Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিদ্যুতের জাদুঘরে || Sanjib Chattopadhyay

বিদ্যুতের জাদুঘরে || Sanjib Chattopadhyay

বিদ্যুতের জাদুঘরে

ওই যে দেখছেন সিলিং থেকে ঝুলছে লম্বা ডান্ডা, চারটে পাখা, ওই বস্তুটির নাম ছিল ফ্যান— ভাতের ফ্যান নয়, এফ এ এন ফ্যান—চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত মানুষকে হাওয়া দিত।

তাই নাকি? কে ঘোরাত?

বিদ্যুৎ নামক একটি শক্তির সাহায্যে এই বায়ুচক্রকে ঘোরানো হত। সেই শক্তিও আর নেই। সেই ঘূর্ণনও আর নেই। তবু ঝুলিয়ে রেখেছি স্মৃতি হিসেবে। পরোপকার কিংবা জীবে প্রেমও বলতে পারেন। চড়াই পাখিরা ওড়াউড়িতে ক্লান্ত হয়ে মাঝে মাঝে এই পক্ষবিস্তারে পদস্থাপন করে পশ্চাদ্দেশঈষৎ ঝুলিয়ে সেকালের মুড়ি লজেনচুষের মতো কিছু প্রাকৃতিক বস্তু নীচে নিক্ষেপ করে স্মরণ করিয়ে দেয়—তোমাদের গতি ঊর্ধ্বে নয় অধে, অগ্রে নয় পশ্চাতে। তবে হ্যাঁ, মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে—দেশেদুগ্ধ বিপ্লব শুরু হয়েছে, কল টিপলেই দুধ বেরোবে, জোয়ার খেলে। যাবে, তখন ড্রাম ভর্তি দুধে ওই চক্রবস্তুকে চুবিয়ে, দৈহিক অশ্বশক্তি প্রয়োগ করে মন্থন করতে করতে নবনী প্রস্তুত করে, কুরুক্ষেত্রের সেই কৃষ্ণকে আবাহন করে বলব—প্রভু! আবার ফিরে গেছি সেই যুগে একদিকে পঞ্চপাণ্ডব অন্যদিকে দুঃশাসন, মাঝে ভারতভূমি, সূর্যোদয়ে। দিবালোক, সন্ধ্যায় আঁধার, মনুষ্য-শৃগালের রাজনৈতিক চিৎকার, দুর্যোধনের হুহুঙ্কার, বাতি জ্বেলে যুধিষ্ঠির সাট্টাক্রীড়া, প্রভু! এসো! তোমার বাল্যলীলার জন্যে সঞ্চিত নবনী, আর একটি গীতা শ্রবণের ইচ্ছা রাখি না, তোমার নবলীলা দেখি আঁধারের ঘুঘু হয়ে।

তা! মন্থন-দণ্ড হিসেবে বস্তুটি মন্দ হবে না। নবনীর পর ঘোলও উৎপন্ন হবে প্রচুর! মস্তকে ঢালা যাবে। আচ্ছা, দেয়ালের গায়ে ঝুলটুল জড়ানো ওই মরালগ্রীব বস্তুগুলি কী?

আজ্ঞে। ওগুলো ছিল আলো। একসময় জ্বলত। আলো বিতরণ করত। এই যে দেখছেন ফানুসের মতো ছোট ছোট কাচের গোলক চঞ্চতে লাগানো, ওকে বলা হত বালব! এই যে দেয়ালের গায়ে। কাঠের বোর্ডে, সারি সারি, কালো কালো গোলাকার বোতামের মতো জিনিস দেখছেন, একে বলা হত সুইচবোর্ড, সুইচ। এটা টিপলেই ওটা জ্বলে উঠত। আলোর তেজ মাপা হত ওয়াট দিয়ে— ষাট, একশো, দেড়শো, দুশো।

দেয়ালের গায়ে ফিট করা এই ডান্ডাগুলো কী ছিল?

ও! ওদের বলা হত ডান্ডা-লাইট। কত নাম ছিল ওর! নিয়ন, ফ্লোরোসেন্ট।

মিস্ত্রিরা বলত রড-লাইট। ডান্ডা এখন ঠান্ডা। রাত্রির তপস্যা সেকি আনিবে না দিন? দিনের তপস্যা, সে কি আনিবে না রাত্রি?

তখন বেশ মজা ছিল তো? সাধনা না করেই আঁধারে আলো নেমে আসত। সুইচ অন আর সুইচ অফ? মধ্যে দৃষ্টি রেখে, কুলকুণ্ডলিনীকে খোঁচাখুঁচি না করেই আলোকের ওই ঝরনাধারা। যিশু নয়, বেদব্যাস নয়, দ্বৈপায়ন নয়, আঙুল আর সুইচ! আলো আর অন্ধকার!

হ্যাঁ, অতুলনীয় মজা! প্রথমে তিনি থাকতেন, না তাড়ালে যেতেন না। জ্বলছে তো জ্বলছেই, পাখা ঘুরছে তো ঘুরছেই, জল পড়ছে তো পড়ছেই। কোনওদিন বলতে হয়নি তোমরা আমাকে বিশ্বাস করো, আমি আছি। আপনিই বিশ্বাস এসে গেছে—হ্যাঁ তুমি আছ। ঈশ্বরের মতো থাকা নয়, তেজ আর দীপ্তি নিয়ে থাকা।

তারপর কী হল?

দিন যায়, দিন আসে, বছরের পর বছর চলে যায়। দেশহুড়হুড় গুড়গুড় করে পরিকল্পনার ধাপ বেয়ে এগিয়ে চলেছে, এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং-এর উচ্চতা ছুঁই ছুঁই। খাঁচাখাঁই কল চলছে, সার, সালসা, বয়লার, ইঞ্জিন, পাট, সুতো, মাছ, মাংস, হিমঘর, হাইব্রিড, আলু, পটল, কপি, কুলার, ফ্যান, ফোন, ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক ট্রেন মায় বৈদ্যুতিক চুল্লি। তারপর একদিন! সাজাহাঁ! এ কথা জানিতে তুমি ভারত ঈশ্বর সাজাহান, পেটে যা সয় না তা খেলে হয় ডিসপেপসিয়া। তিনি আসেন, তিনি যান। এই ছিল এই নেই। আসা-যাওয়ার পথের ধারে ল্যাম্পপোস্ট। মেগাওয়াট আছে মেগাওয়াট নেই। অবস্থা—মার্শাল টিটোর শেষদিনের মতো। এই ভালো, এই খারাপ। গেল গেল, রইল রইল। সে কী আতঙ্ক, সে কী উত্তেজনা! রাজবৈদ্য নাড়ি টিপে বললেন—ওদের ঘোড়া ছুটছে যেন। এ নাড়ি খুনির নাড়ি। কীসের এত উত্তেজনা!

আজ্ঞে! এই আছে, এই নেই।

কে আছে। কে নেই!

আলো।

ভুলে যান, বিস্মৃত হন। এই উত্তেজনায় কত হৃদরোগী ফতে হয়ে গেল জানেন? ঘরে ঘরে উন্মাদের চিৎকার—এসেছে। চলে গেছে। রুদ্ধ নিশ্বাসে গোটা পরিবার থম মেরে বসে আছে, এসেছে তবু যাচ্ছে না কেন? পিঠের ওপর আততায়ীর ভোজালি, কখন নেমে আসবে অন্ধকার, কখন আসবে! এই গেল, এই গেল। স্টেট বিল্ডিং-এর কার্নিশ ধরে একটি লোক হেঁটে চলেছে যেন, এই পড়ল, এই পড়ল। অ-বহমান বিদ্যুৎ, এই পালাল।

সেই ক্লেশ থেকে আমরা আজ মুক্ত? ধন্যবাদ? প্রযুক্তিবিদদের নানা স্তরের হাতাহাতি সহযোগিতায় বিদ্যুতের কেল্লা মার দিয়া। ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের যাদুঘরে বসে, সুখের হাতপাখা নাড়ি আর কারবাইডে পাকানো ল্যাংড়া চুষি, নাকের ডগায় ডুমোডুমো মাছি রেখে। দিনের তপস্যায় নেমেছে কালিদাসের রাত্রি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *