নৈঃশব্দ
পাগলিটা গতরাতে হঠাৎ মরে গেল।দোকানদারেরা থানায় খবর দেওয়াতে পুলিশ এসে বডিটা তুলে নিয়ে গেছে।ফুটপাতের উপর ছেঁড়া বস্তা আর প্লাস্টিকের ত্রিপল, ভাঙা বাসন আর ইঁটের উনুন দিয়ে সংসার। সাথে বছর চারেকের ছেলে লাড্ডু। মানসিক রোগী নয়, একটু আপন ভোলা বলে সবাই রাধাকে পাগলি বলে ডাকে। দু- একটা দোকানে ঝাড়া মোছা করে যা পেতো মা- ছেলের পেট চলে যেত।
লাড্ডু মাঝে মাঝেই মাকে খুঁজছিল দোকানে দোকানে ।দোকানী কখনো চিপস, চকলেট দিয়ে কখনো নানাভাবে ভুলানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ । বাচ্চাটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে, রাস্তায় তো ফেলে রাখা যায়না। দিনেরবেলায় না হলে বাজার দোকানগুলো খোলা থাকে, কিন্তু রাতে! থানার ওসির পরামর্শ ও তৎপরতায় লাড্ডুকে “পথ চলা” অনাথাশ্রমে রেখে আসা হলো। লাড্ডু সময় ও পরিস্থিতিতে নিজেকে অভ্যস্ত করছে সেল্টারের অনুশাসনে। রাতে ঘুম ভেঙে গেলে চুপ করে জানালার বাইরে তারা দেখে সে। বড় দিদি বলেছে, মা’র জন্য মন কেমন করলে তারাগুলো দেখবি লাড্ডু, যেটা সবচেয়ে বড়ো আর জ্বলজ্বল করে সেই তারাটাই তোর মা। আজ লাড্ডুর জন্মদিন ছিল। সেন্টারে আসার প্রথম দিনটা এখনে জন্মদিন বলে পালন করা হয় । বড়ো একটা কেক কেটেছে সে। সব মিলে বেশ মজা হয়েছিল সন্ধ্যায় । আজ লাড্ডুর বারবার মা’কে মনে পড়ছে। মা তার জন্মদিনের দিন স্নান করে মন্দিরে নিয়ে যেত।পুজো দেওয়ার পর দোকানে বসে ওরা কচুরি আর জিলিপি খেত। লাড্ডুর জন্য স্পেশাল উপহার ছিল একটা কোল ড্রিংকস এর বোতল, মা কিনে দিত যেটা ও কয়েক ঘন্টা ধরে অল্প অল্প করে খেত । রাতে রাধা লাড্ডুর জন্য একটু মুরগির ছাট রান্না করতো। মা- ছেলে তৃপ্তির সাথে খেয়ে মা’র বুকে মুখ গুঁজে গল্প শুনতো।
আজও মাকে দেখার জন্য লাড্ডু জানালায় দাঁড়ায়। ওই জ্বলজ্বল করছে তারাটাই তো মা। নিঃশব্দে’ মা মা ‘ কয়েকবার ডাকে; বলে, ‘ মা, বড়ো দিদি বলেছে কাল আমার নতুন বাবা – মা আসবে আমাকে নিতে।তুমি কিন্তু মা আমার নতুন বাড়ির আকাশেও থেক এভাবে। হারিয়ে যেও না আর তুমি, আমার বড়ো ভয় করে মা তোমাকে দেখতে না পেলে।’