Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নোনা গাঙ || Manisha Palmal

নোনা গাঙ || Manisha Palmal

বৃন্দাবনের আজ আনন্দের শেষ নেই। একমাত্র ছেলের বিয়ে দিয়ে মনের মত পুত্রবধূ নিয়ে এসেছে। গান বৃন্দাবনের নেশা—- তা সে কীর্তনই হোক বা লোক সংগীত। কীর্তনের নেশায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়ও। এমনই এক আসরে ও বেহুলার গান শোনে। শ্যামলা দোহারা চেহারা একমাথা কোঁকড়া চুল, মুখে একটা শান্ত মধুর শ্রী। চেহারার মতই গানের গলাটি ও খুব মিঠা। এত ভালো লাগে মেয়েটিকে যে ওই গানের দলের অধিকারীর কাছে মেয়েটির পরিচয় জানতে চায়। অনাথ বেহুলা কে মানুষ করেছে ওর মামা । মামার সংসারে দিবারাত্রি পরিশ্রম করেও মামীর মন পায় না। বৃন্দাবন ছেলের বউ করে নিয়ে আসে এই মা-বাপ মরা মেয়েটিকে। বৃন্দাবনের ছেলে মাধব মৌলি। সুন্দরবনের মধু সংগ্রহকারী। অল্প জমি আছে যার চাষে বছরের অর্ধেকেরও খোরাক জোটে না। তাই জঙ্গলে তাকে যেতেই হয়—- কখনো মধু আনতে, কখনো কাঠ, কখনো বা গোসাপ বা কাঁকড়া ধরতে। ভীষণ সাহসী ডাকাবুকো ছেলে মাধব। বেহুলার সাথে মানিয়েছেও বেশ। বেহুলা সুখা জায়গার মেয়ে। রুক্ষু টাঁড জমি ঝামাপাথর চাট্টান– এই ভূ প্রকৃতির পরিবেশে, শাল মহুয়া পলাশের বন জঙ্গল ডুঙরিটিলার সরজমিনের মানুষ। এই নোনাগাঙ, নদী সোঁতা খালের সাতনরী হার পরা অরণ্য মেখলা সরজমিনে এসে কেমন যেন দিশাহারা হয়ে পড়েছে। এখানকার মানুষদেরও লড়াই করে বাঁচতে হয়। নোনা গাঙ ,অরণ্যের জীবজন্তু আর দারিদ্র্যের সাথে। শুখা টাঁডেরও একই কাহিনী। খালি সরজমিন এর প্রকৃতির ই পার্থক্য— লড়াইটার নয়।
বেহুলা যখন শোনে–” লক্ষ্মী কাঠের জ্বালন” ও অবাক হয়ে যায়।” লক্ষ্মী কাঠ”কী? খড কে আবাদের মানুষ এই নামেই ডাকে। খড়ের জ্বালনই লক্ষ্মী কাঠের জ্বালন। মাধব বেহুলাকে আবাদের রীতিনীতি সংস্কার শেখায়। আবাদের মানুষেরা জঙ্গলে গেলে বাড়ির মেয়েরা অশৌচ পালন করে— তেল সিঁদুর ব্যবহার করে না। বাড়ির পুরুষরা বাড়ি ফিরলে তখন আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেন সকলে।
বেহুলার গানে মজে থাকে মাধব। ওনিজেও ভালো একতারা বাজায়। বাবার সাথে গানের আসরে আসরে দোহার কি করতও। ঘরের দারিদ্রতার কারণেই গান ছেড়ে পেটের ধান্দা তে মন দিয়েছে। বনই যে তার ভাতঘর। কখনো মৌলি হয়ে কখনোবা কাঠুরে বা শিকারি হয়ে বারবার ছুটে যায় সে বনে। ওই বনের সাথে তার আত্মার সম্পর্ক। মাসে একবার না গেলেই যেন মন খারাপ লাগে। নিশির ডাকের মতো সুন্দরবনের ডাক ভেতরে ভেতরে অস্থির করে তোলে মনকে। বেহুলা মাধবের মন কে বোঝে– শিল্পী যে— বলে— বনে যাবার লেগে মন কান্দে তোমার, লুনা গান যেন নিশি ডাকে– তাই না? মাধব বলে— এ ডাকযে কি তুই বুঝবি না। বেহুলা হাসে— বলে— বুঝি গো, এ যে কানাই এর বাঁশি। রাধা যে রইতে নারে ঘরে। বন তোমার কানাই, মন তোমার রাই— তাই ঘরে রইতে কষ্ট তোমার! আমারও বড় বন দেখার শখ— নিয়ে যাবে আমায়? চমকে ওঠে মাধব— বলে– চুপ কর,ওকথা বলতে নাই। ঘরের লক্ষী কখনো বন যায় না।
এবার নৌকার সাঁই চলেছে জঙ্গলে কাঠ মধু আনতে। সাঁইদার বিনোদ মাধব কে সাথি করেছে ওর গান ও সাহসের জন্য। 10 নৌকার সাঁই চলেছে জঙ্গল ধরে। রায়মঙ্গল ধরে এগিয়ে গিয়ে ডানে মোড় নিয়েছে যে সোঁতা তা ধরে এগিয়ে গেলেই একাত্তরের লাট। এই চকেই সরস সুন্দরী গাছের ভিড় ।এখানেই কাঠ কাটার জন্য নৌকার বহর নোঙ্গর করেছে। পাশাপাশি দশটা নৌকা— জালি বোট নিয়ে কূলে উঠেছে মাধব রা। বাউলী কলিম প্রথমেই ভূমি বন্ধন করে মোরগ বলি দিয়েছে বনবিবি ও দক্ষিণ রায়ের উদ্দেশ্যে। মাধব ও তার তিন সাথী মৌচাকের খোঁজে পাড় ধরে এগিয়ে গেছে। সামনে বাউলী কলিম। কলিমের পেছনে সাধন তার পেছনে মাধব। মাধবের পেছনে বেশ খানিকটা দূরে বিশু ও রঘু। রঘুর হাতে বেতের ধামা
সবার হাতেই ধারালো দা। হঠাৎ হলদে বিদ্যুতের মতো এক প্রচণ্ড হুংকারে রঘুর ওপরে লাফিয়ে পড়ে যমদূত— জঙ্গলের রাজা— আত্মরক্ষায় বেতের ধামাটা তুলে মাথা বাঁচাতে যায় রঘু—- বাঘের থাবা আটকে যায় তাতে! বাঘের হুংকারে পিছনে ফিরে মাধব সাধন ছুটে আসে— এলোপাথাড়ি দায়ের কোপ মারতে থাকে বাঘ এর উপরে— বাঘেরর দৃষ্টি এবার রঘুকে ছেড়ে মাধব ও সাধনের দিকে পড়ে। বিকট হুংকারে ধামা শুদ্ধ বা ঘুরে পড়ে মাধবের দিকে। থাবা আটকানো থাকায় ঘাড ঘুরিয়ে কামড়ানোর চেষ্টা করে। মাধবের দায়ের আঘাতে মাথায় লাগে, সাধনের আঘাত পিঠে! মৌলিদের চিৎকার বাঘের হুংকারে কাঠুরে দলের সবাই চিৎকার করতে করতে দৌড়ে আসে। বাধ্য হয়ে বাঘ পিছু হটতে থাকে। তবে যাবার সময় থাবার আঘাতে মাধবের হাতের মাংস ছিঁড়ে নিয়ে যায়। এবার সবাই আহত মাধব ও অজ্ঞান রঘুকে নিয়ে নৌকায় ফেরে— রঘুর জ্ঞান ফিরলে ও ওর কথা বন্ধ হয়ে গেছে। কেমন যেন ফেল ফেল করে দেখতে থাকে। মাধবের হাতে শক্ত করে কাপড়ের বাঁধন দেওয়া হয় যাতে রক্ত বন্ধ থাকে। এবার নৌবহর ফিরে চলে ওদের ঘাটের উদ্দেশ্যে— যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাধবকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে— কথায় বলে না বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা। মাধব মনে মনে বলে— আমি আবার আসব বড় মিয়া যুদ্ধটা যে অর্ধসমাপ্ত থেকে গেল—–
রায়মঙ্গল এর ঘাটে সাঁই ভিডলে সবাই হৈ চৈ করে ওঠে—- এখনতো ফেরার কথা নয়—- কি বিপদ ঘটল— বৃন্দাবনের মন কু ডাকে। তড়িঘড়ি ঘাটে এসেসব শুনে বেহুলা কে ডাক দেয়ও—- আয় মা তোর লক্ষিন্দর কে বাঁচাতে হবে যে চল হাসপাতালে। উদ্ভ্রান্ত বেহুলা আহত মাধব কে নিয়ে গোসাবার হাসপাতালে আসে। লোকজনেরা সাহসী মাধব কে দেখতে ভিড় জমায়। ডাক্তারবাবুরা বলেন–এ- যাত্রা খুব বেঁচে গেলে তুমি। ফেরার পথে মাধব বেহুলা কে বলে— আমাকে বাদায় যেতে হবেই বউ—- লড়াই যে আধা পড়ে রইল— বড় মিয়া কে এভাবে ছেড়ে এসেছি এ ঠিক নয়— সুস্হ হয়ে আমি যাবোই।
অবাক চোখে বেহুলা চেয়ে থাকে তার অসম সাহসী স্বামীর দিকে। ভয় ভালোবাসায় ওর বুকের মাঝে তুফান তোলে আবেগ— বোঝে আবাদের পুরুষ এমনই— উদ্দাম ভালোবাসায় এবং প্রতিশোধেও। মনে মনে নিজেকে এই আবাদের উপযুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করে বেহুলা। নোনা গাঙ্গের জলে মিশে যায় ওর চোখের জল।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress