Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাঙ্গালীর বীরত্ব || Panchkari Dey » Page 31

বাঙ্গালীর বীরত্ব || Panchkari Dey

“তুমি অমন করে আমার মুখপানে চাহিয়া আছ কেন?” বলিয়া কজ্জলা অন্যদিকে মুখ ফিরাইল।

বিশ্বনাথ অনপ্রতিভভাবে বলিলেন, “না, আমি একটা বিষয় চিন্তা করিতেছিলাম। দেখ, জুলিয়ার এজেহার—’কৃষ্ণবর্ণা, আলুলায়িতকেশা, প্রসন্নবদনা’ বলিয়া তাহার উদ্ধারকর্ত্রীর বর্ণনা আছে; এবং আমি সম্মুখেও সেই মূৰ্ত্তি দেখিতেছি—তুমি যে জুলিয়ার প্রাণরক্ষা করিয়াছ, তাহাতে আর আমার সন্দেহ নাই। এখন তোমায় একটা কথা জিজ্ঞাসা করিব—জুলিয়ার এজাহারে আরও লেখা আছে যে, যখন রাঘব সেন তাহাকে উৎপীড়ন করিতেছিল, সেই সময় গেঁটে-গোঁটা একটা জোয়ান সেইখানে আসিয়া উপস্থিত হইল। রাঘব তাহাকে দেখিয়া বলিল, “কিরে ক্ষুদে, কি হয়েছে?’ সে বলিল, ‘রেসমের গুদামের চাবিটা চাই, ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় আমায় পাঠাইয়া দিলেন; ক্ষুদে কে? আর ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয়ই বা কে?

কজ্জলা কহিল, “ক্ষুদে রাঘব সেনের দেউড়ীর পাইক, আর ভট্টাচার্য্য মহাশয় তার পোষাপাখী।”

বিশ্ব। পোষাপাখী! বিখ্যাত ডাকাত রত্নাপাখী না কি?

কজ্জলা। হ্যাঁ, সেই ত রাঘবের ডান হাত।

বিশ্ব। সে এখন কোথা আছে, বলিতে পার?

কজ্জলা। সে পাখী, উড়িয়া বেড়ায়, সে কি এক জায়গায় থাকে? তাকে ধরা বড় শক্ত কথা।

বিশ্বনাথ চাপরাসীকে ডাকিয়া কহিলেন, “দেখ, আমার নাম করে রাঘব সেনের দেউড়ীর পাইক ক্ষুদেকে এইখানে একবার ডেকে আন।” চাপরাসী চলিয়া গেলে তিনি কজ্জলাকে পুনরপি জিজ্ঞাসিলেন, “আচ্ছা বল দেখি, তুমি রাঘব সেনের সর্ব্বনাশ করিতে উদ্যত হইয়াছ কেন?”

কজ্জলা কহিল, “যে দেশের লোকের সর্ব্বনাশ করছে, আমি তার সর্ব্বনাশ করব না? মহাপাতকীর সর্ব্বনাশ করব না? যে আমার প্রাণদাতা-রক্ষাকর্তার—যথাসর্বস্ব নিয়ে আবার উল্টা দাবী দিয়ে তাঁকে বিপদে ফেলেছে, তার সর্ব্বনাশ করব না?”

বিশ্ব। কে তোমার রক্ষাকর্তা?

কজ্জলা। আমার ঘরে আগুন লেগেছিল, আমি পুড়ে মরছিলাম, দেওয়ান আমায় সেই বিপদ হতে রক্ষা করেছেন।

বিশ্বনাথ। কে? গোবিন্দরাম? গোবিন্দরাম তোমায় রক্ষা করেছেন? তোমার বিপদের পূর্ব্বে তাঁকে তুমি জানতে?

কজ্জলা। তাঁর নাম শুনেছিলাম, কিন্তু তাঁকে আর কখন দেখি নাই।

বিশ্বনাথ কিয়ৎক্ষণ মৌনাবলম্বেনে চিন্তা করিয়া পুনর্ব্বার কজ্জলাকে বলিলেন, “দেখ, আমার যাহা জানা আবশ্যক ছিল, তাহা তুমি আমায় জানাইয়াছ—আমার যাহা দেখা আবশ্যক ছিল, তাহা তুমি আমায় দেখাইয়াছ। এখন তোমার সম্বন্ধে আমার কিছু কৌতূহল জন্মিতেছে—তুমি কে? “

ক। ‘তুমি কে’ এ কথার উত্তরে ত আমায় কুলজী আওঁড়াতে হয়।

বিশ্ব। না, না, তা বলিনি, তোমার নামটি কি জানিতে পারি না?

ক। আমার নাম কজ্জলা।

বিশ্ব। তুমি কি জাতি?

ক। সম্প্রতি আমার জাতি নাই। আমি কুলত্যাগিনী। তা বলে আমাকে কুলটা মনে করিও না। পতিই আমার সর্ব্বস্ব—পতিই আমার একমাত্র উপাস্য দেবতা।

বিশ্ব। এ ত বড় আশ্চর্য্যের কথা! তবে তুমি কুলত্যাগিনী কি জন্য?

ক। পতি আমার উড়ে উড়ে বেড়ান্— তাঁকে ধরবার জন্য আমি তাঁর পিছু পিছু ফিরি—তাঁর মতি-গতি ফিরাবার জন্যই আমি সৰ্ব্বত্যাগিনী হয়েছি।

এই সময় শ্বশুর সমভিব্যাহারে দেওয়ান গোবিন্দরাম তথায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাহাদিগকে দেখিয়া ফৌজদার কজ্জলাকে বলিলেন, “দেখ, চাপরাসীকে বলিও যে, আমি যতক্ষণ না ডাকিয়া পাঠাই, ক্ষুদেকে যেন সেইখানে বসাইয়া রাখে। আর তুমিও এখন কোথাও যাইও না।”

কজ্জলার প্রতি এই অনুজ্ঞা করিয়া, তিনি গোবিন্দরাম ও হলধর ঘোষকে সঙ্গে লইয়া প্রস্থান করিলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *