পুরুষের মন
আজকের সকালটা একটু অন্যরকম। অরূপের মাথার উপর কাজের চাপ থাকলেও আজ তার মনে এক অদ্ভুত শূন্যতা। আজ পুরুষ দিবস, কিন্তু তাকে কেউ শুভেচ্ছা জানায়নি। অফিসের ব্যস্ততায় মগ্ন থাকতে থাকতে তার ব্যক্তিগত জীবন যেন কোথাও হারিয়ে গেছে। স্ত্রী প্রিয়া সকাল থেকেই ব্যস্ত ছিল তাদের মেয়ে অনন্যার স্কুলের কাজে। সে হয়তো জানেও না যে আজকের দিনটি তার স্বামীর জন্য একটু বিশেষ।
অরূপ লাঞ্চ ব্রেকে অফিসের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা নিয়ে ভাবছিল—পুরুষদের জীবন কি শুধু দায়িত্ব পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? কে বোঝে তার মনের চাপা কষ্টগুলো, দুঃখগুলো? সংসার, সমাজ, কাজের চাপের ভেতর কোথাও তার ব্যক্তিত্ব যেন হারিয়ে যায়।
হঠাৎ ফোনটা বাজল। প্রিয়া। এত ব্যস্ততার মধ্যে সে কেন ফোন করেছে? অরূপ কিছুটা অবাক হয়ে ফোনটা ধরল।
“তুমি কি লাঞ্চ করেছ?” প্রিয়া জিজ্ঞেস করল।
অরূপ হালকা হাসি দিয়ে বলল, “কাজের চাপে ভুলে গেছি।”
“তাহলে কাজের চাপ একটু কমিয়ে বাড়ি চলে এসো। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
অরূপ কিছুটা সন্দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরল। দরজা খুলতেই ছোট্ট মেয়ে অনন্যা এসে জড়িয়ে ধরল। “হ্যাপি মেনস ডে, বাবা!”
ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখল, ডাইনিং টেবিলে তার প্রিয় খাবার সাজানো। প্রিয়া গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে বলল, “তোমার জন্য হয়তো কিছুই করতে পারি না, কিন্তু আজ একটু চেষ্টা করলাম। তুমি যে শুধু আমাদের সুরক্ষার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করো, সেটা কখনো ভুলে যাই না।”
অরূপ কিছু বলল না। শুধু তার চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে এল। প্রিয়া তার হাত ধরে বলল, “তুমি হয়তো বাইরে শক্ত, রাগী, দায়িত্ববান পুরুষ। কিন্তু আমি জানি, তোমার মনের ভেতর একটা নরম, আবেগপ্রবণ হৃদয় আছে, যা আমাদের জন্য বেঁচে থাকে।”
অরূপের মনে হলো, এই মুহূর্তে তার সব কষ্ট, সব চাপ যেন কোথাও মিলিয়ে গেছে। সে বুঝল, পুরুষদের জীবন শুধু দায়িত্ব নয়, ভালোবাসা পাওয়ারও অধিকার আছে।
প্রিয়া তার কাঁধে মাথা রাখল। ছোট্ট অনন্যা চিৎকার করে বলল, “বাবা, এবার কেক কাটো!”
অরূপ হাসল। এই হাসিটা ছিল সত্যিকারের। তার মনের শূন্যতা যেন ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে গেল।
পুরুষ দিবসের এই মুহূর্তটি তাকে মনে করিয়ে দিল—পুরুষদেরও আবেগ, আশা আর ভালোবাসার প্রয়োজন। হয়তো তারা বেশি প্রকাশ করে না, কিন্তু তাদের মনের গভীরে ভালোবাসার এক গভীর স্রোত বয়ে যায়।