তুমি রেখেছ? এবার মন্দাকিনীর আব্দারের স্বর। —-দাও না। ওড়নাটা যথা স্থানে চলে গেল। আমার চোখ ছুঁয়ে গেল সেই অঙ্গ।চোখ ফিরল আমার। এত কাছে তবুও সে আমার নয়! মন্দাকিনীর কথায় সে দিক ফিরলাম। ———এখানে বসলে কি করে?মা রাগ করবে না? ———– তোমার বাবার অনুমতিতে বসলাম। তোমার মা আমার কাঁধে ভর দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। ঠিক তোমার মতোই। তোমার বাবার কি সহ্য হয় বলো?তার স্ত্রী অন্য পুরুষের কাঁধে ভর দিয়ে ঘুমোচ্ছে। কেউ সহ্য করবে না।আমিও না।বুঝলে? মন্দাকিনী বলল——- মানে?কাঁধে ঘুমতে না ? নাকি সহ্য করতে না?-চ কথাটা বলেই হাসতে লাগল-মন্দাকিনী। ———- নরম কাঁধে ঘুমাতে পারি।তবে সহ্য করব না তোমার কাঁধে অন্য মাথা। ———–, ফাজলামো করোনা কৃষ্ণ দা।ঐ মেয়েটির সাথে কথা বলে তুমি উচ্ছন্নে গেছ। ——— শ্রীমতী?ভাবছি ওকে নিয়ে একটা গল্প লিখব। ——-কৃষ্ণদা , একদিনে এত পাল্টে গেলে?ঐ মেয়েটা আমার থেকেও ভাল,তা আমি জানি।যাই আমি মায়ের কাছেই বসি। কথাটা বলেই মন্দাকিনী উঠতে যাচ্ছিল আমি ওকে টেনে বসিয়ে দিলাম।
বিশাখাপত্তনম এ মন্দাকিনী – 26
মন্দাকিনীকে বললাম —— রাগ করছ কেন? মেয়েটা বাজে ছেলের খপ্পরে পড়েছে।ভাল কথা শুনতে চায় না।তাই বললাম আমার গল্পে ওকে ডাক্তার বানাবো। বিদেশ থেকে ভারতে আসবে একজন নামী দামী চিকিৎসক হিসাবে।আমি পেসেন্ট হিসাবেই যাব। ——-শুনে কি বলল?আমি জানি তোমাকে ওর ভাল লেগেছে। বললাম——হ্যাঁ। ও বলল, তখন কি আমাদের বিয়ে হবে?আমি ওর কথাই ওকে মনে করিয়ে দিলাম। ওকে বলি,তা কি করে হবে?তখন তো আমি টাক পড়া ,পেট মোটা একটা লোক। এটাও এক রকম কাউন্সেলিং। ——- তাতে কি হবে?ও কি শিখবে? ——- ভাল শিক্ষা দাও শিখবে না।চোখের সামনে দেখছে ও একজন ডাক্তার!তখন ইচ্ছা জাগবে একজন ডাক্তার হবার। ——— তুমি বলছ, এরপর ও ভাল হবে? কি জানি!ফিরে গিয়ে তুমি আমাকে ভুলে যাবে।ঐ শ্রীমতী হয়তো তোমাকেই পড়াতে বলবে। আমি বললাম——তুমি- সব জেনে বসে আছ। আর বললেই কি আমি পড়াব?তোমাকে কেন ভুলেযাব? তোমার সাথে দেখা হবে না কেন?এম এ তে ভর্তি হবে না? মন্দাকিনীর দুর্বল স্বর শুনে বুঝলাম মন্দাকিনী শ্রীমতীর কথা ভেবেই চিন্তিত। তাই ওকে নিশ্চিন্ত করতে বললাম। ———— একটা মেয়েকে জীবনে প্রথম পড়িয়ে এমন নাকানি চোবানি হয়েছে আমার যে আর জীবনে অন্য কোন মেয়েকে পড়াব না। আমার কথায় মন্দাকিনী চাপা খুশির হাসি হেসে উঠল। আমি যেন ওর হাসিতে নূপুরের নিক্কন শুনলাম। চমকে তাকালাম ওর দিকে। মুগ্ধ দৃষ্টি আমার। আলো আঁধারে মন্দাকিনীকে দারুণ দেখাচ্ছে।আমি কি মন্দাকিনীর মোহিনী মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি!একেবারে অন্য কথায় চমকে উঠলাম। ———ঐ শ্রীমতীর তোমাকে ভাল লেগেছে। বললাম—— তাতে কি হল? ফিরে দেখলাম মেশোমশায় আর মাসীমা একে অন্যকে ঢুলুনীতে টক্কর দিচ্ছেন। তাদের মেয়ের দিকে ফিরলাম। বললাম—– সবাই ঘুমাচ্ছে। তুমি ঘুমাবে না? মন্দাকিনী ঝাঁঝেই বলল—-কেন?আমি ঘুমালে খুশি হও?ঠিক আছে আর কথা বলব না। মন্দাকিনীর অভিমানের স্বর। বললাম—-তোমার কি হয়েছে?ঐ মেয়েটা বেহালায় থাকে বলে কি আমি ওর বাড়ি যাব? ——–তোমাকে ঠিক নিয়ে যাবে। ——– ঠিক আছে, কথা দিলাম। ডাকলেও যাব না। মন্দাকিনীর গলায় বিদ্রুপের সুর। ——- যাবে না কেন?দরকার হলে গেম ও খেলতে পার। কৃষ্ণ দা তুমিও গেম খেলতে শিখে গেলে? আশ্চর্য হলাম ওর কথায়। ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল কান। বললাম——- কি বললে?আবার বল? মন্দাকিনীর হাত চেপে ধরেছিলাম শক্ত হাতে। ছাড়াতে চেষ্টা করেও পারল না। বলল——- ছাড়, লাগছে। তবুও ছাড়লাম না। বললাম—– ছাড়বো। তবে আগে আমার দিকে ফের। অভিমানীনির দু’চোখে অশ্রু ধারা। হাত আগেই ছেড়ে ছিলাম। এখন ওর কর স্পর্শ করলাম। ধরবো না তো কি করব?কারণ আমিও তো সেই অশ্রুনীরে ভেসে গেছি। বাক্ হারা আমি। ফিরে যাবার আগে ওকে এত দুঃখ দিলাম! এ পাপ নিশ্চয়ই আমাকে বিঁধবে। রুমাল বার করে ওকে দিলাম। সে তা নিলো না। হাত দিয়ে চোখ মুছে ফেলল। গলায় জোর এনে বললাম——ক্ষমা করে দাও ভুল করেছি। আর তুমিও যাও ভাবছ তাও ভুল। আমি শুধু শ্রীমতীর ভাল ভেবেই ও কথা বলেছি। আমার কথা শেষ না হতেই মন্দাকিনীট উঠে দাঁড়াল। বুঝলাম শ্রীমতীর নাম অবধি শুনতে চাইছে না । তাই এই জায়গা বদল। মেশোমশায় আমার পাশে বসেই বললেন। ———– কাল প্রায় এ সময়ে আমরা হাওড়ার কাছা কাছি পৌঁছে যাব। আবার এক ঘেয়ে জীবন। কি ব্যাপার তোমার ও কি মুড খারাপ নাকি? বললাম—— না। মনে ভাবলাম তোমার ও বলতে মন্দাকিনীর সাথে আমাকে ধরে নিয়েছেন। হয়তো মেয়ের গলায় এমন কিছু ছিল যাতে তিনি বুঝেছেন ওর ভাবটা। ——–কেষ্টা, তুমিতো আমাদের বাড়িতে ছিলে , তাই মন্দা ও আমরা তোমাকে আপন লোক ই ভাবি। ——— আমি জানি মেশোমশায়। ———– মন্দা তোমাকে কিছু বললে কিছুই মনে করো না।বড্ড অভিমানী মেয়ে। গাঢ় স্বর মেশোমশায়ের। লজ্জা পেলাম। হাটে হাড়ি ভেঙে দেয়নি তো!তাই বললাম। ———— ওকে আমি ভাল করেই জানি।ও নিয়ে আপনি চিন্তিত হবেন না। ——– তাতো জানি। তবে এখন ই ওর চোখে জল দেখলাম তো!বহুদিন দেখিনি। মিথ্যে বলা আমার ধাতে নেই তাই বললাম। ——-ঐ মেয়েটির কথা হচ্ছিল। একটু বে -লাইনে চলে গেছে। তাই ওকে কাউন্সেলিং করছিলাম। সেই কথা মন্দাকিনীকে বলতে ঐ কান্ড। বলুন আমি কোন অন্যায় করেছি? ——— না না ,ভালোই করেছ। ছোট থেকেই খালি ওর সাথে কথা বলতে হবে। “বাবা আমার সাথে কথা বল” ।হা হা করে হাসতে লাগলেন মেশোমশায়। বুঝলাম পিতৃস্নেহ কি জিনিস!আমার বাবার কথা মনে হল।আজ বাবা থাকলে কোন ইচ্ছা অপূরণ থাকতো না।মেশোমশায় তার মেয়ের ইচ্ছার কথা টের পেয়েছেন। সেটাই ভাল করে জেনে নিলেন। আমি কেষ্টাচরণ সাচ্চা না ঝুঠো? আলো জলে উঠলো। অনেকেই ঢুলছিলেন বলে আমার ধারণা।কারণ টায়ডার পর ই আলো নিবিয়ে দিয়েছিল। সেই ভোর থেকে সবাই ক্লান্ত। তায় বাসের দুলুনি। টানা বেশ কয়েক ঘন্টা ঘুমের পর আলো জ্বললে চোখ তো খুলবেই।বাস থামল আর টি সি কমপ্লেক্স এর উল্টো দিকে।বাসে আলো জ্বললে ও শহর নিস্প্রদীপ। কোথাও আলোর ছিটে ফোঁটা নেই। মাসীমা বললেন——- আজ আর ঘুমাতে পারব না।যা ধকল গেছে সারাদিন। কি যে হবে, কে জানে! বাস চলতে শুরু করল আর কে বিচ এর দিকে। টিকিট কাটার সময় কথা ছিল আর কে বিচ এ আমাদের ছেড়ে দেবে। সে দিকেই বাস চলল।বাঁয়ে পড়ল অন্ধ্র ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস অর্থাৎ বিশাল চত্বর। একে একে কয়েকটা ডিপার্টমেন্ট, লাইব্রেরি, ফাংশন হল, স্ট্যটিস্টিক ডিপার্টমেন্ট, ফ্যামিলি কাউন্সেলিং ডিপার্টমেন্ট। এরপর ডানে ডিস্ট্যানস এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট। পার্ক হোটেল কে পাক খেয়ে বাস দাঁড়াল। আর টি সি কমপ্লেক্স অন্ধকার হলেও এই চত্বর আলোয় ঝলমল করছে। ডান দিকে বাঁক নিল বাস। সোজা আর কে বিচ চলে এলো। নেমে দাঁড়ালাম আমরা।ঘড়ি দেখলাম আট টা পয়তাল্লিশ।
চোখের সামনে মনে হচ্ছে দৃশ্য গুলো ফুটে উঠছে, খুবই ভালো লাগলো দিদি।
Excellent!