Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পরিবার || Samarpita Raha

পরিবার || Samarpita Raha

পরিবার (Paribar)

সায়ন আচমকা মা কে প্রশ্ন করে – প্রতি বছর কেন বলো পূজার সময় বাবা জামা নিয়ে আসবে!!
তৎক্ষণাৎ সায়ন্তনী বলে–শুধু তাইবলে না, আবার মা বলে কালীপূজার সময় অনেক বাজি আনবে।
সত্যি করে বলবে মা , আমাদের বাবা কবে আসবেন?
ঠাম হাসতে হাসতে বলে আসবে রে ঠিক আসবে!!
আমাদের মড়ার সময় মুখাগ্নি করতে ঠিক আসবে।
আচ্ছা মা হোলির দিনে যদি বাবা আসে!!

শোন বাবা তোদের বাবা আসলে আসবেন !!
এটা তার নিজের বাড়ি!
প্রতি বছর তোরা বিশেষ দিনে জিজ্ঞেস করিস,এখন তো বড় হয়েছিস , তোরা বুঝতে পারিস না ঠাম, দাদু কষ্ট পান!
ঠাম্মা বলেন আর তোদের মা একদম কষ্ট পায় না বুঝলি।
শাশুড়ি মা হটাৎ বলে ওঠে–আরে সোমা এই লালশাড়িটা কবে কিনলে!!
না মা এটা আমার বিয়ের ওই ভাত কাপড়ের শাড়িটা।যেটা আপনার ছেলে,মিথ্যা প্রবচন শুনিয়ে দিয়েছিলেন।
জানেন মা এই যে শাড়িটা পরে স্কুলে যাচ্ছি,সব মহিলা শিক্ষিকার মধ্যে ফিসফিস শুরু হবে।বলবে বর নেই তাও লালশাড়ি!!
না মা নেই বলব না। ওনার অমঙ্গল হবে। আমার দোষ মা,তার মাধ্যমিক পাশ মেয়ে পছন্দ ছিল না।অত শিক্ষিত ছেলের কি আমাকে পছন্দ হয়!আমাকে একটু সময় দিল না। আমার যে যমজ সন্তান গর্ভে ছিল তাও জানে না। আমি কলেজ পাশ করে স্টাফ সিলেকশন পরীক্ষা দিয়ে স্কুল শিক্ষিকা হয়।
প্রায় দশবছর তিনি চলে গেছেন।
একদিন আমাদের কাজের মাসী বলে–আচ্ছা বৌদি তোমার বর কবে ছেড়ে গেছেন ,তাও সিঁদুর লাগাও কেন?
শাশুড়ি শুনতে পেয়ে বলেন বুঝলি মোক্ষদা এ হলো আমার সতী লক্ষ্মী বৌমা।
যার স্বামী ত্যাগ করে চলে গেছে তার মঙ্গলার্থে এখনো সব নিয়ম পালন করে যাচ্ছে।
সোমা বিড়বিড় করে আপনমনে বলে সতী না ছাই!নাহলে দশ বছর আগে ওরকম ভয়ংকর দুর্ঘটনায় তার কপালের সিঁথি শূন্য করে গেছে। শাশুড়ি ও শ্বশুর মশাই এর মুখ চেয়ে এই অভিনয় করে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া সবাই বিয়ে করবার জন্য অনুনয় করত। শাশুড়ি মা একদিন বলে ফেলেন যাবার আগে বৌকে ডিভোর্সটা দিয়ে যেতে পারতিস। ওনারা ছেলের নামে কুকথা বললে আমি সহ্য করতে পারতাম না। কথা শুনিয়ে দিতাম। হোলির দিন ছেলে মেয়ে সবাই রঙ খেলছে।
হটাৎ দিল্লি থেকে একটা টেলিফোন আসে, শ্বশুরমশায় ফোন ধরে বলেন কি খুশির খবর দেবেন, তারজন্য বৌমা কে কেন দরকার!
আমি ফোন ধরে বলি আমি দশবছর ধরে সকাল রাত্রে থানায় ফোন করে যাচ্ছি,আজ আমার কি সৌভাগ্য আপনারা ফোন করছেন!
সোমা কেমন আছো???মা -বাবা বেঁচে আছেন??? পুনরায় বিয়ে করেছ!!
আমি থতমত খেয়ে ভাবি উনি বেঁচে আছেন!হু করে যাচ্ছি। কেননা ঘরে শ্বশুরমশায় ও শাশুড়ি মা দাঁড়িয়ে আছেন।
রং মেখে দুই ছেলে চিৎকার করে বলে মা কে এসেছেন দেখো??
আপনার ছেলে আসছেন , এসে সব কিছু বলবেন।
শাশুড়ি মা বললেন কি হয়েছে বৌমা!!
দুপুরে খাওয়ার পর্ব মিটতেই আমি আসল সত্য জানাই। তাঁদের ছেলে দশ বছর আগে মারা গেছেন।
কাঁদতে কাঁদতে হাসতে হাসতে বলি উনি আজ ফিরছেন। উনি বেঁচে আছেন মা। এতদিন আমি অভিনয় করে গেছি ,তা শুনে হটাৎ শাশুড়ি আমাকে একটা চড় মারেন। আনন্দে জড়িয়ে বলেন বেশ করেছিস এতদিন বলিস নি। আমরা নিতে পারতাম না।
সন্ধ্যা বেলায় তুলসী মঞ্চে ধূপ দিচ্ছি মাথার উপর লাল রং দিয়ে রাঙিয়ে দেয়।চেয়ে দেখি আমার বর। ছেলেরা বলে বাবা এসেছে বাবা এসেছে। উনি থতমত খেয়ে বলেন আবার বিয়ে করেছিলে!!
শাশুড়ি এসে বলে আমার বৌমা সতী লক্ষ্মী ।
তুই সব জানলে বুঝতে পারবি বাবা।
শাশুড়ি মা একটা সিঁদুরের কৌটো এনে ছেলেকে বলেন রং তো লাগালি। এবার আসল রঙের ছোঁয়া লাগিয়ে দে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress