পতিতার দ্বারে
নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে , নেহাতই এক অদম্য কৌতূহলে এবং পেশাগত প্রয়োজনে হাজির হয়েছিলাম উত্তর কলকাতার একটি বেশ্যালয়ে। আর পাঁচ জন ‘ খদ্দের’ এর মতো রীতিমতো পান চিবোতে চিবোতে একজন দালাল মারফত একজন বাঙালি পতিতার ঘরে ঢুকলাম। সম্পূর্ণ অচেনা পরিবেশ এবং পরিস্থিতি ! দেখলাম একটা খাটে বসে আছেন একজন মাঝবয়সী মহিলা ! বললেন ” এসো বাবু, যা করবে করো !” লক্ষ্য করলাম , মহিলার পরনের শাড়িটা অবিন্যস্ত এবং বক্ষ বিভাজিকা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ! তিনি বললেন ” তা বাবু, তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে ভদ্রলোক ! তা এখানে কেনো ? বাড়িতে বউ তোমাকে সোহাগ করে না ?” কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম ” নাহ্, আমার বউ আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসে না ! অন্য ঘরে রাতে শোয় !” এবার আমি বললাম ” তা তুমি কেন এই লাইনে ?” কথাটা শুনেই রীতিমতো রেগে গিয়ে মহিলা বললেন ” তাতে তোমার কি ? শরীরটাতো আমার !” খুব শান্ত ভাবে বললাম ” শরীর নয় , তোমার মন চাই আমার !” কথাগুলো শুনেই রীতিমতো অপ্রস্তুত হয়ে গিয়ে মহিলা বললেন ” কি যা তা বলছো ? এখানে রাতের অন্ধকারে তোমাদের মতো লোলুপ পুরুষ মানুষের দল তো আমাদের শরীরটাকে ভোগ করে ! আচ্ছা সত্যি করে বলো তো , তুমি কে ? “( কিছুক্ষণ থেমে ) কৌতূহলে আক্রান্ত হয়ে তুমি কি কাগজের লোক ?” নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম ” একেবারেই না । আমি ক্লাস এইট পাশ। আমার একটা মুদির দোকান রয়েছে ।” মহিলা বললেন ” সত্যিই তোমাকে তোমার বউ ভালোবাসে না ?” উত্তেজিত হয়ে বললাম ” আপনাকে কতোবার বলবো ? যাইহোক তোমার নামটা জানা হয় নি ! ” খুব শান্ত স্বরে মহিলা বললেন ” টগর । জানো বাবু , আমার স্বামীও আমাকে খুব ভালোবাসতো একসময়। কিন্তু একটা নষ্ট মেয়ের পাল্লায় পড়ে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে। আর আমিও পেটের জ্বালায় আরও নষ্ট হয়ে গেলাম ! ” বললাম ” বাড়িতে আর কে কে রয়েছে ?” মহিলা বললেন ” বাড়িতে আমার এক ছেলে রয়েছে। জানো বাবু, আমার ছেলেটা পড়ালেখায় খুব ভাল। ” বললাম ” তোমার ছেলে জানে তুমি এই লাইনে ?” মহিলা বললেন ” নাহ্। সে জানে আমি একটা শপিং মলে কাজ করি। তাই সেখানেই থাকি।” বললাম ” কেমন লাগে এখানে ?” মহিলা বললেন ” এখানে সুখ নেই গো । শুধুই অসুখ আর অসুখ ! আমাদের শরীরটাকে ভোগ করে মুখের ওপর টাকা ছুঁড়ে দিয়ে সবাই চলে যায় ! আর কেউ ফিরেও তাকায় না ! সবাই তো আর তোমার মতো নয়!” কিছুক্ষণ থেমে আমার চোখে চোখ রেখে ছলছল চোখে মহিলা বললেন ” দোহাই তোমার। এখান থেকে তুমি চলে যাও। এখানে মন দেওয়া নেওয়া হয় না গো ! শরীর শুধুই শরীর ! জোড় হাত করছি গো । তুমি এখান থেকে তোমার বাসায় চলে যাও ! এ বড় বিচ্ছিরি জায়গা ! ” এবার রীতিমতো উচ্চস্বরে মহিলা বললেন ” এক্ষুনি এখান থেকে তুমি চলে যাও ! শালা, আমার শরীর না দেখে মন চাইছো তুমি ? “