Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey » Page 24

নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey

দেবেন্দ্রবিজয়ের যখন জ্ঞান হইল, তখন রাত্রি শেষ হইয়া আসিয়াছে। তিনি হস্তপদাদি-বিক্ষেপপূর্ব্বক চক্ষুরন্মীলন করিবামাত্র দুইটা শৃগাল তাঁহার মুখের নিকট হইতে সভয়ে দূরে পলাইয়া গেল। দেবেন্দ্রবিজয় ধীরে ধীরে উঠিয়া বসিলেন। দারুণ আঘাতে তাঁহার মস্তকের একস্থানে কাটিয়া গিয়াছিল;এবং রক্তে তাঁহাদের পরিধেয় বস্ত্রাদি ভিজিয়া গিয়াছিল।
দেবেন্দ্রবিজয় দেখিলেন, সারারাত তিনি অজ্ঞান অবস্থায় একান্ত নিঃসহায়ভাবে একা পথিমধ্যে পড়িয়া আছেন। সুযোগ বুঝিয়া শৃগাল কুক্কুর দন্তনখরসংযোগে যে এখনও তাঁহার দেহের মাংস কাটিয়া খণ্ড-বিখণ্ড করিয়া দেয় নাই, সেজন্য তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করিলেন, এবং ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন।
এদিকে রাত্রি শেষ হইয়া আসিয়াছে। ঊষার রক্তরাগ তখনও পূর্ব্বাকাশে অনুরঞ্জিত করে নাই। পাখীরা জাগিয়া, কুলায়ে বসিয়া কূজন আরম্ভ করিয়াছে। এবং ঊষার স্নিগ্ধবাতাস বহিয়া আসিয়া দেবেন্দ্রবিজয়ের ললাট স্পর্শ করিতেছে। তখনও দেবেন্দ্রবিজয়ের মাথা ঘুরিতেছে-শরীর একান্ত দুর্ব্বল। তাঁহার মনে পড়িল, তিনি মূর্চ্ছিত হইবার পূর্ব্বমুহূর্ত্তে একজন পাহারাওয়ালাকে উদ্যত বংশযষ্টি হস্তে দাঁড়াইয়া থাকিতে দেখিয়াছিলেন। তাহারই উদ্যত বংশদণ্ড মস্তকে নিপতিত হওয়ায় তাঁহার যে এই দুর্দ্দশা ঘটিয়াছে, তাহা নিশ্চিত; কিন্তু একজন পাহারাওয়ালা যে কেন তাঁহার প্রতি এমন সদ্ব্যবহার(?) করিল, ইহার মর্ম্মগ্রহণ তাঁহার অত্যন্ত কঠিন বোধ হইল। একবার ভাবিলেন, অর্থলোভে সামান্য বেতনভোগী পাহারাওয়ালাদিগের মধ্যে কেহ কেহ এরূপে অর্থসঞ্চয় করিতে পারে। দেবেন্দ্রবিজয় জামার পকেটে হাত দিলেন। তাঁহার যে কয়েকটি টাকা সঙ্গে ছিল, তাহা যথাস্থানেই রহিয়াছে; অঙ্গুলির দিকে দৃষ্টি করিলেন, হীরার আংটীটাও যথাস্থানে রহিয়াছে; এ পর্য্যন্ত কেহ তাহা খুলিয়া লয় নাই। বুক-পকেটে দুইখানি দশ টাকার নোট ছিল. দেবেন্দ্রবিজয় তাহাও টানিয়া বাহির করিয়া দেখিলেন। সেই নোট দুখানির সঙ্গে আর একখানি কাগজ দেখিতে পাইলেন; রাত্রিশেষের অস্পষ্টালোকে তিনি বুঝিতে পারিলেন না, সেখানি কি কাগজ! পকেট হইতে দিয়াশলাই-কাঠি বাহির করিয়া জ্বালিয়া দেখিলেন, একখানি পত্র। পত্রখানি খুব দ্রুতহস্তে উড্পেন্সিলে লেখা।
দেবেন্দ্রবিজয় দিয়াশলাই-কাঠি জ্বালিয়া জ্বালিয়া পত্রখানি পড়িয়া শেষ করিতে লাগিলেন;-
“দেবেন্দ্রবিজয়!
আজ তোমাকে একটু শিক্ষা দিলাম। যদি ইহাতেও তোমার আক্কেল না হয়, আবার একদিন আমার হাতে এমন শিক্ষা পাইবে, যাহা তুমি সারাজীবন ভুলিতে পারিবে না।
তুমি এখন অজ্ঞান হইয়া আমার পায়ের কাছে লুটাইয়া পড়িয়াছ। মনে করিলে আমি এখনই তোমার লীলাখেলা একেবারে শেষ করিয়া দিতে পারি; তোমার দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করিয়া কুক্কুর শৃগালের ভোজনেরও সুবন্দোবস্ত করিতে পারি। অনুগ্রহ করিয়া তাহা করিলাম না, এরূপ মনে করিও না-তোমার মত একটা নির্ব্বোধ গোয়েন্দাকে খুন করিয়া আমার মত ব্যক্তির লাভ কি?
তুমি মনে করিয়াছিলে, সহজেই আমার হাতে হাতকড়ি লাগাইবে। কি স্পর্দ্ধা তোমার ! আমাকে তেমন নিরীহ ভালমানুষটি পাও নাই। তুমি বেড়াও ডালে ডালে, আমি বেড়াই পাতায় পাতায়-আমি তোমাকে আমার যোগ্য-প্রতিদ্বন্দ্বী বোধ করি না, তোমাকে আমি ক্ষুদ্র-কীটাণুকীট মনে করি। যখনই আমি মনে করিব, তখনই তোমাকে পদদলিত করিয়া মারিতে পারিব; কিন্তু সে ইচ্ছা আমার আদৌ নাই। তাহা না হইলে তোমার নাম এতদিন কোন্কালে এ জগতের জীবিত-মনুষ্যের তালিকা হইতে একেবারে মুছিয়া যাইত। তবে তুমি একান্তই বাড়াবাড়ি করিয়া তুলিয়াছিলে বলিয়া, তোমার মত রাস্কেলকে কিছু শিক্ষা দেওয়া গেল।
আমি ত পূর্ব্বেই বলিয়াছিলাম, আমার সহিত তুমি কিছুতেই পারিয়া উঠিবে না। তুমি আমাকে ধরিবার জন্য যে ফাঁদ পাতিয়াছিলে, তাহা আমি পূর্ব্বেই জানিতে পারিয়াছিলাম। আমার সঙ্গে “পাল্লা” দেওয়া তোমার মত অর্ব্বাচীনের কর্ম্ম নহে। তোমার মত নিরেট বোকা এ দুনিয়ায় দু’টী নাই। আমি ইচ্ছা করিয়া তোমার সম্মুখে গেলাম, তোমার সহিত কথা কহিলাম, তুমি আমাকে গোয়েন্দার চিহ্ণ দেখাইয়া তোমার সাহায্য করিবার লম্বা হুকুম জারী করিলে; কই, তুমি আমাকে ধরিতে পারিলে কি? আমি জানি, তোমার মত অকর্ম্মা নির্ব্বোধকে ভয় করিবার কোন কারণই নায়। তোমার দ্বারা আমার কোন অনিষ্ট হইতে পারে, যদি এরূপ আশঙ্কা কিছু থাকিত, তাহা হইলে আজই তোমার দেহ হইতে মাথাটা বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িত। সাবধান, আর কখনও আমার কছে গোয়েন্দাগিরি ফলাইতে চেষ্টা করিয়ো না। এইবার যদি তুমি আমার কথা না শোন, তাহা হইলে নিশ্চয় জানিবে, তোমার আয়ুটা একান্ত সংক্ষিপ্ত হইয়া আসিয়াছে। সাবধান-সাবধান-সাবধান!
সেই
মেহেদী-বাগানের খুনী ।”
“পুঃ-তুমি মজিদ খাঁকে অন্যায় সন্দেহ করিতেছ; তিনি একজন নিরীহ ভদ্রলোক। তোমার এ খুনী মোকদ্দমার সহিত তাঁহার কোন সংশ্রব নাই। এতকাল গোয়েন্দাগিরি করিতেছ, আর ভালমন্দ লোক দেখিয়া চিনিতে পার না?”
পত্রপাঠে দেবেন্দ্রবিজয় চিন্তিত হইলেন। ভাবিতে লাগিলেন লোকটা খুব বাহাদুর বটে, আমাকে আজ খুব ঠকাইয়া গিয়াছে; পাহারাওয়ালার ছদ্মবেশে আমার অনুচর সাজিয়া আমার সহিত কথা কহিয়া গেল, আমার সমুদয় গুপ্ত অভিসন্ধি জানিয়া গেল-কি আশ্চর্য্য! আমি তাহাকে তিলমাত্র সন্দেহ করিতে পারিলাম না। এই মহাত্মা যদি পুলিস লাইনে কাজ করিতেন, বোধ করি, খুব একজন পাকা নামজাদা উচ্চ শ্রেণীর গোয়েন্দা হইতে পারিতেন; লোকটার অতুল বুদ্ধি দেখিতেছি। এখন লোকটাকে দেখিবার জন্য আমাকে প্রাণপণ করিতে হইবে। মজিদ কি এই পত্র লিখিয়াছে? অসম্ভব নয়-শেষের কয়েকটি পংক্তি পড়িয়া যেন তাহাই মনে হয়। মজিদ যে নির্দ্দোষ, নিরীহ ভদ্রলোক, হত্যাকারী কোন্ উদ্দেশ্যে ইহা লিখিবে? যাহাতে তাহার উপর আমার আর সন্দেহ না থাকে, সেজন্য সে এরূপ লিখিতে পারে। ইহাও একটা মন্দ চতুরতা নহে! দেখা যাক্ এই হত্যাকাণ্ডের সত্য আবিষ্কার করিবার জন্য আমাকে পৃথিবীর একপ্রান্ত হইতে অপরপ্রান্তে ছুটিতে হয়-এমন কি যমালয়ের দ্বার পর্য্যন্তও অগ্রসর হইতে হয়-আহাও আমি করিব। সে আমার হাত হইতে সহজে পরিত্রাণ পাইবে না-আমার নাম দেবেন্দ্রবিজয়! যেরূপ হউক, ইহার প্রতোশোধ গ্রহণ করিবই। যে কাজ দশ দিনে শেষ হইবার, এখন তাহা আমাকে দুই দিনে শেষ করিয়া ফেলিতে হইবে। দুই দিনের মধ্যে সেই নারীঘাতক পিশাচকে সমুচিত শিক্ষা দিতে হইবে।
উৎসাহের সহিত দেবেন্দ্রবিজয় উঠিয়া দাঁড়াইলেন; দেখিলেন, প্রভাতোদয় হইয়াছে। নবীন সূর্য্যের কিরণলেখা আকাশের গায়ে অনেক দূর পর্য্যন্ত ছড়াইয়া পড়িয়াছে। উচ্চবৃক্ষশীর্ষসমূহ হিরণ্য কররঞ্জিত। বৃক্ষশাখায় বসিয়া পাখীরা মধুর কাকলী বর্ষণ করিতেছে। বিরাট বিশ্ব যেন চারিদিক্ হইতে অশান্ত জনকোলহলে একেবারে জাগিয়া উঠিয়াছে। দেবেন্দ্রবিজয় গলির ভিতর হইতে অতি কষ্টে বাহির হইয়া বাটীতে ফিরিবার জন্য একখানি গাড়ীভাড়া করিলেন এবং তন্মধ্যে উঠিয়া বসিলেন। ঠিক সময়ে দূরবর্ত্তী ডোমপাড়া হইতে বাউলের সুরে কে গায়িয়া উঠিল;-
“সামাল মাঝি এই পারাবারে।
(ভারি বান্ ডেকেছে সাগরে)
(এবার) তোমার দফা হলো রফা, প’ড়ে গেলে ফাঁপরে”।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *