পুনরাবৃত্ত স্বয়ম্বর
আজ নতুন করে আরো একবার স্বাবলম্বী হলাম। এরকম নিজে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার অনুভূতি জীবনকে স্পর্শ করেছিল বহুবার। মানুষ কতভাবে;কত দিক থেকেই না স্বাবলম্বী হতে পারে। এইতো কয়েক মাস আগেই একদিন মেঝেতে পাতা বিছানায় মশারি টাঙিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী এবং আমার ছেলে সুপ্রতীম। আমরা তিনজনেই রাত্রিবেলা একই সাথে শুয়ে আছি। বিয়ের আগে নিজের ক্রয় করা একটি তক্তপোষে ঘুমাতাম। বিয়ের পরে শ্বশুর মশাইয়ের দেয়া খাটেই আমরা সকলে রাতে ঘুমতাম। কিছুদিন আগেই সেই খাটটি বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে পড়ায় খাটের দুটি ডাসা ই মাঝখান দিয়ে ভেঙে যায়।ওকে আর ব্যবহার করতে পারছি না আমরা। তাই আমরা সকলে মেঝেতে শুয়ে আছি ঐ দিন।ওরা মা-ছেলে গল্প করছে। আমি চুপ করে আমার পুরোপুরি স্বাবলম্বী না হয়ে ওঠার ব্যর্থতার কথা ভাবছি। আপনারা হয়তো ভাবছেন; এই শুয়ে থাকার মাঝে আবার ব্যর্থতার প্রশ্ন আসে কি করে? আসে,অবশ্যই ব্যর্থতার প্রসঙ্গ জড়িয়ে আছে। আমি মনে মনে বারবার ভাবছিলাম; “আমি এতদিন আমার শ্বশুরমশাইয়ের দেয়া খাটে ঘুমাতাম, কয়েক দিনের মধ্যেই আমি নিজের টাকায় খাট কিনে তাতে আমরা ঘুমাবো। শ্বশুর মশাইয়ের দেওয়া খাটে ঘুমানো জামাই কি স্বাবলম্বী বলে দাবি করতে পারে নিজেকে? সেদিন আমি স্ত্রীকে বলে ফেলেছিলাম; “আমি স্বাবলম্বী হতে পারিনি এখনো”।
আজ দীর্ঘদিন পর আবার নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুললাম অন্যভাবে। আমার সকল আত্মীয় পরিজন; বন্ধুবান্ধব; এমনকি আমি নিজেও জানি আমি একটা বিষয়ে একদমই অকর্মণ্য পদার্থ। তাহলো; বাড়ির গৃহিণীদের আওতায় পড়া অধিকাংশ কাজই আমি করতে পারিনা। ঘর গোছানো; জামা কাপড় পরিপাটি করে রাখা! বাসন মাজা; বাজার করা; এগুলো কোনোটাতেই আমার তেমন মনোযোগ আসে না বলেই আমার ধারণা ছিল এতদিন।রান্নাবান্না তো একেবারেই না। কিন্তু আজকের অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলল। আজকের অভিজ্ঞতা আমাকে আমি স্বাবলম্বী এ কথা বলতে বাধ্য করল আরো একবার। গত রোববার থেকে আমার স্ত্রী বাড়িতে নেই। ও বাড়িতে না থাকলে আমি সাধারণত বাইরেই খাওয়া দাওয়া করি এ কথা আমার স্ত্রীও জানে। ও এ কথাও ভালোভাবে জানে যে; বাজার করা, রান্নাবান্নায় আমি এক্কেবারেই অপটু।
না, এইবারে আর বাইরে খাওয়া-দাওয়া করিনি। খাওয়া দাওয়া করিনি কোন প্রতিবেশীর ঘরে। সরাসরি নিজেই রান্না ঘরে প্রবেশ। আরে কিছু না পারি তো আলু সিদ্ধ তো করতে পারব রে বাবা..! শুনলে অবাক হয়ে যাবেন; আজ আমি নিজে রান্না করা ভাত এবং তার সাথে একটি ডালের মিশালি তরকারি করে দুপুরের খাবার সাথে নিয়ে অফিসে এসেছি। জীবনে এই প্রথম নিজের হাতে বানানো খাবার নিয়ে কর্মস্থলে গমন। স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার এও এক ক্ষুদ্র উদাহরণ। আসলে আমরা যদি কোন বিষয়েই একটু মনোযোগ প্রদান করতে পারি তাহলে আমরা সেই বিষয়ে অনেক কিছু না জানতে পারলেও কিছুটা জ্ঞানের অধিকারীতো হতেই পারি। আজ সারাদিন শুধু আজ থেকে ১২ বছর আগের সেই ব্যাচেলার দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে যখন আমি সকাল থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত কর্মব্যস্ততায় মগ্ন থাকতাম। মাঝে মাঝে অধিক রাত্রেও কাজ করতাম সকাল পর্যন্ত।শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকেই খেয়াল রাখতাম দিবারাত্রি। আর অর্থ উপার্জনের বিন্দুমাত্র সময় যেন অন্যত্র ব্যয় না হয় এই কারণেই যে আমার এই রান্নাবান্না শেখা হলো না। এ বিষয়টিকে মূল্যবান বলেও মনে করিনি কখনো। যার পরিণতি ২০০৯ সালের ১০ই মে অগত্যা বিয়ের আসরে মালা বদল। এক প্রকার দুমুঠো রাধা ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্যই পরিকল্পিত সময়ের কয়েকটা বছর আগেই এই মালা বদল করতে হয়েছিল বাধ্য হয়ে। ভেবেছিলাম দুহাজার কুড়ি সালেই বিয়ে করবো। তবে তখনো কবিরূপে আপনাদের সামনে এইভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারব তা গুনাহাক্ষরেও কল্পনা করতে পারিনি। এখন দেখছি আল্টিমেটলি সংসার পেতে বড়ই ভুল করেছি। লেখালেখির ক্ষেত্রে সংসার জীবন মাঝে মাঝেই সাহিত্য চর্চায় বিঘ্ন ঘটায়। দুমুতো ডালে চালে পাকিয়ে ঠিক খেয়ে বেঁচে যেতাম। বিয়ে না করলে হয়তো সাহিত্য চর্চাটা আরও জোরদার করে করতে পারতাম। থাকতো না কোন ভয় ভীতি; থাকতো না কোন পিছুটান।