Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey » Page 42

নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey

আরও বিস্ময়-একি ব্যাপার-দিলজান জীবিতা-কি ভয়ানক ভ্রম! বিস্ময়বিহ্বলচিত্তে নিনির্মেষনেত্রে দিলজানের মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন। সহসা কেহ কিছু বলিতে পারিলেন না।
রমণী তাঁহাদিগকে অবাঙ্মুখে তাহার দিকে চাহিতে দেখিয়া বিস্মিত হইল। মৃদুকণ্ঠে বলিল, “আপনাদের কি প্রয়োজন, মহাশয়? বোধ করি, মল্লিক সাহেবের সহিত দেখা করিতে আসিয়াছেন; তিনি ত এখন এখানে নাই।”
দেবেন্দ্রবিজয় কতকটা প্রকৃতিস্থ হইয়া বলিলেন, “না, আমরা আপনার সঙ্গেই দেখা করিতে আসিয়াছি।”
রমণী সবিস্ময়ে বলিল, “আমার সঙ্গে! কেন? কই আপনাদিগের কাহাকেও আমি ত চিনি না!”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “না চিনিতে পারেন। ঠিক আপনার সঙ্গে দেখা করিতে আসি নাই-আপনার পরিবর্ত্তে আমরা এখানে সৃজান বিবিকেই দেখিতে পাইব, মনে করিয়াছিলাম।”
সৃজান বিবির নাম শুনিয়া দিলজান একবার ঘৃণার হাসি হাসিয়া বলিল বলিল, “এত্ক্ষনে আমি আপনাদের অভিপ্রায় বুঝিতে পারিলাম। আপনারা মনে করিয়াছিলেন, মল্লিক সাহেব সৃজানকে গৃহের বাহির করিয়া আনিয়া এখানে রাখিয়াছেন। সেই ইচ্ছাটা তাঁহার ছিল বটে, কিন্তু আমি তাহা ঘটিত দিই নাই। আমি মাঝে পড়িয়া সেদিন রাত্রিতে সব গোল বাধাইয়া দিয়াছি।”
হরিপ্রসন বাবু বলিলেন, “সেদিন রাত্রিতে তুমি সৃজানের সহিত দেখা করিতে গিয়াছিলে, তাহা আমরা জানিতে পারিয়াছি। তোমার সহিত তাঁহার কি কথা হইয়াছিল?”
দিলজান বলিল, “অনেক কথা হইয়াছিল। আপনারা কে, কেনই বা আমাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করিতেছেন, তাহা জানিতে না পারিলে আমি সে কথা আপনাদিগের নিকটে প্রকাশ করিতে পারি না।”
হরিপ্রসন্ন বাবু বলিলেন, “আমাদের নাম বোধ হয়, তুমি শুনিয়া থাকিবে। আমার নাম হরিপ্রসন্ন-আমি উকীল, ইনি দেবেন্দ্রবিজয়-ডিটেক্টিভ-পুলিসের একজন নামজাদা কর্ম্মচারী-”
“আর আমার নাম মুন্সী জোহিরুদ্দীন,” বলিয়া মুন্সী সাহেব নিকটবর্ত্তী একটা আসন গ্রহণ করিলেন।
দিল। (সবিস্ময়ে) আপনি-আপনি মুন্সী সাহেব।
দেবেন্দ্র। হাঁ-ইনি তোমার ভগিনীপতি।
দিল। সৃজান যে আমার সহোদরা, কিরূপে আপনি তাহা জানিতে পারিলেন?
দেবেন্দ্র। অনেক অনুসন্ধানের পর জানিয়াছি।
দিল। কে আপনাকে বলিল?
দেবেন্দ্র। তোমার পিতা-মুন্সী মোজাম হোসেন।
দিল। (বিবর্ণমুখে) আমার পিতা! সেখানেও আপনি গিয়াছিলেন।
দেবেন্দ্র। গিয়াছিলাম বৈ কি! কোন জায়গাই বাকী রাখি নাই; নতুবা জানিতে পারিব কিরূপে?
দিল। তাহ হইলে আমার আর আমার ভগিনী সম্বন্ধে সকলি ত আপনি জানিতে পারিয়াছেন; তবে আমাকে আবার কি জিজ্ঞাসা করিতে চাহেন?
দেবেন্দ্র। তোমার ভগিনী সম্বন্ধে আমরা একটি কথা জানিতে পারি নাই।
দিল। কোন্ বিষয়ে, বলুন?
দেবেন্দ্র। তাহার হত্যা বিষয়ে।
দিলজান বজ্রাহতের ন্যায় চকিত হইয়া উঠিল; তীব্রকণ্ঠে বলিল, “কি ভয়ানক! হত্যা-হত্যা! কি সর্বনাশ! কাহার কথা আপনি বলিতেছেন?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “যেদিন রাত্রিতে মনিরুদ্দীনের সহিত সৃজানের গৃহত্যাগ করিবার কথা, সেইদিন রাত্রিতে মেহেদী-বাগানে একটা স্ত্রীলোকের লাস পাওয়া যায়। আমরা প্রথমে তাহা তোমারই মৃতদেহ মনে করিয়া-ছিলাম; এখন দেখিতেছি, আমাদের সে অনুমান মিথ্যা-সে মৃতদেহ সৃজান বিবির।”
“আমার স্ত্রী! কি মুস্কিল- হা ঈশ্বর, শেষে এই করিলে!” বলিয়া মুন্সী সাহেব একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া অত্যন্ত কাতরভাবে অন্যদিকে মুখ ফিরাইলেন।
দিলজান শুনিয়া, সেইখানে ব্যাকুলভাবে বসিয়া পড়িল। কাতরকণ্ঠে বলিল, “কি ভয়ানক! সৃজান নাই-খুন হইয়াছে-খুন! কে তাহাকে খুন করিল?”
হরিপ্রসন্ন বাবু বলিলেন, “জানা যায় নাই; তাহাই এখন আমাদিগকে সন্ধান করিয়া দেখিতে হইবে।”
দিলজান চিন্তিতভাবে বলিতে লাগিল, “তার কে এমন ভয়ানক শত্রু ছিল, আমি ত কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না; আপনারা কি কিছু ঠাহর করিতে পারিয়াছেন? ভাল কথা, আপনারা সৃজানের মৃতদেহ দেখিয়া আমি খুন হইয়াছি, এরূপ মনে করিয়াছিলেন কেন?”
দে। সেদিন তুমি যে কাপড়-চোপড় পরিয়া বাহির হইয়াছিলে, সৃজানের মৃতদেহে আমরা তাহা দেখিয়াছিলাম।
দিল। হাঁ, তাহাই ত বটে-এতক্ষণে আমি সব বুঝিতে পারিয়াছি, ঠিক হইয়াছে।
দে। তুমি সেদিন রাত্রিতে তোমার ভগিনীকে কোথায় শেষ-জীবিত দেখিয়াছ?
দিল। তাহার বাড়ীতে।
দে। কখ্ন তুমি চলিয়া এস?
দিল। রাত দুইটার পর।
দে। এত রাত্রি পর্য্যন্ত তোমার ভগিনীর সহিত তুমি কি করিতেছিলে? কি এত কথা ছিল?
দিল। কথা যাহা ছিল, তাহা অনেকক্ষণ শেষ হইয়া গিয়াছিল। রাত এগারটার পর সৃজান বাহির হইয়া যায়। আমি তাহার জন্য দুইটা পর্য্যন্ত তাহাদের বাড়ীতে অপেক্ষা করিয়াছিলাম।
দেবেন্দ্রবিজয়ের দৃষ্টিপথ হইতে যেন একখানা মেঘ সরিয়া গেল। তিনি ব্যগ্রভাবে বলিলেন, “ওঃ! সকলই বুঝিতে পারিয়াছি-পাছে কেহ জানিতে পারে, এই ভয়ে সৃজান তোমার বেশ ধরিয়া বাহির হইয়া গিয়াছিল।”
দিলজান বলিল, “হাঁ-সে মনিরুদ্দীনের সঙ্গে দেখা করিতে গিয়াছিল; তাহার পর তাহাকে আর আমি ফিরিতে দেখি নাই-রাত দুইটা পর্য্যন্ত আমি অপেক্ষা করিয়াছিলাম।”
হরিপ্রসন্ন বাবু খুব উৎসাহের সহিত বলিয়া উঠিলেন, “আমার অনুমানই ঠিক, রাত বারটার সময়ে যে স্ত্রীলোকের সহিত মজিদ খাঁর দেখা হইয়াছিল-সে নিশ্চয়ই সৃজান।”
দিলজান বলিল, “মজিদ খাঁ-মজিদ খাঁ-তাঁহাকে আমি চিনি, তিনি ইহার কি জানেন?”
হরিপ্রসন্ন বাবু বলিলেন, “তিনি বিশেষ কিছু না জানিলেও-এখন তাঁহার মাথার উপরেই এই সকল বিপদ্ চাপিয়া পড়িয়াছে। দিলজানের হত্যাপরাধে অভিযুক্ত হইয়া তিনি অবস্থা-বিপাকে এখন হাজত-বন্দী।”
দিলজান বলিল, “আপনারা আমার ভগিনীর মৃতদেহ দেখিয়া মনে করিয়াছিলেন, আমি খুন হইয়াছি-কি ভয়ানক ভ্রম! কিন্তু মজিদ খাঁ-তিনি নিরীহ ভাল মানুষ; আমি তাঁহাকে জানি। তিনি কেন খুন করিতে-(সহসা বাধাপ্রাপ্ত হইয়া) কি জানি আমি কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না-আমি যতদূর-
মধ্যপথে বাধা দিয়া মুন্সী সাহেব বলিলেন, “শোন, দিলজান, এখন কিছুই জানি না বলিলে চলিবে না। একজন নিরীহ ভদ্রলোক আজ বিপদ্গ্রস্ত-ভয়ানক বিপদ্-এমন কি তাহার প্রাণও যাইতে পারে; এ সময়ে তুমি কোন কথা গোপন করিবার চেষ্টা করিয়ো না। তোমার ভগিনীর সহিত তোমার কি কি কথা হইয়াছিল; অকপটে সমুদয় প্রকাশ কর।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *