Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey » Page 60

নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey

গুপ্ত-ড্রয়ারের ভিতর হইতে সেই কণ্ঠহার বাহির হইতে দেখিয়া জোহেরার মুখে কথা নাই-হরিপ্রসন্ন বাবুর মুখেও কথা নাই-দেবেন্দ্রবিজয়ও বিস্ময়-স্তম্ভিত। সর্ব্বপ্রথমে দেবেন্দ্রবিজয় নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিলেন। জোহেরাকে বলিলেন, “দেখুন দেখি, সেই সেই কণ্ঠহার কি না; আপনি যেরূপ বর্ণনা করিয়াছিলেন, তাহাতে ইহা যে সেই সৃজান বিবির কণ্ঠহার, দেখিয়া বেশ বুঝা যাইতেছে; এই যে মাঝখানে হীরার একখানা বড় ধুক্ধুকিও রহিয়াছে।”
জোহেরা কম্পিতকণ্ঠে কহিল, “হাঁ, এই সেই কণ্ঠহার; কিন্তু-কিন্তু-এ তীরের ফলা-ইহা ত কখনও আমি দেখি নাই।” বলিয়া জোহেরা তাহা ড্রয়ারের মধ্য হইতে তুলিয়া লইল।
জোহেরার হাত হইতে সেই তীরের ফলা লইয়া উকীল হরিপ্রসন্ন বাবু উল্টাইয়া দেখিতে লাগিলেন, “তাই ত এ তীরের ফলা কোথা হইতে আসিল? খুব ধারাল দেখিতেছি।”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “খুব সাবধান, হরিপ্রসন্ন বাবু! ধার পরীক্ষা করিতে চেষ্টা করিবেন না। এখনই বিপদ্ ঘটিয়া যাইবে – বড় সাংঘতিক – দেখিতেছেন না, ইহা বিষাক্ত?”
“বিষাক্ত!’ বলিয়া সভয়ে হরিপ্রসন্ন বাবু সেই তীরের ফলাটা ড্রয়ারের মধ্যে ফেলিয়া দিলেন। বলিলেন, “কিরূপে আপনি বুঝিতে পারিলেন, ইহা বিষাক্ত?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “নিশ্চয়ই বিষাক্ত! পূর্ব্বে আমাদের ভুল হইয়াছিল; সেই ছুরিতে সৃজান বিবি খুন হয় নাই। আমি এখন ঠিক বুঝিতে পারিতেছি, এই তীরের ফলা দিয়া সৃজান বিবিকে খুন করা হইয়াছে।”
জোহেরা হতাশভাবে বলিল, “মহাশয়, তবে কি আপনি এখন মুন্সী সাহেবকেই দোষী স্থির করিতেছেন?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “হাঁ, নিজের পত্নীর অসচ্চরিত্রতার কথা তাঁহার অনবগত ছিল না। সৃজান বিবি মনিরুদ্দীনের সঙ্গে গৃহত্যাগ করিবার যে বন্দোবস্ত করিয়াছিল, তাহাও তিনি সেদিন কোন রকমে জানিতে পারিয়া থাকিবেন। সেই খুনের রাত্রিতে তিনি যে গোপনে স্ত্রীর অনুসরণ করিয়া মেহেদী-বাগানের দিকে গিয়াছিলেন. তাহা মনিরুদ্দীন দেখিয়াছিলেন। আর একজন – মজিদ খাঁ, তিনিও মুন্সী সাহেবকে পথের ধারে একটা আলোক-স্তম্ভের নীচে দাঁড়াইয়া সৃজান বিবির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা করিতে করিতে তাহার গলদেশ হইতে একছড়া কণ্ঠহার ছিনাইয়া লইতে দেখিয়াছেন। তখনই সৃজান বিবি মেহেদী-বাগানের দিকে ছুটিয়া পালাইয়া যায়-মুন্সী সাহেবও তাহার অনুসরণ করেন। তাহার পর যখন সেই মেহেদী-বাগানে সৃজান বিবির লাস পাওয়া যাইতেছে, তখন মুন্সী সাহেবই দোষী। বিশেষতঃ মুন্সী সাহেব ভিন্ন আর কেহই এ গুপ্ত ড্রয়ারের বিষয় জানে না, আর সৃজান বিবি যদিও জানিত, সে এখন জীবিত নাই; অথচ যখন এই ড্রয়ারের মধ্যে সৃজান বিবির খুনের প্রধান নিদর্শন স্বরূপ এই কণ্ঠহার আর তীরের ফলা পাওয়া যাইতেছে, তখন মুন্সী সাহেবই ইহা এইখানে লুকাইয়া রাখিয়াছেন। নিশ্চয়ই তিনি স্ত্রীহন্তা!”
হরিপ্রসন্ন বাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন আপনি কি করিবেন?”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “এখন এই কণ্ঠহার আর তীরের ফলা গুপ্ত-ড্রয়ারের ভিতরেই রাখিয়া দিয়া মুন্সী সাহেবের অপেক্ষায় বসিয়া থাকিব। তিনি আসিলে প্রথমতঃ তাঁহাকে খুন সম্বন্ধে যাহা জিজ্ঞাসা করিবার, তাহা করিব। অবশ্যই তিনি অস্বীকার করিবেন; তখন এইগুলি সহসা তাঁহার চোখের সাম্নে ধরিয়া দিলে তিনি মহা গোলমালে পড়িয়া আত্মদোষক্ষালনের কোন উপায়ই পাইবেন না।”
জোহেরা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া মুখ নত করিল। জোহেরা বুঝিল, তাহার আর এক নূতন বিপদ্ উপস্থিত! এক্ষণে ঘটনা যেরূপ দাঁড়াইতেছে, তাহাতে মজিদ খাঁ মুক্তি পাইবেন বটে; কিন্তু তাহার অভিভাবক মুন্সী সাহেবের বিপদ্ বড়ই গুরুতর হইয়া উঠিতেছে। জোহেরা মনে অত্যন্ত ব্যথা লাগিল। বলিল, “যদি সৃজান বিবির স্বভাব ভাল হইত, তাহা হইলে আমাদের আজ এমন সর্ব্বনাশ হইত না!”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “সকলের স্বভাব যদি ভাল হইত, তাহা হইলে আমাদের কাজ চলে কৈ? হাত-পা গুটাইয়া বেকার বসিয়া থাকিতে হয়।”
অনন্তর দেবেন্দ্রবিজয় এই গুপ্ত-ড্রয়ারটা কিরূপে খোলা ও বন্ধ করা যায়, পরীক্ষা করিয়া দেখিয়া তন্মধ্যে হীরার কণ্ঠহার ও বিষাক্ত তীরের ফলাটা রাখিয়া বন্ধ করিয়া দিলেন।
এমন সময়ে বাহিরের সোপানে কাহার পদশব্দ হইল। পরে কণ্ঠস্বরও শুনা গেল। স্বর শুনিয়া জোহেরা বুঝিতে পারিল, মোবারক। বলিল, “মোবারক বিবাহের প্রস্তাব লইয়া মুন্সী সাহেবের সহিত দেখা করিতে আসিতেছেন; বোধ হয়, এই ঘরেই আসিবেন। আমি তাঁহার সহিত দেখা করিতে চহি না – আপনারা বসুন – আমি বাড়ীর ভিতরে যাই।” বলিয়া জোহেরা গমনোদ্যতভাবে ফিরিয়া দাঁড়াইল।
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “তাই ত, এমন সময়ে আবার মোবারক আসিয়া উপস্থিত। আমি মুন্সী সাহেবের সঙ্গে একাকী দেখা করিব মনে করিয়াছিলাম। আমারও এখন একবার অন্য একটা ঘরে গিয়া বসিলে সুবিধা হয়।”
জোহেরা বলিল, “এই পাশের ঘরে আপনারা উভয়ে বসিতে পারেন। মোবারক চলিয়া গেলে আপনারা মুন্সী সাহেবের সঙ্গে দেখা করিবেন।” এই বলিয়া জোহেরা পার্শ্ববর্ত্তী কক্ষের-দ্বার সম্মুখস্থ পর্দ্দাখানা সরাইয়া দিল। সকলে পার্শ্ববর্ত্তী প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করিলে জোহেরা ভিতরে গিয়া পর্দ্দা টানিয়া দিল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress