বসন্ত এসে গেছে
আমার বাগানে বসন্তের উঁকি ঝুঁকি শুরু হয়েছে।আম্রপালীর পাতার ঘোমটার ফাঁক দিয়ে নববধূর মত উঁকি দিচ্ছে মুকুলের শ্যামলিমা। মৌমাছিরা আমের মুকুলে মাধুকরীতে আসছে বারবার। জঙ্গলী গোলাপের গোলাপীও সাদার সৌন্দর্যের বান ডেকেছে। বেল জুঁই গন্ধরাজ নবপত্র মুকুলের সাজে সেজেছে। সারা বাগান যেন সবুজ রেশমি ওড়নায় ঢাকা পড়েছে।
জল বাগানে পদ্মলতা শীতের ঘোমটা সরিয়ে একটি দুটি কচি পাতা মেলে দিনমনিকে আহবান জানাচ্ছে। পাতাঝরা চাঁপা গাছটা কচিপাতার সাজে গরবিনী। কলাবতীর ঝোপে হলুদ কমলার বান ডেকেছে ।মৌটুসীরা সারাদিনমান সেখানে লুকোচুরি খেলছে। প্রাচীরের ধারে বাগানবিলাস অহংকারে ডগোমগো। গোলাপি সাদা লালের উচ্ছ্বাসে ঋতুরাজের সোহাগী। লাল রঙ্গন টাও কম যায় না সেও লাল নিশান উড়িয়েছে। লতা কুঞ্জে মৌমাছি প্রজাপতি মৌটুসীর আনন্দ সম্মেলন। ভ্রমর মাঝেমাঝেই আসছে ফুলের দখিনা যেচে। দূরে বড় রাস্তার গডানের পলাশ গাছটাতে কুঁডির বন্যা নেমেছে। একটি-দুটি ফোটা ফুলের কি রক্তিম উচ্ছ্বাস। নীলনভ পটের পটভূমিকায় পলাশের রক্তিম সৌন্দর্য প্রকৃতির আঁচলের চিরন্তনী শৈল্পিক প্রকাশ। শ্বেত শিমুল গাছের ফুলের জলসায় দোয়েল গাংশালিক বুলবুলির সাথে সদ্য যোগ দিয়েছে মাছরাঙ্গাও। ফিঙে চৌকিদার আর মাছরাঙ্গার ভারি বন্ধুত্ব। শ্বেত শিমুলের তে ডালায় তাদের আড্ডা জমেছে। কুটুম পাখি হাঁক পেডে সব্বাইকে সেই নতুন খবর দিচ্ছে। কাজল পাখির চিরচিরে ডাকে সারা মাঠ-ঘাট মুখরিত। বসন্তের আগমনী সূচনা করে এরাই। টুনটুনি আর মৌটুসী কলাবতী ঝোপে বসে গান জুড়েছে। আম্রপালির মুকুলের ফাঁকে কোকিলের ভ্রমর কালো শরীর উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। পিক তানে মুখরিত বনবীথি বসন্তের আগমন এর সূচনা করছে। সারা চরাচরে বাসন্তী সৌন্দর্যের ডালি উপচে পডছে। দূর দিগন্ত সীমায় ঝাপসা জঙ্গলের আবছায়া। দূর থেকে ভেসে আসা পাপিয়ার পিউকাঁহা বুকে বেদনা লহর তুলছে। শুকনো পাতার নূপুর বাজিয়ে রাখাল হাওয়াটা বয়ে চলেছে মাঠের পথে। নয়ানজুলির হাঁটুজলে একটি-দুটি শাপলাপাতা ভেসে আছে।
রানি ফডিং নাল ফুলে ,কলমি দলে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছে! জলপিপি এক্কা দোক্কা খেলছে কচুরিপানার দঙ্গলে। পানকৌড়ি টুপ টুপ ডুব দিচ্ছে ।কেউবা শিরিষ ডালে বসে ডানা শুকোচ্ছে। ঝিলের মাঝের খুঁটিতে এক সারিতে বসা পানকৌডি রা যেন তপস্যা করছে। ভোরের মায়াবী আলোয় হরিয়াল ঘুঘু আবেশি স্বরে ঘুম ভাঙ্গে। দোয়েল বুলবুল মৌটুসী টুনটুনির ভোরাই আহ্বান জানায় সোনালী সুপ্রভাতের। শ্বেত শিমুলের পুষ্পমঞ্জরি তে ,বাগানবিলাসের অহংকারী ফুলে মৌমাছির মাধুকরী বসন্তকে যেন স্বাগত জানায়!
নব কিশলয় আন্দোলনে কুসুমিত বসন্ত প্রকৃতির নেশা ঘনায় চোখে। প্রকৃতির এই আবেশ একইসঙ্গে মাতিয়ে তোলে মানব মননকে। শুকনো পাতার মর্মরে শোনা যায় লালমাটিয়া ঝুমুরের বোল। পলাশ শিমুলের লালিমায় বেজে ওঠে বাঁশরীর পঞ্চমী সুর। ঋতুরাজ তার রঙের, রসের ,রূপের ডালি সাজিয়ে আসছে! তার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি—- এই জাদুগরি প্রকৃতির মায়াবী ডাক উপেক্ষা করতে পারে না মানব— রইতে নারি ঘরে!
মনের আগল খুলে খেয়ালী মন চায় ইচ্ছে ডানা মেলতে। প্রকৃতির রং এ রং মিশিয়ে চলতে। বসন্ত যেন ডাক পাঠায় সবায়—” ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল—“