Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বন্ধু আমার || Samarpita Raha

বন্ধু আমার || Samarpita Raha

প্রায় দশবছর বাদে আমার প্রিয় বন্ধু টুটুনকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে যাই আমি। অবশ্য চাক্ষুষ দেখিনি।ফেসবুক প্রোফাইলে ছবি দেখে চোখ আটকাই আমার। স্ত্রী সন্তানের সাথে হাসি হাসি গলা জড়িয়ে ছবি।
দেখে ভাবি এইভাবেই তোমার সাথে আমার ছবি থাকার কথা ছিল ।না না একটুও রাগ হচ্ছে না,হিংসে
হচ্ছে না টুটুন।
তুমি ভালো আছো এটা আমার কাছে পরম ভালো লাগা। কিন্তু একটা কথা আমায় কথা দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করলে ।সেটা আমায় বলতে পারতে !
কোনো অসুবিধা থাকলে বলতে পারতে।কোন মেয়েকে অপেক্ষা করতে বলে দশ বছর লুকিয়ে রইলে।
আজ ফেসবুকে ছবিটা না দেখলে জানতেও পারতাম না ।আদৌ তুমি আছো কিনা!তোমাদের বাড়িতে কতবার গেছি।সেটাও আর নেই। তুমি বিদেশে পড়তে গেছো ওই বাড়ি বেচে দিয়ে। বিদেশে যাবার আগে বলেছিলে আমায় ছাড়া বাঁচবে না।সব ভাওতা দিয়েছিলে।না রাগ হচ্ছে এই ছবি দেখে একটু বলতে পারতে। আমার চেয়ে ভালো শিক্ষিতা , সুন্দরী মেয়ে পেয়েছ।আসলে বন্ধুকে তো সব বলা যায়।কেন তুমি বললে না।গলার কাছে অনেক কটু কথা দলা পাকিয়ে আছে। তবুও বলি আজ ছবিটা দেখে আমার মনটা খুব ভালো লাগছে। এতদিন পর হয়তো শান্তিতে ঘুমাতে পারব। এতো অন্যায় করলে আজ বলছি তোমার ভালো হোক। *তবুও তুমিই বন্ধু আমার। পুরানো স্মৃতি কত মনে পরে। একবার আমার রাস্তায় গাড়ি দুর্ঘটনায় আমার পা কেটে যায়। তুমি কোলে করে ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে গেছিলে। আমার কষ্ট দেখে তোমার চোখে জল দেখেছিলাম। কিন্তু আমার হৃদয়টা নিজের হাতে ফালাফালা করলে তাতে তোমার কষ্ট হয়নি!
চোখ মুছে কৌতুহল বশত প্রোফাইল পেইজে উঁকি মারি। ওদের পারিবারিক অনেক ছবি। বাবা, মায়ের সাথে আমার ছবি। আমি আঁৎকে উঠি।তাতে লেখা আমার অতীত। সবার মৃত্যুর তারিখ। আমি কবে মরলাম আবার। বুঝলাম যেদিন ওর বিয়ের তারিখ। জোর করে মেরে ফেললে আমায়।তারপর ঘটা করে বিয়ের ছবি। বৌভাতের ছবি। আবার মনে পড়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ে টুটুনের দারুণ রেজাল্টের কথা। পিএইচডি করতে আমেরিকাতে যায়।তখন ওর ও বাবা ও মা নেই, আমার ও তাই। দাদা অবশ্য বলেছিল টুটুনের সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবে।তখন টেলিফোনে সব কথা হয়েছিল। বিদেশ থেকে এসে বিয়ে করবে। আমার রেজাল্টও খুব ভাল হয়েছিল। আমি স্কুলে চাকরি পেয়ে যাই।তখন এক্সচেঞ্জ থেকে
চাকরির ডাক আসত। তারপর অপেক্ষা শুধু অপেক্ষা।টেলিফোন ছিলনা।মাসে ,ছমাসে একটি চিঠি।তারপর আর চিঠি আসেনি।তারপর পঞ্চাশ হাজার টাকা চায়।দেশে ফিরবে।সেই ঠিকানাতে পাঠিয়েছিলাম। টাকা ফেরৎ আসে। কোনো খোঁজ আর পাইনি। সারা রাত কেঁদে ফেস বুক দেখে কাটিয়ে দিলাম।এখন আমি তো নিজের ফ্ল্যাটে থাকি। সকাল হতেই ফোন দাদার।চলে আয় বোন আমরা ও ওপরের ফ্ল্যাটের এক বন্ধুরা মিলে দীঘাতে বেড়াতে যাব। আমার যেতে ইচ্ছে ছিলনা। তবু ও দাদার পীড়াপীড়িতে রাজি হয়।দাদাকে তো বলতে পারছি না,আজকে ফেসবুকে হঠাৎ people you may know তে টুটুনের ছবি দেখে চোখ আটকে গিয়েছিল। প্রায় ১০বছর আগে ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
দাদা সংক্ষেপে জানাই ওর বন্ধু ডিভোর্সী। ওদের আমেরিকাতে আলাপ। ভালো বেসে বিয়ে।এক মাস হলো বিবাহ বিচ্ছেদ।বৌ আর এদেশে থাকতে চায় না। দিব্যেন্দু খুব ভালো ছেলে।
আমি বলি বাচ্চা নেই রে দাদা।একটা ছেলে আছে। বাচ্চার দায়িত্ব মা নেয় নি। বাচ্চাটা চার বছর বয়স।
গাড়িতে আমি ওই বাচ্চাটা , দাদা ও বৌদি ও ওদের পুচকি তিতলি হৈহৈ করে উঠি। শুনলাম বাচ্চার বাবা সবার খাবার কিনতে গেছে। নির্দিষ্ট কোন জায়গা থেকে উঠবে। আমি সারা রাত ঘুমাই নি। দাদাকে বলে ঘুমিয়ে পড়ি।তখন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকি।সাড়ে তিনঘন্টা পুরো ঘুমিয়ে কাটাই। বাচ্চাটার বাবা কখন ড্রাইভারের পাশে বসে কিছু জানিনা। সবাই দীঘাতে হৈহৈ করে নামছে।তখন বৌদি ও ভাইঝি র ডাকে ঘুম ভাঙে।
চমকে যাই আমি।চোখ রগরাই আমি। দিব্যেন্দু তুমি!!!
দাদা বলে তুই চিনিস?
আমার সেই প্রতারক রে দাদা।খুব ভালো বন্ধু বললি না।থমথম পরিবেশ। হঠাৎ বাচ্চা টার কি কান্না!!

আমার মিষ্টি কথায় বাবু ঠান্ডা হয়।
আমি একসময় বলি “ফেসবুকে মিথ্যা ছবি দিয়ে নিজেকে সুখি প্রমাণ করা কি খুব জরুরি ছিল”?
কাল রাতে দশ বছর পর ফেসবুকে ওর ছবি থেকে খুব খুশি হয়েছিলাম। ভাবলাম ও আমাকে বন্ধু না ভাবুক,প্রতারক, বিশ্বাসঘাতক যতই হোক সে তো আমার প্রিয় বন্ধু ছিল। তোমার ছেলের জন্য কোন সাহায্য লাগলে বলো।
টুটুন বলে তুমি আজ ও আমায় বন্ধু ভাবো।
আমি বলি কি করি বলো!! তুমি প্রতারনা করেছ কিন্তু বাচ্চাটার মুখ চেয়ে বলি” তবুও তুমিই আমার বন্ধু”। তোমার শাস্তি ভগবান দিয়েছেন। তবে তোমার সাজানো সংসার ভেঙে গেছে । আমি কষ্ট পেলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *