Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাঙ্গালীর বীরত্ব || Panchkari Dey » Page 12

বাঙ্গালীর বীরত্ব || Panchkari Dey

আড়িয়াদহ গ্রামের উত্তর প্রান্তে, যে স্থানে এক্ষণে সাগর দত্ত মহাশয়ের উদ্যানবাটী অমরাবতীর ন্যায় শোভা বিস্তার করিয়া রহিয়াছে, শত বৎসর পূর্ব্বে সেইস্থান এক নিবিড় বেত্রবনে আবৃত ছিল। এই কণ্টকাকীর্ণ জঙ্গলমধ্যে রাঘব সেনের দলভুক্ত দস্যুদিগের লুণ্ঠন-তরণী সকল লুক্কায়িত থাকিত। ষষ্ঠীর রাত্রি যখন তিন দণ্ড হইয়াছে, সেই বেত্রবন হইতে একখানি ক্ষুদ্র নৌকা নিষ্ক্রান্ত হইয়া দক্ষিণাভিমুখে চলিল। পূৰ্ব্বোল্লিখিত ধৰ্ম্মা যুগী, হরি ঠাকুর, ধনা মুচি ও অপর দুই ব্যক্তি তাহাতে আরোহণ করিয়াছিল। হরি ঠাকুর হাই তুলিয়া, তুড়ি দিয়া বলিল, “কৈ রে বাবা, কিছুই ত দেখতে পাচ্ছি না।”

ধর্ম্মা। তোমার কি চোখ নাই ঠাকুর, ঐ যে যাচ্ছে।

হরি। কৈ রে বাবা, কৈ?

ধর্ম্মা। সে কি ঠাকুর, ঐ যে শিবতলার ঘাট ছাড়িয়ে যাচ্ছে। টেনে! টেনে! ভেলা মোর বাপ রে! ধৰ্ম্মা যুগী হাইল ধরিয়াছিল, সে পুনঃপুনঃ ঝিঁকা মারিয়া ও পুনঃপুনঃ দাঁড়ীদিগকে উৎসাহ দিয়া তরণী তীরবেগে ছুটাইয়া দিল; এবং সেই নির্দ্দিষ্ট নৌকার নিকটবর্ত্তী হইয়া জিজ্ঞাসিল, “নৌকা কোথায় যাবে?”

সেই নৌকার একজন আরোহী দাঁড়াইয়া উঠিয়া তাহার প্রতি কটাক্ষ করিয়া কহিল, “কে তোরা?”

ধর্ম্মা। আমরা জেলে। তোমরা কোথায় যাবে গা বাবু?

দণ্ডায়মান ব্যক্তি। আমরা কলিকাতায় যাব। তোরা কোথা যাবি?

ধর্ম্মা। আমরা বাবু এই বেলুড়ে যাব। বাবু একবার তামুক খাব, একখানা টিকা ধরিয়ে দেবে? কলিকাতা যাত্রীর নৌকায় একজন ভোজপুরী দ্বারবান্ ছিল, সে গম্ভীর মুখে উত্তর করিল, “আগ্ কাহারে?”

ধৰ্ম্মা। ঐ যে কে তামুক খাচ্ছে।

দ্বারবান্। আগ্ নেহি মিলে গা।

হরি ঠাকুর মুখ বিকৃত করিয়া বলিল, “নেহি মিলেগা—কাহে নেহি মিলেগা?”

দ্বারবান্। কহি নেহি মিলেগা, হারামজাদ।

দণ্ডায়মান ব্যক্তি দ্বারবানের দিকে ফিরিয়া চাহিয়া বলিল, “আরে ঝগড়া করিস কেন? একটু আগুন নেবে বৈ ত নয়।”

দাঁড়ীরা দাঁড় তুলিয়া ধরিল, নৌকা থামিল। ধর্ম্মা যুগী হরি ঠাকুরকে হাইল ধরিতে দিয়া সেই নৌকায় লাফাইয়া পড়িল। ধনা মুচিও তাহার সঙ্গে আসিল।

ধৰ্ম্মা। কৈ বাবু, একটু আগুন দাও না?

বাবু ঐ মাঝী বুঝি তামাক খাচ্ছে, দেখ দেখি।

মাঝী। আগুন আমি ঢেলে ফেলেছি।

“আচ্ছা, আমি আগুন করে নিচ্ছি,” বলিয়া ধৰ্ম্মা নৌকাগৃহে প্রবিষ্ট হইল। ইত্যবসরে ধনা মুচি ধাক্কা মারিয়া দ্বারবানকে জলে ফেলিয়া দিল। পরক্ষণেই পিস্তলের আওয়াজ হইল ও ধনা মুচি নৌকায় পড়িয়া রুধির বমন করিতে লাগিল। এই সময়ে সেই বাবু হস্তস্থিত পিস্তল হরি ঠাকুরের অভিমুখে বাড়াইয়া বলিল, “যদি বাঁচিবার ইচ্ছা থাকে, খবরদার পলাইবার চেষ্টা করিনি।”

হরি ঠাকুর “না হুজুর, পলাইব কেন, এই আমি হাইল ছাড়িয়া দিলাম,” বলিয়া জলে ঝাঁপ দিয়া পড়িল এবং নৌকাস্থ অপর দস্যুদ্বয়ও সেইরূপ করিল। নৌকাখানি ঘুরিতে ঘুরিতে একটানায় ভাসিয়া যাইতে লাগিল। ইত্যবসরে নৌকাগৃহে মহা হুড়াহুড়ী আরম্ভ হইয়াছে দেখিয়া, সেই পিস্তলধারী জিজ্ঞাসিল, “কি রে ভীমে কায়দা করতে পারিসনি?”

ভীম উত্তর করিল, “বাবু, একবার আসতে পারেন?’

পিস্তলধারী গোবিন্দরাম নৌকাগৃহে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, ভীম সর্দ্দার সেই দুৰ্দ্দম দস্যুর বক্ষস্থলে উপবিষ্ট হইয়া হস্তস্থিত অস্ত্র কাড়িয়া লইবার চেষ্টা করিতেছে, কিন্তু কিছুতেই কৃতকাৰ্য্য হইতে পারিতেছে না; তিনি তৎক্ষণাৎ সেই অস্ত্র কাড়িয়া লইলেন এবং রজ্জুদ্বারা তাহার হস্তপদ দৃঢ়রূপে বন্ধন করিয়া দিয়া নৌকার বহির্দেশে আসিয়া দাঁড়ীদিগকে খুব-টানিয়া যাইতে বলিলেন। তরণী তর্ তর্ বেগে ছুটিতে লাগিল।

ভীম। বাবু, আর ওদিকপানে গিয়ে কি হবে?

দেও। টিকারাম বেটাকে একবার খুঁজে দেখা উচিত নয়?

ভীম। এই একটানা গঙ্গা, কোথায় ভেসে গেছে, তাকে আপনি কোথা দেখতে পাবেন?

দেও। না, না, একবার দেখা চাই বৈ কি? ওরে, ওখানে আগুন লেগেছে নাকি? আকশটা

একেবারে লাল হয়ে উঠেছে যে, ঐ যে ভারি একটা কোলাহল হচ্ছে।

মাঝী। হাঁগো বাবু; বড় আগুন লেগেছে।

দেও। আচ্ছা, ঐখানে গিয়ে একবার নৌকা ভিড়াও।

ভীম। বাবু, ঐ ডাকাতদের নৌকাখানা ভেসে যাচ্ছে, ধরব?

দেও। ওরে, শোন্ত, ঐ নৌকার ভিতর থেকে কে ডাকছে না?- ভীম। কে রে? টিকারাম?

টিকারাম। আরে, হাম্তো মর গেয়া।

দেও। আরে ধর্ ধর্, ওকে তুলে নে, তুলে নে।

দাঁড়ীরা নৌকা ধরিল; দেখিল, দ্বারবান্ নৌকাদণ্ড অবলম্বন করিয়া মৃতপ্রায় ভাসিতেছে এবং তাহাকে তুলিয়া লইয়া পুনর্ব্বার নৌকা ছাড়িয়া দিল। দেওয়ানজীর পূর্ব্বাদেশ মত নৌকা দক্ষিণেশ্বরের ঘাটে আসিয়া লাগিল।

দেওয়ান, ভীম সর্দ্দার সমভিব্যাহারে তীরে উঠিয়া দেখিলেন, একখানি মাত্র কুটীর জ্বলিতেছে, লেলিহান অগ্নিশিখা লক্ লক্ করিয়া গগনস্পর্শ করিতেছে এবং গ্রাম্য লোকেরা মহা কোলাহল সহকারে নিজ নিজ গৃহ রক্ষা করিবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিতেছে। গোবিন্দরাম সেই দাহ্যমান কুটীরের নিকটবর্ত্তী হইয়া শুনিলেন, গৃহাভ্যন্তরে কে যেন বামাস্বরে আর্তনাদ করিতেছে; চিন্তা না করিয়া, আপনার বিপদাশঙ্কা না করিয়া, তৎক্ষণাৎ পদাঘাতে অর্গল ভাঙ্গিয়া কুটীর মধ্যে প্রবিষ্ট হইলেন এবং অচিরকাল মধ্যে একটি রমণীকে তুলিয়া লইয়া বাহির হইয়া আসিলেন। এ রমণী কে? এ যে সেই মুখরা কজ্জলা। কজ্জলার এ বিপদ কিরূপে ঘটিল? অথবা সে কথা আর জিজ্ঞাসা করিতে হইবে কেন—রত্নাপাখী অদ্য সন্ধ্যার সময় যখন প্রস্থান করে, তখনই ত তাহার সেই ভীম-গম্ভীর মুখভাব দেখিয়া আমরা কজ্জলার বিপদাশঙ্কা করিয়াছিলাম।

কজ্জলা কিছু প্রকৃতিস্থ হইলে গোবিন্দরাম জিজ্ঞাসিলেন, “কি প্রকারে তোমার ঘরে আগুন লাগিল?”

কজ্জলা উত্তর করিল, “আমি জানি না, আমি ঘুমাইয়াছিলাম।”

গোবিন্দ। আচ্ছা, তোমার এখানে কেহ আপনার লোক আছে?

কজ্জলা। আমার কেহই নাই।

গোবিন্দ। তবে তুমি এই রাত্রে কোথায় থাকিবে?

কজ্জলা। তা বাবু, যেখানে হোক, একরকম করে এক জায়গায় পড়ে থাকব। ঘর গেলে, গাছতলা ত আছে।

দেওয়ান কিঞ্চিৎ চিন্তা করিয়া বলিলেন, “দেখ, নবমীর দিন তুমি একবার আমার বাড়ীতে যেও, তোমায় আমি কিছু দিব। রত্নপুরে আমার বাড়ী, আমার নাম গোবিন্দরাম, মনে থাকিবে ত?”

কজ্জলা। বাবু, যতকাল বাঁচব, ততকাল মনে থাকবে। তোমার নাম দেওয়ান গোবিন্দরাম। আমি মনে করতেম দেওয়ানজী বুড়ো।

গোবিন্দরাম হাসিয়া নৌকায় উঠিলেন। মাঝীরা নৌকা ছাড়িয়া দিল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *