Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পরাবর্ত || Sudhindranath Dutta

পরাবর্ত || Sudhindranath Dutta

ছুটেছে গৈরিক পথ নির্বিকার সন্ন্যাসীর মতো
নির্গুণ নির্বাণভরা, নিরাকার শূন্যের অন্বেষে ;
নিরাশ্রয় আঁখিপাখী নিশাক্রান্ত,অশক্ত,আহত,
ঘুরে মরে দিশে দিশে মরুময় অজানা বিদেশে ;
যে-বিরল পান্থদল ওই দূরে দিগন্তের পটে
চিত্রার্পিত করেছিল মানুষের বিরাট সাধন,
তাদের মৃন্ময় মূর্তি ধুয়ে গেছে বৃষ্টির ঝাপটে ;
পলাতক চক্রবালে উল্লসে ধূলার আবর্তন ;
সমুদ্যত ভবিতব্য জগদ্দল নৈঃশব্দ্যের ভারে
দলিছে দুর্বার দর্পে অতীতের চারণসংগীত ;
রুদ্রের নয়নদগ্ধ মদনের প্রেত বারেবারে
করে যেন বজ্রাগ্নিতে অনুতপ্ত ভ্রমের ইঙ্গিত ;
বিক্ষিপ্ত নৈরাশকণা পুঞ্জীভূত হয়ে ঘন মেঘে
হানিছে জীবনাকাশে বিরঞ্জন আঁধার সমতা ;
আত্মধিক্কারের ঘূর্ণি রিক্ত বক্ষে ধেয়ে আসে বেগে ;
ঝ’রে পড়ে লক্ষ ধারে ভারাতুর,নির্লজ্জ মমতা ।।

ঊষার মাহেন্দ্রক্ষণে, পৌত্তলিক প্রথম ফাল্গুনে,
ভাবিলি মনোজ্ঞা ব’লে যে-অচেনা অবগুণ্ঠিতারে
দূর থেকে দেখে শুধু, কেবল নিরর্থ নাম শুনে
ফিরিলি ছায়ার মতো এতদিন যার অনুসারে,
আজি সেই মোহিনীর জরাজীর্ণ, প্রচ্ছন্ন স্বরূপ
ব্যক্ত হয়ে থাকে যদি বিদ্যুতের নির্দয় আলোকে ;
বৈহাসিক অবিশ্বাসী ঢালে যদি বিষাক্ত বিদ্রূপ
স্বর্গচ্যুত কৈশোরের অভিব্যাপ্ত অরুন্তুদ ক্ষতে ;
তবুও কেমনে, কবি , অস্বীকার করিবি সুন্দরে ;
বলিবি অলীক পদ্ম,সত্য শুধু পঙ্কমূল তার ?
গরিমারে মিথ্যা জেনে নি:সংশয়ে কহিবি কি ক’রে
লঘিমাই সনাতন, বস্তুবিশ্ব শুধু ধ্বংসসার ?
সংগীতের রসায়নে চেয়েছিলি করিতে নির্মাণ
সমুচ্চ সুবর্ণলঙ্কা ;আসুরিক সে-মহাপ্রয়াস
ধূমাঙ্কিত ব্যর্থতায় হয়ে থাকে যদি অবসান,
তবে ভস্মমসিপাতে স্বাক্ষরিত কর্‌ সর্বনাশ ।।

তুই মূঢ়, বরেছিলি অনিশ্চিত –বক্রতা-বিহীন,
প্রাসাদনিবৃত্ত, ঋজু, স্থিরলক্ষ্য প্রশস্ত সরণী,
আদিম বন্যতা যার পূর্বগামী করিল মসৃণ,
যার হিংসা, প্রতিহিংসা বক্ষ পেতে রোধিল অগ্রণী ।
কনককণিকা-খচা,চেয়েছিলি, সান্দ্র অবচ্ছায়া,
নিয়ন্ত্রিত শাল্মলীর মর্মরিত প্রবীণ বীথিকা,
মলয়বীজনস্নিগ্ধ, নিরাপদ প্রগতির মায়া,
পুষ্পের আশীষ-বৃষ্টি, বিহঙ্গের বন্দনাগীতিকা ।
তুই চেয়েছিলি,লোভী,পথপার্শ্বে বিস্মিত নয়ন,
উৎসবের পীতাম্বর,করতালি কঙ্কনমুখর,
সম্মুখে মঙ্গলঘট, রক্তধ্বজ বিজয়তোরণ,
পশ্চাতে ধ্বংসের ধূলি, নির্জিতের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ।।

আজি সে-সুখের নিদ্রা অকস্মাৎ তুতিল কি, কবি?
গোলাপী নেশায় ভরা রুদ্ধ আঁখি ফুটিল সহসা?
বিবর্ণ দিনের দীপ্তি মুছে দিল সে-চলন্ত ছবি,
ভাতিল দৈনিক দৈন্য , ঘুচিল সে-দয়ালু তমসা ?
বুঝিলি কি আচম্বিতে সাঙ্গ তোর স্বপণপ্রয়াণ,
সে নহে তো শোভাযাত্রা, যৌবনের শবযাত্রা সে যে;
তাই নাই পুষ্পবৃষ্টি, বন্দীদের উচ্চ জয়গান ;
নিরিক্ত প্রস্তরপথ দগ্ধ তাই স্পন্দমান তেজে ?
সরল বিস্ময় টুটে অন্তর্দৃষ্টি ফুটিল কি চোখে ;
বুঝিলি এ-বাটে যারা লঘু পায়ে গেছে তোর আগে,
তারা নয় অতিনর; আত্মহারা গড্ডলিকা তোকে
অভিযুক্ত করে গেছে উদ্‌ভ্রান্তির মৌল দায়ভাগে ;
তাই তোর বৈজয়ন্তী দর্শকের বিদ্রূপ জাগায়,
বিপ্রলব্ধ অনুযাত্র শঙ্খনাদে রহে নিরুত্তর ;
প্রতীকীর অশ্বমেধ শুধু শুন্যে অধিকার পায়,
নিশ্চিন্ত স্বর্গের হাস্যে অপ্রতিষ্ঠ ত্রিশঙ্কু অমর ?

কোন জন্মান্ধের কাছে শিখেছিস, ওরে অন্ধ কবি,
ব্রহ্মান্ডনেমীর কেন্দ্র্র বৃত্তিবদ্ধ, বিকল মানুষ ;
প্রাণের প্রথম প্রৈতি তার মনোবাসনার ছবি ;
জন্মমৃত্যুপরম্পরা শুধু তার করুনা, পৌরুষ ;
উদ্দাম অভীপ্সা তার মূর্ত লক্ষ তারার কম্পনে ;
তার দীর্ণ দীর্ঘশ্বাস বাতাহত বেণুতে ফুকারে ;
তার আকস্মিক খুশি শ্রাবণের নৈশ বরিষণে ;
মুমুক্ষু বিদ্রোহ তার চৈত্রে স্তব্ধ জলদে হুংকারে ;
বেতস বিরহমূক সদা তার মুখস্পর্শ মাগে ;
লুতায় মানিনী যূথী, কণ্ঠাশ্লেষ না পেয়ে, ধূলায় ;
অনঙ্গের লক্ষ্যভেদে মধুমাসে সে যদি না জাগে,
বিধাতা প্রমাদ গণে, চরাচর ম’রে,ঝ’রে যায় ;
অব্যক্তির গর্ভ হতে রহস্যের নিত্য নিরুদ্দেশে
উধাও সে ধূমকেতু দীপ্র সেতুসংরচন করে :
এই মুগ্ধ মায়াবাদ কিনিতে কি নি:স্ব হলি শেষে,
বোঝাই সোনার তরী রেখে এলি বিদেহনগরে ?

কুশের ফুৎকারজাত বুদ্বুদের স্ফটিকমণ্ডলে
বিচ্ছুরিত বর্নচ্ছটা অন্তর্হিত হলে মহাকাশে
সনির্বন্ধ শিশু যথা ডুবে যায় অশ্রুর অতলে,
বিশ্বের বৈচিত্র্য খোঁজে আপনার ভাবালু বিলাসে ;
তুই ও তেমনই কবি ভেবেছিলি চির চিরন্তন
কালাবর্ত পরিস্ফীত, পরজীবী রঙের স্বপ্নেরে।
ফুরাল তাহার বেলা ; ঝেড়ে ফেলে সংহত ক্রন্দন,
ফিরে যা সংসারে পুন ক্রন্দসীর ঊষরতা ছেড়ে ।
অজ্ঞাত সিন্ধুর মর্মে, জাদুকরী অধরা যেখানে
উৎকর্ণ অর্ণবপোত ধ্বংস করে অপ্সর সংগীতে,
সেথা বাঁধি নিজ দেহ,মুদি চক্ষু, অবরুদ্ধ কানে
পারায়ে যা পরিচিতা সুন্দরীরে বরমাল্য দিতে ।।

যদিও আত্মার ঐক্য অসম্ভব সে- জড়জগতে,
সুলভ সমানধর্মী তবু সেথা নিরবধি কালে;
আকর্ষণ,বিকর্ষণ তুল্যমূল্য সে-স্বতন্ত্র পথে,
সান্নিধ্য,দূরত্ব মিথ্যা,ভেদ নাই আকাশে পাতালে;
ব্যতিক্রম,অপচার নিষিদ্ধ সে-নৈরাজ্যে নিশ্চয়,
পরিণতি স্বত:সিদ্ধ, অনিবার্য স্বায়ত্তশাসন ;
সেখানে সম্পূর্ণ বৃত্ত, শুধু ভগ্ন কুটিলতা নয়,
অতীত অসার স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ অসত্য ভাষণ;
সেখানে অনন্ত বাহ্য; সে-অসীমে অণুও শ্রদ্ধেয়,
সংক্রান্তি সংক্ষিপ্ততম, অগ্রগতি অপচয়হীন,
ভ্রান্তি শুধু আপেক্ষিক, নির্বিকার প্রকৃতি প্রমেয়,
প্রলয় অভাবনীয়, সর্বনাশে নির্মিত নবীন।
শূন্য যেথা শুন্য নয়, ভারাতুর সংসক্ত তড়িতে,
প্রসার সহস্রমুখী, হরিহর মুক্তি আর কারা,
হয়ত একদা সেথা মণিময় অমারজনীতে
পাবি,কবি, অকস্মাৎ অজানিত দয়িতের সাড়া ।
সেথা কি অগুরুর গর্ভে সুকুমারী কোনও নীহারিকা
নিজের অজ্ঞাতসারে আগন্তুক দৈবেরে বহে না,
বেদে কিংবা ইতিহাসে নেই যার কোষ্ঠীপত্র লিখা,
শুধিবে যে- ক্ষেমংকর প্রবঞ্চিত মানুষের দেনা ?
কিন্তু তোর ভাগ্যগুনে সে-আশাও যদ্যপি না মেটে,
অহৈতিক অনিশ্চয়ে অবশেষে হারায় প্রমিতি ;
বিস্ফোটক বস্তুবিশ্ব যায় যদি বিপ্রকর্ষে ফেটে,
বিশৃঙ্খল বিসংবাদে ভ’রে ওঠে আবার অমিতি,
পরিব্যাপ্ত পরমাণু নিপাতন প্রচারে নিখিলে,
হিরণ্ময়ের ক্ষয়ে সীসকের পরমায়ু বাড়ে,
কেবল আদিম জাড্য প্রাথমিক মাৎস্যন্যায় মিলে
সমষ্টির অভিসন্ধি নিঃসহায় ব্যষ্টিরে সংহারে ;
তবেই বুঝিবি ওই নিরপেক্ষ নক্ষত্রনিচয়,
নিপট কপট ওরা,শুধু নাম, জনশ্রুত নাম ;
মাটিই একান্ত সত্য,আর সব বৃথা বাক্যব্যয়,
সহস্র ইন্দের শবে রত্নপ্রসূ এই মর্ত্যধাম ।
হয়ত সে-শুভদিনে মরণের তুঙ্গ চূড়া হতে
সিদ্ধির ষোড়শ কলা কেড়ে নেবে বামন মানুষ ;
সুন্দরের পদরেখা ধরা দেবে ধূলাঢাকা পথে ;
আবার সপ্তম স্বর্গে স্থান পাবে ধর্মিষ্ঠ নহুষ ।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *