Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বরাহ পুরাণ || Prithviraj Sen

বরাহ পুরাণ || Prithviraj Sen

ব্রহ্মা যখন কল্পের অবসানে সৃষ্টিকার্য থেকে বিশ্রাম নেন তখন হিরণক্ষ দৈত্য পৃথিবীকে হরণ করে নেয়। পুনরায় পরবর্তী কল্পের শুরুতে পৃথিবীকে না দেখতে পেয়ে প্রজাপতি ব্রহ্মা ও শ্রুতির মুনিগণ আহ্বান করেন বিষ্ণুকে। তখন ভগবান বিষ্ণু ব্রহ্মার নাসিকা হতে বরাহরূপে বহির্গত হয়ে হিরণক্ষ দৈত্যকে বধ করেন এবং দশনাগ্রে পৃথিবীকে উত্তোলন করেন। তারপর সেই বরাহরূপেই এই পুরাণ কথা কীর্তন করেন। তাই এই পুরাণের নাম হয়েছে বরাহ পুরাণ।

লোমহর্ষণ সূতকে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস এই পুরাণটি শিক্ষা দেন। তিনি পরে নৈমিষারণ্যে শৌনকাদি মুনিগণের সামনে এটি কীর্তন করেন।

রাজা দুর্জয় ও মুনি সৌরমুখ

সুপ্রতীকের পুত্রের নাম দুর্জয়। যেমন তার নাম তেমনি তাঁর কাজ, তাঁকে কেউ জয় করতে পারে না। তিনি অস্ত্রবিদ্যাদি শিখে একদিন একটা প্রতিজ্ঞা করলেন যে, “আমি ত্রিভুবন জয় করব।” তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞামত কাজ শুরু করে দিলেন এবং একে একে সবাইকে জয় করতে লাগলেন। স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সব কিছুকে তিনি জয় করে নিলেন। কেউ তাকে হারাতে পারলো না। তখন সবাইকে স্বর্গ ছেড়ে বারাণসী ধামে গিয়ে আত্মগোপন করে থাকতে হলো।

তার আর জয় করতে কাউকে বাকি থাকল না। যুদ্ধ শেষ অতএব তাঁর এখন আনন্দ উপভোগ করবার সময়। কেমন করে করবেন আনন্দ লাভ; বাইজির নৃত্য, আর নানা রসের খাবারদাবার খেয়ে। রাজা যেখানেই থাকবেন সেখানেই তার জন্য এই ব্যবস্থা করা হবে। দুর্জয় ভাবল সারা পৃথিবীতে যত তীর্থস্থান আছে তা ঘুরে ঘুরে দেখব। শুরু করলেন, তীর্থযাত্রার আয়োজন। হাতী, ঘোড়া, রথ সাজানো হল। সঙ্গে বহু লোকজন ও অস্ত্রশস্ত্র রাখলেন।

তিনি একের পর এক তীর্থ ঘুরে দেখতে লাগলেন। ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা একদিন গন্ধমাদন পর্বতে গিয়ে পৌঁছালেন। সারা পর্বতে সাড়া পড়ে গেল, এখানে ত্রিভুবনের রাজা বেড়াতে এসেছেন। চারিদিকে ছাউনি ফেলা হল। চারিদিকে অশ্বারোহী, গজারোহী, রথাদি দৈত্যলোক সে যেন এক তুলকালাম কাণ্ড । স্বয়ং রাজা এসেছেন বলে কথা, তা তো কোনো সাধারণ ব্যাপার নয়।

রাজা সব ঘুরে ঘুরে দেখছেন। তিনি কখনো হেঁটে দেখছেন, কখনো তিনি ঘোড়ায় চড়ে ঘুরছেন। কখনও আবার গজে চড়ে, আবার কখনোবা রথে চড়ে দুর্জয়ের গন্ধমাদন পর্বতের শোভা দেখতে লাগলেন। দেখে তার খুব ভালো লাগল।

রাজা দুর্জয় তার পরে মন্দার পর্বতে এলেন। সেখানেও তাবু করা হল। হাতির পিঠে চড়ে দুর্জয় সব ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন। তিনি দেখলেন কি বিচিত্র ধরনের গাছ, কত বিচিত্র ধরনের ফুল। এমন শোভা সে আগে কখনো দেখেনি। সব কিছু দেখতে দেখতে তার মন আনন্দে ভরে উঠল। এগিয়ে যেতে যেতে তিনি দেখলেন একটি সুন্দর বটগাছ। আর সেই গাছের নীচে বসে আছে দুটি মেয়ে। তাদের দেখতে অপরূপ সুন্দরী এবং তাদের দেহের রঙ সোনার রঙের মতো।

তাদের দেখে রাজা অবাক হলেন। ভাবলেন এখানে এই দুজন সুন্দরী এলো কিভাবে। রাজা এগিয়ে গেলেন। দেখলেন বটগাছের ছাল থেকে দুজন সাধু বেরিয়ে আসছেন। যাদের গায়ের বসন গেরুয়া। রাজা হাতির পিঠ থেকে নেমে পড়লেন এবং সাধুদের প্রণাম জানালেন। সাধুরা রাজকে কুশের আসনে বসতে দিলেন।

তাঁদের অভ্যর্থনা পেয়ে রাজা খুব খুশি হলেন। সাধুদের জিজ্ঞাসা করলেন–কে আপনারা? আর মেয়ে দুটি এখানে কেন?

দুই সাধু বললেন–আমরা স্বায়ম্ভুব মনুর পুত্র, নাম হেতা ও প্রহে। দেবতারা আমাদের উপর খুব অবিচার করেছিল। তারই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমরা সুমেরণ পর্বতে যাই। অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলাম। এখন আমরা আমাদের দুটি মেয়েকে নিয়ে এখানেই থাকি। আপনি দয়া করে যদি এই মেয়ে দুটিকে গ্রহণ করেন, তাহলে কৃতার্থ হবো। আমাদের কোনো চিন্তা থাকবে না।

মেয়ে দুটিকে দেখেই রাজার তো বিয়ে করার বাসনা ছিলই; এখন যখন হেতা ও প্রহে যেচে বলছেন তখন আর কথা কী? তখন রাজা দুর্জয় হেতার মেয়ে সুকেলী এবং প্রহেতার মেয়ে মিশ্রকেশীকে বিয়ে করলেন। এবং সেই বিবাহ অনুষ্ঠান হল সেই মন্দার পর্বতেই।

তারপরে তিনি ফিরে এলেন রাজধানীতে। ত্রিভুবনের অধিপতি দুর্জয় বহুদিন তীর্থ ভ্রমণ করেছেন, এবং ভোগবিলাসও করেছেন, তাই এতদিন তিনি হাতে কোনো অস্ত্র নেননি। হাতে অস্ত্র নেওয়া মানে তো যুদ্ধ করা। কিন্তু তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করারই তো কেউ ছিলনা। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন তিনি শিকারে যাবেন।

সবার মধ্যে সাজো সাজো রব উঠল। হাতি, ঘোড়া, রথ, লোকলস্কর সবাই তৈরি হল। তার সঙ্গে চলল মন্ত্রী আর সেনাপতি, বনের পর বনে যেতে যেতেই সে শিকার করা শুরু করে দিল। শিকারের নেশা যেন সবাইকে পেয়ে বসল।

সবাই ঠিক করেই গিয়েছিল যে, সন্ধ্যা হবার আগেই সবাই রাজধানীতে ফিরে আসবে। কিন্তু শিকারের নেশায় তারা জঙ্গলের মধ্যে বহুদূর চলে গেছে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলো। তখন সবাই ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় আকুল হয়ে উঠল। তখন রাজা ভেবে দেখলেন–এতদূর পথ ফিরে যেতে অনেক রাত্রি হবে। তার চেয়ে রাত্রিটা বনে থাকাই ভালো। সেইমতো শিবির করা হলো। কিন্তু ক্ষুধা তৃষ্ণার জন্য কি ব্যবস্থা হবে। তারা দেখল কাছেই এক মুনির আশ্রম। রাজা সবাইকে নিয়ে সেই দিকেই এগোলেন।

আশ্রমটি ছিল মুনি গৌরমুখের। মুনিবর রাজাকে আসতে দেখে সাদরে আহ্বান করলেন। কিন্তু রাজার সঙ্গে এতো লোক ছিল তাদের তিনি বসতে দেবেন কোথায়? তাঁর সামান্য একটা কুঁড়েঘর ছাড়া আর তো কিছুই নেই। এমনকি রাজাকে যে বসতে দেবেন তার জন্য একটা আসন পর্যন্ত নেই।

রাজাকে গৌরমুখ মুনি বললেন–রাজা মশায়, আপনারা এখানে একটু অপেক্ষা করুন, আমি এক্ষুনি আসছি।

মুনিবর গেলেন একটা নদীতে, সেখানে তিনি স্নান করলেন। তারপরে অতি আকুল হয়ে ভগবান হরির প্রার্থনা করলেন। বললেন–হে প্রভু, এ কী পরীক্ষায় আমায় ফেললে। আমার কি আছে যে, এতজনের সেবা করতে পারি? আর অতিথিরা যদি ফিরে যায় তাহলে আমার মহাপাপ হবে। এই সঙ্কটে তুমিই আমাকে উদ্ধার করতে পারো।

গৌরমুখের আকুল প্রার্থনা শুনে শ্রীহরি বললেন–তুমি কোনো চিন্তা কোরো না। আমি তোমাকে একটি মণি দিচ্ছি। এই মণিটি হাতে নিয়ে তুমি আমাকে স্মরণ করে যা চাইবে, সঙ্গে সঙ্গেই তুমি তা পেয়ে যাবে। হাত পাত।

হরির মুখে দৈববাণী শুনে গৌরমুখ হাত পাতলেন। তিনি দেখলেন তার হাতে একটি মণি এসে গেল। মহানন্দে মুনি ফিরে এলেন নিজের কুটিরে। সবাই দাঁড়িয়ে আছে। মুনি ভাবলেন যেহেতু সন্ধে হয়ে গেছে, সেহেতু প্রথমে সবার থাকার ব্যবস্থা করা উচিত। এই কথা চিন্তা করে তিনি মণিটি হাতে করে শ্রীহরিকে স্মরণ করে সবার থাকার জন্য প্রাসাদের কথা ভাবতেই বিশাল বিশাল প্রাসাদ সহসা যেন মাটি খুঁড়ে গজিয়ে উঠল। যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসও সেই প্রাসাদে থাকল। তাতে খাবার দাবার, বিছানা, আসবাবপত্র, কোনো কিছুর অভাব থাকল না। শুধু তাই নয়, হাতিশালা, ঘোড়াশালাও তৈরি হয়ে গেল।

তখন রাজা ও গৌরমুখ ছাড়া সবাই সেই প্রাসাদে প্রবেশ করল। তারা সবাই আনন্দ করে খাবার খেল, আরাম করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তারা এমন প্রাসাদ জীবনে দেখেনি, এবং এমন আনন্দ তারা এর আগে কখনো ভোগ করেনি। কত দাস-দাসী এসে তাদের সেবা করছে।

মুনি ভাবলেন রাজাকে এই সাধারণ প্রাসাদে রাখা যাবে না। তিনি রাজার উপযুক্ত বাসস্থানের কথা যখন চিন্তা করছেন তখনই সেখানে এক সুন্দর প্রাসাদ সৃষ্টি হল। সেই প্রাসাদ ছিল মণি-মাণিক্যে খচিত। সেই প্রাসাদ স্বর্গের ইন্দ্রপুরীকেও হার মানায়। গৌরমুখ রাজাকে নিয়ে গেলেন সেই প্রাসাদে। রাজা দেখে অবাক হয়ে গেলেন। কেমন করে সেখানে এতো দাস-দাসী এলো, এমন সেবা-যত্ন রাজা দুর্জয় তার নিজের প্রাসাদেও কখনও পায়নি।

ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এলো। তখনই চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠল। রাজা যত দেখেন ততই অবাক হয়ে যান। কুটিরে থাকা মুনির এ কি যাদু। ক্ষণিকের মধ্যে এত আয়োজন তিনি কেমন করে করলেন? রাজা মুনির এই আশ্চর্য কীর্তির কথা ভাবতে ভাবতে শুয়ে পড়লেন।

সকাল হতে সকলে প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে এলো, তারা দেখল প্রাসাদটি যেন সঙ্গে সঙ্গেই কোথায় মিলিয়ে গেল। প্রাসাদ-দাস-দাসী কিছুই নেই। সেই বন, সেই মুনির কুটির আবার দেখা দিল। কিন্তু রাত্রে যে ঘটনাটি ঘটেছিল তা তো স্বপ্ন ছিল না। চব্য, চোষ্য, লেহ্য, পেয়–যা খেয়েছে, পেট তো এখনও ভারী হয়ে আছে, তার অপূর্ব স্বাদ এখনো যেন মুখে লেগে আছে। কিন্তু মুনি এইসব করলেন কীভাবে।

গত রাত্রে রাজা লক্ষ্য করেছিলেন মুনির হাতে একটি মণি ছিল এবং সেটি নিয়েই তিনি এইসব করেছেন। তখন রাজার লোভ হল ওই মণিটিকে নেওয়ার। মন্ত্রী বিরোচনকে তিনি বললেন–যেমন করেই হোক মুনির কাছ থেকে ওই মণিটি আদায় করতে হবে।

বিরোচন মুনির কাছে গিয়ে রাজার অভিসন্ধির কথা জানালেন। গৌরমুখ দুঃখ পেয়ে বললেন– রাজার কি কোনো অভাব আছে? রাজা তো মুনি-ঋষি-ব্রাহ্মণদের দান করবেন। তিনি এসব না করে নিজেই চাইছেন। এইভাবে ভিখারী হওয়া রাজার সাজে না।

বিরোচন রাজার কাছে গিয়ে মুনির সব কথা জানাল। গৌরমুখের কথা শুনেই রাজা দুর্জয় রেগে উঠলেন। তিনি ত্রিভুবনের অধিপতি। তাঁকে কিনা একজন সাধারণ মুনি বলল ভিখারী। এই মুনি রাজা দুর্জয়কে তাহলে এখনো চিনতে পারেনি।

সেনাপতি নীলকে ডেকে রাজা বললেন–যাও সেনাপতি, মুনির মণিটি নেওয়ার জন্য যদি বলপ্রয়োগ করতে হয় তাই করো। ছলে বলে যে করেই হোক এই মণিটি আমার চা-ই-চাই।

মন্ত্রীকে বললেন–তুমিও সঙ্গে থাক। যদি প্রয়োজন হয় বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করবে।

রাজার আদেশ পেয়ে সেনাপতি চতুরঙ্গ সেনা সাজিয়ে চলল গৌরমুখের আশ্রমে। গিয়ে দেখলো মুনি আশ্রমে নেই। তিনি বাইরে কোথাও গেছেন। তাহলে নির্জন আশ্রম থেকে মণিটা বের করে নিলেই তো হয়। এতে সৈন্য–সামন্তের কি দরকার?

এই কথা ভাবতে ভাবতে নীল আর বিরোচন ঢুকল গৌরমুখের আশ্রমে। কিন্তু হঠাৎই ভীষণ গর্জন ও হুঙ্কার করে অসংখ্য সৈন্য বেরিয়ে এল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। ঝাঁপিয়ে পড়ল নীল আর বিরোচনের ওপর। এই ব্যাপার দেখে তারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। কোথা থেকে এত সৈন্য বেরিয়ে এল? তারা বুঝতে পারল না কিছুই। তারপর শুরু হল মুণিসৈন্য আর রাজসৈন্যের মধ্যে প্রচণ্ড সংগ্রাম। সংবাদ গেল রাজা দুর্জয়ের কাছে। রাজা বুঝতে পারলো মুণির শক্তি অনেক। তাই সেই মণি লাভের বাসনা তার আরও প্রবল হয়ে উঠল। একটা রথে চড়ে রাজা দুর্জয় ছুটলেন সেই সমরক্ষেত্রের দিকে। ততক্ষণে মন্ত্রী বিরোচনের ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছে, তর্জন গর্জন করে রাজাও মেতে গেলেন ভয়ঙ্কর যুদ্ধে।

বনতল এখন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ রাজসৈন্য তখন ধরাশায়ী, মুনিবর নিজের আশ্রমে ফিরলেন, কিন্তু এ কি? এমন ভয়ঙ্কর যুদ্ধ কারা করছে। পরে তিনি বুঝতে পারলেন এইসব মণির জন্য হয়েছে। তখন মুনি ছুটে গেলেন নদীতে স্নান করে শ্রীবিষ্ণুর ধ্যানে মগ্ন হলেন। মনপ্রাণে ডেকে বললেন–প্রভু, আপনার দেওয়া মণিতে যে রাজার নত উপকার হল, সেই রাজা এখন মণি হরণের চেষ্টা করছে, হে দয়াময় এটা থামাও।

গৌরমুখ আকাশবাণী শুনতে পেলেন। আকাশবাণী হতে লাগল–এই যুদ্ধ হতে দাও। দৈব্যদের খুব বাড় বেড়েছে। এই যুদ্ধের ফলে তারা ধ্বংস হবে। তুমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখ কি কি ঘটে। আমার সুদর্শন চক্র গিয়ে সকলকে শেষ করে দেবে।

আকাশবাণী শেষ হওয়ার পরে, একটি সুদর্শন চক্র এসে নিমেষে রাজা ছাড়া আর সকল অসুরকে ছেদন করে দিল। সেই অরণ্যে নিমেষে একটি প্রলয় কাণ্ড ঘটে গেল। তাই শ্রীহরি সেই অরণ্যের নাম রাখলেন নৈমিষারণ্য।

একমাত্র রাজা দুর্জয় প্রাণে বেঁচে থাকলেন। সকল ঘটনা নিজের চোখে দেখলেন। মনে তাঁর নৈরাশ্য এল। ভাবলেন ত্রিভুবন জয় করে এলাম। সব দেবতারা মিলেও আমাকে হারাতে পারল না। আর এই সামান্য কুটিরবাসী মুনির কাছে পরাজিত হলাম। এই মুনি কার কাছ থেকে এত শক্তি পেল?

তিনি তাঁর সমস্ত অহংকার ত্যাগ করে মুনির চরণে স্মরণ নিলেন। বলল–হে মুনিবর, হে তাপস শ্রেষ্ঠ, আমি মহাপাপী। আপনি বাসস্থান, আহারাদি দিয়ে আমাদের রক্ষা করলেন। আর আমি এমন পাষণ্ড যে, আপনার সম্পদ হরণ করতে চললাম। তার যথেষ্ট শাস্তিও পেলাম। এখন আপনিই আমাকে রক্ষা করুন।

গৌরমুখ রাজাকে বললেন–বিষ্ণুর কৃপা থাকলে কোনো কিছুর অভাব থাকে না। তুমি বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে তপস্যা কর। রাজ্য, রাজপ্রাসাদ, ঐশ্বর্য, আত্মীয়স্বজন সব পড়ে রইল, সকল কিছুর মায়া ত্যাগ করে রাজা দুর্জয় চিত্রকূট পর্বতে গিয়ে বিষ্ণুধ্যানে মগ্ন হলেন। দীর্ঘকাল পরে তার তপে তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু সাক্ষাৎ দর্শন দিয়ে বললেন–কি চাই তোমার?

দুর্জয় নমস্কার করে বললেন, প্রভু আমার একটাই প্রার্থনা, আপনি যেন সব সময় আমার স্মরণে থাকেন। আর আমি যেন অন্য চিন্তা থেকে বিরত থাকি।

বিষ্ণু বর দিয়েই চলে গেলেন। রাজা আপন রাজ্যে ফিরে গেলেন। দেবতারা ফিরে গেলেন স্বর্গে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7
Pages ( 1 of 7 ): 1 23 ... 7পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *