Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পটলার ভবিষ্যৎ || Shaktipada Rajguru

পটলার ভবিষ্যৎ || Shaktipada Rajguru

পটলাকে নিয়ে এবার আর এক প্রবলেম দেখা দিয়েছে। পটলচন্দ্র আমাদের পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ। অবশ্য আমরাই একপ্রকার জোর করে তাকে ওই পদে রেখেছি। সেই পটলচন্দ্ৰ মাঝেমধ্যে এক একটা ‘প্রবলেম’ এইসা তৈরি করে যে তাকে সামলাতে আমরা হিমশিম খেয়ে যাই ।

ইদানীং পটলার মাথায় ঢুকেছে পল্লির শিশু অর্থাৎ কচিকাঁচাদের মনোমত করে তৈরি করতে হবে। মানে গড়ে তুলতে হবে এই ক্লাবের ছত্রছায়ায়। কারণ তারাই দেশের ভবিষ্যৎ । মতলবটা তার মাথায় ঢুকিয়েছে পাড়ার ভূপতিদা। ভূপতিদা সর্বজনীন দাদা। পাড়ার ছেলে-বুড়ো সকলেরই সে দাদা।

ভূপতিদার বড় রাস্তার ধারে একটা ছোটখাটো দোকান আছে। সামান্য কিছু বিস্কুট-লজেন্স থাকে বয়ামে। সেই সঙ্গে কিছু বিড়ি-পানও। ভূপতিদা বিকেলে ক্লাবে আসে। শীর্ণ পাঁকাটির মত লম্বা চেহারা। কোনোকালে নাকি মিলিটারিতে ছিল। অবশ্য ওই দীর্ঘ বাঁশের ডগার মত বাতাসে কাঁপা দেহ নিয়ে মিলিটারিতে কি যে করত তা কেউ জানে না ।

হঠাৎ সেই ভূপতিদার ঘুম ভেঙেছে দেশের মঙ্গলচিন্তায় আর ঘুমভাঙা চোখে সামনে পটলাকে দেখে তার মাথাতেই কামানের বারুদঠাসা করে ঠেসেছে ওই শিশুমঙ্গলের জব্বর পরিকল্পনাখানা। পটলার মাথায় এখন আদর্শের বারুদ ঠাসা, পলতেতে আগুন দেবার কাজটুকুই যা বাকি।

সেদিন পটলচন্দ্র বললে, নতুন সেকশন খ-খুলবো। শিশুমঙ্গল শাখা। শি-শি-ভূপতিদাই জোগান দেবে।

গোবরা মামার আড়তে এতক্ষণ কুমড়ো আলু পেঁয়াজের পাইকেরি বেচাকেনা করে এসেছে ক্লাবে একটু ডন-বৈঠকি দিতে। হোঁৎকার হাতে যৎকিঞ্চিৎ ঝালমুড়ি মাত্র জুটেছে। ফটিকের তখন গজল সাধার তাণ্ডব চলছে আর আমি ঘাসের উপর ধরাশায়ী। ক্লাব ফান্ডে জমার ঘর শূন্য, কাল ফুটবল খেলা আছে, তার খরচা চাই। ইদানীং প্লেয়ারদের কলা-টোস্ট, নিদেন ডিমের কারি চাই, নো আলুর দম উইথ কোয়ার্টার পাউরুটি। তার খরচার জন্য পটলাকে মোচড় মারতে হবে। এহেন সময় নতুন সেকশন খোলার কথায় বলি, ক্লাবই ডকে ওঠার জোগাড় আর তুই কিনা ওই কিল্লি-বিল্লিদের নিয়ে নতুন সেকশন খুলবি! কাল খেলার খরচা নেই—

হোঁৎকা বাকিতে কেনা কেবলরামের ঝালমুড়ির শেষ কণা অবধি খেয়ে এখন কাগজে লেগে থাকা বিটনুনটুকু চাটতে চাটতে বলে, ঝালমুড়িই জোটাতে পারিস না, দিমু রেজিকনেশন। সব গিয়া ওই পোলাপানগোর লই, এসবে আমি নাই। তারপরই দণ্ডায়মান ঝালমুড়িওলাকে দেখিয়ে বলে, কেবলরামের বাকি তিন টাকা দিই দে।

হোঁৎকা আমাদের ব্রেন-ক্লাবের মাথা। ওর পকেটে সর্বদাই বিবর্ণ একটা কাগজে পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের সেক্রেটারির পদ থেকে রেজিকনেশনের লেটার রেডিমেড থাকে। সেটা প্রায়ই তাস খেলুড়েদের তুরুপের তাসের মত বের করে হোঁৎকা। আজও করতে পটলা বলে, কেবলরামের বাকি তিন টাকা দি-দিচ্ছি। আর কে-কেবলরাম ঝা-ঝালমুড়ি বানাও সকলের জন্যে। আট আনা করে, বাদাম জ্যাদা। ব-বোস হোঁৎকা ।

ফ্রেশ ঝালমুড়ির কথায় হোঁৎকা বসল। এই সুযোগে পটলা তাকে ধরে ভবিষ্যৎ দেশ-সমাজ গড়ার পরিকল্পনার কথা শোনাতে থাকে। পটলার পথপ্রদর্শক ভূপতিদাও ইতিমধ্যে এসে জুটেছে।

সব শুনে-টুনে হোঁৎকা বলে, খুবই জটিল ব্যাপার, ঠান্ডা মাথায় ভাবার লাগবো। কুলপি মালাই দিতি ক ওই এতোয়ারিকে।

হোঁৎকা মালাই চুষতে চুষতে বলে, টাকা-পয়সা অনেক লাগবো। ধর পয়লা চোটে হাজার খানেক। পোলাপানেগোর জন্য বাদ্যি-বাজনা চাই, প্রচার চাই।

ভূপতিদা বলে, ওদের জন্য বিকেলে বিস্কুট-লজেন্স এসব চাই।

গোবরা বলে, আর ড্রিল-কুচকাওয়াজ ?

ভূপতিদার বাইশ ইঞ্চি বুক তখন ফুলে চল্লিশে পরিণত হয়েছে। শীর্ণ মুখে হুলো বেড়ালের মত গোঁফ খাড়া করে বলে, ওসব আমি করাব। মিলিটারিতে কত জবরদস্ত শিখ, জাঠকে ড্রিল মার্চ করিয়েছি।

পটলা বলে, ত-তাহলে ব্য-ব্যবস্থা কর।

হোঁৎকা চেনে একটি বস্তু। আঙুলে টাকা বাজাবার ভঙ্গি করে সে শুধোয়, আর এটা! রসদ কই পামু? ট্যাকা?

খুশিতে পটলার জিবটা যথারীতি আলটাকরায় আটকে গেছে। তাই ইংরাজিতেই বলে,

ন-নো প্রবলেম ।

পটলার ইংরাজি বুলি গড়গড় করেই বের হয়। আর টাকার অভাব ওদের নেই। পটলার বাবা, তিন কাকা দু হাতে রোজগার করেন। কারখানা, করাতকল, পাটের গুদাম কি নেই ! বংশের ওই একমাত্র শিবরাত্রির সলতে, ওর ঠাকুমারও কলকাতা শহরে খান দশেক পেল্লায় বাড়ি। সুতরাং পটলচন্দ্র আমাদের কামধেনু কাম ক্যাশিয়ার। তার পরিকল্পনা সাদরে গৃহীত হল। আড়ালে বলি হোঁৎকাকে, খেলার টাকা-

হোঁৎকা বলে, ওই শিশুদের টাকা থেকে গ্যাঁড়াবো। শিল্ড এবার চাই-ই। না হলে পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের নাম থাকবে না।

