বছর চারেক আগে
রাস্তা দিয়ে পার হতে গিয়ে আগুন্তুক লরি টাকে দেখে থেমে গেলো শতদল। গাড়ির নম্বরপ্লেট টার দিকে চোখ পড়তেই কেমন যেনো মুষড়ে গেল সে। মনে পড়ে গেলো সেদিনও এই গাড়িটাই ছিলো। বুকে একরাশ কষ্ট নিয়ে সে যখন রাস্তা পার করে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকলো, সে দেখতে পেল সবাই খুব ব্যস্ত। রিসেপশনে গিয়ে কি একটা জিজ্ঞেস করে সামনে পাতা চেয়ারগুলোর একটায় বসে পড়লো সে। সে দেখতে পেলো মানুষজন সবাই ছুটোছুটি করছে কেউ টাকা আনতে দৌড়াচ্ছে তো কেউ ওষুধ কেউবা এক বোতল রক্ত। শতদলও রক্ত দিতেই এসেছে। বহুদিনের একটা অপূর্ণ ইচ্ছে তার সে যত দিন বেঁচে থাকবে রক্ত দিয়ে যাবে। আসলে সব কিছুর পিছনে রয়েছে একটা মর্মান্তিক ঘটনা। বছর চারেক আগের কথা শতদল তার স্ত্রী কে নিয়ে দীঘায় ঘুরতে গিয়েছিল। শতদল একটা আইস্ক্রিম খাবে জন্য রাস্তার ওই পারে গেলো। হটাৎ তার একটা আর্জেন্ট ফোনকল আসায় তার স্ত্রী ছুটে গিয়ে তাকে ফোন দিতে যাচ্ছিল অমনি মাঝ রাস্তায় একটা লরি এসে তাকে ধাক্কা মারে। শতদল স্ত্রী ছিটকে গিয়ে পাঁচ ছয় মিটার দূরে থাকা ল্যাম্পপোস্ট বাড়ি খেল, মাথা থেকে তার রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে । শতদলের হাত থেকে আইসক্রিমটা খসে পরে গেলো মাটিতে। সে ছুটে গিয়ে স্ত্রীর কাছে গিয়ে দেখলো না প্রাণ আছে। লোকজন এবং শতদল সকলে মিলে তার স্ত্রী কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু শেষ রক্ষাটা আর হলো না। তার স্ত্রীর AB নেগেটিভ ব্লাডগ্রুপ অনেক খুঁজেও পাওয়া গেলো না। হতভাগ্য শতদল সেইদিনই প্রতিজ্ঞা করল যে তার সঙ্গে যা হলো সেটা যেনো আর কারোর সাথে না হয়, রক্তের জন্য যেনো কারোর প্রাণ না যায়। আজ যদি তার স্ত্রী ওর সঙ্গে থাকত তবে ওর জীবন টা অন্যরকম হতো। এসবই মনে মনে ভাবছিল শতদল এমন সময় সে একটা ডাক শুনতে পেলো।
– “শতদলবাবু ! সতদলবাবু ! ভেতরে পাঁচ নম্বর রুমে চলে যান আপনার সময় হয়ে গেছে আরে ও মশাই কি অত গভীর ভাবনায় মেতে থাকেন বলুন তো। যান ভেতরে। শতদল কোনো ক্রমে চেয়ার থেকে উঠে পাঁচ নম্বর রুমের দিকে চলে গেলো।।