আজকে আমি কতদূর যে গিয়েছিলেম চলে ! যত তুমি ভাবতে পারো তার চেয়ে সে অনেক আরো , শেষ করতে পারব না তা তোমায় ব'লে ব'লে । অনেক দূর সে , আরো দূর সে , আরো অনেক দূর । মাঝখানেতে কত যে বেত , কত যে বাঁশ , কত যে খেত , ছাড়িয়ে ওদের ঠাকুরবাড়ি ছাড়িয়ে তালিমপুর । পেরিয়ে গেলেম যেতে যেতে সাত - কুশি সব গ্রাম , ধানের গোলা গুনব কত জোদ্দারদের গোলার মতো , সেখানে যে মোড়ল কারা জানি নে তার নাম । একে একে মাঠ পেরোলুম কত মাঠের পরে । তার পরে , উঃ , বলি মা শোন্ , সামনে এল প্রকাণ্ড বন , ভিতরে তার ঢুকতে গেলে গা ছ্ম্ছ্ম্ করে । জামতলাতে বুড়ি ছিল , বললে ' খবরদার '! আমি বললেম বারণ শুনে ' ছ - পণ কড়ি এই নে গুনে ', যতক্ষণ সে গুনতে থাকে হয়ে গেলাম পার । কিছুরই শেষ নেই কোত্থাও আকাশ পাতাল জুড়ি । যতই চলি যতই চলি বেড়েই চলে বনের গলি , কালো মুখোশপরা আঁধার সাজল জুজুবুড়ি । খেজুরগাছের মাথায় বসে দেখছে কারা ঝুঁকি । কারা যে সব ঝোপের পাশে একটুখানি মুচকে হাসে , বেঁটে বেঁটে মানুষগুলো কেবল মারে উঁকি । আমায় যেন চোখ টিপছে বুড়ো গাছের গুঁড়ি । লম্বা লম্বা কাদের পা যে ঝুলছে ডালের মাঝে মাঝে , মনে হচ্ছে পিঠে আমার কে দিল সুড়সুড়ি । ফিসফিসিয়ে কইছে কথা দেখতে না পাই কে সে । অন্ধকারে দুদ্দাড়িয়ে কে যে কারে যায় তাড়িয়ে , কী জানি কী গা চেটে যায় হঠাৎ কাছ এসে । ফুরোয় না পথ ভাবছি আমি ফিরব কেমন করে । সামনে দেখি কিসের ছায়া , ডেকে বলি , ' শেয়াল ভায়া , মায়ের গাঁয়ের পথ তোরা কেউ দেখিয়ে দে - না মোরে । ' কয় না কিছুই , চুপটি করে কেবল মাথা নাড়ে । সিঙ্গিমামা কোথা থেকে হঠাৎ কখন এসে ডেকে কে জানে মা , হালুম ক'রে পড়ল যে কার ঘাড়ে । বল্ দেখি তুই , কেমন করে ফিরে পেলেম মাকে ? কেউ জানে না কেমন করে ; কানে কানে বলব তোরে ? যেমনি স্বপন ভেঙে গেল সিঙ্গিমামার ডাকে ।