এই সেই পথ—-
যার বুকে ক্ষত চিহ্ন এঁকে,গিয়েছিনু শৈশবে কৈশোরে,
যুগ যুগ ধরে। অন্তহীন কালের বাসরে।
কবেকার কোন বাল্যকালে,
পথপ্রান্তে বটবৃক্ষ তলে, খেলিতাম ধুলিখেলা।
কখনও একাকী, কখনোবা দু চারিটি সঙ্গী যেত মিলে।
তার পরে ধীরে, কখনো আপন মনে, কখনোবা সঙ্গী সনে,
পথ বেয়ে চলে যেত আমার এ মন—
কোনো এক সোনামুখী গ্রামে, দোয়েল কোকিল সনে,
শালিকের ঝগড়া শুনে,
ফিঙেদের তরঙ্গ দোলায়, স্নিগ্ধ বায়ু ভরে, উদাসী অন্তরে।
কখনোবা উদাসী চিলের ডানা ধরে,
কোনো এক ঘুঘু ডাকা নিস্তব্ধ দুপুরে, বেড়াতাম ঘুরে, বনে বনান্তরে।
কখনো বা সমুদ্রমেখলা পরা সপ্তসিন্ধু পারে বেড়াতাম ধীরে,
শঙখচিলের ডানা ধরে, মাঝ গাঙে মাঝিদের নৌকার উপরে।
তখনো সে কাছে আসে নাই, তখনো সে আসি বলে সরে যেত দূরে,
দূর হতে দেখা যেত তারে, এ মনের প্রত্যন্ত কিনারে।
তখনো সে রূপসী তরুণী —
তখনো সে মুখ টিপে হাসে।
তাতে মোর প্রেম তৃষা নাহি নাশে-
শুধু আভাষে বিভাসিত মসৃণ চিবুক তার,
কচি কিশলয় দিয়ে গড়া মেখলা
ঘন দুর্বাদল তার কেশে বনানীর বিপুল বারতা।
চিকণ চিবুক, পক্ক বিম্বাধর ওষ্ঠে চকিত আভাষ গোলাপের জ্যোৎস্নার মৃদুসিত হাসির আলিম্পন, ঝর্ণা ধারা স্রোতে।
নদী যার অকারণে ঢ্লঢ্ল করে ধোয়ায় অনিন্দ পদরাজি,
হিমালয় বক্ষ নিয়ে সে ডাকিত মোরে—
সুনিবিড় বাহুপাশে আবদ্ধ করিতে।
চিনেছিনু তারে, বহুযুগ পারে,
শান্ত সৌম্য গৈরিক বসনে
পক্ক কেশরাজি নিয়ে,
আদিগন্ত নিখিলের শূন্য ব্যবধানে।
শৈশবের পথ ধরে
আবার একাকী উদাসী মন
আকাশের অতি কাছাকাছি
সেই বটবৃক্ষতলে অথবা উদাসী চিলের ডানা ধরে
নির্জন নিস্তব্ধ দুপুরে,
ঘুঘুর ডাকের সাথে আবার নতুন করে
পরিচয় সেরে, পথের ধুলাতে
চরণ চিহ্ন তার, আবার নতুন করে
করেছিনু আবিষ্কার, সংসারের পারে।
সেই দিন এই সত্য গেঁথেছিল মনে
ধরার ধুলিতে আছে প্রাণ, আর আছে জীবনের গান,
জীবন কানায় কানায় পূর্ণ সপ্তসিন্ধু নীরে।
তথাপি কি জানি কেন, দুরন্ত যৌবনে,
কবেকার কোনো এক কর্ম ব্যবধানে,
তোমা হতে দূরে বহুদূরে গিয়েছিনু আমি।
ভুলেছিনু কোথাকার আবারও সে বারেবার
তোমারি ধানের ক্ষেতে, বুভুক্ষু প্রাণের খেদ,ভরে দিতে হবে।
জানি তার হবে সব হিসাব মেটাতে
কতখানি তৃষ্ণাবারি করেছিনু অপচয়
সিন্ধু নীর হতে!
আজি এই জীবন সন্ধ্যাতে
শত যুদ্ধে কর্মক্লান্ত, শত ছিন্ন পোষাকের মত
বদলাতে হবে জীর্ণ দেহটা আমার।
তবুও আবার—-
আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়।
নারিকেল কুঞ্জঘেরা এই জ্যোৎস্নায়
মায়াভরা প্রোজ্বল পৃথিবীর পানে,
গাঙচিল ডাহুকের ডাকের সন্ধানে কোকিলের গান শুনে,
বাবুইপাখির সেই বাসার সন্ধানে, গ্রামের পথের পানে।
আশা সেই জন্মস্থানে আসিবই ফিরে, সেই পথ ধরে।
আবার উদাসী হব,কৈশোরের সেই পথে
মেলাব চরণ চিহ্ন পুরাণো চিহ্নেতে।
যুগে যুগে জীবনে জীবনে, অমোঘ নাড়ীর টানে।
জীবনের ওঙ্কার ফিরে আসে বারেবার
জীবনে জীবন যোগ আমাদেরই জীবনের কর্ম ব্যবধানে।