Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey » Page 52

নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey

দেবেন্দ্রবিজয় জানিতেন, যাঁহার পরামর্শ লইতে আসিয়াছেন তিনি একজন দৈবশক্তিসম্পন্ন মহানিপুণ ব্যক্তি। তিনি যাহা বলেন, কদাচ তাহার ব্যতিক্রম হইতে দেখা যায় না। তথাপি দেবেন্দ্রবিজয় তাঁহার এই কথায় আস্থা স্থাপন করিতে পারিলেন না। ভাবিলেন, এক-এক বার সকলেরই ভুল হয়, ইনি হয়ত এবার ঠিক মীমাংসায় উপনীত হইতে পারেন নাই। দেবেন্দ্রবিজয়ের মুখ অপ্রসন্নভাব ধারণ করিল।
তাহা অরিন্দম বাবুর লক্ষ্য এড়াইল না। তিনি দেবেন্দ্রবিজয়ের মুখে সেই মনের কথাগুলি স্বহস্তস্থিত লিপির ন্যায় পাঠ করিলেন। বুঝিতে পারিলেন, তাঁহার কথাটা দেবেন্দ্রবিজয় বিশ্বাস করিতে পারিতেছেন না; কিছু বলিলেন না।
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “আপনার এ অনুমান কি ঠিক? মনিরুদ্দীন কি এ খুন সম্বন্ধে কিছুই জানে না?”
অরিন্দম বাবু বলিলেন, “খুব ঠিক, মনিরুদ্দীন তোমার মত একান্ত নির্দ্দোষ-এমন কি খুন সম্বন্ধে তুমি আমি যতটা জানি, সে নিজে এতটা খবর রাখে না।”
দেবেন্দ্রবিজয় জিজ্ঞাসা করিলেন, “কিসে আপনি এরূপ কৃতনিশ্চয় হইতেছেন, বুঝিতে পারিলাম না।”
অরিন্দম বাবু বলিলেন, “এই হত্যাকাণ্ড সম্বন্ধে যাহা কিছু তোমার মুখে আমি শুনিয়াছি, তাহা যদি অপ্রকৃত না হয়, আমার অনুমানও অপ্রকৃত হইবে না। আমার খুবই মনে হয়, মোবারক ইহার ভিতরকার অনেক কথা জানে, এমন কি সে হত্যাকারীরও খবর রাখে।”
দেবেন্দ্রবিজয় জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমার ত তাহা বোধ হয় না। কেন সে তাহা গোপন করিতে যাইবে?”
একান্ত হতাশভাবে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া অরিন্দম বাবু বলিলেন, “এতদিন গোয়েন্দাগিরি করিয়া যে, তুমি নির্ব্বোধের মত এমন একটা প্রশ্ন করিবে, তাহা আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই। তোমাকে দেখিয়া আমি মনে করিয়াছিলাম, আমি মরিলেও একজন যোগ্য ব্যক্তি আমার আসন অধিকার করিতে পারিবে-কি মহাভ্রম আমার। তুমিই নিজেই মনে মনে একবার ভাল করিয়া ভাবিয়া দেখ দেখি, তোমার এই প্রশ্নটা কতটা নির্ব্বোধের মত হইয়াছে। ভাল, আমিই না হয়, তোমাকে দুই-একটা কথা বুঝাইয়া দিতেছি। মনে কর, তুমি একটা খুন করিয়াছ, তোমার কোন বন্ধু তোমাকে খুন করিতে দেখিয়াছে, এরূপ স্থলে সে কি তোমার বিরুদ্ধে কোন কথা প্রকাশ করিতে পারে?” কথাগুলি অরিন্দম বাবু অত্যন্ত বেগের সহিত বলিলেন।
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “না, মোবারকের তেমন কোন উদ্দেশ্য নাই। তাহা হইলে সে কখনও তাহার বন্ধু মজিদ খাঁর নাম প্রকাশ করিত না।”
অরিন্দম বাবু বলিলেন, “আমিও যে তাহা না বুঝি, তাহা নহে; আর সেই খুনটা যদি মজিদ খাঁ নামক কোন বন্ধুর দ্বারা না হইয়া, তাহার অন্য কোন শত্রুর দ্বারা হইয়া থাকে?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “শত্রু হইলে ত কোন কথাই নাই; তাহা হইলে ত মোবারক তাহাকে তখনই পুলিসের হাতে ধরাইয়া দিত।”
অরিন্দম বাবু জিজ্ঞাসিলেন, “আর যদি মোবারক তোমার মত নির্ব্বোধ না হয়?”
অরিন্দম বাবুর এইরূপ প্রশ্নে দেবেন্দ্রবিজয় মনে মনে অত্যন্ত রুষ্ট হইলেন, মুখে কিছু বলিলেন না। কিছু না বলিলেও অরিন্দম বাবু তাহা বেশ বুঝিতে পারিলেন। বলিলেন, “দেখ দাদা, এ বৃদ্ধের কথায় রাগ করিয়ো না-রাগ করিলে ‘গৃহের অন্ন অধিক পরিমাণে ভক্ষণ করা’ ভিন্ন আর কোন বিশেষ ফললাভ করিতে পারিবে না। মোবারক যদি তাহার কোন শত্রুকে খুন করিতে দেখিয়া থাকে, আর সে যদি নিজে তোমার মত নির্ব্বোধ না হইয়া বেশ বুদ্ধিমান্ হয়, তাহা হইলে সে সেই হত্যাকারীর নাম প্রকাশ করিতে না পারে; বরং সে সময়ে সেই শত্রুকে পুলিসের হাত হইতে রক্ষা করিবার জন্য সে তাহার সাহায্যও করিতে পারে। কোন প্রবল শত্রুকে নিজের মুঠার ভিতরে রাখিবার ইহাই ত প্রকৃষ্ট উপায়। সময়ে সেই শত্রুর নিকট হইতে অনেক কাজ আদায় হইতে পারে। শত্রু হ’ক্, আর মিত্র হ’ক্, মোবারক হত্যাকারীকে নিশ্চয় জানে, কোন একটা কারণে সে তাহা এখন চাপিয়া যাইবার চেষ্টা করিতেছে। তাহাকে কূট-প্রশ্নের অগ্নি-পরীক্ষায় না ফেলিতে পারিলে ভিতরের কোন কথাই তুমি কখনও তাহার মুখ হইতে বাহির করিতে পারিবে না।” এই বলিয়া অরিন্দম বাবু বিষম উদ্বেগের সহিত ঘন ঘন উভয় করতল নিষ্পীড়ন করিতে লাগিলেন।
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “ভাল, এইবার আমি আপনার পরামর্শ মত কাজ করিব।”
অরিন্দম বাবু বলিলেন, “এখন তুমি কিরূপে কাজ হাসিল্ করিবে, বল দেখি?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “এখনও কিছু ঠিক করিতে পারি নাই। ঠিক করিবার পূর্ব্বে আপনার কথাগুলি আমাকে আরও একবার ভাল করিয়া ভাবিয়া দেখিতে হইবে।”
অরিন্দম বাবু বলিলেন, “হাঁ, আগে ভাবিয়া-চিন্তিয়া পরে কাজে হাত দেওয়াই ঠিক; নতুবা অনেক সময়ে পরিশ্রম সার হয়। এবার বিশেষ বিবেচনার পর এমন একটা সূত্র অবলম্বন করিবে, যাহা অবলম্বনে প্রকৃত স্থানে উপনীত হইতে পার। অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়িলে কি হইবে? যাহা হউক, তুমি ইহার মধ্যে যে দুই-তিনটা মস্ত ভুল করিয়া ফেলিয়াছ, তাহা আমি দেখাইয়া দেতেছি। একটু বুঝিয়া চলিলে এতদিন সর্ব্বতোভাবে এ রহস্য ভেদ হইয়া যাইত।”
দেবেন্দ্রবিজয় কি বলেন শুনিবার জন্য অরিন্দম বাবু ক্ষনকাল নীরবে রহিলেন। দেবেন্দ্রবিজয় মৌন হইয়া রহিলেন, কোন কথা কহিলেন না। মনে করিলেন, অবশ্যই আমি কোন বিষয়ে বড় ভুল করিয়া থাকিব; নতুবা ইনি এ কথা এত জোরের সহিত বলিবেন কেন?
অরিন্দম বাবুর নিকটে ‘ভাবা’ ও ‘বলা’ একই কথা। তিনি দেবেন্দ্রবিজয়ের মনোভাব বুঝিতে পারিয়া তাঁহার উপরে বড় সন্তুষ্ট হইলেন। বলিলেন, “প্রথমেই তুমি সেই ছুরিখানা লইয়া খুব একটা অবিবেচকের মত কাজ করিয়া ফেলিয়াছ। মজিদ খাঁ যদি খু করিয়াই থাকিবে, তাহা হইলে কেন সে সেই হত্যাকাণ্ডের সাঙ্ঘাতিক প্রমাণ স্বরূপ সেই ছুরিখানা নিজের ঘরে লুকাইয়া রাখিতে যাইবে? সে অনায়াসে সেইখানে ফেলিয়া আসিতে পারে। সে ছুরি মজিদ খাঁর নিজের নহে যে, সেখানে ফেলিয়া আসিলে তাহার কোন বিপদের সম্ভাবনা ছিল। লাসের পাশে ঐ ছুরিখানি পড়িয়া থাকিলে কেহই এমন সন্দেহ করিতে পারিত না যে, মজিদ খাঁর দ্বারা এই খুনটা হইয়াছে। মজিদ খাঁর নিজের ছুরি হইলে অবশ্যই সে তাহা গোপন করিবার চেষ্টা করিত। এখন তোমার এই প্রথম ভ্রমটা বুঝিতে পারিলে কি?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “তখন আমি ইহা ভাবিয়া দেখি নাই; অবস্থাগত প্রমাণের উপরে নির্ভর করিয়াই আমি অগ্রসর হইতেছিলাম।”
বর্ষণোম্মুখ মেঘের ন্যায় মুখখানা গম্ভীর করিয়া অরিন্দম বাবু বলিলেন, “ইহার নাম অগ্রসর নহে, বরং ক্রমশঃ হটিয়া আসা। আমি হইলে কখনই সেই ছুরিখানার উপরে এতটা পরিশ্রম করিতে রাজী হইতাম না। তাহার পর দ্বিতীয়তঃ হত্যাকারীর সেই বেনামী-পত্র। হাতে-পায়ে সূতা বাঁধিয়া, যেমন করিয়া লোকে পুতুল নাচায়, হত্যাকারীও এই বেনামী-পত্রে তোমাকে সেই রকম করিয়া নাচাইয়া লইয়া বেড়াইয়াছে। যে অভিপ্রায়ে সে তোমাকে পত্র লিখিয়াছিল, তুমি এমনই আস্ত হনূমান্, যে ঠিক তাহার মতলব মত কাজই করিয়াছ।”
দেবেন্দ্রবিজয় মহা অপরাধীর ন্যায় কহিলেন, “এখন আমি তাহা বেশ বুঝিতে পারিতেছি; কিন্তু এরূপ স্থলে ইহা ভিন্ন আর কি উপায় করা যাইতে পারে?”
বৃদ্ধ অরিন্দম বাবু সহসা স্পিরিটের মত যেন দপ্ করিয়া জ্বলিয়া উঠিলেন। কহিলেন, “কি সর্ব্বনাশ! এখনও তুমি বলিতেছ, আর কি উপায় করা যাইতে পারে। এই বুদ্ধি লইয়া তুমি ডিটেক্টিভগিরি করিতে চাও? গোয়েন্দাদিগকে কত প্রতিকূল ঘটনার মধ্য দিয়া কার্য্যোদ্ধারের দিকে অগ্রসর হইতে হয়, সে সম্বন্ধে তোমার কিছুমাত্র অভিজ্ঞতা হয় নাই, দেখিতেছি। যদি হত্যাকারীকে জানিবার ইচ্ছা এতটা প্রবল হইয়াছিল, তখন নিজে একটা ছদ্মবেশ ধরিয়া সেই গোলদিঘীতে গেলে কোন গোল ছিল না, সহজে কার্য্যোদ্ধারও হইত।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress