পৃথিবীটা সত্যি গোল
দিদি পড়াশোনা নিয়ে এতো ব্যস্ত , কিছুতেই বিয়ে করবে না। ঠাম্মা বুঝিয়েছেন শেষ বয়সে একটা অবলম্বন দরকার।বাবা – মা চিরজীবন বাঁচে না।এই দেখ তোদের দাদু কবে চলে গেছেন। তোদের অবলম্বন করে বেঁচে আছি। পঁচিশ বছর বয়স হলো, বিয়ে করে নে ।তুইতো সোনার টুকরো নাতনি। তাছাড়া বাবার চাকরি থেকে অবসর হতে বেশি বাকি নেয়।তারপর বোনকেও দিতে হবে।
বাড়িতে হৈ হৈ চলছে,আজ আমার দিদিভাইকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।ঘরে ঘরে ফুলদানিতে রঙবাহারি ফুল,খাটে টানটান চাদর।
দামি দামি কাপ,ছোট,বড়, মাঝারি প্লেট কাঁচের টেবিলে সুন্দর ভাবে সাজানো।
আমার দিদি এম.এস. সি করে অ্যাপলায়েড ম্যাথস নিয়ে ডক্টরেট করছে।দেখতেও সুন্দর, লম্বা,ফর্সা।জানা কথা, ওকে যারা একবার দেখবেন এককথায় পছন্দ করবেন।
সত্যি সত্যি তাই হলো।
একদিনে পছন্দ,প্রায় পাকা কথা শেষ। ছেলে মিলে প্রায় দশজনের আগমন। মনের খুশিতে দিদি ওদের গান শোনাচ্ছিল
“আজ মনে হয় এই নিরালায় সারাদিন ছন্দের গান শুনি আমি এক স্বপ্নের জাল বুনি
নিজেরে হারায় সুরের মায়ায়
আজ মনে হয় এই নিরালায়…”।
আত্মীয় স্বজনের থেকে সম্বন্ধটা এসেছিল। পাকা কথা সব শেষ…তারপর মা আমাকে ডাকেন। পরিচয় করিয়ে দেন সবার সাথে। আড়চোখে হবু জামাইবাবুকে দেখে নিই। আমি কিন্তু রূপে – গুণে দিদির ছিটেফোঁটা পাইনি।
গায়ের রঙ দিদির মতো ফর্সা নয়। আমিই সবাইকে চা , মিষ্টি এগিয়ে দিই। খাবার অনুরোধ করি।
এরপর দিদিকে পছন্দ করে ছেলে পক্ষ চলে যান। দিদির লাজুক মুখটা দেখে মনে হয় স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করে দিয়েছে।
বিয়ে করবে না বলেছিল। কিন্তু শিক্ষিত বড়লোকের সুদর্শন ছেলে সব মেয়েই কামনা করে। উল্টো দিকে ছেলেরাও তাই চায়।আর আমার মতো খেদিপেঁচিদের মোটা
বরপন দিয়ে মেয়ের বাবা হয়ত সন্তান পার করেন।তাহলে তো শুধু সুন্দর ও সুন্দরীদের বিয়ে হবে।
পরদিন টেলিফোনে খবর আসে ছেলের একটু আপত্তি আছে ।তবে আপনাদের বাড়িতে জামাই হতে রাজি।
দিদি র স্বপ্ন এখন প্রশ্নের মুখে।
আমরা ও ভেবে পাই না কি আপত্তি। আবার জামাই হতে ইচ্ছুক।পরে জানা গেল পাত্রীর ছোটবোনকে ছেলের পছন্দ।
আমার বাড়ির লোকেরা এত ভালো সম্বন্ধ হাতছাড়া করতে চান না।বড়’তো রীতিমতো সুন্দরী।ওর পাত্রের অভাব হবে না। দিদি খুব খুশি ভাব দেখাচ্ছিল। কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগছিল।বড়বোন বাড়িতে থাকবে আর ছোট বোন দিদির পাত্রকে বিয়ে করবে!!মনে মনে পাত্রের উপর রাগ হচ্ছিল
আমিও বাড়িতে প্রতিবাদ না করে আমাকে দেখতে আসার জন্য বলি। আবার দশজনের আবির্ভাব। আমাদের কাজের মেয়ে এবার চা, খাবার দেবে। দিদিতো ঘর থেকে বের হবে না।গান করলাম “মারঝাড়ু মেরে ঝেঁটিয়ে বিদায় কর.”.. সবাই গান শুনে হেসে ফেলে। পাত্রপক্ষ তাতেও খুশি। কাজের মেয়ে খাবার নিয়ে ঢুকলে বলি, খাবারটা রেখে চলে যা। এবার বাড়ি গিয়ে জানাবেন তোকেই পছন্দ।
সবাই আমার গানের মানে বুঝে যান। তাড়াতাড়ি খাবার ফেলে দৌড়!
তারপর আটাশ বছর অতিক্রান্ত। দিদি ও আমি যে যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।বাবা মা ঠাম্মা কবে তারা হয়ে গেছে।
আজ দিদির ছেলের পাকা কথা বলতে মেয়ে বাড়ির লোকজন আসবে। ছেলে ও মেয়ে এক সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেএক কোম্পানিতে চাকরি করে।
সব কথাবার্তা আলাপ আলোচনা শেষ হঠাৎ মেয়ের বাবা বলেন
“মারঝাড়ু মেরে” গানটা মনে আছে আপনার?
আমি রীতিমতো থতমত খেয়ে যাই।
তাইতো সেই ভদ্রলোক!!
দিদিকে ছেড়ে আমাকে পছন্দ করেছিলেন।
সবাই হাসাহাসি শুরু হয়।মেয়ের মা বলে ঠিক করেছিলেন আপনি।এই গল্পটা আমার সব
আত্মীয়রা জানেন।
আমার কর্তা ফোড়ন কেটে বলে ভাবুন আমি কি দুষ্টু মেয়ে বিয়ে করেছিলাম।
জামাইবাবু ও কম যান না ,হবু বৌমার বাবাকে জিজ্ঞেস করেন আমার বৌয়ের কি অপছন্দ ছিল বলুন তো?
বৌমার বাবা বলেন ওই মেয়ের সাথে আপনার ছেলের বিয়ে দেব বলে। আবার হাসির ফোয়ারা ।
তখন সবাই মিলে বলি পৃথিবীটা সত্যিই গোল।