শাবাশ পটলা। এবার পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের নাম যেন তুবড়ির ফুলকির মত পাড়ায় ছড়িয়ে গিয়েছে। দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার, বড় রাস্তার এমাথার বটগাছ থেকে ওদিকের লাইটপোস্টে লাল শালুর ব্যানার-‘পঞ্চপাণ্ডব ক্লাব জাতির সেবায় শিশুমঙ্গল বিভাগ খুলছে। অভিভাবক-অভিভাবিকাদের অনুরোধ করা হচ্ছে তাঁরা যেন তাঁদের শিশুদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এখানে পাঠান। প্রবেশমূল্য নেই।’ আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে যেন ভোটযুদ্ধ শুরু হয়েছে।

এতদিন পাড়ায় বাস করছি, দু-চারটে ছেলে, কচিকাঁচা নজরে পড়েছে। কিন্তু পাড়ায় যে এত কিল্লি-বিল্লি, রেজগি কিলবিল করে তা জানা ছিল না। এক তিন নম্বর বস্তি থেকেই এসেছে একশো বাইশ জন। এছাড়া এখান ওখান, এ বাড়ি সে বাড়িতে এত গেঁড়ি-গুগলি ছিল ভাবতেও পারিনি। সারা মাঠ ভরে গেছে তাদেরই ভিড়ে। চ্যাঁ-ভ্যাঁ কলরব ওঠে।

ভূপতিদা হাঁড়ির ভিতরে রাখা সেকালের খাকি জামা-প্যান্ট পরে বুকে বিবর্ণ ফিতেয় ঝোলানো ততোধিক বিবর্ণ ক’টা মেডেল লাগিয়ে হুঙ্কার ছাড়ে, ট্যানশেন !

কে শোনে কার কথা! কোনো বাচ্চা ওই শীর্ণ মানুষটার ফাটা কাঁসির মত গলার বিকট আওয়াজে চিল চিৎকার শুরু করে ভয় পেয়ে।

ক্লাবের দরমার অফিস ঘরে তখন ঢোকার উপায় নেই। কিল্লি-বিল্লিদের ভিড়। গার্জেনরাও তাঁদের শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে এসেছেন। সারা জাতিকে এবার রণকৌশলে নিপুণ করে তোলার জন্য ভূপতিদা তখন শিড়িঙ্গে হাত-পা শূন্যে ছুড়ে গর্জন করছে, লেফ্ট রাইট লেফ্‌ট রাইট—

পঞ্চপাণ্ডব ক্লাব যে জেগে আছে, একটা বিরাট কিছু করছে, সেই সাড়া পড়েছে সারা পাড়ায়। ওদিকের দু নম্বর কুলদা মিত্তির লেনের ভৈরববাবু বললেন, দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক গড়ছ হে, ক্লাবের সার্থকতা এখানেই। এবার দেখো কর্পোরেশনের ভোটে দাঁড়িয়েছি, জিতিয়ে দিলে ক্লাবকে কোথায় তুলে দেব!

হোঁৎকা ওই লোকটাকে দেখতে পারে না। সেবার ওঁর ক্লাব আমাদের জোর করে হারিয়েছিল শিল্ড ফাইনালে, আর উনিই ছিলেন রেফারি। আড়ালে হোঁৎকা বলে, ক্লাব তুইলা না দেয়। ওরে জানস না!

কিন্তু শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের রমরমা বেড়ে চলেছে। পটলা এর মধ্যে বেশ কয়েকশো টাকা খরচা করে ব্যান্ড, সাইড ড্রাম, কেটল ড্রাম, আর ডজন তিনেক বাঁশি কিনে এনেছে। রোজ বিকেলে দিগবিদিক কাঁপিয়ে ঝপ্পর ঝপ্পর শব্দে ব্যান্ড বাজে। ফটকে এর মধ্যে খান দুয়েক গানও তুলিয়েছে বাঁশরীতে। পুঁ পুঁ শব্দে বাঁশরী বাজে—আর ভূপতিদা বকের মত লম্বা পা ফেলে শূন্যে হাত-পা ছুড়ে গর্জায়, ট্যানশেন! তারপর টিফিন পর্ব। টিনখানেক থিন এরারুট বিস্কুট আর প্লাস্টিকের দু-তিন বড় প্যাকেট লজেন্স নস্যি হয়ে যায়। এরপর মেদিনী কাঁপিয়ে জাতির ভবিষ্যৎ দল ঘরে ফেরে।

পাড়ায় লোকের মুখে মুখে পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের সুখ্যাতি। দুনিয়ার ছেলেমেয়েদের ওদের গার্জেনরা এখানে রেখে যেন নিশ্চিন্ত হতে চান। সামলাবার সব ঝক্কি পঞ্চবীরের। কে কাঁদছে, কে ইয়ে করছে, কে লজেন্স খাবে। হোঁৎকা জবাব দেয়, আমি নাই! আমারে ছাড়ান দে!

গোবরাও জানায়, ছেলেবাগালি করতে পারব না। তার চে মামার আড়তে কুমড়োই বেচব হঠাৎ এমনি দিনে কাণ্ডটা বেধে যায়।

পটলা আর ভূপতিদার নেতৃত্বে শিশুমঙ্গলের ছেলেরা গেছে রাসতলার মেলায়। ড্রিল করে সার বেঁধে ভূপতিদা নিয়ে গেছে ওদের। সাংস্কৃতিক মেলা তাই জাতির ভবিষ্যৎদের দেখানো দরকার। ফটকেও গেছে। বাঁশরী বাজিয়ে ডান-বাঁ করতে করতে নৃত্যের তালে তালে গেছে ওই বাহিনী। তারপর মেলায় গিয়ে ছত্রভঙ্গ অবস্থা। কে কোথায় বাঁশি, বেলুন, চুড়ি আবার হজমি কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

শেষকালে ভূপতিদা ফুরুৎ ফুরুৎ করে বাঁশি বাজিয়ে আবার তাদের নিয়ে ফিরেছে—কিন্তু বেশ কয়েকটা ছেলেমেয়ে যে ভিড়ে পাঁপড়ভাজা খেতে ব্যস্ত তা দেখেনি। ফলে সন্ধ্যার পরই পাড়ায় হৈচৈ পড়ে যায়। এর বাড়ির ছেলে, দত্তবাড়ির দুই কিল্লি মেয়ে, দু নম্বর বাড়ির ভৈরবশঙ্করের নাতি-নাতনি, আরও অনেককে পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ খোঁজ রব ওঠে চারিদিকে। ওদিকে রাত্রি নেমেছে। কোথায় গেল ভবিষ্যতের দল !

ভৈরবশঙ্কর এখন ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তিনি তো শীতলা মন্দিরের চত্বরে দাঁড়িয়ে হাত মুঠো করে চেঁচাতে থাকেন, এসব প্রতিপক্ষের কাজ। এরা গোপনে ছেলেমেয়েদের ধরে বিদেশে পাচার করছে, না হলে কেউ বিনা পয়সায় ক্লাবের মেম্বার না করে টিফিন দেয়! ভাইসব, এমন শয়তানদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে যোগ্য নাগরিকের কর্তব্য করবেন। আমিও সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেব পাশে থেকে

খড়ের গাদায় আগুন পড়েছে। এখানকার পাবলিক সেই শুকনো খড়ের গাদা। ব্যস্ এবার ধু ধু করে জ্বলে উঠতে দেরি হয় না।

ভৈরববাবুর নজর ছিল আমাদের ক্লাবের উপর। ওঁর ক্লাবকে কোণঠাসা করে ফেলেছি। ভোটও যাবে না ওঁর দিকে। কারণ অভিভাবকবৃন্দ আর মাসিমা দিদির দল তখন আমাদের দিকে। কিন্তু ভৈরবশঙ্কর সেই হাওয়া এক দমকায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। ওই মারমুখী জনতা এবার জলস্রোতের মত এগিয়ে আসছে পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের দিকে।

গোবরা এসে খবর দেয়, কেটে পড়। হোঁৎকাও কলরব শুনে বলে, পটলা, শোন বলতেসে বিদেশে পোলাপান পাচার করস। ফুইটা যা—

যাবার পথও বন্ধ। গোবরার সাইকেলের কেরিয়ারে চাপিয়ে পটলকে পাচার করে আমরাও সরে পড়লাম। তখন জনস্রোত জলস্রোতের মত এসে আছড়ে পড়েছে ক্লাবের দরমার ঘরের উপর।

পুলিশও তৎপর হয়ে উঠেছে। খুঁজছে আমাদের। রাতভোর তখন যেন পাড়ায় লঙ্কাকাণ্ড বেধে গেছে।

আমরা প্রাণভয়ে এসে সেঁদিয়েছি খালধারে। গোবরার মামার কুমড়ো-পিঁয়াজ-আলুর আড়তে। লাটবন্দি কুমড়ো। এদিক-ওদিকে নড়লেই দু-চারটে নধর তারকেশ্বরের কুমড়ো গড়িয়ে পড়ছে মাথায় পিঠে। সেই সঙ্গে ইঁদুরের লুকোচুরিও চলেছে। আর মশা! ইয়া চড়াই পাখির মত মশাগুলো ছেঁকে ধরেছে।

ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছি। হঠাৎ খেয়াল হয় কাদের চিৎকারে। গোবরার মামা সকালে লোকজন নিয়ে গুদাম খুলে মাল বের করতে এসে অন্ধকারে কজনকে দেখে চিৎকার করে, চোর চোর !

মামার বিহারী কুলিবৃন্দও আমাদের ইতিমধ্যে দু-চার ঘা দিয়েছে। গোবরা আর্তনাদ করে কুমড়োর টালের নীচে থেকে, মামা! আমরা গো—

তখন বেশ খানিকটা চোটচাট হয়ে গেছে। পটলার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে, হোঁৎকার কপালে ইয়া আব উঠে গেছে। আমি তো চোখে সর্ষের ফুল দেখছি কুমড়োর টালে বসে ।

যখন বের করা হল তখন দেখার মত মেকআপ আমাদের। মামা বলে, এখানে! রাতভোর ছিলি তোরা!

হোঁৎকা শুধোয়, ভৈরববাবু—

মামা বলে, ওসব মিটে গেছে। খেঁদি বুচি ন্যাবা ছেলো কেন্নো বিচ্ছু ওরা সবাই তো ফিরে এসেছে রাসমেলা থেকে। যা, বাড়ি যা সব।

ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।

বাড়ির দিকে যাবার পথে ক্লাবের মাঠে দাঁড়িয়ে চমকে উঠি। পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের চিহ্নমাত্র নেই, দরমার ঘর-দরজা-বেড়া সব নিশ্চিহ্ন। পড়ে আছে কিছু ভাঙা টালি আর দোমড়ানো সাইনবোর্ড—ধুলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।

হোঁৎকার কপালের আবটা ততক্ষণে ফুলে বেগুনফুলি আমের সাইজে এসে গেছে। আমি এক কানে আচমকা ঘুষি খেয়ে শুনতেই পাচ্ছি না কোনো কথা। গোবরা ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে চলেছে। ফটিক নিরুদ্দেশ। পটলার নাক ফুলে ঢোল।

গর্জায় হোঁৎকা, ভবিষ্যৎ ভাবার মজাখান টের পাইলি পটলা! এগোর ভবিষ্যৎও অন্ধকার রে! কিছু আর করন যাইব না।

পটলার বুক চিরে হাপরের বাতাস বের হবার মত একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয় । আমাদের মনে হয় পটলার ঘাড় থেকে আর একটা ভূত নামল ।

অবশ্য ভূপতিদা ক’মাসে ওই ‘ভবিষ্যৎদের টিফিন বাবদ বিস্কুট-লজেন্স সাপ্লাই দিয়ে মোটা ‘প্রফিট’ করে এখন নাকি তীর্থভ্রমণে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *