প্রিয়তমা
বর্তমান যুগে চিঠি লেখা উঠে গেছে। মেসেজ বা ফোন চিঠি লেখার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেদিন পুরনো চিঠিগুলো আলমারি থেকে বের করেছিলাম। প্রায় একশো এর উপর চিঠি অরূপ তুলে রেখেছিল। অনেকদিন আলমারিতে হাত দিইনি। অরূপ চলে গেল প্রায় এক বছর হল। চিঠিগুলোতে একটু ধুলে পড়েছে। একটা তোয়ালে নিয়ে বসলাম, একটা একটা করে চিঠি সরাচ্ছি পুরনো অনেক মানুষের মুখ মনে পড়ছে। দাদু, মেজ কাকা, বাপি, বড় মাসী সকলের কথা। কত কথা এদের সাথে হতো। অপেক্ষা করে বসে থাকতাম কবে চিঠি আসবে। পিয়ন এসে হাঁক দেবে,”চিঠি আছে….ছে এ এ”দৌড়ে বেরিয়ে পড়তাম, কার চিঠি। দাদু খুব সুন্দর চিঠি লিখত। প্রথমে ঈশ্বরের কথা, তারপর চিঠির বয়ান। কত সুন্দর ভাষা প্রয়োগ। একটা চিঠিতে চোখ আটকে গেল। অরূপ এর লেখা। প্রিয়তমা, আশাকরি কুশলে আছো…..”এক নিঃশ্বাসে চিঠিটা পড়লাম। যখন দুর্গাপুরের গিয়েছিলাম বেবি হতে, তখন এর লেখা। কত ভালোবাসা ওই চিঠিতে ঝরে পড়ছে। অরূপ খুব খেয়াল রাখতো আমার। কয়েক মাসে অনেক চিঠি লিখে ফেলেছিল। পোস্ট কার্ড বা এনভেলাপ এ কত প্রেমের কাহিনী। একটু হাসছিলাম, অরূপ সত্যি তুমি খুব মজার মানুষ ছিলে। বেবির যত্ন করার জন্য কত উপদেশ। শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছ, ছেলে উপহারের জন্য। মায়ের কষ্ট তুমি বুঝতে। তাই প্রতি মুহূর্তে আমার খেয়াল রাখতে।__ এখানে বসে কি করছো? মেয়ে রাই এর গলায় সম্বিত ফিরে পেলাম। তৎক্ষণাৎ অরূপ ইচ্ছে গুলো লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি, রাই আমার হাতটা চেপে চিঠিগুলো পড়ল। তুমি লুকাচ্ছো কেন মা। বাপি তোমাকে কত ভালোবাসতো। মাঝে মাঝে স্মৃতিচারণ করলে ভালো থাকবে। বাপির ঘর টাতে আসো না আর। এভাবে চলে আসবে, বাপির আঁকা ছবি গুলো একটু বসে দেখতে পারো, মনটা ভালো লাগবে। ওকে বলা হলো না এগুলো দেখলে আমার কষ্ট বেড়ে যায়। প্রিয় তোমার জন্য তুমি ওখানে অপেক্ষা করো প্রিয়তম। খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে।